প্রচলিত সমাজ এবং বিভিন্ন প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলো মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে কি বলে আসুন জেনে নিই
187
বার পঠিতপ্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে।
এর তিনটি অংশ, ১মটি চারদিন স্থায়ী হয় (৪-৭ দিন) এবং একে মিনস্ট্রাল ফেজ, ২য়টি ১০দিন (৮-১০ দিন) একে প্রলিফারেটিভ ফেজ এবং ৩য়টি ১৪ দিন (১০-১৪ দিন) স্থায়ী হয় একে সেক্রেটরি ফেজ বলা হয়।
মিনস্ট্রাল ফেজ এই যোনি পথে রক্ত বের হয়। ৪-৭ দিন স্থায়ী এই রক্তপাতে ভেঙ্গে যাওয়া রক্তকনিকা ছাড়াও এর সাথে শ্বেত কনিকা, জরায়ুমুখের মিউকাস, জরায়ুর নিঃসৃত আবরনি, ব্যাকটেরিয়া, প্লাজমিন, প্রস্টাগ্লানডিন এবং অনিষিক্ত ডিম্বানু থেকে থাকে। ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের যৌথ ক্রিয়ার এই পর্বটি ঘটে।
পিরিয়ড নিয়ে শুধু এদেশে নয়, সারা পৃথিবার সমাজ ব্যবস্থাতেই অনেক রকম মিথ প্রচলিত। প্রাচীন রোমে, প্লিনি দ্য এল্ডার তাঁর ন্যাচারাল হিস্ট্রি-তে লিখেছিলেন যেসব কুকুর পিরিয়ডের রক্তের স্বাদ পেয়েছে, তারা জলাতঙ্কগ্রস্ত এবং উন্মাদ হয়ে যেত, মাদী ঘোড়ার গর্ভপাত হয়ে যেত এবং শস্যক্ষেতের কাছে ঋতুমতী নারী গেলে নাকি সেই ক্ষেতের সব ফসল নষ্ট হয়ে যেত! ইউরোপে আবার বিশ্বাস করা হতো, ঋতুমতী নারীরা জ্যাম ছুঁলে তা নষ্ট হয়ে যাবে অথবা ওয়াইনে হাত দিলে তা ভিনিগার হয়ে যাবে!
এসময় কোনো মেয়ে গাছে উঠলে সে গাছে ফল ধরে না। এসময় রান্নাঘরে ঢুকতে মানা। পুজার ঘরে ঢুকতে মানা, মন্দিরে ঢুকতে মানা, গির্জায় ঢুকতে মানা, নামাজ পড়তে মানা, রোজা রাখা মানা, ধর্ম গ্রন্থ ধরতে মানা। কারণ একটাই তোমার পিরিয়ড চলছে, তুমি অশুদ্ধ, অপবিত্র! অথচ পিরিয়ড নামক যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটিকে আজও মানুষ অশুদ্ধ, অপরিচ্ছন্ন মনে করেন, তার কারণেই কিন্তু টিকে আছে এই মানবসভ্যতা। রেনেসাঁ যুগে নারীর ঋতুস্রাবের রক্তের প্রতি মানুষের ঘৃণা এবং ভয় এতো বেশি ছিলো যে একে বিষ বলে ধারণা করা হতো। বলা হতো এই বিষ থেকে তৈরি হয় বিষাক্ত বাষ্প এবং তা নারীর মাঝে হিস্টেরিয়ার উদ্রেক করে। বিংশ শতাব্দীতে এসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এখনো পর্যন্ত ইন্ডিয়ার কিছু জায়গায় ঋতুস্রাবের প্রতি আছে ভীষণ ট্যাবু। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে কোনো নারী রান্না করলে সেই খাবার খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যাবে। কিছু কিছু জায়গায় এমনও নিয়ম আছে যে এই সময়টা নারীকে কাটাতে হবে গোয়ালঘরে।এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে নানা কথা।তবে গ্রন্থ গুলোর একটা কমন তসবি হচ্ছে পিরিয়ড চলা কালীন মেয়ে অপবিত্র থাকে এবং সেই সময় তারে দিয়ে কিছু করা বা ধর্মীয় কোন কাজ করানো যাবে না।এই শতাব্দীতে একটি ভয়াবহ কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে,নারীর পিরিয়ড চলাকালীন সময় যদি কোন পুরুষ ঐ নারীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হয় তাহলে সেই পুরুষের লিঙ্গ ছোট হয়ে যাবে।অথচ বিজ্ঞান সম্মত ভাবে কথাটা কেবল উদ্ভটই হিসাবে প্রমানিত হয়।আজ থেকে দু-হাজার বছর আগে, যাকে বলা হতো Biblical Times, এ ঋতু চলাকালীন সময়ে সেই নারীকে এতোটাই অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্য মনে করা হতো যে এই পুরো সময়টা তাকে পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হবে।
পিরিয়ড নিয়ে ধর্মও কম কুসংস্কারের জন্ম দেয়নি। ছোটবেলায় অধিকাংশ মেয়েকে বোঝানো হয় পিরিয়ড পাপের ফল, তা ওই ধর্ম থেকেই এসেছে। অ্যাডামকে যখন ইভ নিষিদ্ধ গন্ধম খেতে প্ররোচিত করে এবং খাওয়ায় ঈশ্বর তখন রাগান্বিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে গন্ধমের নিষিদ্ধ রসটাকেই ইভের পাপের স্মারকস্বরুপ তার শরীরে দেন, যাতে বংশ পরম্পরায় এ পাপের কথা তারা স্মরণ রাখতে পারে। ফলে ধর্মগ্রন্থে পিরিয়ডকে অপবিত্র শুধু তাই নয় পিরিয়ডের সময় নারীর পুরো শরীরটাকেই অপবিত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পিরিয়ডের সময় স্ত্রী সঙ্গম থেকে বিরত থাকার জন্য কুরআনে নির্দেশ করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে তো পিরিয়ডের সময় স্ত্রীকে আলাদা ঘরে এক প্রকার বন্দী করে রাখার কথা বলা হয়েছে।
সনাতন ধর্ম পিরিয়ড বিষয়ে কি নির্দেশ দিয়েছে? উজ্জয়িনীর কামশাস্ত্রের “শিব পার্বতীর কথোপকথন” অধ্যায় থেকে ‘ঋতুকালে নারীর কর্তব্য’ আলোচনা করা হলোঃ
যেদিন প্রথম রজঃদর্শন হবে সেদিন থেকে তিন রাত্রি পর্যন্ত রমণী সবকিছু পরিত্যাগ করে ঘরের মধ্যে সর্বদা আবদ্ধ থাকবে। যাতে অন্য কেউ তাকে না দেখতে পায়। স্নান করবে না, অলংকার পরবে না। এক বস্ত্র পরিধান করবে। দীনাভাবে মুখ নিচু করে বসে থাকবে। কারো সাথে কোন কথা বলবে না। নিজের হাত, পা ও চোখ থাকবে স্থির। দিনের শেষে মাটির হাড়িতে তৈরি করা ভাত সে খাবে এবং ভূমিতে সাধারণভাবে শয্যা করে নিদ্রা যাবে। এইভাবে তিনদিন কেটে যাওয়ার পর চতুর্থ দিনে সূর্য উদিত হওয়ার পর স্নান সেরে কাঁচা কাপড় পড়ে সে শুদ্ধা হবে।
শাস্ত্রে লেখা আছে, যে নারী রজঃস্বলা হবে, সে নারী প্রথম তিন দিন মধু, মাংস ভোজন, গন্ধমাল্যদি ধারণ, দিবাভাগে শয়ন, তামাক সেবন, মুখ শোধন, গন্ধদ্রব্য ব্যবহার, বেশভূষা ধারণ, রোদন, আরোহণ, অগ্নিস্পর্শন – এসব কাজ মোটেও করবে না। কোন কোন শাস্ত্রকার বলেছেন, নারী ঋতুমতী হলে প্রথম তিনদিন চোখে কাজল পরবে না। স্নান, স্থানান্তরে গমন, দন্তধাবন ও গ্রহনক্ষত্রাদির দর্শন করবে না।
মহাদেব বলেন, হে প্রিয়, বর্তমানে শাস্ত্রে যেসব বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে তা সংক্ষেপে তোমাকে বর্ণনা করছি। ঋতুকাল থেকে ষোড়শ দিনের মধ্যে যুগ্ম দিনে নারী গমন করা শ্রেয়। কিন্তু দ্বিতীয় ও চতুর্থ দিনে এটি নিষিদ্ধ।
ঋতুমতী নারী জাতি ৩ দিন অপবিত্র বলে গণ্য হয়। এই সময় তারা কি কি বিধিনিষেধ মেনে চলবে তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করব এখন-রাত্রির প্রথম ও শেষ প্রহরে নারী গমন করা সমীচীন নয়। ঐ দুই প্রহরে শাস্ত্রচর্চা করে কাটানো উচিৎ। এছাড়া বাকি দুটি প্রহরে স্ত্রী সঙ্গ লাভ করলে মোক্ষপ্রাপ্তি ঘটে। এই নিয়মের অন্যথা করলে নরক প্রাপ্তি ঘটে। সেই ব্যাক্তি পশুযোনি লাভ করে। পিতামাতার সহবাসের দোষে তাদের সন্তানাদি দুঃখ কষ্ট লাভ করে।
ঋতুর প্রথম দিন সহবাসের ফলে সন্তান জন্মালে সেই সন্তান দীর্ঘায়ু হয় না। দ্বিতীয় দিনে সহবাসের ফলে সন্তানের জন্ম হলে সেই সন্তান প্রসবাগারেই মারা যায়। তৃতীয় দিনের সহবাসের ফলে বিকলাঙ্গ বা স্বল্পায়ু সন্তান জন্মগ্রহণ করতে পারে। শরীরতত্ত্ব বিষয়ে মহামতি সুশ্রুতের এইসব উপদেশ অত্যান্ত মূল্যবান। মহর্ষি চরক প্রভৃতি আয়ুর্বেদাচার্যগণও এই ধরণের উপদেশ দিয়েছেন।
ঋতুমতী নারীর তিনদিন গায়ে তেল মাখা, নখ কাঁটা, কান্নাকাটি করা, চোখে কাজল দেয়া, দিবা নিদ্রা, স্নান, সুগন্ধি দ্রব্য গায়ে লেপন, অট্টহাসি, অতিরিক্ত কথাবার্তা, কেশবিন্যাস, বিকট আওয়াজ শোনা, অধিক বায়ু সেবন এবং অতিরিক্ত কাজ করা নিষিদ্ধ। কেননা ঐ সব কর্মের ফলে তার রক্ত দুষিত হয়ে নানারকম ব্যধির সঞ্চার হতে পারে।
ইসলামের দৃষ্টিতে এসময় যৌন মিলন হারাম। ইসলামের দৃষ্টিতে মাসিকের সময় যৌন মিলনঃ
পবিত্র কুরআ’ন এ আল্লাহ বলেছেন, “লোকেরা তোমাকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা অশূচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রব কালে স্ত্রী সঙ্গ বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য)তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারা/আয়াত-২২২)
কিন্তু নিকটবর্তী হয়ো না’র অর্থ হল সঙ্গমের জন্য তাঁদের কাছে যেও না। অর্থাৎ যোনিপথে সঙ্গম হারাম। পায়খানারদ্বারেও সঙ্গম হারাম। আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বলেন,
“আল্লাহ আযযা অজাল্ল (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষের মলদ্বারে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে।” (তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, সহিহুল জামে ৭৮০১ নং)
তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি কোন ঋতুমতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাস করে, অথবা কোন গনকের কাছে উপস্থিত হয়ে (সে যা বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী করে।” (অর্থাৎ কুরআনকেই সে অবিশ্বাস অ অমান্য করে। কারণ, কুরআনে এক সব কুকর্মকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।) (আহমাদ ২/৪০৮, ৪৭৬, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ৫২২ নং)
সুতরাং স্বামীর জন্য জায়েয হবে না স্ত্রী সহবাস করা যতক্ষন না স্ত্রী হায়েয থেকে মুক্ত হয়ে গোসল করে পবিত্র হয়।
ঋতুচলাকালীন সময়ে নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা স্থাপন করা হয় বাইবেলের লেভিটিকাস বইতে। all possible side effects of prednisone
নারীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নিয়েই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত ছিল ভয়াবহ সব কুসংস্কার যা এখনো বজায় আছে বহাল তবিয়তে। দেখুন কালের সাথে সাথে কী করে বদলেছে এসব কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। বদলে গেলেও মানুষের মধ্য থেকে পিরিয়ড নিয়ে ভয় ও ঘৃণা দূর হয়নি মোটেই।তার মধ্যে রয়েছে আবার বিভিন্ন গ্রন্থের ভয়াবহ ছোবল।আপনার আশেপাশে এমনকি আপনার পরিবারের পুরুষ এমনকি নারীদের মাঝেও রয়েছে এমনই সব কুসংস্কার।
walgreens pharmacy technician application online
কোলাহল
Mkjk @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
পারভেজ আহমেদ @ বাংলা কবিতায় ছন্দ কত প্রকার ও কি কি?
Md forid mia @ পা চাটা কুত্তার জলকেলি
Juel @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
Juel @ জলচর মৎস্য হতে স্তন্যপায়ী মানুষ; বিবর্তনবাদের মহা নাটকীয়তার পরিণতি
Ask2ans @ The Boy In The Striped Pajamas
Ask2ans @ যুদ্ধ সাংবাদিকতা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
ABU RAYHAN @ বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীকদের তালিকা