কৈফিয়ত ও কিছু কথা
286
বার পঠিতছোটবেলা যখন হোঁচট
খেয়ে বা পা পিছলে গিয়ে পড়ে যেতাম তখন
আব্বু আম্মু কিংবা অন্য বড় কেউ
না তুললে উঠতে পারতাম না।
এখন মাশাল্লাহ,এর থেকে বেশি কিছু
ঘঠে গেলে ও নিজে নিজের স্বামর্থ্য
দিয়ে কেটে উঠার চেষ্টা করি।
যতই দুর্বোধ্য আর ইস্পাত সমান কোন
সমস্যা হোক না কেন সেটা অল্প হলে ও
নিজের থেকে বোঝার জন্য আপ্রান
চেষ্টা করি।
বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই
গুলা পড়ে মুক্তিযুদ্ধের
ঘটে যাওয়া না জানা ইতিহাস,
মুক্তিযুদ্ধাদের পাকসেনা বধের অবয়ব
কাহীনি গুলা পড়তে সেই ফিলিংস পাই।
তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা আমার
মত ঘুনে ধরা প্রজন্মের জন্য একটা নৈতিক
দায়ীত্ব ও বটে।
সাম্প্রতিক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক দুইটা বই
পড়লাম।
একটা হচ্ছে মেজর জলিল কর্তৃক লিখিত
“কৈফিয়ত ও কিছু কথা”।
বড় ভাই Abu Sale Masum Ahmed ভাই এর
অনুরোধে বইটা পড়তে সক্ষম হই।এরকম
একটা বই উপহার দেওয়ার জন্য অনেক অনেক
ধন্যবাদ মাসুম ভাইকে।
তো বইটা আসলেই ভালো মানের একটা বই
ছিল।
বাট,বইটা পড়ে আমি যতটুকু অনুমান
করতে পারলাম যে বইটিতে জলিল
তিনি প্রত্যেকটা বাক্যেই নিজেকে ধাবিত
করে লিখছেন।
এবং বেশিরভাগ কথাই বলেছেন নিজের
সুনাম করে।
তাছাড়া শেখ মুজিবুর রাহমান,জিয়াউর
রাহমান ও এরশাদদেরকে বেশ
কয়েকটা জায়গায় কটাক্ষ করেছেন।
এমনকি বইয়ের কোথাও তার নিজের
ব্যার্থতা বলতে কিছুই
খুজে পেলামনা বরং নিজের ঔদার্য আর
বীরত্বগাতাঁ্র সংমিশ্রনে সাজিয়েছেন
বইটি।
তাছাড়া জিয়ার নির্দেশে জেনারেল
খালেদ মোশাররফ,কর্নেল হায়দার ও কর্নেল
হুদার মত দেশপ্রেমিকদেরকে
হত্যা বা অনুশোচিত ধরনের কিছুই
লিখা নাই।তারপর ও বইটা পড়ে লোকায়িত
অজান্তা কিছু জানতে পারলাম।এটাই ঢের।
অন্য বইটির নাম হচ্ছে, কর্নেল হুদা ও আমার
যুদ্ধ।
নীলুফার হুদার লেখা। নীলুফার হুদা কর্ণেল
খন্দকার নাজমুল হুদার বীর বিক্রমের স্ত্রী।
বইটি পড়তে গিয়ে বিশেষ
করে বইয়ের শেষ অংশটা পড়ে বেশি করে
মনে হল। এই অংশে কর্ণেল হুদা কিভাবে
মারা গেলেন তার একটি বর্ণনা আছে।
আমরা জানি যে, ব্রিগেডিয়ার খালেদ
মোশারফ, কর্ণেল হুদা ও কর্ণেল হায়দার
একসঙ্গে মারা যান ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর,
তথকাকথিত সিপাহী বিপ্লবের সময়।
কর্ণেল হামিদের ভাষ্যটা পড়া থাকলে
পুরোটা বুঝতে সুবিধা হবে। কর্ণেল হামিদ
লিখেছেন,
‘৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রাত ১২ টায় বঙ্গভবনে
সিপাহী বিপ্লবের খবর পেয়ে জেনারেল
খালেদ কর্নেল হুদা ও হায়দারকে সঙ্গে
নিয়ে প্রথমে ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের
বাসায় যান। সেখান থেকে শেরে বাংলা
নগরে অবস্থিত ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে
যেতে সিদ্ধান্ত নেন। উল্লেখ্য, ১০ম
বেঙ্গলকে বগুড়া থেকে খালেদই
আনিয়েছিলেন তার নিরাপত্তার জন্য।
পথে ফাতেমা নার্সিং হোমের কাচে তার
গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে তিনি হুদা ও
হায়দারসহ পায়ে হেটেই ১০ম বেঙ্গলে গিয়ে
পৌছেন। উক্ত ইউনিটের কমান্ডিং
অফিসার ছিলেন কর্নেল নওয়াজিস ।
খালেদের আগমনের খবর পেয়ে তৎক্ষণাত
তিনি টেলিফোনে টু ফিল্ডে সদ্যমুক্ত
জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার ইউনিটে
খালেদের উপস্থিতির কথা জানান । তখন
ভোর প্রায় চারটা। জিয়ার সাথে ফোনে
তার কিছু কথা হয় । এরপর তিনি মেজর
জলিলকে ফোন দিতে বলেন। জিয়ার সাথে
মেজর জলিলের কথা হয়।
ভোরবেলা দেখতে দেখতে সিপাহী
বিদ্রোহের প্রবল ঢেউ ১০ম বেঙ্গলে এসে
পড়ে। পরিস্থিতি কর্নেল নওয়াজিসের
নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। আফিসার
মেসে বসে খালেদ-হায়দার -হুদা সকালের
নাস্তা করছিলেন। হুদা ভীত হয়ে পড়লেও
খালেদ ছিলেন ধীর, স্থির, শান্ত। হায়দার
নির্ভীক নির্বিকারভাবে পরাটা মাংস
খাচ্ছিলেন। এমন সময় মেজর জলিল কয়েকজন
উত্তেজিত সৈনিক নিয়ে মেসের ভিতর
প্রবেশ করে। তার সাথে একজন বিপ্লবী
হাবিলদারও ছিল।
সে চিৎকার দিয়ে জেনারেল খালেদকে
বলল-”আমরা তোমার বিচার চাই”! খালেদ
শান্তকণ্ঠে জবাব দিলেন,” ঠিক আছে ,
তোমরা আমার বিচার করো। আমাকে
জিয়ার কাছে নিয়ে চলো।”
স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার
চিৎকার করে বললো-”আমরা এখানেই
তোমার বিচার করবো।”
খালেদ ধীর স্থির । বললেন, ” ঠিক আছে ,
তোমরা আমার বিচার করো ।” খালেদ
দু’হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকলেন।
ট্যারর-র-র-র ! একটি ব্রাস ফায়ার ।
মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন সেনাবাহিনীর
চৌকস অফিসার জেনারেল খালেদ
মোশাররফ যার ললাটে ছিল বীরযোদ্ধার
জয়টিকা , মাথায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের বীর
উত্তমের শিরোপা আর মাথার বাম পাশে
ছিলো পাকিস্তানী গোলন্দাজ বাহিনীর
কামানের গোলার গভীর ক্ষতচিহ্ন।
কামরার ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ
করলেন আগরতলা ষড়যন্ত্রমামলার অন্যতম
আসামী, মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের
সাবসেক্টর কমান্ডার বীর বিক্রম কর্নেল
নাজমুল হুদা।
কর্নেল হায়দার ছুটে বেরিয়ে যান কিন্তু
সৈনিকদের হাতে বারান্দায় ধরা পড়েন ।
উত্তেজিত সৈনিকদের হাতে তিনি
নির্দয়ভাবে লাঞ্চিত হন । তাকে
সিপাহীরা কিল ঘুষি লাথি মারতে মারতে
দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে এনে ব্রাশ
ফায়ারে হত্যা করে।’
নীলুফার হুদা এসময়ের কথা জানাতে গিয়ে
নতুন কিছু বলেছেন। এর মধ্যে দুটি তথ্য
এখানে বলা যেতে পারে।
১. কর্ণেল নওয়াজিস জিয়াকে ফোন করেন
সে তথ্য নীলুফার হুদাও একই ভাবে
দিয়েছেন। তারপর বলেছেন, ’এই সময় সেই
কক্ষে অবস্থানরত কর্ণেল তাহের বাইরে
যান এবং মিনিট ১৫ পর ফেরত আসেন। এর
আধ ঘন্টা পর সেখানে আবার টেলিফোনে
খবর এলো, নওয়াজেসের ব্যাটেলিয়ানের
বাইরে থেকে কিছু পোশাকধারী এসে
খালেদ মোশারফ, হুদা ও হায়দারকে হত্যা
করে বেয়নেট চার্জ করেছে।’
নীলুফার হুদা খালেদ, হুদা ও হায়দারের
হত্যার জন্য এখানে সুস্পষ্টভাবেই কর্ণেল
তাহেরকে দায়ি করেছেন।
কর্ণেল তাহের তাঁর সেই বিখ্যাত
জবানবন্দিতে কি বলেছিলেন মনে আছে?
বলেছিলেন-, ‘তেসরা নভেম্বরের পর কি
ভয়ার্ত নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির মধ্য
দিয়ে এ জাতির জীবন অতিবাহিত হচ্ছিল
তা সবারই জানা।……এটা সবার কাছে স্পষ্ট
হয়ে গিয়েছিল যে, খালেদ মোশাররফের
পেছনে ভারতীয়দের হাত রয়েছে।’
২. নীলুফার হুদা শেষ পর্যায়ে এসে
লিখেছেন, ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানও
নিহত হলেন। তিনিও বাঁচতে পারলেন না।
জিয়া হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে
নওয়াজিশদের ফাঁসির আদেশ হলো, তখন
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে
তাঁদের স্ত্রীরা, পরিবারের সদস্যরা অনশন
করলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে যাওয়ার পর
একজন হঠাৎ করে আমার পায়ের ওপর মাথা
রেখে অঝোরে কাঁদতে লাগলো। তাকিয়ে
দেখি এক মেয়ে। সে কাঁদছিল আর বলছিল,
‘ভাবি, আপনি আমাদের মাফ করে দেন।
ওরা যে অন্যায় করেছিল, তার ফল আজকে
আমরা পাচ্ছি। আমাদের মাফ করে দেন।’
সে বললো, সে নওয়াজেশের স্ত্রী।
আদালত কর্ণেল তাহেরের বিচার নিয়ে
ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। বঙ্গবন্ধূ হত্যার
বিচার হয়েছে। তাহলে খালেদ-হুদা-
হায়দারের হত্যার বিচার কেন হবে না?
খালেদ মোশাররফ প্রায়ই বলতেন, “স্বাধীন
দেশের সরকার জীবিত গেরিলাদের চায়
না, নো গভর্নমেন্ট ওয়ান্টস অ্যান
অ্যালাইভ গেরিলা, নিতে পারে না………”।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর হুদা একবার তাঁর
স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘কোনো দেশ স্বাধীণ
হলে সেই দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ
বাঁচতে দেয় না। ইতিহাসে
মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচিয়ে রাখার নজির
কম। আমাদের তারা বাঁচতে দেবে না।’
এবার বইয়ের কিছু তালিকা (আমার যা
জানা আছে)
আমার জানা মতে, প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে
ক্যু নিয়ে তিনটা বই আছে
১. একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ: রক্তাক্ত মধ্য-
আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর-কর্ণেল
শাফায়াত জামিল। সাহিত্য প্রকাশ
২. বাংলাদেশ:রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫-৮১-
ব্রি. জে. এম সাখাওয়াত হোসেন। পালক
প্রকাশনী।
৩. তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা
কথা-লে. ক. এম এ হামিদ। শিখা প্রকাশনী
এছাড়া সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের
মধ্যে আছেন
১. এক জেনারেলের নিরব সাক্ষ্য:
স্বাধীনতার প্রথম দশক-মে.জে. মইনুল
হোসেন চৌধুরী (অব.)। মাওলা ব্রাদার্স।
আরও আছে (এসব বইয়েও ক্যু নিয়ে বেশ কিছু
জানার আছে)
১. সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা: ১৯৭৫ থেকে
১৯৮১-আনোয়ার কবির। সাহিত্য প্রকাশ
২. বাংলাদেশের রাজনীতি: ১৯৭২-৭৫-
হালিম দাদ খান। আগামী প্রকাশনী
৩. সৈনিকের হাতে কলম-নায়েক সুবেদার
মাহবুবর রহমান। আলীগড় প্রকাশনী।
৪. অসমাপ্ত বিপ্লব: তাহেরে শেষ কথা-
লরেন্স লিফসুলৎস। নওরোজ কিতাবিস্তান
৫.বাংলাদেশ রক্তের ঋণ-অ্যান্থনি
মাসকারেনহাস। হাক্কানী পাবলিশার্স
৬. কর্ণেল হুদা ও আমার যুদ্ধ-নীলুফার হুদা,
প্রথমা প্রকাশনী
৭.শতাব্দী পেরিয়ে-হায়দার আকবর খান
রনো। তরফদার প্রকাশনী।
৮. বলেছি বলছি বলবো-শাহ মোয়াজ্জেম
হোসেন। ঐতিহ্য
৯. বঙ্গভবনে পাঁচ বছর, মাহবুব তালুকদার,
ইউপিএল
১০. রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রবন্ধ-
আহমদ ছফা (মুজিরহত্যার নীলনক্সা: আমি
যতটুকু জানি)
১১. স্বৈরশাসনের নয় বছর:রফিকুল ইসলাম,
ইউপিএল
বইয়ের তালিকা পূর্ণাঙ্গ নয়। আসুন
তালিকাটা পূর্ণাঙ্গ করি। যার যে বইয়ের
নাম জানা আছে এখানে দিলে সবারই
কাজে লাগবে।
অপার্থিব বলছেনঃ
অবশ্যই। কেন নয়? সকল হত্যার বিচার হওয়া উচিত। খালেদ মোশারফের মত বীর মুক্তিযুদ্ধা হত্যার বিচার না হওয়া জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার।
জ্ঞাতার্থে একাত্তর বলছেনঃ achat viagra cialis france
accutane pricesহ্যা সেটাই তো চাওয়া। দেখি কি হয়