মাই প্রিসন; মাই প্রাইড (পর্ব-১)
1242
বার পঠিত viagra vs viagra plus“হাই ফ্রেন্ডস! ভূত এফ এম এর আজকের এপিসোডে স্বাগতম! আমি এমন একটি এপিসোড অনএয়ার করতে যাচ্ছি যেটা অনএয়ার হওয়ার পর আমার কোনো অনুশোচনা থাকবেনা, প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকবেনা। যদি কখনো অনুধাবন করি যে,এটা বলে ভুল করেছি,সেটা আমাকে বিন্দু পরিমাণ ভাবাবে না। আমাকে সেটা বিসর্গ পরিমাণ নাড়াবেনা। যদি কখনো বুঝতে পারি যে,এটা প্রচার আমার ভালো হয়েছে,স্মৃতি গুলো জমে গেছে হিমালয়ের বরফের মত,তবুও আমার তৃপ্তির বরফ গলে কখনো নদী হয়েও বইবেনা। আমি এটা বলছি একরকম নিষ্প্রাণের মত;অনুভূতিহীন অ্যানিমেশনের মত,অনেকটা প্লেস্টেশানের কোনো গেইম চরিত্রের মত”। শুরু করছি রাসেল ভাই!
“ছোটো বেলায় কাগজ টুকরো করে একটা খেলা খেলতাম। বাবু-পুলিশ-চোর-ডাকাত। লটারির মত। চারটি কাগজ ছড়িয়ে দেয়া হত। যার ভাগ্যে বাবু উঠবে সে ১০০ পয়েন্ট। পুলিশের জন্য ৮০ পয়েন্ট। ডাকাতের জন্য ৬০,চোরের জন্য ৪০। বাবু উঠলে কোনো ঝামেলা নেই। পুলিশ উঠলেই ঝামেলা। পুলিশ বলতে হবে বাকি দুইজনের কে চোর কে ডাকাত। ঠিক বলতে পারলে পুলিশ ৮০ পয়েন্ট পাবে,চোর-ডাকাত শূন্য। আর বলতে না পারলে পুলিশ শূন্য,চোর ডাকাত তাদের নিজের পয়েন্ট পাবে। খেলাটা নেহাত ছেলে খেলা নয়। সত্যিই এখানে অনেক বড় একটা মেসেজ খুঁজে পেয়েছি। আর সেটা জেলখানায় আসার পর। তবে নিয়মের একটু চেঞ্জ। চোর-কিংবা ডাকাত শনাক্ত করতে না পারলেও পুলিশ ৮০ পয়েন্ট পাবে। বাকিরা শূন্য পাবেই। মাঝখানে ঘটে একটা নাটক। সেই নাটকেই মঞ্চস্থ হয় জেল-জরিমানা। সেই সাথে “জামিন আবেদন মঞ্জুর” এর মত পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর বাক্য। আবার “জামিন আবেদন নামঞ্জুর” এর মত পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ বাক্য। চোর ডাকাত অনেকটা পাপেটের মত। পুলিশ এক্ষেত্রে মাস্টার অব পাপেট। You should obey your master এর চেয়ে You must obey your master কথাটাই এখানে গ্রহণযোগ্য।
ইন্টার পরীক্ষার দুইদিন আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ। দুইদিন বলতে ভুল বলছি। রাত ১২ টার পরে। সেই হিসেবে ৩৬ ঘণ্টা আগে বললে শুদ্ধ হয়। তবে জেলখানায় ঢুকার আগে থেকেই একটা বিষয় নিশ্চিন্ত হতে পেরে ভালো লেগেছে। সেটা হচ্ছে,জেলের ভিতরেই দিতে পারবো ইন্টার। কোর্ট বিল্ডিং এর মেট্রো কাস্টডি লকার আমার দেখা সবচেয়ে বিশ্রী স্থানের মাঝে অন্যতম। কেন বিশ্রী সেটা বলার ইচ্ছা কিংবা ভাষা আমার নেই। কেউ উঁকি মেরে দেখে আসতে পারেন। সেখানে মাথা নিচু করে বসেছিলাম প্রায় চারঘন্টার মত। বিরক্তিকর অবস্থা। তার উপর চশমা ভেঙে গেছে। মাথা ধরে যাচ্ছে সিগারেট (সম্ভবত অন্যান্য নেশাজাত কিছু) এর ধোঁয়ায়। সারা রুমে ধোঁয়া আর ধোঁয়া। ঝিম ধরে বসে থাকার মাঝে অহংকার অনুভব করলাম। কারণ,আমি ছাড়া কেউই ঝিম ধরে বসে নেই। সন্ধ্যার সময় লকার খুলে হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো হল। ১২ জনকে একসাথে তোলা হল গাড়িতে। গাড়িতে আরো কেউ আছে। এরপরই মহা-দোজখ! একের পর এক আসামীর দলকে ঠেলে তোলা হচ্ছে গাড়িতে। এমন অবস্থা যে,গাড়িতে সুতা রাখার মত জায়গা নেই,কিন্তু তোলা হচ্ছে। গরমে সিদ্ধ হওয়া কাকে বলে সেটা শিক্ষা নিলাম,সেই সাথে এটাও মনস্থির করলাম বাসায় কখনো ঘামিয়ে গেলে আম্মুকে আর পাখা করতে বলবোনা। হ্যাঁ,আজ পর্যন্ত বলিনি।
নীল রঙের প্রিজন বাসে করে অন্ধকারের মাঝে নেমে এলাম কারাগার প্রাঙ্গণে। যেহেতু আমাদের পরীক্ষা তাই বাবা মা মেডিকেল ওয়ার্ড ঠিক করে দিয়েছিলেন। আমি রোগী নই যে মেডিকেল ওয়ার্ডে যাবো। তবে কারাগারের অবস্থা দেখে যা বুঝলাম,আসামীরা মানুষ নয়,তারাও কুকুর। মেডিকেল ওয়ার্ডেও নেই শান্তি। নামেই মেডিকেল ওয়ার্ড। কাজে খুব একটা আলাদা নয়। যেহেতু,আমার জ্বর ছিলো সেদিন আর শরীরের অবস্থাও ভাঙা ভাঙা তাই মেডিকেল ওয়ার্ডে থাকা নিয়েই সায় দিলাম। কারাগারের প্রথম গেইটে ঢুকেই দেখি ভিতরে জেলারের রুম সহ আরো অনেক কামরা। এক পাশে বসে আছে চেক কমান্ড। তারা সবাইকে চেক করছে। লুঙ্গি,গেঞ্জি সব কিছুর ফাঁক দিয়ে চেক করছে যে কারো সাথে কোন অস্ত্র বা টাকা পয়সা আছে নাকি। টাকা পয়সা থাকলে রেখে দিচ্ছে। পরে নাকি ক্যান্টিন কার্ডে টাকা রিচার্জ করে দেয়া হবে। সুন্দর নিয়ম। আদালতে ঢুকার আগে আমার কাছে ৬১৮ টাকা ছিলো। এক পুলিশ আমাকে ভয় দেখালো,কারাগারে টাকা পেলে নাকি সমস্যা করে। আমি অতশত না ভেবে টাকাটা তার হাতে দিয়ে বললাম,কিছুক্ষণ পরই আমার আব্বু আম্মু আসবে। দিয়ে দিবেন। পুলিশ টাকা আব্বু আম্মুকে দেয়নি। সে আব্বু আম্মুকে চিনত,তবুও দেয়নি। আসামীর টাকা মেরে দেয়া সম্ভবত আইনসিদ্ধ। তাই আইনের ব্যাপারে আমি কথা বলছিনা।
যাই হোক,দুইজন সবাইকে চেক করছে। দুইজন আমাদেরকে দেখে খানিকটা বিচলিত। আমি হাসি হাসি মুখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। কারণ,আমি আন্ডারওয়্যার পরিনি। প্যান্ট খুলে চেক করতে গেলে বিশাল কেলেঙ্কারি হবে। আমার সাথে আমার এক ফ্রেন্ড আছে আছে। সে প্যান্ট পরেছে। প্যান্ট নিচে নেমে যাওয়ায় খয়েরী আন্ডারওয়্যার দেখা যাচ্ছে। আমার হাতে প্রায় সারাদিন হ্যান্ডকাফ। বাম হাতের শিরা ফুলে আছে। আমার ফ্রেন্ডের কাছেও টাকা ছিলো। সে সম্ভবত সেটা জমা করে দিয়েছে। যারা চেক করছিলো,তারা আমাদের খুব একটা চেক করলো না। ওকে তখন চেক করা হয়েছে। সে সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে জেলের মেইন গেটের সামনে;কুচকুচে কালো বিশাল গেইট। দেখলেই ভয় লাগে। এরপর আমাকে চেক করা শুরু করলো। আমার শার্টের পকেট দেখলো। প্যান্টের পকেট দেখলো। প্যান্ট ভয়াবহ লুজ,বেল্ট নেই বলে। আমি বাম হাতে প্যান্ট টাইট করে ধরে আছি। আমি আস্তে আস্তে করে বললাম,“আন্ডারওয়্যার নেই। আমি চেইন খুলে দিচ্ছি। আপনি লাইট মেরে দেখে নেন,জিনিস আছে কিনা”। তিনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। আমি ঢোক গিলে বললাম, জিনিস। মানে অস্ত্র-টস্ত্র আছে কিনা… তিনি আমাকে আর চেকিং করলেন না। আমাকে ফাইল করার জন্য পাঠিয়ে দিলেন গেটের কাছে। আমি হাঁটু গেড়ে বসলাম। বাম হাতে শক্ত করে প্যান্ট ধরে আছি। কাউকে জিনিস দেখতে দেয়া চলবেনা।
জেলখানায় ফাইল করার সিস্টেম সুন্দর। চারজন হাঁটু গেড়ে বসে এক সারি করে। এর পিছনে আরো চারজন। এর পিছনে আরো চারজন। এভাবে করে বসতে হয়। তারপর জেল পুলিশ সারি সংখ্যাকে চার দ্বারা গুণ করে আসামীর সংখ্যা ফাইলে লিখে দেয়। ভারী কালো গেইট খুলে দেয়া হচ্ছে। কৌতূহলী হয়ে ভিতরের মনোরম পাকা রাস্তা আর বাগানের দিকে উঁকি মারতেছি। সুন্দর জেলখানা। আমি ঢুকে গেলাম। পিছনেই শব্দ করে গেইটে বাইরে থেকে তালা লাগানো হচ্ছে। স্বীকার করতেই হচ্ছে রাসেল ভাই,ঘটনাটা খুব উইয়ার্ড। চুপি চুপি তালা লাগিয়ে দিলেই তো চলে তাইনা! এত শব্দ করে পাঁচ মিনিট ধরে একটা তালা লাগানো সত্যিই খুব উইয়ার্ড ঘটনা!
জেলখানায় ঢুকে আরো দুইবার ফাইল করা হল। আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হল মেডিকেল ওয়ার্ডে। আমাদের বাবা মা আমাদের সামনেই কোর্টে পুলিশকে বারো+বারো=চব্বিশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন মেডিকেল ওয়ার্ডের ভর্তি ফি! রাসেল ভাই,এটাও খুব উইয়ার্ড যে,মেডিকেল ওয়ার্ডের সুপারভাইজার আমাদের বলেছেন তিনি এক টাকাও পাননি। টাকা গেল কোথায়? আমি আইনের ব্যাপারে কথা বলতে চাইনা। তর্কের খাতিরে সবকিছুই আইনসিদ্ধ ধরে নিলাম। মেডিকেল ওয়ার্ডে গিয়েই দেখলাম রোগীর খাট মোট আটটি। সবাই শুয়ে টিভি দেখছে। আমাদের ওয়ার্ড মেট শাহাবুদ্দীন ভাইয়ের সাথে পরিচয় হল। তিনি বিডিআর সদস্য ছিলেন। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় গণরায়ে চাকুরী হারিয়ে এখন তিনি জেলখানায়। বিডিআরদের কারণে জেলখানাটা চমৎকার লাগলো। জওয়ানরা জেলখানায় সত্যিই প্রশংসনীয় শৃঙ্খলা রাখতে পারছে যেটা সাধারণ আসামিদের জন্য হয়তো অসম্ভব হত। আমাদের ওয়ার্ড বয়ের নাম ছিল জাহিদ ভাই। আর কেয়ারটেকার জসীম ভাই! এই জেলখানার ভিতরেই আমার কেটেছে জীবনের অসাধারণ ২৪ টা দিন! অসাধারণ বলছি এই জন্যে যে,এই দিনগুলোতে আমি হেসেছি,কেঁদেছি,আনন্দ করছি,মন খারাপ করে বসে ছিলাম,মোটামুটি মানুষের জীবনে যতরকম অনুভূতি,যতরকম শিক্ষা,যতরকম অভিজ্ঞতা হওয়া সম্ভব সেটা আমার এখানে বসেই। আর সেইসব অভিজ্ঞতা শেয়ার করার প্রয়োজনেই আমি এই সিরিজের সূচনা করলাম!
ওয়ার্ডে ঢুকার পরই দরজা বন্ধ করা হল। দরজায় লোহার শিক। মোট ১২/১৩ টি শিক ছিলো দরজায়। শিকের মাঝ দিয়ে একটি আড়াইশো গ্রাম আয়তনের স্টিলের গ্লাস সহজেই ভেতর বাহির করা যেত। গোসল করতে বলা হল আমাকে। ব্যাগে আম্মু কাপড় চোপড় দিয়ে দিয়েছেন। সেই সাথে আমার প্রিয় গামছাও। আর ক্লাস নাইন থেকে আমার ট্রেডমার্ক কালো টিশার্ট। আমি বাথরুমে ঢুকে দেখি মহাবিপদ! বাথরুমের দরজা বুক আমার সমান। এর উপর খালি। ভিতরে ঢুকে যাতে কেউ আত্মহত্যা না করতে পারে সেজন্যই এই ব্যবস্থা। রাখা হয়নি কোন হুকও! তবে দরজার উপর নাইলনের দড়ি আছে। সেটার উপর গামছা দিলেই বাথরুমের ভিতর দেখা যায়না। তবে,কোনো শয়তান যে গামছা সরাবে না তার কি নিশ্চয়তা! আজ সারাদিন প্যান্ট ধরে রেখে ইজ্জত বাঁচিয়েছি। এখন যদি এখানে এসে এত সহজে ইজ্জত হারাতে হয়,প্যান্টকে ধরে রাখার কি দরকার ছিলো?যে চলে যেতে চায়,তাকে চলে যেতে দাও। চলে এর জায়গায় পড়ে হবে। আমি গামছাকে টাইট করে দুই পাশে বেঁধে দিলাম। দেখতে হলে কষ্ট করে গিট্টু খুলে দেখো। এত সহজে আমিও হাল ছাড়িনা! হুঁ!
জাপানে একটি কোর্স করানো হয়। নাম কায়াজিমা। এটা হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কিছু আইকিউ। আমার আব্বুর বিশ্বাস এটা আমার মাঝে ভালোই আছে। বিশ্বাসের কারণ হচ্ছে, আমি তার অনেক টাকা সেইভ করে দিই। যেমন দরজার হুক নষ্ট হলে,তিনি হুক না কেনার দায়িত্ব আমাকে দেন। আই রিপিট! হুক না কেনার! আমাকে হুক বানাতে হয় বিচিত্রভাবে। দেখা গেল এক ঘণ্টার মাঝে বলপয়েন্ট আর চামচ দিয়ে আমি অসাধারণ (!) একটা হুক বানিয়ে ফেললাম! একবার আব্বুর ৫০০ টাকা দামের একটা নোট ছিঁড়ে গেছে। আব্বু নোট ব্যাঙ্কে চেঞ্জ না করার দায়িত্ব আমাকে দিলেন। আমি আইকা গাম দিয়ে নিপুণভাবে নোট এমনভাবে জোড়া লাগিয়ে দিলাম সেটা আইডেন্টিফাই করা অসম্ভব। আমার এই ফালতু আজাইরা জ্ঞানটাই জেলখানায় কাজে দিয়েছিলো। সেটা সিরিজ পোস্টের মাঝে মাঝেই বুঝা যাবে। আপাতত আমি নেটের ব্যাগ দিয়ে আমার জন্যে একটা বেল্ট বানিয়ে নিলাম। লাক্স সাবান দিয়ে গোসল করার পর উঠে বসলাম খাটে। শাহাবুদ্দীন ভাই আমাকে খেতে দিলেন। খাওয়া পেটে ঢুকছেনা। তিতা ভাত তাও আবার পানি দেয়া,তার সাথে কাঠের মত শক্ত একটা ছোট্ট মাছের গোল টুকরা। লবণের জন্য দাঁত বসাতেই পারছিনা। দাঁত কাঁপে। আমি কোনোরকম ভুংভাং খেয়ে একপাশে উঠে বসলাম। শাহাবুদ্দীন ভাই আমাদেরকে কাছে ডেকে জেলখানার নিয়ম কানুন বুঝিয়ে দিলেন। পরদিন নাকি ফাইল করতে হবে! ফাইল কি জিনিস! কয়বার করবো আর এই কাজ! তিনি বুঝিয়ে দিলেন এই ফাইল হচ্ছে আসল ফাইল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমরা কি কেইসে আসছি এখানে। আমি বললাম,“৫৭ ধারা”। তিনি বুঝলেন না। কেইসটা কি। আমি বুঝানোর দরকার বলে মনে করলাম না। শাহাবুদ্দীন ভাই বললেন,আমাদের দুইজনকে ২৪ হাজার টাকা দিতে হবে। একজন জেল পুলিশকে একশো টাকা দিলেন সকালে আব্বু আম্মুর কাছে ফোন করার জন্যে! মাননীয় স্পিকার! আপনি জানেন কি? ঠিক ঐ সময় হানি সিং এর গান চলছিলো টিভিতে। সানি সানি সানি… পানি পানি পানি… এটা খুবই উইয়ার্ড একটা গান রাসেল ভাই।
আমি বাংলা বই নিয়ে বসে পড়লাম কালকের পরদিন সকালে পরীক্ষা। কি পড়ছি কিছু মনে নাই। সবাই টিভি বন্ধ করলে শুয়ে পড়লো। নিয়ামানুযায়ী জেলখানার বাত্তি কখনো নিভেনা। কারণটা হচ্ছে… না বললাম। আমি গোঁ গোঁ করে বাংলা পড়ছি। মাথায় কিছু ঢুকেনা। বই বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। জীবনে এই প্রথম রাত! এত বড় জেলখানায়! পাশে নেই আম্মু বা আব্বু! এটাও জীবনে প্রথম। কারো সাথেই পরিচিত হওয়া হয়ে উঠেনি এখনো। সেটা হয়ে যাবে কালকের মাঝেই।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই অস্বস্তি লাগছিলো। ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠিনি কখনো। আমাদের নিয়ে যাওয়া হল অন্য একটি ভবনে। ভোরের জেলখানা আমার অসাধারন লেগেছিলো। আমরা উঠে এলাম দুই তলায়। সেখানে ঢুকে দেখলাম আরো অনেক লোক বসে আছে পা ছড়িয়ে। আমরা গিয়ে বসলাম। বিডিআর সদস্যরা অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে জেল খানার কায়দা কানুন শিখাচ্ছে। আমি মুগ্ধ হয়ে শিখছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমাদের পাশেই বসছে লাল গেঞ্জি ওয়ালা চকবাজার থানার সেই ছোকরাটা। নাম জনি। এই শালা এখানে কি করে। এ আমাদেরকে পুরা নার্ভাস করে দিয়েছিলো! তার কথার কিছু চুম্বক অংশ হচ্ছে
“লাইফটা বরবাদ হয়ে গেল তোমাদের
-বলেন কি! আমরা পরীক্ষার্থী।
-কিসের পরীক্ষা?পরীক্ষার কথা ভুলি যাও। এখান থেকে বাইর হও আগে।
-পরীক্ষার কথা ভুলবো মানে! বলেন কি!
-তো কি করবা?
-জেলখানায় পরীক্ষা দিবো!!
আমাদের কথা শুনে ফোকলা দাঁত বাইর করে জনি হাসতেছিলো। এখন ইচ্ছা করতেছে ওর ফোকলা দাঁত বরাবর একটা ঘুষি মারি। সারাটা দিন আমাকে টেনশনে রেখে দিছিলো। তার মতে জেলখানায় সে আরো গেছে। তার সাথে পরীক্ষার্থীরাও ছিলো। তারা কেউ পরীক্ষা দিতে পারেনাই। জেলখানায় এই অনৈতিক সিস্টেম (?)নাই। আমি ধৈর্য ধরে তাকে কানে কানে বললাম যে আমরা পরীক্ষা দিতে পারবো। সে মুখে শুধু বললো,“অ। আচ্ছা”। পায়ের নখ খুঁটতে লাগলো সে। ইচ্ছা করতেছিল তার নখ তুলে ফেলি। চুপচাপ মনির ভাইয়ের বক্তব্য শুনতেছি। প্রচণ্ড উৎসাহের সাথে তিনি আমাদের নিয়ম কানুন শিখাচ্ছেন। সেইসব নিয়ম কানুন বর্ণনা করতে গেলে দিন পেরিয়ে যাবে। সব কিছু আমার মাথার উপর দিয়ে গেল। তবে একটা জিনিস শিখে নিলাম। জেলসুপার যখন আমাদের রুমে প্রবেশ করবেন তখন তিনি চিৎকার করে বলবেন “বন্দীগণ! সাআআআআআআবধাআআআআআন!” তখন আমাদের সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে আমার ভোকাল কর্ড কাঁপিয়ে চিৎকার দিয়ে বলতে হবে “আসসালামুআলাইকুম!”বিডিআর জওয়ানরা মহড়ায় বিশ্বাসী। তারা ব্যাপারটা আমাদের দিয়ে কয়েকবার মহড়া করালেন। সমস্যা হচ্ছে কারোই সালাম দেয়াটা তাদের পছন্দ হচ্ছেনা। তারা আরো চিৎকার করতে বলতেছেন। বন্দীগণ সবাই তাগড়া জোয়ান না যে তারা এভাবে সালাম দিতে পারবে যেটা যাতে জেলারের কার্যালয় থেকে শুনা যায়! বন্দীগণের পক্ষ থেকে এইবার যা চিল্লানোর সেটা আমিই চিল্লাই দিলাম। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে সালাম দিলাম। মনির ভাই ভাবলেন সবাই মিলে শব্দ করছে। তিনি খুশি। কাউকে আর মহড়া দেয়ালেন না। আমার গলা ভেঙে গেছে। বসে পড়লাম হাঁটু গেড়ে। জেলার সাহেব এলেন। সবার নাম ধরে ডাকলেন। আর তারা গিয়ে সুন্দর করে দাঁড়িয়ে তাদের পিতার নাম মাতার নাম বলছে। এই পরিস্থিতিতে যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই হল। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমি তোতলানো শুরু করি। মুখ দিয়ে কথা বের হয়না। আমার নাম ডাকতেই ভয়ের চোটে আমি শক্ত হয়ে গেছি। সামরিক ভঙ্গিতে পা ফেলে সোজা দাঁড়ালাম জেলার স্যারের সামনে। জেলার বিচলিত। তিনি আমাকে নাম জিজ্ঞেস করছেন, আমি ৩০ সেকেন্ড পার হওয়ার পরও নাম বলছিনা। সবাই আমাকে সন্দেহজনক মনে করছেনা তো?মনির ভাই ধরে আমাকে হালকা ঝাঁকুনি দিলেন। আমি নিজের নাম,নিজের পিতার নাম সহ বললাম। বাবা কি করেন?উত্তর দিলাম ডাক্তার। তিনি বললেন,
-দেখে ত ভদ্র ছেলে মনে হয়। কি মামলায় পড়ছো?
- সা সা সাতপান্ন ধারা।
-সাতান্ন ধারা?
-হু… জ্বি স্যার।
-এটা কি ধারা? মামলা কি নিয়ে?
-জানিনা স্যার। আজ ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি জেলখানায়।
-মানে? তুমি জানতে না যে তোমাকে জেলে আনা হইছে?
-জানতাম তো। সেজন্যেই তো বললাম, ঘুম থেকে উঠে দেখি জেলখানায়।
মনির ভাই আমার ডান হাতে চাপ দিয়ে আমাকে একপাশে সরিয়ে আনলেন। কানে কানে বললেন, “বেশি কথা বলবা না পিচ্চি”।
পিচ্চি! আমি পিচ্চি! এতবড় কথা! আমাদেরকে শাহাবুদ্দীন ভাই আবার রুমে ফিরিয়ে নিলেন। খাবার হিসেবে বুটের ডাল আর পরোটা। তেল দিয়ে পরোটা ভাজা হয়েছে নাকি পরোটা দিয়ে তেল ভাজা হইছে সেটা বুঝতে বুঝতেই আমি একটা পরোটা খেয়ে উঠে পড়লাম। চুল কাটতে হবে জানার পর আমার আর কিছু খেতে রুচি হচ্ছেনা। শাহাবুদ্দীন ভাই বললেন, স্পেশাল নাপিত। রাখেন আপনার স্পেশাল নাপিত! এখানে আয়নাও নিষিদ্ধ। কি আছে আর জীবনে? আমার চুল কাটা হল। মাথায় হাত বুলিয়ে যা বুঝলাম, ঘটনাটা খুবই উইয়ার্ড রাসেল ভাই। কোথাও সাইজ ঠিক রাখেনি স্পেশাল নাপিত। এখানে যারা নাপিতের কাজ করে তারা সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। যারা রান্না করে তারাও কয়েদি। যারা চিকিৎসা করে তারাও কয়েদি। কাজের লোক নেই। নিজেরাই নিজেদের রাজত্বে রাজা। চুলের কথা চিন্তা করে বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো। কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু লাগছে মাথা। এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হল ছবি তোলার জন্য। ছবি তোলার আগে একটা সিলেট বোর্ডে আমার নাম লিখা হল চক দিয়ে, এর নিচেই মামলা নাম্বার! সেটাকে বুকের কাছে ধরেই পাসপোর্ট সাইজের ছবি বানানো হল! ডিজিটাল ক্যামেরায় আমার ছবির প্রিভিউ দেখতে চাইলাম। মনির ভাই কাউকেই ছবি দেখতে দিচ্ছেনা। আমাকে দিল। সেইদিন এক কঠোর সিদ্ধান্ত নিলাম ছবিটা দেখে। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের জাতীয় আইডিকার্ডের ছবি দেখে কেউ যদি প্রেম করে সেটাই আসল প্রেম। আমার ক্ষেত্রে সেটা জেলখানার ছবি! কি ভয়ঙ্কর ডাকাতের মত লাগতেছে আমাকে। নামের আগে সহজেই ‘জর্দা, পাউডার, কিরিচ, কোটা’ ইত্যাদি উপাধি দিয়ে দেয়া যায়। আমাকে সেলফি তুলতে দিলেই তো হইতো তাহলে। কবি বলেন, ‘যদি তোর ছবি কেউ না তুলে দেয় তবে সেলফি তুল রে….
ছবি তুলেই ফাইলের কাজের অফিশিয়াল সমাপ্তি। চলে এলাম নিজের ওয়ার্ডে। এরপরই একে একে সবার সাথে পরিচয়। ধীরে ধীরে সবাইকে আপন মনে হতে লাগলো। মানুষগুলোকে মোটেও খারাপ মনে হলনা। তারা আমাদের গ্রহণ করে নিলো। জানিয়ে দিলো সেই অমোঘ নিয়তি। জেলখানা একটি বিচ্ছিন্ন পৃথিবী। এখানে সবাই সবার আপন। রাসেল ভাই, এই ঘটনার এই অংশটা উইয়ার্ড না। আজ এখানেই থাক। পরের সপ্তাহে আবার আমার উইয়ার্ড গল্পটা কন্টিনিউ করবো। শুভরাত্রি”।
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
হোয়াট আ গল্প…
আজকা রাত্রে ঘুমাইতে পারব না মিয়া…
kamagra pastillas
ওয়েলকাম ব্যাক ইলেকট্রন, সভ্যতা আপনাকে বিশাল মিস ক্রছিল… সুদে আসলে পুশিয়ে দিন এবার…
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
আজকের রাতের ঘুম হারাম করে দেয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
স্বাগতম জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
শ্রাবনের রক্তজবা বলছেনঃ
metformin gliclazide sitagliptinব্যাপকের উপরে ব্যপক লাগিল …।
স্বরূপে ইলেকট্রন …
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
তেমন কিছুই না। এটা বাস্তবতার নিরিখে লিখা। নিজের স্মৃতিগুলোকে স্রেফ লিখে যাওয়া। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ!
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
ওয়েলকাম ব্যাক ইলেকট্রন। গল্প দারুণ লেগেছে…
তারিক লিংকন বলছেনঃ
অসাধারণ লিখনি! একটা ১৭-১৮ বছরের শিশুর জেলখানার অভিজ্ঞতা এতো প্রাঞ্জলভাবে কেউ লিখতে পারবে না যদি না সে নিজে জেলে থাকার সুযোগ পাই এবং একই সাথে তোর মত দুর্বোধ্য মেধাবী হয়। পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম…
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
বিনা বাক্যে সহমত লিংকন ভাই… zovirax vs. valtrex vs. famvir
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ can your doctor prescribe accutane
১৭-১৮ বছরের শিশু! :’( হোয়াই অলওয়েজ মি! :’(
মুক্ত বিহঙ্গ বলছেনঃ
আমার বয়সী একটা ছেলের জেলখানার অভিজ্ঞতা পড়ছি বিশ্বাস হচ্ছে না। কোনো মন্তব্য করার মত ভাষা পাচ্ছি না ব্রাদার। পুরোটা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
নির্ঝর রুথ বলছেনঃ
তোর লেখার ধরণ দেখে আমি হকচকিয়ে গেলাম ইলেকট্রন! এতো মারাত্মক হিউমার অনেকদিন পড়ি নি।
জেলখানাকে আমার খুব বোরিং একটা জগৎ লাগে। এই বিষয়ে কিছু পড়তে ইচ্ছে করে না। কিন্তু তোর লেখাটা পড়ে আমি বিস্মিত! নতুন ঢঙয়ে, অটোবায়োগ্রাফি ঘরানার যে সিরিজ তুই শুরু করলি, একদম শেষ পর্যন্ত এটা চালিয়ে যাবি।
স্রেফ অসাধারণ!
তারিক লিংকন বলছেনঃ
এতো দিনে কিছু ভালা কথা কইছেন আপনি!!
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
২য় পর্ব কই !! ২য় পর্ব কই !! ২য় পর্ব কই !! ২য় পর্ব কই !! (মডারেটেড)
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
অতি দ্রুত ২য় পর্বের দাবী জানাই…
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
মাই গড…
ইলেকট্রন সাব, কই আপনে? ২য় পর্বের দাবীতে তো এইদিকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়া গেল…
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
ব্লগে স্প্যামিং চলতেছে! ফতেপুকে ব্লগ মেরে দেয়া হোক।
তারিক লিংকন বলছেনঃ
চল আবরোধ ডাকি…
শঙ্খনীল কারাগার বলছেনঃ
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
২য় পর্বের এত্ত দেরী হওয়ায় ইলেকট্রনের বাসার সামনে বালুর ট্রাক রাখা হোক…
শঙ্খনীল কারাগার বলছেনঃ
“ছোটো বেলায় কাগজ টুকরো করে একটা খেলা খেলতাম। বাবু-পুলিশ-চোর-ডাকাত। লটারির মত। চারটি কাগজ ছড়িয়ে দেয়া হত। যার ভাগ্যে বাবু উঠবে সে ১০০ পয়েন্ট। পুলিশের জন্য ৮০ পয়েন্ট। ডাকাতের জন্য ৬০,চোরের জন্য ৪০। বাবু উঠলে কোনো ঝামেলা নেই। পুলিশ উঠলেই ঝামেলা। পুলিশ বলতে হবে বাকি দুইজনের কে চোর কে ডাকাত। ঠিক বলতে পারলে পুলিশ ৮০ পয়েন্ট পাবে,চোর-ডাকাত শূন্য।”
কত বছর হল এই খেলাটা খেলা হয় না। বাইরের বৃষ্টি আর ঝাল মুড়ি। এর ফাকেই বাবুর টুকরাটায় একটা ছোট্ট চিহ্ন দিয়ে দিতাম আর ধরা পড়লেই শুরু হয়ে যেত হৈ-হুল্লোড়। আহ কি দিন গুলো ফেলে এসেছি। তবে আমাদের সময় কিন্তু চোর বা ডাকাতের যে কোন একজন অন্তত পয়েন্ট পেত!
” এক পাশে বসে আছে চেক কমান্ড। তারা সবাইকে চেক করছে। লুঙ্গি,গেঞ্জি সব কিছুর ফাঁক দিয়ে চেক করছে যে কারো সাথে কোন অস্ত্র বা টাকা পয়সা আছে নাকি। টাকা পয়সা থাকলে রেখে দিচ্ছে। পরে নাকি ক্যান্টিন কার্ডে টাকা রিচার্জ করে দেয়া হবে। সুন্দর নিয়ম। আদালতে ঢুকার আগে আমার কাছে ৬১৮ টাকা ছিলো। এক পুলিশ আমাকে ভয় দেখালো,কারাগারে টাকা পেলে নাকি সমস্যা করে। আমি অতশত না ভেবে টাকাটা তার হাতে দিয়ে বললাম,কিছুক্ষণ পরই আমার আব্বু আম্মু আসবে। দিয়ে দিবেন। পুলিশ টাকা আব্বু আম্মুকে দেয়নি। সে আব্বু আম্মুকে চিনত,তবুও দেয়নি। আসামীর টাকা মেরে দেয়া সম্ভবত আইনসিদ্ধ। তাই আইনের ব্যাপারে আমি কথা বলছিনা।”
টাকা পয়সায় লেগে থাকা ময়লা গুলো খুব সহজেই দেখা যায় তবে টাকা পয়সায় যে দুঃখ কষ্ট গুলোও লেগে থাকে তা হয়তো কোন পুলিশের জানার কথা নয়। শুধু পুলিশ বলছি কেন কেইবা তা জানবার চেষ্টা করে?
“এরপর আমাকে চেক করা শুরু করলো। আমার শার্টের পকেট দেখলো। প্যান্টের পকেট দেখলো। প্যান্ট ভয়াবহ লুজ,বেল্ট নেই বলে। আমি বাম হাতে প্যান্ট টাইট করে ধরে আছি। আমি আস্তে আস্তে করে বললাম,“আন্ডারওয়্যার নেই। আমি চেইন খুলে দিচ্ছি। আপনি লাইট মেরে দেখে নেন,জিনিস আছে কিনা”। তিনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। আমি ঢোক গিলে বললাম, জিনিস। মানে অস্ত্র-টস্ত্র আছে কিনা… তিনি আমাকে আর চেকিং করলেন না।”
এই অংশে এসে আমিও হকচকিয়ে গেলাম। বলেকি এই ছেলে? এমন পরিস্থিতে কেউ এমন রসিকতা কিভাবে করতে পারে? এটাকি রসিকতা ছিল নাকি ভয় পাওয়া একটা ছেলের আবোল তাবল? তা যাই হোক আমি কিন্তু ছেলেটার এই আচরণে মুগ্ধ।
“একবার আব্বুর ৫০০ টাকা দামের একটা নোট ছিঁড়ে গেছে। আব্বু নোট ব্যাঙ্কে চেঞ্জ না করার দায়িত্ব আমাকে দিলেন। আমি আইকা গাম দিয়ে নিপুণভাবে নোট এমনভাবে জোড়া লাগিয়ে দিলাম সেটা আইডেন্টিফাই করা অসম্ভব।” acne doxycycline dosage
হুম একবার এই ধরণের একটা ৫০০টাকার নোট আমার কপালে জুটেছিল। কে জানে সেই নোট এই নোটটাই ছিল কিনা? তবে হলফ করে বলতে পারি সেটা ছিল কাঁচা হাতের কাজ।
” চুলের কথা চিন্তা করে বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো। কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু লাগছে মাথা। এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হল ছবি তোলার জন্য। ছবি তোলার আগে একটা সিলেট বোর্ডে আমার নাম লিখা হল চক দিয়ে, এর নিচেই মামলা নাম্বার! সেটাকে বুকের কাছে ধরেই পাসপোর্ট সাইজের ছবি বানানো হল! ডিজিটাল ক্যামেরায় আমার ছবির প্রিভিউ দেখতে চাইলাম। মনির ভাই কাউকেই ছবি দেখতে দিচ্ছেনা। আমাকে দিল। সেইদিন এক কঠোর সিদ্ধান্ত নিলাম ছবিটা দেখে। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের জাতীয় আইডিকার্ডের ছবি দেখে কেউ যদি প্রেম করে সেটাই আসল প্রেম। আমার ক্ষেত্রে সেটা জেলখানার ছবি! কি ভয়ঙ্কর ডাকাতের মত লাগতেছে আমাকে। নামের আগে সহজেই ‘জর্দা, পাউডার, কিরিচ, কোটা’ ইত্যাদি উপাধি দিয়ে দেয়া যায়।”
বড় শখ ছিল অন্তত একবার হলেও বউয়ের কারাগার থেকে রাষ্ট্রীয় কারাগারে ঢোকার। সেই শখটাকেও আজ মাটি দিয়ে দিলাম। উঁচু নিচু চুল আর নিজের ভয়ংকর ছবি দেখেই আমার হার্ট ফেইল হয়ে যেত। নামের আগে তখন আর অন্য টাইটেল না সরাসরি মরহুম বসে যেত।
” আজ এখানেই থাক। পরের সপ্তাহে আবার আমার উইয়ার্ড গল্পটা কন্টিনিউ করবো। শুভরাত্রি।”
এই বছরে আমার পড়া প্রথম এবং অসম্ভব ভাল লাগা একটি গল্প যার দ্বিতীয় পর্বটি পড়তে আমাকে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। আমার দুই চোখ তখন কেবল ইলেকট্রন রিটার্নসকে খুঁজবে।
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
,“আন্ডারওয়্যার নেই। আমি চেইন খুলে দিচ্ছি। আপনি লাইট মেরে দেখে নেন,জিনিস আছে কিনা”।
এটা আসলে আমার সহজাত কথা বলার ঢং। খুব কঠিন পরিস্থিতিতে আমি মানিয়ে নিতে চেস্টা করার জন্য প্রায় সময় নিজের অজান্তেই এই কাজগুলো করি। এই লিখাটা আমার জেলে আসার পরের স্মৃতি। তবে, জেলে আসার আগে যে একদিন-একরাতের স্মৃতিটা ঐটাই সবচেয়ে ভয়াবহ এবং এডভেঞ্চারাস। আমি বুঝতে পারছিনা ঐটা আসলে এখনই পোস্ট করাটা ঠিক হবে কিনা। যেদিন সমাধানে আসবো সেইদিন পোস্ট পেয়ে যাবেন! লিখাটা আমি জামিনের পরদিন লিখেই সেইভ করে রাখছি।
ওখানে এইরকম আরো ঘটনা আছে। একটা ঘটনা হচ্ছে, ডিবি পুলিশের হেড বাবুল আক্তারের সাথে আমি গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে অনেকক্ষণ গভীর আলোচনা করেছিলাম। বাবুল আক্তারও অবাক হয়ে আলোচনা করছিলেন। সম্ভবত এই ধরনের আসামী তিনি আর হ্যান্ডেল করেন নি। সেই কথোপকথন গুলোতে হিউমার ছিলো। আমি ভয়ে ছিলাম। ভয় তাড়াতে এটা আমার সহজাত। আমার কিছু করার নেই।
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় দিয়ে পড়ার জন্য। এই লিখাটা অনেক আগেই পোস্ট করেছিলাম। কিন্তু আমার অন্যান্য পোস্ট গুলোর মত রেসপন্স পাচ্ছিলাম না দেখে মনে হচ্ছিলো, এটা হয়তো মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছেনা! আমি দ্বিতীয় পর্বে হাত দিইনি তাই! এখন মনে হচ্ছে ভুল করে ফেলেছি! আমি কাল থেকেই দ্বিতীয় পর্ব লিখা শুরু করছি!!! আরেকটা কথা, এক সপ্তাহ বেশিই দীর্ঘ সময়। খুব খুশি হব যদি আপনি এই সিরিজের নেক্সট লিখাটি সাতদিন আগেই সভ্যতায় দেখতে পান।
অনেক ভালো থাকুন!!
শঙ্খনীল কারাগার বলছেনঃ
পোস্ট করেছেন ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪ অর্থাৎ গত বছরের শেষে আর আমি পড়লাম এই বছরের শুরুতে। যাই হোক বছরের শুরুটাতো সুন্দর দিয়ে শুরু করলাম। অনিয়মিত হলে যা হয় আরকি।
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ metformin synthesis wikipedia
all possible side effects of prednisoneআবারও অসংখ্য ধন্যবাদ!!! ১ম পর্বটা আসলে তাড়াহুড়া করেই শেষ করে দিয়েছি। ২য় পর্বে অনেক অ্যাডভেঞ্চার থাকবে বলেই মনে হচ্ছে!!
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
লেখা যবেকারই হোক, পড়তে যে পেরেছেন, এটাই আসল ব্যাপার…
will metformin help me lose weight fast
তারিক লিংকন বলছেনঃ
লাভ্যু রাহী!! অপেক্ষায় থাকলাম…
তীর্থের কাকের মত তোর পোস্টের পথ চেয়ে আছি synthroid drug interactions calcium
শঙ্খনীল কারাগার বলছেনঃ
একটু কারেকশন করে দিতে হল-এই বছরে আমার পড়া প্রথম এবং অভিজ্ঞতার আলোকে অসম্ভব ভাল লাগা-মন্দ লাগা-আবার ভাল লাগা একটি গল্প যার দ্বিতীয় পর্বটি পড়তে আমাকে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। আমার দুই চোখ তখন কেবল ইলেকট্রন রিটার্নসকে খুঁজবে মাই প্রিসন; মাই প্রাইড (পর্ব-২) শিরোনামে।
অপার্থিব বলছেনঃ
সাবলীল ভাষায় আত্ব জীবনী মূলক লেখাটি অসাধারন। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
ধন্যবাদ ভাই! শীঘ্রই আসছে!! zoloft birth defects 2013
উৎসব পাল : চন্দ্রালোকের পথিক বলছেনঃ
মনে রাখার মতো একটি গল্প…. বিশেষ করে উপস্থাপনা
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
সিমপ্লি মাইন্ডব্লোইং ব্রাদার… এমন ভয়ংকর দুঃস্বপ্নও যে এমন অসাধারনভাবে উপস্থাপন করা যায়, এই লেখাটা তার জ্বলন্ত উদাহরন… viagra in india medical stores
মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলছেনঃ
“জেলখানা একটি বিচ্ছিন্ন পৃথিবী” সাক্ষাত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেললাম যেন