মুক্তিযুদ্ধ তথ্য অনুসন্ধানঃ Log-I ☠ শহীদ বনি আমিন ☠
161
বার পঠিত০২ এপ্রিল, ২০১৫
সকাল ০৯:০০
সূর্য আকাশের এক কোণ থেকে ধীরে ধীরে মধ্য আকাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, আর আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম সারদার দিকে। গতকাল রাজশাহীর তালাইমারিতে কথা হয়েছিল সাব-সেক্টর কমান্ডার ডাক্তার আব্দুল মান্নানের সাথে। তিনি বর্তমানে আমেনা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক। তাঁর মাধ্যমে চারঘাট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা জনাব মিজানুর রহমান আলমার সাথে আমাদের আজ দেখা করার কথা ছিল।
বানেশ্বরে নেমে তাঁকে ফোন করলেন হিমু ভাই (সাব্বির)। ফোনে আলমা স্যার জানালেন তিনি এখন রাজশাহী অভিমুখে যাত্রা করেছেন। রবিবারের আগে তাঁর সাথে দেখা মিলবে না। কাজেই আমাদের পরবর্তী গন্তব্যঃ সারদার গোরশাহরপুর গ্রাম।
এ গ্রামের ছেলে ছিলেন বনি আমিন, ৬৯ সিরিজের রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্টুডেন্ট। আমাদের আজকে এখানে আসার উপলক্ষ্য তিনিই।
বনি আমিন ছিলেন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ। বাবা হাসান আলী মোল্লা ছিলেন ব্যবসায়ী। তাঁর পাঁচ সন্তানের মধ্যে জাকারিয়া ছিলেন পেশাতে আইনজীবি, দ্বিতীয় সন্তান ফজু মোল্লা, তৃতীয় সন্তান ইউসুফ আলী পেশাতে ব্যবসায়ী। চতুর্থ সন্তান ছিলেন রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ৬৯ সিরিজের ছাত্র বনি আমিন, পঞ্চম ও শেষ সন্তান আব্দুল মন্নাফ পড়াশোনা করেছিলেন সারদা ক্যাডেট কলেজ থেকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ’৭০ ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন তিনি।
সারদা বাজারে নেমে আমরা প্রথমেই খোঁজ করলাম মুক্তিযোদ্ধা সংসদের। স্থানীয় একজন জানালেন ওধরণেই কিছু এখানে নেই। তবে ভোলামিয়ার চায়ের দোকানে তাঁরা বসেন। মেইন রোডের পাশে এসে এক ভদ্রলোককে প্রশ্ন করতেই তিনি কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। কারণ বলার সাথে সাথে তিনি হাসিমুখে তাঁর ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন।
ভোলা মিয়ার চায়ের দোকানে পাওয়া গেল একদল মুক্তিযোদ্ধাকে। সংখ্যাতে তাঁরা ছয়জন। তাঁদের কাছে জানা গেল বনি আমিনকে তাঁরা চেনেন এবং তাঁর পরিবারের হদীস তাঁরা দিতে পারবেন।
জানা গেল, শামসুজ্জোহা এবং ইসমাইল হোসেনের ভাই রজব এখনও জীবিত আছেন। উল্লেখ্য, শামসুজ্জোহা এবং ইসমাইল হোসেন ছিলেন বনি আমিনের চাচাতো ভাই। তাঁদের বাবা আহম্মদ আলী মোল্লা সম্ভবতঃ ১৩ এপ্রিলই মারা গেছেন। cialis new c 100
তাঁরা জানালেন, পুলিশ একাডেমি থেকে সরিয়ে ফেলা রাইফেল এবং বনি আমিনদের পারিবারিক অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা, পাকিস্তানিদের কনভয়ের ওপর। খানদানি পরিবার হওয়ার কারণে আগেই তাদের কাছে ইস্যুকৃত অস্ত্র ছিল। কিন্তু, থ্রি নট থ্রি দিয়ে কুলোতে পারেননি তাঁরা। ঝাঁঝরা হয়ে গেছিলেন ঘটনাস্থলেই।
মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট এই দলটি আমাদের জানালেন, ‘আমরা তো এতটুকুই জানি, ওর পরিবারের লোকেরা হয়ত আরও বলতে পারবে।’
টিঅ্যান্ডটির মোড়ে গিয়ে বামপাশে যাওয়ার দিকনির্দেশনা দিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আমরা হেঁটে যেতে থাকি।
টিঅ্যান্ডটির মোড়টা পাওয়া গেল। বাম দিকে ঢোকার পর প্রথম দিককার একটি বাড়ির সামনে একজন বলিষ্ঠ যুবককে প্রশ্ন করলাম, ‘রজব চাচার বাড়ি কোনদিকে?’
সে সামনে দেখিয়ে দিল।
পাশ দিয়ে যাওয়া এক ভদ্রলোক সাইকেলে করে আসছিলেন। আমাদের পাশে আচমকা দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি। বয়স হয়েছে প্রচুর, শুভ্র চুল-দাঁড়ি। তিনি জানতে চাইলেন আমরা কাকে খুঁজছি।
ইনিই কি রজব? ভাবতে ভাবতে তাঁকে উত্তর দিলাম, আমরা রজব চাচাকে খুঁজছি।
ভদ্রলোক বুঝে ফেললেন। বললেন, ‘রজব তো এখন বাইরে, কিন্তু আমরা একই গ্রুপে ছিলাম। কিছু জানার থাকলে আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন।’
টিঅ্যান্ডটির মোড়ে আমরা ফিরে এলাম। রাস্তাটা পার হলে একটা টং দোকান। সেখানে বসে পড়লাম আমরা তিনজন। রজব চাচার এই বন্ধুটির নাম সেলিম রেজা। আমাদের শোনালেন এক রোমহর্ষক কাহিনী।
জানা গেল, ২৮-২৯ মার্চেই কিছু উৎসাহী তরুণদল লুট করলেন পুলিশ একাডেমির অস্ত্র। তাঁরা সেরাতে ১১টা রাইফেল সেখান থেকে সরিয়ে ফেলেন, সাথে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ। তাঁরা এগার-বারোজন মিলে রাতে গ্রাম পাহারা দিতে শুরু করলেন।
লুটের কাজটা সুবিধেজনক হয়েছিল সম্ভবতঃ হাবিলদার লালচাঁদের জন্য।
শামসুদ্দোজার নেতৃত্বে তাঁরা রাতে যেরকম পাহাড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন, সেটাকেই সম্ভবতঃ ‘সোশাল মোবিলাইজেশন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন অন্য এক মুক্তিযোদ্ধা শাফিউদ্দিন।
তারপর অপারেশনে নামলেন বনি আমিনদের গ্রুপ। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে গোপালপুর মিলে হানা দিলেন তাঁরা, হত্যা করলেন চার-পাঁচজন পাকিস্তানী সৈন্যকে। তারপর নন্দনগাছী পোড়াভিটিতে হামলা করলেন তাঁরা, হত্যা করলেন আরও দুইজন পাকিস্তানি সৈন্যকে। উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন বনি আমিন, ইউসুফ, মন্নাফ, ইলিয়াস, শামসুজ্জোহা, সেলিম রেজা, রজব, ভিকু, মহিদ সব সম্ভবতঃ আরও দুইজন।
এই অপারেশনগুলো ‘মুক্তিবাহিনী’র অফিশিয়াল কোন নির্দেশনাতে হয়নি। ভারতে তখনও গঠিত হয়নি মুক্তিবাহিনী, তাঁদের সে অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর কোন নির্দেশ আসা দূরে থাকুক। সেজন্য এই লড়াকু, দুঃসাহসী তরুণদলকে যদি কেউ ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বলতে না চায়, তাহলে তাদের জন্য আমরা করুণা অনুভব করব।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেরি দখল হয়ে গেল অ্যাকাডেমি এক্সচেঞ্জ। এই অসমসাহসী যোদ্ধারা নিয়ন্ত্রণ নিলেন সে স্থানের। সেই সাথে রাজশাহীতে গুপ্তচর লাগালেন, সেখানকার খবরাখবর তাঁরা যোগাড় করতে থাকলেন। (প্রশ্ন চলে আসে, শাফিউদ্দীন যে মোঃ আব্দুল হামিদকে গুপ্তচরবৃত্তিতে দক্ষ বলেছিলেন, তিনিই এসব খবর জোগাড় করতেন কি না?)
বিজয়ের আনন্দে তাঁরা নিস্ক্রিয় হয়ে গেলেন না। ভারত থেকে বোমা তৈরীর সরঞ্জাম আনার ব্যবস্থা করলেন। তারপর নিজেরাই প্রস্তুত করতে থাকলেন বোমা।
১২ এপ্রিল দিবাগত রাতে তাঁরা গুপ্তচরের কাছেই জানতে পারলেন, রাজশাহীতে প্রবেশ করতে চলেছে পাকিস্তানি আর্মি। যাচ্ছে নগরবাড়ির দিকে। কাজেই পরিকল্পনা প্রস্তুত করলেন, ঝলমলিয়াতে (পুঠিয়ার এক স্থান) ব্যারিকেড দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। পাঠানো হল ৪০-৫০ জন মানুষকে, তাদের মধ্যে পুলিশ যেমন রয়েছেন, রয়েছেন সাধারণ জনতা।
অ্যামবুশ প্রস্তুত হয়ে গেল। পাকিস্তানি বাহিনী এদিকে এলে ভালো রকমের বাঁধার সম্মুখীন হবে।
বিশ্বাসঘাতক কিছু স্থানীয় অধিবাসীর জন্য তা হল না। পাকিস্তানি কনভয় এলাকাতে ঢোকার অনেক আগেই তারা জানিয়ে দিল ‘ওইদিকে মুক্তিরা ব্যরিকেড দিয়ে রেখেছে। যাইতে পারবেন না।’
শুধু তাই না, একটা বিকল্প পথ দেখিয়ে দিল ওরা পাকিস্তান আর্মিকে। ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া যায় সেটা ধরে, মেইন রোড না অনুসরণ করলেও চলে।
বড়ালের শাখানদীর তীরে অ্যামবুশ করে থাকা ৪০-৫০ জনের পেছন থেকে যমদূতের মত বেড়িয়ে এল পাকিস্তানীদের কনভয়। ব্রাশ ফায়ার করে প্রত্যেককে হত্যা করল তারা।
নিহতদের মধ্যে পুলিশ একাডেমির মালী রশিদ; পিতাঃ বিহারী কালু খান নাম মনে করতে পারলেন সেলিম রেজা। private dermatologist london accutane
তারপর তিনি চলে আসলেন বনি আমিন প্রসঙ্গে। জানালেন, যুদ্ধের ওই সময়টায় তাঁরা অস্ত্র জমা রাখতেন বনি আমিনদের বাসাতেই। অস্থায়ী মুক্তি ক্যাম্প বলতে যা বোঝায়, তাই ছিল সেটা।
সেরাত ১০টার দিকে সেলিমের চাচাতো ভাই শুকুর যাচ্ছিলেন বানেশ্বরের দিকে। পথেই, হলিদাগাছী রেলগেট থেকে ঘুরে আসলেন তিনি। চোখেমুখে আতংক।
জানালেন, পাকবাহিনী চলে এসেছে সেখানে। এদিকেই আসছে তারা। ‘তোমরা সব পালাও।’
সেলিম রেজা অবাক হলেন। এদিকে আর্মি আসলে গুপ্তচরের নেটওয়ার্কে তা আগেই ধরা পড়ার কথা। কেউ জানাল না, তার মধ্যেই এত কাছে তারা এল কি করে?
শুকুর বললেন, ‘না, না! আমি দেখে আসলাম!’
তারা পোড়াতে পোড়াতে চলে আসছিল গ্রামের দিকে।
শামসুজ্জোহা সিদ্ধান্ত নিলেন, আক্রমণ করবেন এই কনভয়কে। রাইফেলগুলো নিয়ে পুলিশ ও জনতার ছোট্ট একটা গ্রুপ চলে এল একাডেমির একপাশের দেওয়ালে। অপেক্ষা করতে থাকলেন তারা সেখানে।
সেলিম রেজাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। কনভয়কে দেখা মাত্র প্রথম গুলিটা করলেন লালচাঁদ। তারপর বাকিরা। পাকিস্তানীরা সম্ভবতঃ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছিল। আরেকটু সামনে গিয়ে কনভয় থামাল তারা, সারদা বাজারে।
প্রথমবারের মত সেলিম রেজারা বুঝতে পারলেন কি ভুলটাই না করেছেন তাঁরা! ৬০-৬৫টা গাড়ি এখানে পাকিস্তানীদের, প্রতিটার সাথে যুক্ত করা হয়েছে লাইট মেশিন গান।
শুরু হল গুলির ঝড়। বৃষ্টির চেয়ে তীব্রভাবে গুলি করল পাকিস্তানীরা। কোন সুযোগই থাকল না মুক্তিবাহিনীর, ঝটিকা বেগে পিছু হটলেন কেউ কেউ। সম্ভবতঃ বনি আমিনরাও সরে এসেছিলেন সেখান থেকে। প্রতিটা বাড়িতে ট্রেঞ্চ খোঁড়া হয়েছিল। তাঁরা ঢুকেছিলেন সেখানে।
পরবর্তীতে পাকিস্তানীরা তাদের খোঁজে এসে পেয়ে যায়। ট্রেঞ্চ থেকে স্ত্রী কন্যার সামনেই ধরে নিয়ে যায় ইউসুফ আলীকে, দুই মুক্তিযোদ্ধা ভাই বনি আমিন এবং মন্নাফের সাথে তাঁদের বড়ভাই জাকারিয়াকেও ধরে নিয়ে আসা হয় একাডেমির সামনে। zithromax azithromycin 250 mg
জাকারিয়া ছিলেন পেশাতে উকিল (আগেই বলা হয়েছে), তবে সখ ছিল শিকার করা। শিকারী হিসেবে তাঁর প্রসিদ্ধি ছিল, রিফ্লেক্স ছিল চমৎকার।
পাকিস্তানিরা ভাইদের এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করল। চমৎকার রিফ্লেক্সের বশে গুলি তাঁর কাছে পৌঁছানোর আগেই শুয়ে পড়লেন উকিল জাকারিয়া। তিনি ভাইদের রক্তে মাখামাখি, পাকিস্তানিরা ধরে নিল গুলির আঘাতে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এভাবেই প্রাণে বেঁচে গেলেন তিনি।
বক্তা সেলিম রেজা তখন কোথায় ছিলেন? will i gain or lose weight on zoloft
তিনি কনভয়ে আক্রমণ করার পর ব্রাশ ফায়ার (৫০+ মেশিনগানের গুলিকে আসলে আর্চার ফায়ার বললেও কম হয়) থেকে পিছু হটে চলে গেছিলেন পদ্মাতে। নদী পেরিয়ে জীবন রক্ষা করতে চেলেও ভাগ্যে সইল না। পাকিস্তানিরা ওখানেও ছিল। তারা আরও অনেকের সাথে তাঁকে আটকে ফেলল।
বন্দীদের তারা প্রশ্ন করছিল, পুলিশ কারা আছে, চিনিয়ে দাও। সেসময় তারা ‘মুক্তি’ নয়, ‘পুলিশ’ খুঁজতেই বেশি তৎপর ছিল। সম্ভবতঃ প্রথম ধাক্কাটা পুলিশদের কাছ থেকে আসার জন্য এই ভীতি।
ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জিন্নাহ এ প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গুলি করে মারা হয়। গুলি করে একে একে উত্তরদাতাদের মেরে ফেলল তারা। তারপর রাগত ভঙ্গিতে জানতে চাইল, ‘এখানে হিন্দু কারা?’
হিন্দুদের মধ্যে ৫০-৬০ জন দাঁড়ালেন। তাঁদের বলা হল, ‘লাইনে দাঁড়াও।’
লাইনে দাঁড়ানোর সাথে সাথে গুলি করে মেরে ফেলা হল প্রত্যেককে।
সেলিম রেজা তখন চরের মাটি হাত দিয়ে খুঁড়ছেন ধীরে ধীরে। অবস্থা ভাল দেখছেন না তিনি।
হুইসেল বাজানো হল হঠাৎ। মাথা তুলে তিনি ভাবলেন, এবার হয়ত বাকিদের ছেড়ে দেবে তারা। কিন্তু পাকিস্তানিরা তা করল না, বরং সবাইকে আদেশ করল লাইনে দাঁড়াতে।
জনতা দেখেছে লাইনে দাঁড়ালে কি ঘটে, তারা অস্থির হয়ে উঠল। সাথে সাথে জনতার ভীরে গুলি বর্ষণ করা হল। সেলিম রেজার শরীরে ছিটকে পড়ল চারটা অথবা পাঁচটা লাশ। রক্ত আর মাংসের ছেঁড়া অংশ তাঁকে ভিজিয়ে দিল। নিমেষে মাটিতে ফিরে গেলেন তিনি, খোঁড়া সামান্য গর্তে মুখ ডুবিয়ে রাখলেন।
গ্রাউন্ড লেভেলেরও নিচে মাথা রাখার কারণে না, বেঁচে গেলেন শরীরের ওপর পড়ে থাকা লাশগুলোর জন্যই। পাকিস্তানি আর্মি গুলি করেই যাচ্ছিল, সবাই মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও লাশদের ওপর গুলি করছিল তারা। পড়ে থাকা সেসব লাশ বুলেট হজম করে নিয়েছিল, বেঁচে গেলেন সেলিম রেজা।
তবে, পাঁচটি বুলেটের আঘাত তাঁর শরীরে এসে লাগে, একটা লাশ ভেদ করে আসা সেসব বুলেটে তেমন জোর ছিল না, তবুও কোমরের আঘাতটা ভালোই ব্যথাময় ছিল।
মুখ গুঁজে তিনি নিরাপদে বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না। বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ। তাও যতক্ষণ সম্ভব মাথা নুইয়ে রেখে থেকে একসময় তুললেন সেটা। দেখলেন পাকিস্তানি আর্মিরা নেই। দূরে সরে গেছে তারা, নৌকাতে করে সরে যাচ্ছে আরও দূরে।
উঠে আসতে দেখলেন তাঁর শিক্ষক ওয়াসিল স্যারের পেটের পাশে গুলি লেগেছে। কাতরাচ্ছেন তিনি। কেউ কেউ চেঁচাচ্ছেন পানির জন্য। গুলি খেলে নাকি তীব্র পিপাসার সৃষ্টি হয়।
এলাকার আলমকে দেখা গেল মারাত্মক আহত হয়ে পড়ে থাকতে। সে বলল, ‘আমি মনে হয় আর বাঁচব না রে!’
কিছু কমবয়েসী ছেলে ব্রাশফায়ারের মধ্যেও টিকে গেছিল, সম্ভবতঃ সেলিম রেজার মতই ভাগ্যগুণে। তারা দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে এবার ছুটে পালাতে থাকে। বেঁচে থাকার আনন্দে অথবা, মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখার জন্য পাগলপ্রায়।
পাকিস্তানিদের নৌকা ঘুরে এদিকে আসতে শুরু করল। তারা দেখে ফেলেছে। দূর থেকেই গুলি করতে করতে এগিয়ে আসতে থাকল তারা। লাশ টপকে রক্তে মাখামাখি হয়ে উঠে আসলেন সেলিম রেজা, প্রাণপণে ছুটলেন চরের অন্যপ্রান্তে। metformin gliclazide sitagliptin
চারপাশে বুলেট গেঁথে যাচ্ছিল একের পর এক, বাউলি কেটে, শরীর বাঁকিয়ে ছুটলেন তিনি, বালি উড়ছে বুলেটের ধাক্কাতে। টিলামত একটা জায়গা পেরিয়ে তিনি লাফ দিলেন পদ্মাতে।
পানিতে পড়ে কোমর সমান কাঁদাতে গেঁথে গেলেন একেবারে। সেখান থেকে কোনমতে উঠে বুঝতে পারলেন, এই দুর্বল আহত শরীর নিয়ে পদ্মা সাঁতরে পার করতে পারবেন না। কাজেই চারঘাটের পথ ধরলেন তিনি। venta de cialis en lima peru
সেলিম রেজা বললেন, ‘মঙ্গলবারে এই ঘটনাটা ঘটে, তারপরে, শনিবারে আমি আবার ওখানে রিটার্ন আসি। তারপর এখানে এসে দেখছি যে, আমাদের এই গ্রামে, মানে আমাদের এই এলাকাতে একটা বাড়িও নাই। সব পুড়ায় ফেলেছে। তারপর শুনলাম যে মন্নাফ ইসমাইল এরা সবাই নাই। ওদের মর্চার (ট্রেঞ্চ) থেকে উঠায় নিয়ে ওখানে একটা গর্তমত ছিল, ওখানে যেয়ে মেরেছে।’
তিনি তারপরই বললেন, ‘ইউসুফের বিয়া হইছিল ওখানে, ঝিকরায়। শোয়েব আলী সরকারের মেয়ের সাথে, চেয়ারম্যান … ওর মেয়ের সঙ্গে বিয়া হয়। এদেরকে, এই লাশগুলাকে নিয়া যেয়ে ওই ঝিকরাতে, ওই ওর স্থানে, সবাইকে দাফন করেছে। কবরটা বান্ধানো আছে। একসঙ্গে সবাইকে দাফন করেছে। আর ইসমাইলেরটা এখানেই আছে।’
ঝিকরাতে এখন রোকেয়া বেগম (শহীদ ইউসুফের স্ত্রী) থাকেন না। আমরা জানি না ঝিকরাতে আমাদের জন্য আর কোন তথ্য অপেক্ষা করছে। তবে, আমরা এটা জানি, সেখানে অপেক্ষাতে আছে অসমসাহসী কিছু শহীদের কবর।
খুব শীঘ্রই ঝিকরাতে পা রাখতে পারব আমরা, ইন শা আল্লাহ।
[শহীদ বনি আমিনের ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধানে সেদিন সারদাতে এই অভিযান চালিয়েছিলাম আমি এবং হিমু দ্বিতীয় পত্র নামে ফেসবুকে খ্যাত সাব্বির ভাই।] amiloride hydrochlorothiazide effets secondaires
দ্বিতীয় অভিযান চালানো হয় ১০ই এপ্রিল, ২০১৫। পোস্ট করব পরে।
যেহেতু এগুলো শুধুমাত্র Log, কিছুটা এলোমেলো লাগতে পারে।
তথ্য অনুসন্ধান করা হচ্ছে একটি ডকুমেন্টারি তৈরির লক্ষ্যে
achat viagra cialis france