রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার আর শফিউরের সঙ্গে আরেকটি নাম অহিউল্লাহ
334
বার পঠিতবাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিপছিপে গড়নের ছেলেটি ছিলো ভারী দুষ্ট কিংবা দুরন্ত,মাথায় ঝাঁকড়া চুল নিয়ে ঘুরে বেড়ানোই ছিলো তার একমাত্র কাজ।দরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া ছেলেটি তার গ্রাম থেকে দিনমজুর পিতা-মাতার হাত থেকে বাচতে পালিয়ে এসেছে ঘর থেকে ঢাকায়।ছবি আকার বড় শখ ছিলো ছেলেটির সময় পেলেই কাগজ,পেন্সিল নিয়ে বসে পড়ত আঁকাআকি করতে।যার কথা বলছিলাম সে ছিলো ভাষা আন্দোলনের সবচেয়ে কম বয়সী শহীদ নাম অহিউল্লাহ বাবা মায়ের আদরের অহি।
অহিউল্লাহরা থাকত ঢাকার নবাবপুরে। আজকের মতো এত ব্যস্ত আর ঘনবসতি ছিল না তখন নবাবপুর। খুব অল্প মানুষই তখন এই এলাকায় থাকতেন।বড় বড় পথঘাট,দুই-চারটি গাড়ি-ঘোড়া অনেকক্ষণ পর পর ছুটে যেত রাস্তা দিয়ে সাঁ সাঁ করে।আট কী নয় বছরের ছেলে অহিউল্লাহ তার কৌতূহলী মন নিয়ে রাস্তা দিয়ে কারা চলাচল করছে তা দেখত দিনভর।
অহিউল্লাহর বাবা হাবিবুর রহমান ছিলেন রাজমিস্ত্রি। অন্যের দালানকোঠা বানিয়ে দেওয়াই ছিল তার পেশা। খুব গরিব ছিলেন বলেই বড় আশা ছিল ছেলে বড় কিছু হবে। মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে,অভাব দূর করবে। ছেলেকে তাই তিনি পড়তে পাঠিয়েছিলেন স্কুলে।বাংলা ভাষার দাবিতে ঢাকা তখন উত্তল।৪৭ এর ৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া আন্দোলন দিন দিন আরো বাড়ছে।৯ বছরের অহিউল্লাহ এইসব বুঝেনা ছবি আঁকতে গেলে যে পরিবেশ,প্রকৃতি সম্বন্ধে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন,একথাটি ছোট্ট অহিউল্লাহ তার বালক বয়সেই বুঝেছিল। এ জন্যই তো পথের ধারে দাঁড়িয়ে নানা ধরনের মানুষ দেখত সে।
৫২ সালে অহিউল্লাহ পড়ত ক্লাস থ্রী তে।২২ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই পুরো শহরটা থমথমে খুবই অল্প লোকজন রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করছেন। বালক অহিউল্লাহ ঢাকা শহরের এই থমথমে পরিবেশ দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেল। তাদের এলাকায় নতুন আসা কিছু মানুষ নিয়েও সে খুব চিন্তিত এসব খয়েরি রঙের পোশাক পরা, লম্বা লোকদের আগে কখনো এই এলাকায় দেখা যায়নি। আগের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড ও বাঙালিদের প্রবল প্রতিবাদ দেখে ভয় পেয়ে সেনাবাহিনীকে ঢাকা শহরে মোতায়েন করা হয়েছিল। আর নবাবপুর রোডে সংবাদ অফিসের কাছেই ছিল মিলিটারির সবচেয়ে বড় ছাউনি।
এই অদ্ভুত লোকদের দেখে খুব মজা পেয়ে গিয়েছিল নবাবপুরের খোশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ানো অহিউল্লাহ। সে ভাবতে লাগল, এদের কিভাবে ছবি আঁকার বিষয়বস্তু করে তোলা যায়। মনটা তার এত খুশি হয়ে গেল যে, এক টুকরা কাগজ মুখে পুরে সমানে চিবুতে লাগল আমাদের অহিউল্লাহ।যাদের দেখে সে অবাক ও বিস্মিত, তারাই শত্রু হয়ে গেল হঠাৎ। বলা নেই, কওয়া নেই একটা রাইফেলের গুলি এসে অহিউল্লাহর মাথা গুঁড়িয়ে দিল। মাটিতে পড়ে গেল সে। রক্তে ভেসে গেল চারপাশ।
এরপর সরকারি অ্যাম্বুলেন্স এসে গরিব রাজমিস্ত্রির ছেলেটার লাশ নিয়ে গেল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে।বাবা-মা খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে গেলেন হাসপাতালে তাঁরা ওখানে থাকা পুলিশের ওসিকে বললেন,
আমাদের ছেলেটার লাশ অন্তত ফেরত দেন আমরা তাকে দাফন করতে চাই।
কিন্তু গরিবের কথা কে শোনে পুলিশের ওসিও নানা বাহানা করে বিভিন্ন কথা বলে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন জোর করে।
হাবিবুর রহমান সেই যে গেলেন,এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।পুলিশ নিজেদের মতো করে অহিউল্লাহর লাশ দাফন করল, নাকি মাটিচাপা দিয়ে দিল সে তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে অহিউল্লাহর পকেটে পাওয়া গেল একটি রঙিন কাগজের টুকরো যেখানে বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু আর প্রজাপতির ছবি আঁকা ছিল খুব ভালোবেসে এই ছবিগুলো এঁকেছিল সে।
রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার আর শফিউরের সঙ্গে আরেকটি নাম অহিউল্লাহ আমাদের ভাষার জন্য রক্ত দেয়া ৬ প্রাণ।অহিউল্লাহর কোনো কবর নেই তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছিল সেটাও কেউ জানে না।কিন্তু এই পৃথিবীর সবাই জানে ভাষায় জন্য মায়ের ভাষার জন্য দুনিয়ার বুকে একমাত্র আমরাই রক্ত দিয়েছিলাম।সেদিনই এঁকে দিয়ে ছিলাম স্বাধীনতার প্রথম স্বপ্ন টি।
“মোদের গরব,মোদের আশা,আ-মরি বাংলা ভাষা
মাগো তোমার কোলে,তোমার বোলে,কতই শান্তি ভালোবাসা।”
দুরন্ত জয় বলছেনঃ metformin tablet
শরীর শিউরে ওঠে।
অহিউল্লাহ ক্ষমা কর আমাদের, আমরা মনে রাখি না তোমাদের্।
তবে এটাই শেষ নয়।
আমরা লড়ছি, তোমাদের সম্মান প্রতিষ্ঠিত করবই।
ইকবাল মাহমুদ অনিক বলছেনঃ synthroid drug interactions calcium
venta de cialis en lima peruঅসাধারন একটি তথ্য শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ