গল্পটি কাল্পনিক
248
বার পঠিত para que sirve el amoxil pediatrico(এক)
গত তিনটি দিন ধরে বেগম জিয়া একই দুঃস্বপ্ন দেখছেন। বড় ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন। দেখার মাঝামাঝিতে তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে যায় বল্লে ভুল হবে। প্রবল যাতনা নিয়ে সে জেগে উঠে। ঘামে ভিজে যায় তার দামী স্লিপিং গাউন। সাইড টেবিলি ঢেকে রাখা পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করেন। দুঃস্বপ্ন দেখলে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়া ভাল। উনি তাই করেন। উঠে চুলের খোপা ঠিক করে জামা বদলে ওজু করেন। নামাজ শেষে মুনাজাতে কি করে জানি তাঁর ছোট ছেলের জন্য প্রার্থনা চলে আসে, হে পরোয়ার দিগার আমার এই ছোট ছেলের কবরের আযাব তুমি মাফ করে দাও! তিনি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন ভয়াবহ এ দুস্বপ্নটা যখন শুরু হয় তখন কোন এক অশুভ শক্তি তার হাত পা অনেকটা বেঁধে ফেলে। তাঁর ঘুম খুব পলকা থাকে সে সময়। সে দেখে তার বাসভবনে আওয়ামী লীগের পিকেটাররা পেট্রোল বোমা ছুড়ে মেরেছে। কাঁচের জানালা ভেংগে সেই বোমা এসে পড়েছে বেডরুমে। যদিও এটা সম্ভব নয়। বেডরুম ঘরের ঠিক মাঝামাঝি। সে জানে তা। স্বপ্ন তো স্বপ্নই। মেঝের কার্পেটে আগুন ধরে। সে আগুন ছড়াতে ছড়াতে জানালার পর্দায় গিয়ে ধরে। বিছানার চাদরে এসে ধরতেই সে আঁতকে উঠে। নেমে দৌড় দেন বাথরুমের দিকে। কাঁপা কাঁপা হাতে শাওয়ার চালু করে স্থির হয়ে দাঁড়ান জলের ধারার নীচে। ভিজে একশা হোন। ভেতরের মানুষটা বলতে থাকে, ভিজো, আরো বেশী করে ভিজো। ভেজা শরীরের আগুন ধরতে সময় লাগে হে! তাঁর পড়নে ছিল স্লিংপিং গাউন। গোসল করতে এসে দেখে গোলাপী রঙা অত্যন্ত দামী এক জর্জেট। লন্ডন থেকে বড় ছেলের বৌ পাঠিয়েছে। বড় নাতনীটাকে বহু দিন দেখা হয় না, আহারে! হুট করে শুনতে পান একটা গানের কলি। বাহ্ ভারী চমৎকার গলা তো ছেলেটার। আশেপাশের রাস্তায় হয়তো কোন পাগল ছেলে গিটার বাজিয়ে গানটা গাইছে, একবার বল নেই তোর কেউ নেই…. কেউ নেই! সত্যি তো আমার কি কেউ আছে? ভাবে বেগম জিয়া। কিছু স্বার্থপর মানুষ চারপাশ ঘিরে রেখেছে। নিজেকে মনে হয় টয়লেট টিস্যু। ছিঃ! কেবল দিনের পর দিন ব্যবহৃত হয়ে যাচ্ছে। নিলজ্জের মত ব্যবহার। তাঁর চুল বেয়ে বেয়ে পানি ঝরে। আয়নায় তাকাতে সে চমকে উঠেন। চামড়াটা পুড়ে যাচ্ছে কেন? তবে এগুলো কি পানি নয় এসিড? উনি আপ্রান চেষ্টা করেন জেগে উঠতে। পারেন না। এক লহমায় চলে যান সেই সোনা-ঝরা শৈশবে। বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে টক বড়ই খাচ্ছিলেন সে। পেছন থেকে মা ধমকে উঠে, ভিতরে আয়। দরজায় দাঁড়ায় ক্যান বড়ই খাইতাছোস? মাইষ্যে না নজর দিবো, করবনে পেডে বিষ! ঠিক তখনি আর্মির এক সবুজ রঙা গাড়ি তার সামনে দিয়ে এগিয়ে যায়। সে তাকিয়ে দেখেন গাড়িটা থমকে দাঁড়িয়ে কিছুটা পিছনে আসে। ফ্রন্ট দরজা খুলে খাকী পোষাকে নেমে আসেন এক আর্মি অফিসার। চোখে গোল্ডেন ফ্রেমের দামী সানগ্লাস। নাকের নীচে যত্ন করে ছাটা গোঁফ। অফিসারটি গটগটিয়ে এগিয়ে আসেন। হাতের লাঠিটি নিজের বাম পাঞ্জায় মৃদু আঘাত করে বলেন, পুতুল, একি করছো তুমি? -কি করছি আমি? -এই যে মানুষ পুড়িয়ে মারছো? -কি করবো আমি? -কি করবে মানে? -আমি তো পুড়াচ্ছি না। আমি তো হুকুম দিইনি মানুষ পুড়িয়ে মারতে! -তুমি তো নিষেধও করোনি, পুতুল! -কেন করবো? -কেন করবানা? -পার্টি তো আমার নয় মেজর। আমি তো কেবল তোমার নামটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। -তাই বলে মানুষ পুড়িয়ে? -মানুষ তো পুড়াচ্ছে জামায়েত। যাদের তুমি নিজ হাতে প্রস্তত করেছিলে! -সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয়। আরব দেশের সাথে সুসম্পর্কের ধারা তৈরী করতে আমি এটা করেছিলাম। বলা ভাল করতে বাধ্য হয়েছি। আমি যা করেছি সব দেশের গরীব মানুষের জন্য করেছি। দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের সংস্থানের জন্য এতোটা নীচে আমাকে ওরা নামিয়ে ছিল। -আমি যা করছি তাও ভালোর জন্য করছি। গনতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য করছি। অন্যথায় তোমার নাম তো দেশের ইতিহাস থেকে মুছে যাবে। -ছিঃ, কি যে বলোনা পুতুল! নামের জন্য আমি তো কিছু করেনি। যা করেছি, করতে চেয়েছি সব দেশের অনাহারী ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য। -আমি এখন কি করবো বলো? -তোমাকে কিছু করতে হবে না পুতুল। যা করার আমিই করবো। বেগম জিয়া দেখেন মেজর সাহেব কোমরে রাখা রিভালভারটি হাতে নেন। টিগার চাপ দেয়ার আগে কিছুক্ষণ দেখে হয়তো। বড় সানগ্লাসের আড়ালে ঘোলাটে দু’টো চোখ দেখা যায়। ছোট করে ছাটা গোঁফ, মসৃন নিরেট গাল। অভিব্যক্তিহীন মুখ। ভাবে ভালোবাসার মানুষ কি ভালোবাসার মানুষকে খুন করতে পারে? ক্লান্তিহীন চেষ্টায় দুঃস্বপ্ন ভেঙ্গে জেগে উঠে সে। বেঁচে থাকাটা বড় অর্থহীন, পূর্ব জন্মের নোনাধরা পাপ যেন! (দুই) প্রধানমন্ত্রী আধশোয়া হয়ে গল্পের বই পড়ছিলেন। এই অভ্যাসটা সেই তরুণী বয়স থেকে। ব্যস্ততার কারণে ঠিক সেভাবে সময় বের করা মুশকিল হয়। তবুও চেষ্টা করেন এই প্রিয় অভ্যাসটি ধরে রাখতে। সারাদিন নানান ধকল শেষে রাতে শোয়ে প্রিয় লেখকের দু’লাইন পড়ার মধ্যে সুতীব্র আনন্দ আছে। জীবনানন্দ দাসের কবিতা তার বড় ভালো লাগে। কি চমৎকার আর মায়া পুরো কবিতা জুড়ে। হৃদয় অদ্ভদ এক ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়। কবির শীতরাত কবিতার দু’লাইনে এসে চোখ আটকে গেল তাঁর, বিড়বিড় করে আবৃত্তি করলেন, “হে পৃথিবী, হে বিপাশামদির নাগপাশ, – তুমি পাশ ফিরে শোও, কোনোদিন কিছু খুঁজে পাবে না আর।” পাশ ফিরে শোয়া কি সম্ভব? নানান দিকে ছড়িয়ে সুক্ষ্ম মাকড়ের জাল। গুটাতে গেলেই সমস্যা। কত পরিচিত শত্রু কত অচেনা শত্রু ললাটে তাক করে আছে পিস্তলের নল। একটু এদিক-সেদিক বেহিসাবে হলে সব লুটেরারা লুটে নিবে। সব প্লান ভেস্তে যাবে যে! সাদা ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের শব্দে ভাবনা কেঁটে যাওয়ায় উনি বিরক্ত হোন। আলতো হাতে তুলে নেন ফোনের রিসিভার। ও প্রান্ত থেকে পিএস এর বেশ উত্তেজিত কন্ঠ শুনতে পান তিনি, আপা, খালেদা ম্যাডাম ফোন দিয়েছেন? তিনি বেশ অবাক হন। নিশ্চিত হতে নামটা আবার শুনতে চান, কে ফোন দিয়েছেন? পিএস কন্ঠের উত্তেজনা লুকাতে ব্যর্থ হয় ফের। বলে, খালেদা ম্যাডাম, আপা! প্রধানমন্ত্রীর কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। গেল একমাস বড় খারাপ কেটেছে সময়। সংসদে জনসভায় বিভিন্ন সভা সেমিনারে কম কটু কথা বলেননি উনি। উনি যা করেছেন দেশ ও জাতির ভালোর জন্য করেছেন। হ্যাঁ, প্রক্রিয়ায় হয়তো ভুল ছিল বাট বৃহত্তরে স্বার্থে কিছু ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রাখতে হয়। তাঁর মত মানুষের সব ধরে বসে থাকলে মানায় না, চলে না। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে তিনি ছোট করে বলেন, লাইন দিন। মূহূর্তের মধ্যে লাল ফোনটি বেজে উঠে। রিসিভার উঠিয়ে কান নিতেই অত্যন্ত কান্না ভেজা একটি শব্দ শুনতে পান। মনে হয় খুব দূর থেকে কেউ একজন তাকে সালাম দিচ্ছেন। খুব মৃদু স্বরে সেও সালামের জবাব দেন। তারপর একটু নিরবতা। পরক্ষণেই শুনতে পান ও প্রান্তে তিনি কাঁদছেন। ক্ষমতা বড় খারাপ জিনিস। মসনদ হল ব্লটিং পেপারের মত। স্বার্থ খুঁজে পেলে আবেগ শুষে নিতে কার্পণ্য করে না। উৎকন্ঠা ভরা কন্ঠে এ প্রান্ত হতে তিনি খুব সন্তর্পনে বলেন, কি হয়েছে আপা? জবাব আসেনা। কেবলই কান্নার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। সময় বয়ে যায়। যেতেই থাকে। অপরপ্রান্তের এক দেশপ্রেমিকের স্ত্রীর কান্না তাঁর বুকের ভিতর হাহাকার সৃষ্টি করে। কান্না সংক্রামক। তারও বুক ঠেলে কান্না আসে। কান্না লুকাতে গিয়ে ব্যর্থ হোন। আঁচল দিয়ে মুখ চেপে ধরেন। (তিন) সালঃ ২০৪৫। বেশ আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। কোন হানাহানি নেই, ব্যালট ছিনতাই নেই। স্টেটগুলো ভাগ করে দেয়া হয়েছে। কোন একক দল নির্বাচনে পাশ করবে না। পাশ করবেন কেবল নির্বাচনী প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির আসন সংখ্যা একশো করে। জাপা এবং বামদলের পঞ্চাশ করে। মজার ব্যাপার হল কেউ কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছে না। সবাই ইসির সাইডে প্রবেশ করে ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে ভোট দিচ্ছে। অফিস আদালত বন্ধ নেই। বছরের অনান্য দিনের মত চলছে। বিভিন্ন বয়সী ভোট দিতে সক্ষম লোকজন সকাল দশটার পর খুলে দেয়া ইসির সাইডে হামলে পড়েছে। চলছে ভোট। মানুষের এই নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। যারা নির্বাচন করছেন তাদের বিস্তর পড়াশুনা করতে হয়েছে। ইন্টারভিউ ফেস করে নির্বাচনী ক্যান্ডিডেট হওয়ার মওকা মিলেছে। পাশ করার পর যেতে হবে আরেক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে। মাথার নিউরন সেলের সাথে খুবই ক্ষুদ্র একটি চিপ বসিয়ে দেয়া হবে। সেই চিপ একটি বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে মূল কম্পিউটার সিডিসির সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ ধরে রাখবে। দূর্নীতি করলে সাথে আইনের আওতায়। অপরাধ প্রমান হলে আমরণ যাবজ্জীবন। আর হ্যাঁ স্টেটগুলো ভাগ করা হয়েছে অতীতে পার্টির জনপ্রিয়তার উপর আলোকপাত করে। যেমন ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেশী। সেখানে প্রতিটি ক্যান্ডিডেট হবে আওয়ামী লীগের। কুমিল্লায় বিএনপির জনপ্রিয়তা বেশী সেখানে সব বিএনপির ক্যান্ডিডেট। রংপুরে জাপার জনপ্রিয়তা ঢেড়। ওখানে জাপার হয়ে নির্বাচন করবে সবাই। ঢাকাটাকে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। ৩+৩+২+২ আসন করে। বামদের দেয়া হয়েছে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। কারণ আছে, সীমান্ত এলাকায় জ্ঞানের আলো ঠিকমত পৌছায় না। বামদের কাজ তাদের শিক্ষিত করে তুলা। সামাজিক কর্মকান্ডে সীমান্তের মানুষদের আগ্রহ বাড়ানো। মূল কম্পিউটার সিডিসি আজ ছ’টার মধ্যে ফলাফল ঘোষনা করে দিবে। কাল শুরু দু’দিন ব্যাপী আনন্দতাল। নির্বাচিত সাংসদরা ছোট্ট একটি গাড়ি বহর নিয়ে বের হবে। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে জনগণ তাদের ফুল ছিটিয়ে সংবর্ধনা জানাবে। বাজবে ব্যান্ড পার্টি। মানুষ অতীত মনে রাখেনা। বাট এদেশের মানুষ ঠিকই রেখেছেন। সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীর নাম তারা শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করেন। যেমন করেন বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াউর রহমানকে।
অপার্থিব বলছেনঃ
ভাল লিখেছেন তবে শেষের লাইনের সঙ্গে দ্বিমত আছে। ইতিহাসে জিয়াউর রহমানের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা থাকলেও তাকে কখনো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই কাতারে ফেলা যায় না । এই চেষ্টা করাও উচিত না । আহারে এই কল্পনাটাই যদি সত্য হত …
হুমায়ুন রনি। বলছেনঃ
আমি কাতার সেন্সে যায়নি। দুইটা দল এক হয়ে জনগনের জন্য কাজ করুক- তাই বুঝাতে চেয়েছি।