এক গুচ্ছ কামিনী এবং অতঃপর…!
191
বার পঠিতগানের মাধ্যমে ‘আধেক ঘুমে’ শব্দটার সাথে পরিচয় হলেও ইহার সঠিক ভাবার্থ অনিক কখনো গভীর ভাবে উপলব্ধি করেনি। কিংবা, হয়তোবা এই শব্দটার আক্ষরিক অর্থটাই সে বুঝতে পারতো না। শুধু তাইনা, হয়তোবা সে এখনো এই শব্দের অর্থ ঠিকঠাক জানেনা। কিন্তু আজকাল কেন জানি মনে হয় এই শব্দটার অনুভূতির সাথে অনিক খুব ভালোভাবেই পরিচিত। এবং প্রতিনিয়ত বিশেষ করে ঘুমোতে যাওয়ার সময় যখন চোখের পাতা দুটি ঈষৎ ভারী হয়ে আসে, চোখের পাতা দুটি বন্ধ করার সাথে সাথে অনিকের কেবল মনে হয় সে কারো কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। কে সে? অনিক বুঝতে পারে কিন্তু বিশ্বাস করতে চায়না। যদি অনিকের ঘুম ভেঙ্গে যায়! যদি মাথার ভিতর চুলের মাঝে নরম হাতের এলোমেলো স্পর্শ থেমে যায়?
অনিক চুপচাপ শুয়ে থাকে। মাথায় হাত বোলানোর গতি মন্থর হতে থাকে। কথা বলতে গিয়েও থেমে যায়। কি বলবে সে, কেমন আছো? কখন আসলে? ধুর! অনিক আবার ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। গভীর ঘুম না। যে ঘুমে মাথার উপর তার হাতের স্পর্শ অনুভব করা যায় ঠিক ততোটুকু পরিমানের ঘুম!
অনিকের ঘুম গভীর থেকে আরো গভীর হতে থাকে। কিন্তু অনিক অনেক কষ্টে নিজেকে ঘুমের এই বিশেষ স্তরটায় ধরে রাখার চেষ্টা করে। এক পর্যায় অনিক নানা রকম এলোমেলো পুরনো স্মৃতির সম্মুখীন হয়। হঠাৎ করে অনিক খেয়াল করে ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চেক হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে। কাউন্টারে এক গম্ভীর ভদ্র মহিলা নাক মুখ কপাল সব কুঁচকে রাজ্যের সকল বিরক্তি মুখে নিয়ে চেক নিরীক্ষা করে ক্লাইন্টদের টাকা পে করছে।
অনিকের আর সেই বিরক্তিকর মহিলার দিকে নজর নেই। ভদ্রমহিলার ঠিক পিছনেই ছোট চ্যাপ্টা কিন্তু মোটা ফ্রেমের চশমা পরিহিত এক তরুনীর দিকে ওর চোখ আটকে যায়! চশমা পরলেও চোখ দুটি খুব ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে।
অনিক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সামনে থেকে মানুষ কমতে শুরু করেছে। অনিকের কিছুটা বিরক্ত লাগছে। কিন্তু কেন? সে যাইহোক, হঠাৎ মেয়েটার সাথে অনিকের চোখাচোখি হয়ে গেলো। কিন্তু অনিক চোখ সরিয়ে নিলো না। মেয়েটার চোখে হঠাৎ রাজ্যের বিস্ময় এঁকে দিতে সমর্থ হলো। যদিও মাত্র কয়েক মুহূর্ত! কিন্তু অনিকের কাছে মনে হলো যেন অনেকক্ষন ধরে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।
শেষ পর্যন্ত বিস্ময় কাটিয়ে কিছুটা বিরক্তি নিয়েই মেয়েটা চোখ সরিয়ে নিয়ে কাজে মনোযোগ দিলো। কিন্তু মেয়েদের গোপন কৌতূহলী মন! সে আবার খুব সাধারণ ভঙ্গিতেই সামনে লাইনের দিকে তাকাল। অনিক তখন সেই বিরক্তিকর মহিলার কাছে মাত্রই চেক জমা দিয়ে টাকার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু চোখ দুটি ঠিক মেয়েটির উপর।
শান্তার জীবনের প্রথম চাকরী। আজ নয়দিন হলো জয়েন করেছে। কিন্তু এমন অদ্ভুত মানুষ সে আর দেখেনি। এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে? জীবনে কি সুন্দরী মেয়ে মানুষ দেখেনি? শান্তার চোখে বিরক্তি বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না। মুহূর্তেই হেসে ফেললো।
অনিক হঠাৎ চমকে উঠে! আরে! সেকি গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে গেছিলো? মনে করার চেষ্টা করে সেই মুহূর্তটা, যেখানে ও কারো কোলে শুয়ে ছিল, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। নির্দিষ্ট একটি ঘুমের স্তরে তা অনুভব করছিল। আচ্ছা স্বর্গ কি এর চেয়েও সুখের হয়? মানুষ কেন এতো সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত মিস করে নাক ডেকে ঘুমায়? নাকি আর কেউ এমন আধেক ঘুমের সাথে পরিচিত না?
অনিক আবার তার প্রিয় মুহূর্তে ফিরে যায়। কেউ একজন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কোনদিন কথা হয়নি, কিন্তু খুব পরিচিত সে। কোনদিন দেখা হয়নি, কিন্তু খুব ভালোবাসে সে। চেহারা কেমন জানা নেই। শুধু জানে চোখ খুললেই তারে আর দেখা যায়না।
সে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অনিক ফিরে গেছে আবার সেই মেয়েটির কাছে। সেই মেয়েটি। অনেকদিন আগে একবার পোষ্ট-অফিসে দেখা। ও ছিলো ছেলেদের লাইনে। মেয়েটির কাঁচা হলুদের মত শরীরের উপর খুব সাদামাটা একটা কামিজ। চোখ দুটি প্রাণবন্ত। একজন কিশোরী মেয়ে কিন্তু কী স্থির ব্যক্তিত্ব! চেহারার মাধুর্যের সাথে কোমলতার ছাপ স্পষ্ট! যে কোন পুরুষের হৃদয় প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হতে বাধ্য। কে যেন ডাকে। কিসের চিঠি, কিসের পোষ্ট-অফিস?
হঠাৎ আবার অনিকের ঘুম ভেঙ্গে যায়। বারবার কেন এমন হচ্ছে? কি অদ্ভুত! সে কি কখনো পোস্ট-অফিসে গিয়েছিলো, কারো সাথে পরিচয় হয়েছিল? অনিক ভেবে পায়না! অথবা সেই ব্যাংক, কি যেন নাম…? অনিক খুব লজ্জা পেয়ে যায়! কি সব ছেলেমানুষি স্বপ্ন! কিন্তু তবু ওকে ভাবিয়ে তোলে…
আচ্ছা, পোস্ট-অফিসে দেখা আর ব্যাংকে দেখা মেয়েটি কী একজনই ছিলো? অনিক অনেকটা ধাঁধাঁয় পরে যায়! রাত প্রায় শেষের পথে। অনিক আবার ঘুমোতে যায়। গভীর ঘুম। কিন্তু ঘুমোতে পারেনা। কেমন একটা অর্থহীন ভাবনায় কৌতূহলী হয়ে উঠে! পোস্ট-অফিসে তো যাওয়া হয়না, প্রায় অর্ধযুগ হবে। কিন্তু আমি শেষ কবে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে গিয়েছিলাম? অনিক সঠিক মনে করতে পারেনা। পনেরো দিন, কিংবা বিশদিন?হ্যা, এমনি হবে। কিন্তু এমন কোন চশমা পরা মেয়ে সে দেখেছিলো কি?
ভোর হয়ে আসে। অনিক এইবার ঘুমে তলিয়ে পড়ে। যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন বেলা এগারোটা! অনিক ঠিক করে ব্যাংকে যাবে। রাতে স্বপ্নে দেখা সেই মেয়েটি আসলেই সে কখনো দেখেছে কিনা তা বুঝতে যাবে। কিন্তু যদি সত্যিই সেই মেয়েটির অস্তিত্ব থেকে থাকে, তাহলে? অনিক অস্থির হয়ে উঠে! অথচ এটা অস্বাভাবিক কিছুনা।
দুপুর দুইটা। অনিক মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে। ঢুকবে কি ঢুকবে না করতে করতে ঢুকেই পরলো। প্রতিটি কাউন্টেরেই লোক বসা। তার মধ্যে তিনজন মহিলা। একটু মোটাসোটা একটা মহিলার মুখ পরিচিত মনে হলো। সেই মহিলার পিছনেই আর একটা টেবিল, বসার যায়গা। টেবিলের পিছনের চেয়ার খালি! এখানেই কি সেই মেয়েটি বসতো? কিন্তু এখন সেখানে কেউ নেই কেন?
অনিক কোন কাজ নিয়ে আসেনি। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সে এক পাশে রাখা সোফায় বসে পরলো। হতে পারে সে ওয়াশরুমে গেছে, কিংবা লাঞ্চ করতে গেছে, আসতে দেরি হচ্ছে! পাশাপাশি সন্দেহও হচ্ছে। একটা স্বপ্নকে এতোটা গুরুত্ব দিয়ে একেবারে ব্যাংকে চলে আসাটা বোকামী। হঠাৎ করে অনিকের সন্দেহ এক নিমিষেই দূর হয়ে যায়।
কাউন্টারের ভিতর দিক হতে একটি দরজা খুলে যখন সেই খালি টেবিল টাতে মেয়েটি এসে বসলো, অনিকের চোখ তখন সত্যিই কপালে! সেই চশমা, গোল গোল কালো চোখ! কি শীতল চাহনি! অনিক বিস্মিত!
কাজ ছাড়া ব্যাংকে বেশিক্ষণ বসে থাকা যায়না। কেমন যেন অসস্থি! সবাই আর চোখে তাকানো শুরু করেছে। অনিক কি করবে এখন? ব্যাংক কয়টায় ছুটি হয়, ছুটি পর্যন্ত বাইরে কোথাও অপেক্ষা করবে? কিন্তু কেন? সেকি কথা বলবে? কি কথা বলবে? আর মেয়েটিই বা ওর সাথে কথা বলতে চাইবে কেন? অনেক গুলি প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে থাকে। অনিক অস্থির হয়ে উঠে। কি করবে সে?
অনিক বাইরেই রাস্তা পার হয়ে অপজিট পাশে একটা খাবার হোটেলে ঢুকে। কিছু একটা খেয়ে আবার বের হয়। এবার দীর্ঘ দুই ঘন্টা সময় অপেক্ষার পালা! আবার ভাবতে থাকে, দেখা হলে কী করবে সে? সিনেম্যাটিক অনেক ভাবনাই মাথায় আসে। কিন্তু কিছুই মন মতো হয়না! নিজের ভিতর এমন অস্থিরতা লক্ষ্য করে নিজেই হাসতে থাকে।
অবশেষে পাঁচটা বেজে গেছে। দুতলায় ব্যাংক। বিল্ডিং থেকে অনেকেই নেমে আসছে। কিন্তু সেই সুন্দরী ব্যাংকারের দেখা নাই। অনিক বিল্ডিং ছেড়ে ফুটপাতে নেমে এলো। তার কিছুই ভালো লাগছে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো। আজ সারাদিন সে সিগারেট খায়নি। উত্তেজনায় সব ভুলে ছিলো। সিগারেট হাতে নিয়ে হঠাৎ বা দিকে তাকাতেই দেখে সেই মেয়েটি! রিকশা ডাকায় ব্যস্ত! সিগারেট টা ছুরে ফেলে দিয়ে কোন কিছু না ভেবেই অনিক ডাক দিল, এই যে শুনছেন?
-জ্বী আমাকে ডাকছেন?
- হ্যা আপনাকেই ডাকছিলাম!
-বলুন কেন, আপনাকে কি আমি চিনি?
-না। আমাকে আপনি চিনেন না।
-তবে ব্যাংক সংক্রান্ত কিছু, তবে অফিস টাইমে আসুন।
-না ঠিক অফিশিয়াল বা ব্যাংক রিলেটেড কিছু না!
-তাহলে সরি, অপরিচিত কারো সাথে রাস্তায় এভাবে কথা বলা উচিৎ না।
- না মানে… আপনি আমার কাছে অপরিচিত নন!
-কিভাবে আমি আপনার পরিচিত?
-কিছুদিন আগে একবার ব্যাংকে এসেছিলাম, আপনার সাথে আমার চোখাচোখি হয়েছিল!
- কি সব বলছেন? আপনাকে তো ভদ্রলোক ভেবেছিলাম!
- বিশ্বাস করুন, আমিও নিজেকে ভদ্র বলেই জানতাম, কিন্তু গত রাত থেকে…
- গত রাত থেকে মানে?
- না মানে, স্বপ্নে আপনার সাথে দেখা হয়েছিল, তাই আজ চলে এসেছি!
- দেখুন, রাস্তা ঘাটে পাগলের প্রলাপ শোনার মতো সময় আমার নেই। আপনি যেতে পারেন।
- চলুন না, তাহলে সামনেই একটা কফি শপ আছে, সেখানে কফি খেতে খেতে কথা বলি?
- আপনি তো ভারী লোক… আপনার সাথে আমি কফি খেতে যাবো কী কারনে?
- কারন আপনি আমার স্বপ্নে এসেছিলেন, আপনার সাথে আমার আগে একবার চোখাচোখি হয়েছিল!
- কি সব উলটা পালটা বারবার এক কথা বলছেন? পাবনা যান!
এই বলেই যখন মেয়েটি রিকশয়া উঠে বসলো, অনিক তখন বলল, অনেক বছর আগে আপনাকে আমি একদিন পোষ্ট অফিসেও দেখেছিলাম…! আপনি যতদিন না আমার সাথে কফি শপে একটা কফি না খাবেন, ততদিন এই সময়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো! শান্তা বুঝতে পারলো মহা পাগলের পাল্লায় পরেছে। কিন্তু পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো।
পরদিন ব্যাংক বন্ধ হলেই শান্তা নেমে দেখে সেই লোকটা! এবং তার হাতে এক গুচ্ছ কামিনী! লোকটা কিভাবে জানলো, কামিনী আমার খুব পছন্দের ফুল?
কোলাহল
Mohd Shahanoor Alam Bhuiyan Titu @ বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীকদের তালিকা
shapan @ প্রসঙ্গ নারী : ধর্মীয় আর সামাজিক বর্বর আইন নারী খৎনা Female Circumcision
Mkjk @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
পারভেজ আহমেদ @ বাংলা কবিতায় ছন্দ কত প্রকার ও কি কি?
Md forid mia @ পা চাটা কুত্তার জলকেলি
Juel @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
Juel @ জলচর মৎস্য হতে স্তন্যপায়ী মানুষ; বিবর্তনবাদের মহা নাটকীয়তার পরিণতি
Ask2ans @ The Boy In The Striped Pajamas