বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী: সিন্স-৫২
9
বার পঠিতদীর্ঘ আটাশ ঘণ্টা অমানুষিক পরিশ্রমের পর ক্লান্ত হয়ে টেবিলে যখন মাথা রেখেছি তখন সকাল হয় হয় অবস্থা। তার পরের প্রায় পুরো একটা দিন মরার মতো ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। এত পরিশ্রমের বদলা শরীর সুদে-আসলে তুলে নিতে এতটুকুও ভুল করল না। দিনকে দিন লিকলিকে হয়ে গেছি, টোপা টোপা কালি পড়েছে চোখের নিচে। ঘুম ভেঙে গেলে দেখি বিশাল গবেষণাগারের দূরের এক কোণার ডেস্কের টেবিল-ল্যাম্পটি নীল আলো ছড়িয়ে ক্ষীণভাবে জ্বলছে। চট করে বুঝতে খানিকটা অসুবিধা হল, এত রাতে কে কাজ করতে পারে। খানিকটা সময় লাগে ধাতস্থ হতে। ঘুমের ভাবটা ধীরে ধীরে কেটে যেতেই দেখতে পেলাম ড. নাহিদ আদনান কোণার ঐ ডেস্কে বসে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। নীল আলো ব্যতীত অন্য আলোতে গবেষণার কাজ তিনি করতে পারেন না।
মনে অকস্মাৎ একটা হোঁচট খেলাম। বিষয়টা ভুলেই ছিলাম এতক্ষণ, মনে হতেই সবকিছু কেমন গড়বড় হয়ে যাচ্ছে। সাজিয়ে গুছিয়ে ভাবতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আমার, কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না তাই। চোখে মুখে পানি দিয়ে এলাম, শান্ত লাগছে মনটা- গতরাতে আমি কম্পিউটার বিজ্ঞানের বহু বছরের অমীমাংসিত রহস্য পেন্টা-এল-সেভেন সমাধান করেছি। অথচ এখন পর্যন্ত কাউকে জানানোর সুযোগ পাইনি। বলা হয়ে থাকে যে, পেন্টা-এল-সেভেন এমন একটি গাণিতিক সমস্যা যেটার জন্য ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন সমস্যার কোন সমাধান নেই। আর আমিই প্রথম মানুষ যার হাতে শেষ পর্যন্ত পেন্টা-এল-সেভেন সমাধান হল। এই প্রথম নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
রাত অনেক বাজে। ল্যাবে আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। নিয়মিত সবাই যার যার গবেষণা শেষ করে বাসায় চলে যায়, আর ড. নাহিদ ও আমি একসাথেই ল্যাব থেকে বের হই। সেটা যতই রাত হোক না কেন? ল্যাবের কিছু দূরেই বিজ্ঞানীদের বিশাল কোয়াটার্স, পরিবার নিয়েই থাকে সবাই। ভাবলাম সুসংবাদটা ড. নাহিদ আদনানকে দেই। অবশ্য ইতিমধ্যে তিনি খবরটা পেয়ে গেছেন। তবু আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না।
ড. নাহিদ আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন ? আপনার জন্য একটা সুসংবাদ আছে।
আমরা বিজ্ঞান একাডেমীর বিজ্ঞানীরা ল্যাবে থাকা অবস্থায় মাথায় স্থাপন করা ছোট্ট একটি টেরা-ইনভার্স চিপের মাধ্যমে কানেক্টেড থাকি। তথ্য বিনিময়ের দরকার হলে মুখ না নাড়িয়ে মনে মনে সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করি। এতে বেশ খানিকটা ক্যালোরি খরচ বেঁচে যায়। আজ এতই উত্তেজিত হয়েছি যে, শক্তি খরচের কথা ভুলে গিয়ে শেষতক শব্দগুলো উচ্চারণ বলে ফেললাম। তাঁর পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেল না, ভাবলাম হয়তো তিনি অন্যমনষ্ক হয়ে পড়েছেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার ডাকলাম- ড. নাহিদ…ড. নাহিদ
মাঝখানে হঠাৎ থেমে পড়তে হল, ভয়ে শরীরের খানিকটা অংশ অবশ হয়ে যাচ্ছে। তার কারণ এই মুহূর্তে আমি তিন দশমিক পাঁচ কোয়ান্টামের একটা অপরাধ করে ফেলেছি। যার সর্বোচ্চ শাস্তি ব্রেনের কেন্দ্রীয় অংশে উচ্চ লেভেলের কোয়ান্টাম শক্। বিজ্ঞান একাডেমীর বর্তমান নিয়মানুযায়ী হাই-প্রোফাইলের অন্তর্ভুক্ত কোন গবেষকের নাম সংক্ষিপ্ত করে ডাকা বা মনে মনে ভাবা বিরাট অপরাধের পর্যায়ে পরে। পূর্বে অনেকেই এরকম অপরাধ করে শাস্তি পেয়েছেন। তবে হ্যাঁ, সে যদি বিষয়টাকে গুরুতরভাবে না নেয় তবে রক্ষা পাওয়া যায়। ড. নাহিদ আদনান এমনিতেই খুব শান্তশিষ্ট মানুষ। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে হযতোবা আমি রক্ষা পাব। তাতেও যদি কাজ না হয় তবে আমার আবিষ্কার আমাকে রক্ষা করবে।
প্রতি মুহূর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কেমিগো তার স্টোরেজ চিপের পরমাণুতে সংরক্ষণ করে রাখছে। কেমিগো হচ্ছে আমাদের ল্যাবের কেন্দ্রীয় সুপার কম্পিউটার। তবে নিরাপত্তার অজুহাতে এটার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এমনকি কোয়ার্ক লাইব্রেরীতেও এ বিষয়ে কোন আর্টিকেল নাই।
বিপ করে একটা জোরালো শব্দ হল। আশেপাশে তাকালাম কি ঘটছে তা দেখার জন্যে, দেখলাম ল্যাবের প্রবেশমুখে ডান দিকের দেয়ালে ঝুলানো বিশাল মনিটরে আমার নামের পাশে ধীরে ধীরে লাল রঙের দাগ ভেসে উঠছে। লাল রঙ ওঠা মানে আগামী দশ মিনিটের মধ্যেই আমার শাস্তি কার্যকর করা হবে। খুব ভয় পেয়ে গেলাম, কারণ পূর্বে এ কাজটা ম্যানুয়ালি করা হতো। তাহলে এমন কেউ কি আছে যে কেমিগোকে কন্ট্রোল করছে? ভয়ে ভয়ে চারপাশে তাকালাম। ল্যাবে আমি আর ড.নাহিদ ছাড়া আর কেউ নেই। তাহলে কি ড. নাহিদ কেমিগোকে কন্ট্রোল করছে? ভাবতে পারছি না। ল্যাবে যোগ দেবার প্রথম দিনেই আমাদের বলে দেয়া হয়েছে, কেমিগো-এর আর্কিটেকচার এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে কোন মানুষের পক্ষে সেটা কন্ট্রোল করা অসম্ভব। তবে কি তিনি কোন মানুষ নন, তিনি একটা কাঠখোট্টা ধরনের রোবট ?
হ্যাঁ, ড. ম্যাপলান। আপনি ঠিকই ধরেছেন, আমি রোবট। শীতল কণ্ঠস্বর ড. নাহিদ আদনানের। মুখে একটা নির্লিপ্ত ভাব, যে কেউ দেখলেই ভয় পেয়ে যাবে।
চমকে উঠলাম আমি। দেখলাম চেয়ার ছেড়ে উঠে তিনি ধীরে পায়ে আমার দিকে হেঁটে আসছেন, চেহারায় সামান্য চিন্তার ছাপ। নিঃশ্বাস দূরত্বে এসে থামলেন, তারপর ঠান্ডা গলায় বললেন- ড. ম্যাপলান আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনার কোন ক্ষতি করবো না আমি। তবে কার ক্ষতি করবেন ? খানিকটা রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
কারোরই না। বলেই তিনি একটা শুকনো কাশি দিলেন। কিছুক্ষণ সবকিছু নীরব, কেউ কোন কথা বলছি না। কেমন জানি একটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে চারপাশে। অকস্মাৎ নিজের তৈরি নীরবতা নিজেই ভেঙে বললেন- ও হ্যাঁ, আবিষ্কারটার জন্য আপনাকে শুভেচ্ছা, মানবজাতির অগ্রগতিতে এটা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। পেপারটা আমাকে একবার দেখালে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
পেপার দেখাবো ! তাও আপনাকে? মানুষ হলে না হয় দেখাতাম, কোন কাঠখোট্টা রোবটকে তো সেটা দেখাতে পারি না আমি। তাছাড়া এটা নিয়ে আপনি করবেনই বা কি শুনি ? শেষ পর্যন্ত পুরো কথা না শুনতেই তিনি বলে উঠলেন- আপনি জানেন কি মানবজাতি পূর্বে দু’বার বিলীন হতে বসেছিল।
শক্ খাওয়ার মতো চমকে উঠলাম, বলে কী রোবটটা! ভাবলাম তাহলে এটা কি পেপার দেখার নতুন একটা ফন্দি তাঁর। তবে পরক্ষণেই নিজের ভাবনাটা নিজের কাছেই পাত্তা পেল না। কারণ রোবট কখনো মিথ্যা বলে না, তাঁরা মিথ্যা বলতে পারে না।
পুরোপুরি এমন খবরতো শুনিনি। কোয়ার্ক লাইব্রেরীতে মাত্র একটা ঘটনার কথাই উল্লেখ আছে। আরও বলা আছে যে এ বিপর্যয় ঘটেছে রোবটদের কারণেই। সে সময় কয়েকজন মহান বিজ্ঞানী হাজার প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে পঁচানব্বই লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার দুইশত তিন আলোক বর্ষ দূরের সিন্স-৫২ নামক এই গ্রহে যদি বসতি স্থাপন না করতেন তাহলে মহাজগত থেকে মানবজাতি চিরতরে হারিয়ে যেত- উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে বললাম।
তাঁর চেহারায় কোন ভাবান্তর নেই, সামান্য গম্ভীর মুখে ডেস্কের ওপর বসে আছেন।
আপনার কি মনে হয় শুধু মাত্র সিন্স-৫২ তেই মানুষ আছে অন্যকোথাও নেই।
বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম। মাথাটা বোঁ বোঁ করছে। অন্য কোথাও মানুষ আছে মানে? যা শুনলাম তা কি সত্যি?
ড. নাহিদ চুপ করে আছেন, কোন উত্তর দিচ্ছেন না। নিজের বাঁ হাতের কনুই থেকে কালো রঙের একটা মেমোরী চিপ বের করে এনে বললেন- এটাতেই আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন। তারপর দু’বার নিজের নাম উচ্চারণ করলেন। সাথে সাথেই একটা বিপ্ শব্দ করে তাঁর দু’কানে লাল আলোর ঝলক দেখা গেল। গোঙানির মতো শব্দ করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। হাত বাড়িয়ে চিপটা তালুতে তুলে নিলাম। রোবট হলেও তাঁর মৃত্যুতে মনটা কেন জানি খারাপ হয়ে গেল। এ ঘটনাকে মৃত্যু বলব না কি অন্য কিছু বলব বুঝতে পারছি না। আবেগকে পাত্তা না দিয়েই তড়িঘড়ি করে দৌড় দিলাম ডেস্কের দিকে। হাতে থাকা মেমরী চিপটাকে কানেক্ট করলাম কম্পিউটারের সাথে। প্রবল উত্তেজনা অনুভব করছি, ভাবছি কত তথ্যই না পাবো! কিন্তু কিসের কি? মেমরীতে ঢুকতেই পারলাম না, পাসওর্য়াড দরকার। অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু ফলাফল শূন্য, ক্র্যাক করা গেল না।
মাথাটা ঠা-া করে ভাবতে লাগলাম। আজ এই ল্যাবে তাঁর সাথে ঘটা ঘটনাগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি। মানবজাতির দু’বার বিলীন হওয়া, সিন্স-৫২ ছাড়াও অন্য গ্রহে তাদের বসতি, তাঁর মুখে উচ্চারিত শেষ কথাগুলো। কোথায় যেন একটা খটকা লাগলো। বিশেষ করে তাঁর শেষ কথাগুলো। ধ্বংসের আগে কোন রোবট কি তার নিজের নাম উচ্চারণ করে ? এটা জানা নেই। অনেক খুঁজেও কোয়ার্ক লাইব্রেরীতে এ সম্পর্কে কোন তথ্য পেলাম না। কোন এক অজানা কারণে রোবটদের যাবতীয় তথ্য সেখানে চেপে যাওয়া হয়েছে।
চিপটাকে ডিসকানেক্ট করে হাতে নিলাম, পাসওয়ার্ড ছাড়া এটার কোন মূল্যই নাই। আঙুল দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছি। গায়ে ইংরেজিতে স্পষ্ট করে লেখা- ড. নাহিদ আদনান। প্রত্যেক অংশের শুরুর বর্ণটা বড় করে খোদাই করা, কোথায় যেন একটা মিল আছে। মাথায় একটা চিন্তা খেলে গেলো। হঠাৎ তাঁর উচ্চরিত কথাগুলোর সাথে লেখাটা মিলিয়ে ভাবলাম। সঙ্গে সঙ্গে একটা খুশির ভাব ঝিলিক দিল, উত্তেজনায় আমার শরীর কাঁপছে। সব উত্তেজনা একপাশে সরিয়ে রেখে চিপটাকে আবার কানেক্ট করলাম, মনে হলো সব পেয়ে গেছি।
কাঁপা কাঁপা হাতে ভার্চুয়াল কিবোর্ডে পাসওয়ার্ডটা লিখলাম। ডক্টরের ডি, নাহিদের এন, আদনানের এ। বড় হাতের ইংরেজি অক্ষর। যদিও বা ভয়েস দিয়েই কাজটা সারা যেত। এবার এন্টার কী চাপার পালা। একটু ভয় ভয় লাগছে। যদি অ্যালাউ না করে, তাহলে এত কষ্ট সব জলে যাবে। বড় করে শ্বাস নিয়ে সেই সাহসেই চাপ দিলাম এন্টারে। মন জুড়ানো বিপ শব্দ হল, মনিটরে লেখা ভাসলো- ‘অ্যালাউড’। কিছুক্ষণ আগে ভর করা ভয়ের অনুভূতিটা দূর হয়ে গিয়ে বুকে নেমে আসল একরাশ স্বস্তি, খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। হাতদুটো কিরিবিরি করে একচোট নেচে নিলাম, খুব শান্তি লাগছে এখন। প্রাগৈতিহাসিক যুগ হতে শুরু করে এখনকার সময় পর্যন্ত সকল কালের তথ্য আমার সামনে খোলা পড়ে আছে। এতদিন বিশাল বিশাল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে তথ্যের গুরুত্ব প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম। শুনেছি আগের যুগের মানুষদের নাকি এসব তথ্য মুখস্থ রাখতে হতো! কতই না বোকা ছিল তারা। শোনার পর পরই কলজেটা শুকিয়ে গেছিল তখন। ভাগ্যিস সেই সময় জন্ম হয় নি আমার।
মহাজগতের ঠিক কোথায় কোথায় মানুষ আছে এটা জানার জন্য কোন তর সইছিল না। ভাবনা-চিন্তা বাদ রেখে মনোযোগ দিলাম মনিটরে। প্রথমেই ভেসে উঠল ড. নাহিদ আদনানের বিশাল স্থিরচিত্র। কি নিষ্পলক আঁখি! তাকে দেখে কেউ বিশ্বাসই করবে না যে মানুষ নয় সে একজন রোবটকে দেখছে।
তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধে মনটা নরম হয়ে এলো। অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম বর্তমান যুগের সবাই যেখানে হলোগ্রাম রাখতেই বেশী পছন্দ করে সেখানে ইনি কিনা রাখলেন স্থিরচিত্র! যাই হোক স্কিপ করে গেলাম। কেমিগোকে পরের নির্দেশটাই দিলাম বিশাল মহাজগতের কোন কোন স্থানে মানুষ বসতি স্থাপন করেছে তা জানতে। নিমিষেই চোখের সামনে এক এক করে ভেসে উঠলো মানুষের বসত করা বেশ কয়েকটি স্থানের নাম। গুণে গুণে সাতটা নাম পেলাম। প্রায় দমবন্ধ করেই সব পড়তে লাগলাম। ব্ল্যাক-লেফট, মিগনে-১২, লভ-থেটা, হ্যাজ, এন্ড-আর্থসাইট, হাফক্লিন-ম্যাটার, লস্ট-আর্থ, সিন্স-৫২। চমক লাগল সবশেষে সিন্স-৫২ এর নামটা দেখে। তাহলে কি আমাদের পূর্বেই বাকি ছয়টিতে মনুষ্যবসতী গড়ে উঠেছিল!
অবাক হয়ে গেলাম। এ বিষয়ে কোন তথ্যই আমাদের জানা নেই তথা কোয়ার্ক লাইব্রেরিতেই নেই, এটা কি করে সম্ভব! নাকি জেনে শুনে ইচ্ছা করেই এমনটা করা হয়েছে, আগামী বিজ্ঞান সভায় বিষয়টা উত্থাপন করতে হবে। এমন সময় ড. হগার্ড, আমাদের গবেষণার পরিচালক ল্যাবে প্রবেশ করলেন, ছিন্নভিন্ন অবস্থায় ড. নাহিদ আদনানকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে আঁতকে উঠে বললেন, গত রাতে এখানে কী হয়েছিল ড. ম্যাপলান? রোবটটা এখানে পড়ে আছে কেন? আর আপনিই বা কী করছেন? বলতে বলতে পেছনে চলে আসলো, ততক্ষণে আমি চিপটাকে জামার ভেতর লুকিয়ে ফেলেছি। ভাবছি, এত সহজেই ড. নাহিদকে তিনি রোবট বলতে পারলেন কীভাবে? মনে খানিকটা খটকা লাগলো। তাহলে তিনি আগে থেকেই কথাটা জানতেন? দ্রুত পায়ে আমার ডেস্কের দিকে গিয়ে এটা ওটা হাতড়ে হাতে তুলে নিলেন পেপারটা, মনে হল আগে থেকেই যেন বিষয়টা তার জানা ছিল।
তাহলে তুমি পেন্টা-এল-সেভেন সমাধান করেছ? ভালো, ভালো। ঠোঁট দু’টো শক্ত করে মাথা ঝাঁকিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন।
কেমন জানি অচেনা মনে হল স্বরটা, তাছাড়াও আগে তিনি আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন, আজ হঠাৎ কেন জানি ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করছেন। এসব ঘটছে টা কী? দেখতে দেখতে সকলেই ল্যাবে এসে পড়েছেন। চেহারা দেখে মনে হল ড. নাহিদের মৃত্যুতে যেন কারো কোন মাথা ব্যথাই নেই।
ভেতরে বসে সবাই সভা করছেন, আমি আর ড. নীলা বাইরে বসে আছি। এতদিন আমাকে ছাড়া সভা হত না, আজ কিনা সেই আমার অনুপস্থিতিতেই সভা হচ্ছে।
ড. ম্যাপলান এখন কেমন লাগছে আপনার? তিনি খানিকটা ঝুঁকে জিজ্ঞেস করলেন, বারবার মুগ্ধ চোখে তাকাচ্ছেন আমার দিকে। সে চাহনিতে মাপা শ্রদ্ধার সাথে সাথে উঁকি দিচ্ছে সহানুভূতিও।
ভালো, ভাবলেশহীন চোখে জবাব দিলাম। তবে, ড. নাহিদের জন্যে খারাপ লাগছে, তার সঙ্গ আর কোনদিন পাব না। মাথাটা নত হয়ে এলো। শরীরে আগের মতো আর শক্তি পাচ্ছি না।
নীলা খুব খারাপ লাগছে আমার, কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ আমাকে কন্ট্রোল করছে। বলেই তার হাতটা শক্ত করে ধরলাম। ঠিক তখনই দেখলাম ড. হগার্ড সভা রুম হতে বের হয়ে এলেন, হাতে অদ্ভুত এক যন্ত্র। অবশিষ্ট এনার্জি দিয়ে ট্রেস করে দেখলাম সিগন্যালটা সেখান থেকেই আসছে, নড়ার মতো শক্তিও নেই যে তা না হলে চমকে উঠতাম। তখনই হগার্ড বললেন-
পেন্টা-এল-সেভেন সমাধান না করলে তোমার পরিণতিও ড. নাহিদের মতোই হতো। মিলিয়ন বছরের স্লিপে যাওয়ার আগে বিষয়টা তোমার জানা উচিত বলে মনে করলাম, তাই জানালাম।
এনার্জি শেষ হয়ে আসছে, সেজন্যে কথাগুলো কেমন জানি এলোমেলো শুনছি। যন্ত্রে পাওয়ার বাড়াতে বাড়াতে হগার্ড বলেই চলেছেন-
তুমি আর সবার মতো মানুষ নও, একজন রোবট, কাঠখোট্টা রোবট, ঠিক ড. নাহিদের মতোই। গতকাল পর্যন্ত মহাজগতে কেবল দু’জন রোবট ছিল, কিন্তু আজ হতে সংখ্যাটা কমে একজনে নেমে এসেছে। তবে আশার কথা, তোমাকে আমরা নিশ্চিহ্ন করব না কেবলমাত্র স্লিপে পাঠিয়ে দেব। মিলিয়ন বছর পরের প্রজন্মই ঠিক করবে তোমার ভাগ্যে কী ঘটবে? বিদায়! ড. ম্যাপলান, বিদায়। মিলিয়ন স্লিপ বিদায়!
কথাগুলো শুনে বোঝার মতো অবস্থায় আর নেই, ধীরে ধীরে লুটিয়ে পড়ছি ড. নীলার হাতে। দেখলাম তার চোখ হতে গড়িয়ে একফোঁটা অশ্রু আমার কপালে পড়লো। ভেতরটা ভেঙে যাচ্ছে আমার। মনে হল যেন, এই নীলার জন্যেই মিলিয়ন বছর পর আবার জেগে উঠতে হবে আমায়।
কোলাহল
পারভেজ আহমেদ @ বাংলা কবিতায় ছন্দ কত প্রকার ও কি কি?
Md forid mia @ পা চাটা কুত্তার জলকেলি
Juel @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
Juel @ জলচর মৎস্য হতে স্তন্যপায়ী মানুষ; বিবর্তনবাদের মহা নাটকীয়তার পরিণতি
Ask2ans @ The Boy In The Striped Pajamas
Ask2ans @ যুদ্ধ সাংবাদিকতা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
ABU RAYHAN @ বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীকদের তালিকা
ABU RAYHAN @ বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীকদের তালিকা