অপারেশন ঈগল (পর্ব-১)
বার পঠিতগোলাম রব্বান, একজন মুক্তিযোদ্ধা(ডেপুটি কলাম কমান্ডার, অপারেশন ঈগল,রাঙ্গামাটি,।গেরিলা যুদ্ধ সমন্বয়কারী ১নং সেক্টর ও অপারেশন কমান্ডার বি.এল.এফ, চট্টগ্রাম অঞ্চল।) তাঁর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি নিয়ে লিখা এই অমর ইতিহাস একটি জার্নাল থেকে সংগৃহীত। লেখাটি হুবুহু তুলে ধরা হল।
৭১”এ বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব রণাঙ্গনের একটি গৌরোজ্জ্ব্ল অভিযানঃ
১৯৭১” এর ন”মাসের মরণজয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আল শামসসহ বিভিন্ন ঘাতক গোষ্ঠীদের মরণপণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে স্থল, বিমান ও নৌ-বাহিনীর সমন্বয়ে ১১টি সেক্টরের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বিভিন্ন লেখকের লেখনীতে উধৃত আছে। আজকের এই লেখায় এমন এক অঘোষিত যুদ্ধ অভিযানের বর্ণনা উপস্থাপিত করা হচ্ছে, বিগত ৪৩ বছরে এই অপারেশন অর্থাৎ ”অপারেশন ঈগলের” তেমন কোন ধারাবাহিক বর্ণনা কারো লেখনীতে সুস্পষ্ট ভাবে আসে নি। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের শেষের তিন মাস এক ভয়ংকর মরণজয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বি.এল.এফ পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মণির একান্ত উদ্যোগে তিব্বতের নির্বাসিত আধ্যাত্মিক নেতা দালাইলামার অনুসারিদের পাহাড়ী দূর্গম এলাকার গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এক ডিভিশন চৌকস যোদ্ধা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নেয়। এরা মূলতঃ তিব্বত মুক্তি সংগ্রামের পিৎজা বাহিনী নামে খ্যাত। যাদের সামগ্রিক নেতৃত্বে ছিলেন ভারতের অন্যতম গেরিলা যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল সুজন সিং ওভান এবং পাহাড়ী গেরিলা যুদ্ধে প্রাশিক্ষণ প্রাপ্ত একঝাক চৌকস সামরিক অফিসার। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ যাদেরকে গূর্খা সৈন্য সমন্বয়ে মাউন্ট ডিভিশন বলে মনে করেছে। এরা পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি কলাম করে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান অভিমূখে অভিযান শুরু করে প্রথম সপ্তাহে। উদ্দেশ্য ৭১ এর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রাম দখল করে মুক্তাঞ্চল গঠন করা। অপারেশন ঈগলে এক হাজারের মতো বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বি এল এফ যোদ্ধা তথা মুজিব বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পাহাড়ী রণাঙ্গনের বিভিন্ন ফ্রন্টে অপারেশন ঈগলের শতাধিক যোদ্ধা নিহত এবং আহত হয়েছেন। তাদের নাম ঠিকানা এখনো অজানা রয়ে গেছে।
পূর্ব কথাঃ
২৬ মার্চ প্রথম প্রহর থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বাঙালী সেনা সদস্য , ই পি আর, পুলিশ, ছাত্র, যুবক, শ্রমিকগণ এপ্রিল, মে মাসের দিকে পূর্ব ভারতের সীমান্ত এলাকা বিশেষ করে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামে যুদ্ধরত প্রতিরোধ বাহিনী ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম সীমান্তে জড়ো হয়। যাদের মধ্যে কয়েক হাজার স্বাধীনতাকামী জনতা মিজোরামের ডেমাগ্রী এলাকায় আশ্রয় গ্রহণ করে। এদের মধ্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও চকরিয়া এলাকা থেকে নির্বাচিত তদান্তিন জাতীয় পরিষদ সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা আবু ছালেহও ছিলেন। মে মাসের শেষের দিকে অনেক দূর্গম এলাকা পাড়ি দিয়ে তিনি এবং তাঁর কয়েকজন সহ যোদ্ধা প্রকৌশলী ছিদ্দিক আহমদ, প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম প্রমুখ ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার বিএল এফ হেড কোয়াটারের শেক ফজলুল হক মণির সান্নিধ্যে আসেন। তাঁরা শেখ ফজলুল হক মণির নিকট মিজোরাম সীমান্ত এলাকা সংলগ্ন পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চল সহ দক্ষিণ চট্টগ্রামকে নিয়ে একটি নতুন সেক্টর খোলার প্রস্তাব রাখেন। তখনো ১নং সেক্টরের কর্মকাণ্ড উত্তর চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা সীমান্তেই সীমাবদ্ধ ছিল। শেখ ফজলুল হক মণি ও চট্টগ্রামের বি.এল. এফ নেতা এম এ মান্নান(সাবেক মন্ত্রী) সহ অন্যরা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে একটি নতুন ফ্রন্ট খোলার প্রয়োজনীয়তার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। মনি ভাই ১নং সেক্টরের প্রশিক্ষিত মুক্তিবাহিনী এর স্বল্পতা ও পাহাড়ী রণাঙ্গনে প্রয়োজনীয় দক্ষতার কথা বিবেচনা করে খুব শীঘ্রই বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। মণি ভাই ভারতীয় মিত্রদের উর্ধতন গেরিলা কমান্ডার ও নীতি নির্ধারকদের সাথে ফলপ্রুস দেন দরবার করে একটি শক্তিশালী অত্যাধুনিক পাহাড়ী গেরিলা কমান্ডো বাহিনী ও বিএলএফ প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের সমন্বয়ে একটি সম্মিলিত বাহিনী প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেন। যাদের মধ্যে তিব্বতের নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা দালাইলামার সুশিক্ষিত এক ডিভিশন স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী অন্তর্ভুক্তির আশ্বাস পাওয়া যায়। সেই লক্ষ্যে ৭১ এর জুলাই, আগস্ট দুই মাস নিরলস প্রস্তুতি চলে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম লগ্ন থেকে আমি চট্টগ্রামের ছাত্র-যুবকদের নিয়ে ১নং সেক্টরের একজন বিশেষ সমন্বয়কারীর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম। সেখানে হরিনা যুব ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই, ট্রেনিং-এ প্রেরণ, ট্রেনিং শেষে বিভিন্ন এলাকা ভেদে গেরিলা গ্রুপ তৈরি করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় গেরিলা গ্রুপ পাঠানো হত। এর বাইরে টার্গেট নির্ধারণ সহ প্রভৃতি কাজের নির্ভরশীল দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হতো। এছাড়া ১নং সেক্টরে নিয়মিত বাহিনী তথা মুক্তিফৌজ(এম এফ) , ফ্রিডম ফাইটারস(এফ এফ) এবং বি এল এফ তথা মুজিব বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় অপারেশন সংক্রান্ত সমঝোতা সৃষ্টি করার কঠিন দায়িত্ব আমাকেই পালন করতে হতো। প্রথম প্রথম একটু আধটু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা ১নং সেক্টরের পূর্নাঙ্গ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। এ ক্ষেত্রে মণি ভাই আমাকে উৎসাহ যোগাতেন।
প্রস্তুতিঃ puedo quedar embarazada despues de un aborto con cytotec
৭১ এর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য পরিকল্পিত অপারেশন ঈগলে আমার অন্তর্ভুক্তির কথা জানিয়ে দেন। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নতুন ফ্রন্টে আমার কাজের কথা জানালে সেক্টর কমান্ডার মহোদয় মিজোরাম সীমান্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনীর বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই পি আর এবং পুলিশ সহ মুক্তিযোদ্ধাদের আমার সাথে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন। ওখানে আরেকটা সাব সেক্টর হিসাবে ধরে নিয়ে সাব সেক্টর কমান্ডার(সাব সেক্টর) হিসাবে আমার নিয়োগ দানের কথা বলে ১নং সেক্টরের প্যাডে আমার হাতে একটি নিয়োগপত্র তুলে দেন। এক্ষেত্রে আমি নিয়োগপত্র মেজর রফিক সাহেবকে ফেরত দিয়ে শুধু একটা কথাই বললাম, আমার জন্য কোন নিয়োগপত্রের প্রয়োজন নেই, যুদ্ধের শুরু থেকে সেপ্টেম্বেরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত যে দায়িত্ব আমি পালন করেছি, নিয়োগপত্র না নিয়েও একি দায়িত্ব পালন করবো। ঐ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের আমি অপারেশন ঈগলে যুক্ত করে নিব। সজল নয়নে সেক্টর কমান্ডার সাহেব আমাকে বিদায় দিলে আমি আগরতলায় আমদের বি এল এফ হেড কোয়াটার গ্যাস ফ্যাক্টরির জোনাল কার্যালয়ে শেখ ফজলুল হক মণির কাছে রিপোর্ট করি। ইতিমধ্যেই অপারেশন ঈগলের সাথে যোগদানের জন্য জাতীয় পরিষদ সদস্য আবু সালেহ, কর্ণফুলী পেপার মিলের ইঞ্জিনিয়ার ছিদ্দিক আহমদ, পার্বত্য খাগড়াছড়ি এলাকার বি এল এফ কমান্ডার রণবিক্রম ত্রিপুরা, রাঙ্গামাটির মনীষ দেওয়ান (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা) আগে থেকেই বিএলএফ হেড কোয়াটারে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শেখ মণি অপারেশন ঈগলের বিস্তারিত কর্মকাণ্ড সম্পরকে আমাদের ধরনা দেন। সেখানে কয়েকজন ভারতীয় গেরিলাযুদ্ধ বিশেষজ্ঞ উর্ধতন সামরিক কর্মকর্তার সাথেও আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। তাদের পরবর্তী কালে অপারেশন ঈগলের কমান্ডার হিসেবে পেয়েছি। মণি ভাই আমদের দায়িত্ব ও পদবী নির্দিষ্ট করে দেন। সমগ্র অপারেশনে কর্মযজ্ঞে জেনারেল সুজান সিং ওভান প্রধান অধিনায়ক এবং বিএলএফ এর পক্ষে আবু সালেহকে প্রধান সমন্বয়কারী এবং আমাকে মিডল কলাম তথা রাঙ্গামাটি বিগ্রেডের ডেপুটি কমান্ডার, ইঞ্জিনিয়ার ছিদ্দিক আহমদ দক্ষিণ কলাম তথা বান্দরবান বিগ্রেডের ডেপুটি কমান্ডার, এবং রণবিক্রম ত্রিপুরা তাতুকে উত্তর কলাম তথা খাগড়াছড়ি বিগ্রেডের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কয়েকদিন পর আমাদের আগরতলার একটি বিশেষ হেলি প্যাডে নেয়া হয়। আমরা মিজোরামের দেমাগ্রির উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টার যোগে রওনা দিই। হেলিপ্যাডের বিদায় বেলায় মণি আমাদের সাথে মিত্রবাহিনী পূর্বাঞ্চল প্রধান কোর কমান্ডার লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা , অপারেশন ঈগলের কমান্ডার মেজর জেনারেল সুজন সিং ওভানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তারা অপারেশন ঈগলের সফলতা কামনা করে আমাদের বিদায় জানান। আমদের হেলিকপটার আসামের কুম্ভিগ্রাম সামরিক বিমান ঘাটিতে বিকাল বেলা অবতরণ করে। সেখানে রাত্রি যাপন করে পরদিন সকালে মিজোরামের দেমগ্রির উদ্দেশ্য রওনা দিয়ে বেলা ১১ টায় পৌঁছায়। পনের বিশ দিন দেমাগ্রি অবস্থানকালে এক সপ্তাহ পর জেনারেল ওভানকে নিয়ে শেখ মণি দেমাগ্রি আসেন এবং অপারেশন ঈগলের বিস্তারিত অপারেশন প্রক্রিয়া আমাদের জানান। ইতিমধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমদের ছাত্র, যুবক, সেনা, ও ই পি আর বাহিনীর সদস্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনটি কলামে তাদের আমরা ভাগ করে নিয়ে আমাদের অভিযান প্রস্তুতি সম্পন্ন করি। can you tan after accutane
(চলবে)
কোলাহল
Mkjk @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
পারভেজ আহমেদ @ বাংলা কবিতায় ছন্দ কত প্রকার ও কি কি?
Md forid mia @ পা চাটা কুত্তার জলকেলি
Juel @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
Juel @ জলচর মৎস্য হতে স্তন্যপায়ী মানুষ; বিবর্তনবাদের মহা নাটকীয়তার পরিণতি
Ask2ans @ The Boy In The Striped Pajamas
Ask2ans @ যুদ্ধ সাংবাদিকতা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
ABU RAYHAN @ বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীকদের তালিকা