একজন হারকিউলিসের গল্প…
549
বার পঠিতদুই নম্বর সেক্টরটা মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ সেক্টর ছিল। অসামান্য মেধা , তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর অকুতোভয় সাহসের মিশেলে গড়া বেশ কিছু দুর্ধর্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিল এই সেক্টরে। সুবেদার বেলায়েত সেই তুলনায় অতটা অসধারন ছিল না। হাসিখুশী সরল মানুষটা খুব বিশ্বস্ত ছিল, সবার সাথে খুব সহজেই মিশে যেতে পারতো। বাড়ি ছিল সন্দীপ, বউ আর ছেলেমেয়ের কথা প্রায়ই বলতো। সেই মানুষটা হঠাৎ একদিন এক রূপকথার জন্ম দিয়ে বসলো।
শালদা নদী অঞ্চলটা ছিল পাকিস্তানি সেনাদের জন্য মৃত্যুপুরী। ওদের তুলনায় আমাদের অস্ত্র ছিল যৎসামান্য, তাও অনেক পুরাতন, কিন্তু আমাদের যোদ্ধারা ছিল সব তারছিঁড়া, মৃত্যুকে থোরাই কেয়ার করতো। রোদ-বৃষ্টি-কাঁদা-ঘুরঘুটে আঁধার, কিছুই দমাতে পারত না ওদের। সেদিন সকালে চারটা কোম্পানি মিলে একসাথে অ্যাটাক করার কথা ছিল নদীর ওইপাড়ে, বড় বড় বাংকার খুঁড়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে যেখানে পাকিস্তানীরা। অ্যাটাক হল, জবাব এল যথারীতি প্রচণ্ড বেগে। একের পর এক মর্টার শেল পড়তেছে, সালদা নদীর কাছে সেঃ লেফট্যানেন্ট জামিলের চার্লি কোম্পানিতে যুদ্ধ করতে থাকা বেলায়েতের পাশে হঠাৎ ঢলে পড়ল তার এক বন্ধু, গুলিটা কপাল ভেদ করে পেছন দিয়ে বের হয়ে গেছে। মুহূর্তের জন্য বেলায়েত নিশ্চল পাথর হয়ে গেল। ন্যাংটোকালের প্রানপ্রিয় বন্ধুড় মৃতদেহ কোলে নিশ্চল বেলায়েতের পৃথিবীটা যেন থমকে গেল হঠাৎ …
ওই এক মুহূর্তই, এরপর হঠাৎ করেই ফোরথ বেঙ্গল রেজিমেন্টের হেডকোয়াটারের ওয়াকিটকিটা ভয়ংকর ব্যস্ত হয়ে উঠলো। বেলায়েতের হাসিখুশি গলাটা কেমন যেন পাথরকঠিন শোনাইল, স্যার, নদীর ওইপারের সবকয়টা বাংকার উড়ায়া দিয়া আসি, পারমিশন দেন স্যার। বারবার একই অনুরোধ, একটাবার অনুমতি দেন স্যার। ক্যাপ্টেন গাফফার আগরতলায় যাবেন, জরুরি মিটিং, এর মধ্যে বেলায়েতের এই বিচিত্র আবেদন, নদীর ওই পাড়ে এত শক্তিশালী একটা স্টাব্লিশমেন্ট সে নাকি উড়ায়া দিয়া আসবে… কি অদ্ভুত কথা, শোনো তো…
হঠাৎ করেই গাফফারের বিরক্তিমাখা গলা শোনা গেল, ঠিক আছে, যাও। গুডলাক। কয়েকটা সেকেন্ড নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না বেলায়েত, স্যার পারমিশন দিয়ে দিছেন!! ঈদের চাঁদ দেখলেও সে এতটা খুশী হত কিনা সন্দেহ আছে। রিকয়েলেস রাইফেলটা তুলে একাই সামনে এগোল বেলায়েত, হঠাৎ তপ্ত বুলেটের ঠা ঠা বেরোবার শব্দে চমকে উঠলো সবাই, কিছু বুঝে ওঠার আগেই উড়ে গেল ওপাশের সামনের দুইটা বাংকার।
তারপরের দুই ঘণ্টা যা হল, সেটা পাকিস্তানীরা তো দূরে থাক, বেলায়েতের সহযোদ্ধারা পর্যন্ত কল্পনা করতে পারেননি। পাকিস্তানীরা ভেবেছিল, প্রতিদিনের রুটিন গোলাগুলির অংশ এইটা, কিন্তু বেলায়েত ক্ষেপে যাওয়ায় সব হিসেব এলোমেলো হয়ে গেল। মাথার উপর দিয়ে সাই সাই করে ছুটে যাওয়া বুলেটের পরোয়া না করে বেলায়েতকে এইভাবে বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখে সহযোদ্ধারা নতুন উদ্যমে ফায়ার করতে শুরু করল। আচমকা এই ভয়ংকর তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে অস্ত্র তুলতে ভুলে গেল অনেক পাকি, পালাতে থাকলো দিগবিদিক। সেই দৃশ্য দেখে আরো উৎসাহে গুলি করতে করতেই নদী পার হল বেলায়েত আর অগ্রবর্তী বাহিনী, তারপর ভীমমূর্তিতে চার্জ করতে শুরু করল একের পর বাংকার প্রবল প্রতাপে।
গ্রীক পুরাণে হারকিউলিসের নাম হয়তো শুনে থাকবে পাকিস্তানীরা, অসম্ভব শক্তির সেই দেবতাকে দেখার ইচ্ছেটাও বোধহয় পূরণ হয়ে গেল তাদের সেদিন। মেজর ডাঃ আখতার সেই অবিশ্বাস্য দৃশ্যটা বর্ণনা করেছেন এভাবে, দেখলাম, কণ্ঠ দিয়ে গর্জন বেরুচ্ছে, যেন একটা স্টিম রোলারের মত পাকিদের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে বেলায়েত, পিষতে পিষতে… লাঞ্চের আগেই সালদা নদী ষ্টেশনের শক্তিশালী ঘাঁটি দখলে চলে এল মুক্তিযোদ্ধাদের, কেবল প্রানটা হাতে নয়নপুরের দিকে পালিয়ে গেল পাকিস্তানীরা। বাংকারগুলোর ভেতর ঢুকে দেখা গেল, চুলার পাশে আঁটাগুলো গোল গোল করে পাকানো পড়ে আছে, চুলোর আগুন জ্বলছে তখনো, থরে থরে অস্ত্র আর গ্রেনেড সাজানো, কেবল জানটা হাতে নিয়ে পালিয়েছে ওরা, পেছনে ফিরে তাকাবার সাহস হয়নি, যারা মরেছে, তাদের নিষ্প্রাণ চোখে তখনো বিস্ময় লেগে আছে, কি অমিত তেজ, কি ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাস…
সালদা নদী ষ্টেশন ঘাঁটিটা দখলের তিনদিনের মাথায় প্রবল যুদ্ধে শহীদ হন সুবেদার বেলায়েত। ফোরথ বেঙ্গল রেজিমেন্টের তিনটা ব্যাটেলিয়ন, ভারতীয় মিডিয়াম আর্টিলারির এতো এতো সেনা মিলেও যে ঘাঁটি দখল করতে পারেনি, সুবেদার বেলায়েতের হারকিউলিসের মত অসমসাহসী বীরত্বে সেই ঘাঁটি দখল হয়েছিল মাত্র দুই ঘণ্টায়। পাকিস্তানীদের ভয়ংকর ক্ষোভ ছিল ওর উপর, তাই তিনদিনের মাথায় নয়নপুর ঘাঁটি থেকে চালানো হামলায় প্রায়োরিটি ছিল বেলায়েত হত্যা। লড়তে লড়তে শহীদ হয়েছিল বেলায়েত, বুকটা ভেসে গিয়েছিল তাজা রক্তে, কিন্তু ঠোঁটে লেগে ছিল সেই অকৃত্রিম হাসিটুকু… বেলায়েত হাসতে হাসতে প্রান দিয়েছিল, আমাদের বেলায়েত, যার বীরত্বের কাছে হারকিউলিসও কিছু না… কিচ্ছু না…
জন কার্টার বলছেনঃ
এটাই আসল কথা!!!!
তারিক লিংকন বলছেনঃ can your doctor prescribe accutane
(Y) (Y) (Y)
আপনার লিখনিতে মুক্তিযুদ্ধের অসম্ভবসকল বীরত্বের কাহিনি পড়ে আমি আসলেই মুগ্ধ। এই প্রজন্মকে অনুপ্রানিত করার জন্য আপনার সকল পোস্ট দারুন কাজ করবে আর ইতিহাসের এই সত্যভাষণ প্রজন্মকে কৃতজ্ঞও করবে আশাকরি…
হারকিউলসের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা!!
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
আমই কেবল আমার দায়িত্বটুকু পালন করছি মাত্র, এর বেশি কিছু না…
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ clomid over the counter
একজ্যাক্টলি…
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
irbesartan hydrochlorothiazide 150 mgআমি এতদিন ক্যান পড়লাম না এই অসামান্য বীরের কথা !! ভুল অনেক ভুল করে ফেলছি… ভাইয়া আপনাকে স্যালুট এই বীরের কথা জানাবার জন্য…।
মায়াবী তেজস্বিনী বলছেনঃ
লড়তে লড়তে শহীদ হয়েছিল বেলায়েত, বুকটা ভেসে গিয়েছিল তাজা রক্তে, কিন্তু ঠোঁটে লেগে ছিল সেই অকৃত্রিম হাসিটুকু… বেলায়েত হাসতে হাসতে প্রান দিয়েছিল, আমাদের বেলায়েত, যার বীরত্বের কাছে হারকিউলিসও কিছু না… কিচ্ছু না।।
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
হারকিউলিস যদি সুবেদার বেলায়েতের মত বীর হতে পারত, ধন্য হয়ে যেত… ধন্য হয়ে যেত তার জীবন, সবটুকু ব্যাপ্তি… শহীদ সুবেদার বেলায়েত এমনই অসামান্য বীর ছিল…
মায়াবী তেজস্বিনী বলছেনঃ
সত্যিই… মিথের বীরের চেয়ে অনেক বেশি ছিল আমাদের বীর – আমাদের শহীদ সুবাদার বেলায়েত..।