বিস্মৃতির অতলে চাপা পড়া এক কল্পনাতীত নিকৃষ্টতা এবং নাম না জানা কিছু মা-বোনের ইতিহাস…(৪র্থ পর্ব)
1439
বার পঠিতশ্যামল বরন দেখতে ছিল সেই মেয়েটি মেয়ে।তাঁর নামটি জানা নেই আমার। খুব মেধবী ছাত্রী ছিল সে। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবে একদিন, সেবা করবে দেশের মানুষের। তাঁর সেই স্বপ্নের পথেই সে এগিয়ে যাচ্ছিলো একটু একটু করে। সময়টা ১৯৭১। উত্তাল সারাদেশ। বাঙালিদের উপর বর্বরচিত হামলা চালাচ্ছে পাকি হায়নারা। ৮থেকে ৭০ কিংবা ৭৫ বয়সী নারীদেরকে ধরে নিয়ে নিকৃষ্ট অত্যাচার করছে। ভয়ে ঘর থেকে বের হওয়া ছেড়ে দিয়েছে সেই মেয়েটি।কিন্তু বুকের ভেতর তাঁর সেই স্বপ্নটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে যত্ন করে। দেশ স্বাধীন হলেই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবে সে।অন্ধকার রাত, কয়েকটি হায়নার থাবা, চিৎকার, হাহাকার। হায়নারা নারকীয় অত্যাচার চালায় সে রাতে মেয়েটির পবিত্র দেহটির উপর।কিন্তু হাল ছাড়ে নি সে । বুকের ভেতরের স্বপ্নটিকে সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছে সে।
যুদ্ধ শেষ। এবার স্বপ্নের পথে পা বাড়ানোর পালা তাঁর। কিন্তু কোন মেডিকেল কলেজেই ভর্তি হতে পারে নি সে। কারণ সে বীরাঙ্গনা। সে যেখানেই যায় সেখানেই ভীড় জমে যায়! না, কারো চোখে সহানুভূতি ছিলো না, ছিল কৌতুহল আর নোংরামি। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে স্কট করে মেডিকেল কলেজের অফিস থেকে নিরাপদে নিয়ে আসা হলো কমন রুমে। তাতেও সমস্যা মিটলোনা। শিক্ষকরা অসহায় ভাবে জানিয়ে দিলেন-তাকে ভর্তি করা বিপদজ্জনক। শ্যামল বরন মেয়েটি ফিরে গেলো, কেউ জানলোনা কোথায় হারিয়ে গেলো সে। কেবল ইতিহাসের পাতায় ‘বীরঙ্গনা’ নামের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে রইল শ্যামল বরন মেয়েটি…
আচ্ছা কেমন আছে সেই মেয়েটি? কোথায় আছে সে? সে কি বেঁচে আছে? যে দেশের স্বাধীনতার জন্য একদিন সে এতো ত্যাগ স্বীকার করেছিলো, সেই দেশের মানুষেরাই যখন তাঁর সাথে নিকৃষ্টতম আচরণটি করেছিলো, কি ভেবেছিলো সেদিন সে? নাহ্… এসব প্রশ্নের কোন উত্তরই নেই আমাদের কাছে। আমরা এক্ষেত্রে নির্বিকার। আমাদের কারোর সময় নেই এসব নিয়ে আলাদা করে ভাববার।
ভাগীরথী, মনে আছে ভাগীরথীর কথা? ১৮ – ১৯ বছরের সেই পল্লীবধু ভাগীরথীর কথা কি আমরা মনে রেখেছি কেউ? বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানার বাঘমারা কদমতলীর এক বিধবা পল্লীবালা ছিল সে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিয়ের মাত্র এক বছরেই তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যায় না ফেরার দেশে। স্বামী হারানোর শোক তখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি লাল শাড়ি ছেড়ে সদ্য সাদা শাড়ি গায়ে জোরানো তরুণীটি। এর মধ্যেই শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ। প্রাণভয়ে সারাদিন গৃহবন্দী হয়ে থাকে ভাগীরথী। ৭১ এর মে মাসের দিকে পাকি হায়নারা হানা দেয় ভাগীরথীদের গ্রামে। যাকে সামনে পেলো তাঁকেই শেষ করে দিতে থাকলো হায়নাগুলো। আর গণিমতের মাল হিসেবে মেয়েগুলোকে তুলতে থাকলো ওদের ট্রাকে। ভাগীরথীর ভাগ্যেও এর চাইতে ভালো কিছু ঘটলো না। পাকিরা ধরে নিয়ে গেলো তাঁকে এবং ক্যাম্পে নিয়ে পালা করে ধর্ষণ করলো। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যুকেই একমাত্র পরিত্রাণের উপায় বলে চিন্তা করলো সে। কিন্তু হঠাৎ এক সময় সে ভাবলো যে হ্যাঁ মরে যদি যেতেই হয় ওদেরই বা রেহাই দেব কেন? কৌশলের আশ্রয় নিল এবার সে। নানা কৌশলে পাকিদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করতে থাকলো সে এবং এক সময়ে দেহ লোভী হায়নাগুলো ভাগীরথীর সেই কৌশলে পা দিলো। নেশার ঘোরে নিজেদের সমস্ত গোপন খবরাখবর বলে দিতে থাকলো তাঁকে। এদিকে ভাগীরথী গোপনে মুক্তি বাহিনীর সাথে গড়ে তুলল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। এরপরই এল আসল সুযোগ। জুন মাসের একদিন ভাগীরথী খান সেনাদের নিমন্ত্রণ করলো তাঁর নিজ গ্রামে। ৪৫ জন পাকি তাঁর সেই নিমন্ত্রণে গেল। এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিবাহিনীরা ঘেরাও করে ফেললো ওদের। মাত্র ৪/৫ জন পাকি সেনা ছাড়া বাকিরা সেই গ্রামেই মুক্তিযদ্ধাদের হাতে মার খেয়ে শিয়াল কুকুরের খোরাক হয়েছে।
কিন্তু ভাগ্য যে বড্ড নির্মম একটা জিনিস। পাকি হারামিরা সেদিন টের পেয়ে গেল ভাগীরথীর কৌশলের ব্যাপারে। পাকি জান্তারা হুকুম দিল জীবিত অথবা মৃত ভাগীরথীকে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে নগদ এক হাজার টাকা পুরুস্কার দেয়া হবে।
কিন্তু ভাগীরথী তখনও জানত না ওর জন্য আরও দুঃসহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।একদিন রাজাকারদের হাতে ধরা পরল ভাগীরথী।ওরা তাকে নিয়ে এল পিরোজপুর সামরিকক্যাম্পে।খান সেনারা এবার ভাগীরথীর উপর তাদের হিংস্রতার পরীক্ষার আয়োজন করলো। এক হাটবারে তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাঁড় করানো হলো জনবহুল চৌমাথায়। সেখানে প্রকাশ্যে তাঁর পোশাক খুলে ফেলল কয়েকজন খান সেনা। তারপর দু’গাছি দড়ি ওর দু’পায়ে বেঁধে একটি জীপে বেঁধেশহরের রাস্তায় টেনে বেড়াল ভাগীরথীকে। ঘন্টাখানেক এভাবে চলার পর আবার যখন ফিরে এল সেই চৌমাথায় তখনও ওর দেহে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। এবার তারা দুটি পা দুটি জীপের সাথে বেঁধে নিল এবং জীপ দুটিকে চালিয়ে দিল বিপরীত দিকে। ভাগীরথী দুভাগ হয়ে গেল।সেই দু-ভাগ দু-জীপে ঝুলিয়ে আবার শহর ঘুরে এলো হায়নাগুলো। ভাগীরথীর রক্তে তামাটে মাটি ধারণ করলো রক্তবর্ণ। এভাবেই জীবনবসান ঘটলো এক সাহসী মহিয়সী তরুণীর…
এমন লাখ লাখ ভাগীরথীর আত্মত্যাগেই আমারা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি,বিজয় পেয়েছি। কিন্তু আমরা কয়জন মনে রেখেছি সেসব ভাগীরথীদের কথা? এভাবেই তাঁরা হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অতলে।
সুপ্রিয়ানায়েক।বয়স বেশি হলে১৫কিংবা১৬ হবে সে সময়ে।একাত্তরেরমে মাসে হবিগঞ্জের লস্করপুরে চা বাগান থেকে পাকি আর্মিরা ধরে নিয়ে তাঁকে। প্রথম দিন চা বাগানের এক ক্যাম্পে নিয়ে কয়েকজন পাকি আর্মি তাঁর ওপর বীভৎস যৌন নির্যাতন চালায়। সেই ছিল শুরু। তারপর পাকিরা তাঁকে নিয়ে গেছে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে, এক বাগান থেকে অন্য বাগানে। দিনের পর দিন ঐসব ক্যাম্পের আর্মি অফিসাররা তাঁর ওপর নির্দয় নির্যাতন চালিয়েছে। দীর্ঘ আট মাসের প্রতি রাতে চারজন পাঁচজন করে পাকি তাঁকে ধর্ষণ করেছে। একটি রাতের জন্যও নিষ্কৃতি দেয়নি তাঁকে। তাদেরকে বাঁধা দেবার কোন উপায় ছিল না, মুখ বুজে সব সহ্য করে গেছেন তিনি। এরমধ্যে একবার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এলেও পাকিরা আবার তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। ৯ মাসে প্রায় ২০০ বার ধর্ষণ করা হয় সুপ্রিয়াকে। ভাবুন তো একবার ২০০ বার ধর্ষণ করা হয়েছে ১ টা মেয়েকে !!
একাত্তরে এরকম একটি –দুইটি নয় লাখ লাখ সুপ্রিয়ার উপরের হায়নার মতো ঝাপিয়ে পরেছিল পাকিরা।
খাদিজা। বয়স ১৩। ৬ মাস মোহাম্মদপুর ক্যাম্পে আটকে রাখা হয় তাঁকে। দেশ স্বাধীনের পর সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী। অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করার পরেও তাঁর মুখ থেকে শুধু একটি কথাই বের হয়- “ আমি মায়ের কাছে যামু!” ১৩ বছরের একটি মেয়েকে ৬ মাস ক্যাম্পে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয় একাধিক বার, ভাবতে পারছেন কিছু ?
সুজান ব্রাউনমিলার লিখেছেন তের বছরের কিশোরী খাদিজার কথা-
“Khadiga, thirteen years old, was walking to school with four other girls when they were kidnapped by a gang of Pakistani soldiers. All five were put in a military brothel in Mohammedpur and held captive for six months until the end of the war. Khadiga was regularly abused by two men a day; others she said, had to service seven to ten men daily… At first, Khadiga said, the soldiers tied a gag around her mouth to keep her from screaming. As the months wore on and the captives’ spirit was broken, the soldiers devised a simple quid pro quo. They withheld the daily ration of food until the girls had submitted to the full quota.”
রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সুবেদার খলিলুর রহমান জানান-
“মেয়েদের ধরে নিয়ে এসে,ট্রাক থেকেনামিয়ে সাথেই সাথেই শুরু হত ধর্ষন,দেহের পোশাক খুলে ফেলে সম্পূর্ণ উলঙ্গকরে ধর্ষণ করা হত। সারাদিন ধর্ষণের পরে এই মেয়েদের হেড কোয়ার্টার বিল্ডিংএ উলঙ্গ অবস্থায় রডের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখ হত,এবং রাতের বেলা আবারোচলত নির্যাতন। প্রতিবাদ করা মাত্রই হত্যা করা হতো, চিত করে শুইয়ে রড, লাঠি, রাইফেলের নল, বেয়নেট ঢুকিয়ে দেয়া হত যোনিপথে, কেটে নেয়া হত স্তন।অবিরাম ধর্ষণের ফলে কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলেও থামত না ধর্ষণ”। turisanda cataloghi cipro
সাংবাদিক রণেশ মৈত্রের একটি অনুসন্ধানথেকে জানা যায়-
রংপুর ক্যান্টনমেন্ট এবং রংপুর আর্টস কাউন্সিল ভবনটি নারীনির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হত। এখানে বন্দী ছিল প্রায় একশ মেয়ে এবংপ্রতিদিনই চলত নির্যাতন, যারা অসুস্থ হয়ে পড়ত তাদের হত্যা করা হত সাথেসাথেই। স্বাধীনতার পরে আর্টস কাউন্সিল হলের পাশ থেকে বহুসংখ্যক মহিলার শাড়ি, ব্লাউজ, অর্ধগলিত লাশ, এবং কংকাল পাওয়া যায়।প্রত্যক্ষদর্শীদেরবিবরণে জানা যায়, রংপুর থেকে প্রায় তিনশ/চারশ মেয়েকে ঢাকা এবং অন্যান্যস্থানে পাচার করে দেওয়া হয়,তাদের আর কোন সন্ধানমেলেনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যান বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের একটিগবেষণায় জানা যায় রাজশাহীর জুগিসশো গ্রামে মে মাসের কোন একদিন পাকবাহিনী১৫ জনমহিলাকে ধর্ষণ করে এবং অন্যান্য নির্যাতন চালায়।এ অঞ্চলের ৫৫ জনতরুনীকেধরে নিয়ে যাওয়া হয়।বাঁশবাড়ীয়া গ্রামে পাকবাহিনী প্রায় দেড়শোজন বিভিন্ন বয়সী মেয়েকে ঘর থেকে বের করে প্রকাশ্যে ধর্ষণ করে। এদের মধ্যে১০ জনের তখনই মৃত্যু হয়।রাজশাহী শহরের একটি বাড়িতে আনুমানিকতিরিশ বছর বয়স্কা একজন মহিলা নামাজ পড়ছিলেন। সেই অবস্থাতেই ফেলে দিয়ে তাকেধর্ষণ করা হয়, তিনি মারা যান জায়নামাজের উপরেই।
একই অনুসন্ধান থেকে জানা যায় বাগমারা গ্রামের দেলজান বিবির কথা।সময়টা ছিলোরমজান মাস,দেলজান বিবি রোজা ছিলেন। হঠাৎ পাকসেনারা ঘরে ঢুকে পড়ে এবংধর্ষণ শুরু করে।একই গ্রামের সোনাভান খাতুনকেও রাস্তার মধ্যে প্রকাশ্যে ধর্ষণকরা হয়। ১০ ডিসেম্বর যশোরের মাহমুদপুর গ্রামের একটি মসজিদ থেকে এগারোটিমেয়েকে উলঙ্গ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে যুদ্ধের সময় প্রায় সাতমাস ধরে মসজিদের ভেতরেই ধর্ষণ এবং বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করা হয়।
নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে কম যায় নি বিহারীরাও। নৃশংসতায় তারা কোন কোন সময়ছাড়িয়েগিয়েছিল পাকবাহিনীকেও। ২৬মার্চ ’৭১ মীরপুরের একটি বাড়ি থেকে পরিবারের সবাইকে ধরে আনা হয় এবংকাপড় খুলতে বলা হয়। তারা এতে রাজি না হলে বাবা ও ছেলেকে আদেশ করা হয়যথাক্রমে মেয়ে এবং মাকে ধর্ষণ করতে। এতেও রাজি নাহলে প্রথমে বাবা এবং ছেলেকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় এবং মা মেয়ে দুজনকে দুজনের চুলের সাথেবেঁধে উলঙ্গ অবস্থায় টানতে টানতে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
খুলনার ডাঃ বিকাশ চক্রবর্তীর কাছ থেকে জানা যায়-
সেখানকার পাবলিক হেলথকলোনি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্থাপিত ক্যাম্পে বিপুল সংখ্যকমেয়েকে(প্রায় সববয়সের) আটকে রেখে পূর্বোক্ত কায়দায় নির্যাতন চালানোহয়। যুদ্ধ শেষেক্যাম্পের একটি কক্ষ থেকে কয়েকটি কাঁচের জার উদ্ধার করাহয়,যার মধ্যে ফরমালিনে সংরক্ষিত ছিল মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অংশ। অংশগুলিকাটা হয়ে ছিল খুব নিখুঁতভাবে।
যৌন দাসী হিসেবে বাঙালি মেয়েদের বন্দী করে রাখার একটি ঘটনা প্রকাশিত হয় নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায়,২৫ অক্টোবর ১৯৭১ –
One of the most horrible revelations concerns 563 young bengali women,some of 18, who have been held captive inside Dacca’s dingy military cantonment since the first five days of the fighting,Seized from University and Private Homes and forced into military brohees,the girls are all three to five months pregnant.
নির্যাতনের জন্য পাকিস্তানী সৈন্যরা যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করতো তা নিয়ে আলোচনা করেছেন শাহারিয়ার কবির এবং মুনতাসির মামুন স্যার। এছাড়া এ সম্পর্কে গবেষণা লব্ধ “নারীনির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ICSF এর অফিসিয়াল ওয়েবে (http://icsforum.org) ।এসব প্রতিবেন বিস্লেশন করে একাত্তরে নারীদের উপর নির্যাতনের বেশ কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়-
১. অশ্লীল ভাষায় গালাগালি, তৎসঙ্গে চামড়া ফেটে রক্ত না বেরুনো পর্যন্ত শারীরিক প্রহার।
২. পায়ের সঙ্গে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা এবং সেই সঙ্গে বেয়নেট দিয়ে খোঁচানো এছাড়া রাইফেলের বাঁট দিয়ে নির্মম ভাবে প্রহার।
৩. উলঙ্গ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উন্মুক্ত স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখা।
৪. সিগারেটের আগুন দিয়ে সারা শরীরে ছ্যাঁকা দেয়া।
৫. হাত ও পায়ের নখ ও মাথার ভিতর মোটা সুঁচ ঢুকিয়ে দেয়া।
৬. মলদ্বারের ভিতর সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকা দেয়া এবং বরফখন্ড ঢুকিয়ে দেয়া।
৭. চিমটে দিয়ে হাত ও পায়ের নখ উপড়ে ফেলা।
৮. দড়িতে পা বেঁধে ঝুলিয়ে মাথা গরম পানিতে বারবার ডোবানো।
৯. হাত-পা বেঁধে বস্তায় পুরে উত্তপ্ত রোদে ফেলে রাখা।
১০. রক্তাক্ত ক্ষতে লবণ ও মরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে দেয়া।
১১. নগ্ন ক্ষতবিক্ষত শরীর বরফের স্ল্যাবের ওপরে ফেলে রাখা।
১২. মলদ্বারে লোহার রড ঢুকিয়ে বৈদ্যুতিক শক দেয়া।
১৩. পানি চাইলে মুখে প্রস্রাব করে দেয়া।
১৪. অন্ধকার ঘরে দিনের পর দিন চোখের ওপর চড়া আলোর বাল্ব জ্বেলে ঘুমোতে না দেয়া।
১৫. শরীরের স্পর্শকাতর অংশে বৈদ্যুতিক শক প্রয়োগ।
আমি আর লিখতে পারছি নাহ্। অসহ্য যন্ত্রণায় জ্বলে যাচ্ছে বুকের ভেতরটা।কিন্তু এখানে আমি যেটুকুর বিবরণ দিলাম, সেটা একাত্তরে আমাদের মায়েদের উপর নির্যাতনের খুব “সামান্য” একটি অংশ। আমাদের স্বাধীনতার প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে এমন হাজারো মায়ের দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা। আমারা স্বাধীনতা পেয়েছি এমন লাখো মায়ের ছেড়া আঁচল আর রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন দেহের বিনময়ে।কিন্তু যখন আজ স্বাধীনতার ৪৪ বছরে এসেও এই বীরঙ্গনা মায়ের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলি, ভাবতে পারেন তখন ঠিক কতোটা অসম্মান আমরা তাঁদের করি! চলুন দেখা যাক একাত্তরে নির্যাতিত নারীদের একটি হিসেবঃ-
আমরা বলি ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লক্ষ মা বোনের সম্মানের বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীনতা। শহীদের হিসেবে আজ আর যাচ্ছি না। কিন্তু এই যে “২ লক্ষ” নারীর হিসেবটি আমরা দেখাই, সরকারি হিসেবেও ২ লক্ষর কথাই রয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ ভুল একটি হিসেব। যুদ্ধের পরে খুবই দায়সারা ভাবে এই হিসেবটি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সবচেয়ে গর্বের ইতিহাস। কিন্তু স্বাধীনতার পর এই গর্বের ইতিহাসেযেন অগৌরবের কাঁটা হয়ে উঠে এদেশের লাখো ধর্ষিতা নারী।তাই পুরো বিষয়টি চেপে যাওয়া হয় খুব সতর্কতার সাথে। এমনকি ভিকটিম এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও চেপে যেতে থাকে। সে সুযোগে সরকারি কর্মকর্তারা অনুমানের ভিত্তিতে একটি হিসেব প্রণয়ন করে।ডঃ ডেভিসএর ভাষ্যমতে তাঁদের হিসেবটি ছিল এরকম-
“অংকটা এরকমঃ হানাদার দখলদারিত্বেরসময়কালে প্রতিটি থানায় প্রতিদিন গড়ে দু’জন করে মেয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। থানারসংখ্যা ৪৮০টি এবং দখলদারিত্ব স্থায়ী হয়েছে ২৭০ দিন। ৪৮০ কে ২৭০ ও ২ দিয়েগুণ করে পাওয়া গেছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ জন। অন্যান্য কারণে মেয়েরা নিখোঁজহয়েছেন ধরে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বোর্ড সংখ্যাটাকে রাউন্ড ফিগারে এনেছেন দুইলাখে! এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের এইটাই অফিশিয়াল ধর্ষিতার সংখ্যা”
[দ্য চেঞ্জিং ফেস অব জেনোসাইড : ড. জিওফ্রে ডেভিস]
তবে এর পরপরই ডঃ ডেভিস বলেছেন এই হিসাবটি তার মতে ত্রুটিপূর্ণ। তার কারণ হিসেবে তিনি কিছু যুক্তিও দেখিয়েছেন- ventolin spray precio mexico
১. সরকার আমলে নিয়েছেন শুধুনিখোঁজ রিপোর্ট পাওয়া মেয়েদের। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারগুলো চেপে গিয়েছেনতাদের মেয়েদের অবস্থান ও অবস্থা। অনেকটা লোক-লজ্জায়, সম্মানহানী ওপ্রাণহানির ভয়ে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যাদের কাছে অভিযোগ করবেনতাদের কাছেই মেয়ে, অর্থাৎ রক্ষকই ভক্ষক।
২.সংখ্যাটায় পাকসেনাদের অস্থায়ীঅবস্থানকে গোনায় নেওয়া হয়নি। মানে তারা একটা গ্রাম বা অঞ্চলে হামলা করলএবং গণহারে ধর্ষণ চালাল। পুরোপুরি ধংস হয়নি কিন্তু আক্রমণের শিকার এরকমগ্রামের সংখ্যা বাংলাদেশের তিনভাগের এক ভাগ। সুবাদেই ধর্ষণের সংখ্যাও ছিলঅগণিত, যদিও সবক্ষেত্রেই গর্ভধারণ অনিবার্য ছিল না।
৩. রাজাকার ও পাকিস্তানের দালালরা উদ্বাস্তুদের ওপর হামলা চালিয়েপ্রচুর মেয়ে অপহরণ করেছিল (এ ব্যাপারে আগেও বলা হয়েছে)। অনুমান করা হয়ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল এক কোটি বাঙ্গালী, আর তাদের মধ্যে ১৫লাখ ছিলেন নারী।
উপরের বর্ণনাটি এবার একটু বিশ্লেষণ করা যাক এবার। সরকারি হিসেব মতে প্রতি থানায় প্রতিদিন গড়ে ২ জন করে নিখোঁজ হয়েছে।যেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা জানতে পারবো যে, হানাদার বাহিনী যখন কোন একটা গ্রামে হামলা চালাত, তাঁদের লক্ষ্য থাকতো পুরো গ্রামকে ধ্বংস করে দেয়া। আর ওরা ওদের যুদ্ধের নীতি অনুযায়ী, এই দেশটাকে একটা যুদ্ধক্ষেত্র আর নারীদের আরেকটা যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ব্যাবহার করতো; যেটা আমি আগের পর্বগুলোতে আলোচনা করেছি। এবং সেই হিসেবে ওরা একদিকে যেমন সেই পুরো গ্রামটিকে ধ্বংস করে দিতো অন্যদিকে ওদের ২য় লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নারীদের উপর ঝাপিয়ে পড়তো হায়নার মতো।আর আর তখন নিশ্চয়ই ওরা বেছে বেছে নারীদের অপহরন কিংবা ধর্ষণ করেনি। ৭ থেকে ৮০ বছর বয়সী কোন নারীই তখন রেহাই পায় নি ওদের হাত থেকে।এতেই বোঝা যায় একটা গ্রামের যতো মেয়েকে ওরা সামনে পেতো সবার উপরি চালাত অকথ্য নির্যাতন। আর সেই “যতো” নারীদের সংখ্যা অবশ্যই গড়ে দুই জন হতে পারে নাহ্। তাছাড়া যুদ্ধের পরে অনেক নারীই নিজেদের কিংবা পরিবারের আত্মসম্মানের ভয়ে তাঁদের সাথে সংঘটিত পুরো ঘটনাই চেপে গিয়েছে এবং খুব সম্ভবত ৯০ দশকের আগে তাঁরা কেউই মুখ খোলে নি এমনকি এখনো অনেকেই এ বিষয়ে কিছু বলতে চান না। এসব দিক বিবেচনায় বোঝাই যায় যে সেই হিসেবটি ঠিক কতোটা ভিত্তিহীন ছিল!
ডা. ডেভিস এবিষয়ে বলেছেন-
হানাদার বাহিনী গ্রামে গ্রামে হানা দেয়ার সময় যে সব তরুণীকে ধর্ষণ করেছেতার হিসাব রক্ষণে সরকারী রেকর্ড ব্যর্থ হয়েছে। পৌনঃপুনিক লালসা চরিতার্থকরার জন্য হানাদার বাহিনী অনেক তরুণীকে তাদের শিবিরে নিয়ে যায়। এসব রক্ষিতাতরুণীর অন্তঃসত্ত্বার লক্ষণ কিংবা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে হয় তাদেরপরিত্যাগ করা হয়েছে, নয়ত হত্যা করা হয়েছে।
তারমানে যুদ্ধের সময় যেসব নারীকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের কিন্তু আমরা হিসেবের বাইরেই রেখেছি।
ডা. জিওফ্রে ডেভিস দেশজুড়ে তার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি জরিপ করেছিলেন এ বিষয়ে এবং সবশেষে তিনি বলেছিলেন-
৪ থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার নারী মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ramipril and hydrochlorothiazide capsules
গবেষক সুসান ব্রাউনমিলার ধর্ষণের সংখ্যাকে প্রায় চার লাখ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন-
During the nine-month terror, terminated by the two week armed intervention of India, a possible three million people lost their lives, ten millions fled across the border to India and 200,000, 300,000 or possible 400,000 women (three sets of statistics have been variously quoted) were raped. Eighty percent of the raped women were Moslems, reflecting the population of Bangladesh, but Hindu and Christian women were not exempt.
[Against Our Will : Men, Women and Rape; Susan Brownmiller; Page 81] does accutane cure body acne
সুসান ব্রাউনমিলার আরও লিখেছেন;
“Rape in Bangladesh had hardly been restricted to beauty… girls of eight and grandmothers of seventy-five had been sexually assaulted.”
viagra generico prezzo farmacia
স্বাধীন বাংলাদেশে বীরঙ্গনাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশী কাজ করেছে ওয়ারক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি ।তারাএকাত্তরের নারী নির্যাতনের একটি সামগ্রিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, পরিসংখ্যানটি নিচে দেয়া হল-
এবার আসা যাক ডঃ এম এ হাসানের জরিপে। তিনি সেখানে উল্লেখ করেছেন-
১৯৯১-২০০২ সাল পর্যন্তদেশের ৪২ জেলার ২৫টি থানায় পরিচালিত আমাদের গবেষণায় গৃহীত অসংখ্যসাক্ষাতকারের মধ্য থেকে নির্বাচিত ২৬৭ ব্যক্তির সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয়েছেযে, একাত্তরে দু’লাখ দু’হাজার জন নারী ধর্ষিত হয়েছে ওই সব স্থানে।… সারাদেশে ধর্ষিত ও নির্যাতিত নারীর সংখ্যা সাড়ে চার লাখের ওপরে। soulcysters net metformin
এবং সবশেষে মুনতাসীর মামুন স্যারের গভীর পর্যালোচনায় জানা যায়-
ধর্ষিত নারীর সংখ্যা ছয় লাখের কাছাকাছি হতে পারে বা তার চেয়েও কিছু বেশি, কম নয়।
তাহলে কি দেখা যাচ্ছে ! যে দুই লক্ষ সংখ্যাটিকে নিয়েও আমরা বিভ্রান্তি প্রকাশ করি, অপমান করি আমাদের বীরঙ্গনা মায়েদের। সেই ২ লাখ সংখ্যাটিও খুবই কম।যুদ্ধে মূলত বীরঙ্গনা নারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬ লাখ। সেখানে ২ লাখের হিসেব দেখিয়ে ৪ লাখ নারীকেই পুরোপুরি ভাবে স্রেফ মিলিয়ে দেয়া হয়েছে বিস্মৃতির অতলে। এটা কি আমাদের জন্য লজ্জার নয়! পৃথিবীর অন্যসব দেশে তাঁদের বীরত্বগাঁথাগুলো গৌরবের সাথে তুলে ধরা হয় বছরের পর বছর কিন্তু আমাদের দেশে লজ্জাজনকভাবে সেই ইতিহাসগুলোকে মুছে দেবার প্রচেষ্টা চালানো হয় ইতিহাসের পাতা থেকে। একটা জাতির জন্য এর চাইতে লজ্জার আর কিছু হতে পারে কিনা আমার জানা নেই।
যারা পাকি হায়নাদের নির্মমতায় মারা গিয়েছেন, হয়তো মরে গিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু যেসব মায়েরা একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিতে গিয়ে হারিয়েছিলেন সবটুকু, বেঁচে থেকেও তাঁদের মরতে হয়েছে অজস্র বার। সরকারের পক্ষ থেকে নামেমাত্র একটি “বীরঙ্গনা” উপাধি তাঁদের দেয়া হয়েছিল বটে কিন্তু সমাজের চোখে, পরিবারের কাছে তাঁরা ছিলেন “নষ্টা”। কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন-
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
স্বাধীনতা ঠিকই এনে দিয়েছিলেন সাকিনা, হরিদাসীরা কিন্তু স্বাধীনতার সুখ ভোগ করতে করতে আমরা ভুলে গিয়েছি তাঁদের। চাপা পরে গিয়েছে তাঁদের বুকচাপা হাহাকারগুলো সময়ের ব্যবধানে বিস্মৃতির অতলে।
আজ বিজয় দিবসে আমার এই লেখাটি উৎসর্গ করলাম সকল বিজয়া বীরমাতাদের প্রতি। জানি তাঁদের সামনে গিয়ে দাঁড়াবার , ক্ষমা চাইবার মতো যোগ্যতা আমাদের নেই, কিন্তু তারপরেও বলি- “মাফ করে দিও মাগো। তোমরা মাফ না করলে এই অধম যে মরেও শান্তি পাবো নাহ্”।
পূর্বের পর্বগুলোর লিংকঃ-
১ম পর্বঃ- http://sovyota.com/node/567
২য় পর্বঃ- http://sovyota.com/node/2494
৩য় পর্বঃ- http://sovyota.com/?p=2817 rx drugs online pharmacy
তথ্যসূত্রঃ-
- http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=43068
- http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=721
- http://www.rnews24.com/open-pen/2013/03/24/1107
- যুদ্ধ ও নারী; ডঃ এম এ হাসান।
- বীরাঙ্গনা ৭২; মুনতাসীর মামুন। sildenafil basics 100 mg filmtabletten
- http://icsforum.org
তাছাড়া লেখাটিতে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন আরিফ রহমান ভাইয়া। ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁকে ছোট করাটা মোটেও উচিৎ হবে নাহ্।
মায়াবী তেজস্বিনী বলছেনঃ
এই মায়েদের কথা পড়লে নিজেদের খুব অক্ষম মনে হয় আপু…। একটা ভাল জীবন তো দূরের কথা, ন্যায়বিচার টুকুই তাঁদের আমরা দিতে পারি নাই।
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
সেইটাই তো আক্ষেপ রে বোন। রাগে, দুঃখে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চায়।
তারিক লিংকন বলছেনঃ
একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যাদের এতদিন বীরাঙ্গনা বলে ডাকা হত। শত সহস্র স্যালুট বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের… diflucan dosage for ductal yeast
চমৎকার এই কাজটি করার জন্য ফাতেমাকেও স্যালুট এবং ধন্যবাদ
দুর্বার প্রলয় বলছেনঃ
তারিকদা, সত্যিই কি বীরঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে? এ ব্যপারটা নিয়ে আমি এখনও সন্দিহান….
তারিক লিংকন বলছেনঃ
pregnant 4th cycle clomidসরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ঘোষনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কাগজপত্রর অগ্রগতি আমি জানি না। যে কাজ ৪৩ বছরে হয় নি তার সিদ্ধান্ত সরকার নিলেও আসল সম্মান দেয়ার মানুষ জনগন। আমাদের সাধারণ জনগনদের বিষয়টি বুঝে উপলব্ধি করে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে রেপ ভিকটিমকে নিজের মা-বাবায় পারলে গলা টিপে মেরে ফেলে সেখানে বীরংগনাদের প্রাপ্য সম্মান দেয়ার ক্ষেত্রে আমি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সুশিক্ষিত হবার প্রয়োজন।আপনাকে ধন্যবাদ..
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
খুবই ভালো উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু সমস্যাটা তো আমাদের। সরকার মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরঙ্গনাদের প্রাপ্য সম্মানটা দেবার পরেও যখন অনেকে তাঁদের “সংখ্যা” নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন তাঁদের কতোটা অপমান হয় সেটা ভাবতে পারেন ! তাছাড়া সরকার সম্মান দিলেও আমাদের সমাজের কাছে কিন্তু তাঁরা বরাবরই নিগৃহীত। আর লজ্জাটা তো এখানেই
দুর্বার প্রলয় বলছেনঃ
জোহরা, আমি নিজেও জানতামনা সংখ্যাটা। আমি এতদিন জানতাম 4 লক্ষ বীরঙ্গনা আছেন। অবশ্য সেটাও বেশিরভাগ মানুষ মেনে নিতোনা। কত তর্ক করেছি এটা নিয়ে। কেউ কেউ তো অতি আবেগি হয়ে বলেই ফেলতো ’20 হাজারও ধর্ষিতা ছিল/আছে কিনা সন্দেহ’….. অদ্ভুত জাতি আমরা, নিজেদের ইতিহাসকে নিজেরাই বিকৃত করি। সম্মান দিতে জানিনা তাদের, যাদের জন্য স্বাধীনতা পেয়েছি।
অনেক ধন্যবাদ জোহরা, লিখার জন্য, জানানোর জন্য।
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
তোমাকেও ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে লেখাটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য । prednisolone dosing chart
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ price comparison cialis levitra viagra
pharmacy tech practice test online freeপৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন দেশে,আর কোন সভ্যতায়, আর কোন যুগে আপনি এইভাবে মায়ের সম্ভ্রম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে দেখবেন না। এইটা কেবল আমরাই করি, উই আর ভেরি গুড অ্যাট ইট…
দুর্বার প্রলয় বলছেনঃ
খুবই ভাল উদ্যেগ সরকারের। ধন্যবাদ তারিকদা। can you die if you take too much metformin
শিশিরস্নাত দ্রোহি বলছেনঃ
মন ছুঁয়ে গেল লেখাটা। বাঙলা আর বাঙালির এ লেখা আমাদের সবার মননের!
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
ধন্যবাদ … prednisolone for cats diarrhea
ইকবাল মাহমুদ অনিক বলছেনঃ
ছবি গুলো যেন আরেকবার মনে করিয়ে দিয়ে গেল,কি বর্বর অসভ্যাদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছিল আমাদের।এরকম অত্যাচারের মধ্য দিয়েই লড়াই করেছিলেন রাখাইন মেয়ে প্রিনছা,জানেন কি সেই কাহিনী????????
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
রাখাইন মেয়ে প্রিনছার গল্পটা এখনো জানার সুযোগ হয়নি, আপনার কাছ থেকে জানতে চাই ভাই… আপনিই লিখে ফেলুন গল্পটা… অপেক্ষায় রইলাম পড়ার জন্য…
ইকবাল মাহমুদ অনিক বলছেনঃ
অবশ্যই লিখব ভাই।আজ লিখব আলতাফ হায়দার নামক এক বীর যোদ্ধার কাহিনী।
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
আলতাফ হায়দারের ঘটনাটা সত্যিই অসাধারন ছিল…
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ does enzyte work like viagra
অপেক্ষায় আছি অজানা ইতিহাসগুলো জানবার…
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
বরাবরের মতই আপনার অসাধারন একটি সিরিজ পড়লাম।
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক বাংলার বাণীর পত্রিকায় গণহত্যা বিষয়ক বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। সেই সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়, দুই থেকে আড়াই লাখের পরিসংখ্যানটি সে সময়ের সরকারি কর্মকর্তারা অনুমানের ভিত্তিতে তৈরি করেছিলেন। ১৯৭১ সালের নয় মাস সারাদেশের ৪৮০টি থানার ২৭০টিই পাকিস্তানি সেনাদের দখলে ছিল। প্রতিদিন গড়ে ২ জন করে নিখোঁজ মহিলার হিসাব অনুযায়ী লাঞ্ছিত নারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ। (মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা কত : শামীমা বিনতে রহমান, ভোরের কাগজ, ১৭ মে ২০০২)।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক ডা. জিওফ্রে ডেভিস ১৯৭১ সময়কালে দেশজুড়ে তার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতায় এবং উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় চালানো নমুনা জরিপের মাধ্যমে পরিসংখ্যান তৈরি করে জানান যে, ৪ থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার নারী মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তিনি আরও জানান, অন্তঃসত্ত্বা নারীর সংখ্যাই ২ লাখ।
ওয়ারক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি একাত্তরের নারী নির্যাতনের একটি সামগ্রিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে জানা যায় :
১. স্পট ধর্ষণ, স্পট গণধর্ষণ ও বন্দি নির্যাতিতার সম্মিলিত সংখ্যা ৪ লাখ ৬৮ হাজার (স্পট ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার ৩ লাখ ৭ হাজার ৬০০ এবং বিভিন্নভাবে পাকিস্তানিদের কাছে বন্দি নির্যাতিত নারী ১ লাখ ৪০ হাজার ৪০০)।
২. চিহ্নিত স্থানে নির্যাতিত, নিহত ও অপহৃতসহ স্পট ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার ৩ লাখ ৬০ হাজার। এদের মধ্যে শুধু স্পট ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার যা মোট নির্যাতিতার ৭০ ভাগ। এদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন প্রায় ৩০ ভাগ অর্থাৎ ১ লাখ ৮ হাজার নারী। (সূত্রঃ একাত্তরের নারী নির্যাতন : ইতিহাসের কৃষ্ণ অধ্যায়; ডা. এমএ হাসান; প্রসঙ্গ ১৯৭১ : মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, পৃষ্ঠা ৩)
যুদ্ধ্বের সময় কেবল যৌন নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি পাকি সেনারা। তারা অনেক নারীকে কমফোর্ট গার্ল হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো নিজেদের দেশে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। ১৯৭২ সালের ২০ জুন, দৈনিক ইত্তেফাকের তৃতীয় পৃষ্ঠায় লিখা হয়ঃ
সুসান ব্রাউনমিলারের অফিশিয়াল ডকুমেন্ট অনুযায়ী ফোর্সড প্রেগনেন্সির শিকার হন প্রায় ২৫ হাজার নারী। ওয়ারক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির ডা. এমএ হাসান দাবি করেন, ‘এ ধরনের নারীর সংখ্যা ছিল কমপক্ষে ৮৮ হাজার ২০০।
যুদ্ধে জেনোসাইডাল রেইপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে জেনোসাইডাল রেপ সংঘটিত হয়েছিল। এনবিসি নিউজ ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একটি রিপোর্ট করে, যাতে জানা যায় ১৩ বছরের মেয়েরাও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে কখন থেকে ধর্ষনের সংযোজনঃ বিষয়টি অত্যন্ত অবাক করে যে, একসময় আন্তর্জাতিক অপরাধ রূপে যুদ্ধ্বকালীন ধর্ষনকে আওতাধীন করা হতনা। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের ১৭৯ পৃষ্ঠার রায়ে কোথাও ধর্ষণের বিচারের উল্লেখ নেই! তবে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ফারইস্ট চলার সময় ধর্ষণের কিছু অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল । টোকিও প্রসেডিং চলার সময় ‘রেপ অব নানকিং’ আলোচিত হয়। নুরেমবার্গ ট্রায়াল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে নতুন এক কনসেপ্টের উদ্ভব হয় আন্তর্জাতিক আইন পরিমণ্ডলে । সেটি হলো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। নুরেমবার্গ ট্রায়ালের চার্টার অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের আর্টিকেল ৬(সি) মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করেছে। সংজ্ঞাটিতে হত্যা-দাসত্ব ছাড়াও আরও বেশকিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে; কিন্তু তবুও ধর্ষণের বিষয়টির উল্লেখ ছিলোনা।
পরে বাংলাদেশ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে আইন প্রণয়ন করে। তখন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে। বাংলাদেশ ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’কে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে ধর্ষণকে যুক্ত করে। আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে সেটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোজন।
আইসিটিআরের স্ট্যাটুট-এর ৩ অনুচ্ছেদে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের ৩(জি)-তে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে ধর্ষণকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; যদিও অনেকের দাবী আইসিটিআরের স্ট্যাটুটে প্রথমবারের মতো ধর্ষণকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে সংযুক্ত করা হয়; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারও অনেক আগে ১৯৭৩ সালেই বাংলাদেশ ধর্ষণকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে সংযুক্ত করে। আর এটা নিশ্চিতভাবেই আমাদের একটা সাহসী পদক্ষেপ! propranolol clorhidrato 10 mg para que sirve
ধর্ষন সবসময়ই মানবতার বিরুদ্ধে একটি জঘন্য অপরাধ। ত্রিশলক্ষ শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে, চার লাখ ধর্ষিতার লাশের উপর নৃত্য করেও পাকি কুকুররা আজও ক্ষমা চায়নি আমাদের কাছে। তাদের দোসর যুদ্ধাপরাধীরা যখন এদেশে মুক্তভাবে বিচরণ করে তখন ঘেন্না লাগে নিজের কাছে। নিজেকে অসহায় লাগে। বিচার চাই!! বিচার চাই!! বিচার চাই!!
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
ধর্ষন সবসময়ই মানবতার বিরুদ্ধে একটি জঘন্য অপরাধ। ত্রিশলক্ষ শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে, চার লাখ ধর্ষিতার লাশের উপর নৃত্য করেও পাকি কুকুররা আজও ক্ষমা চায়নি আমাদের কাছে। তাদের দোসর যুদ্ধাপরাধীরা যখন এদেশে মুক্তভাবে বিচরণ করে তখন ঘেন্না লাগে নিজের কাছে। নিজেকে অসহায় লাগে। বিচার চাই!! বিচার চাই!! বিচার চাই!!
বরাবরের মতো অসাধারন ইলেকট্রণ…
এই চমৎকার পোস্টটাকে আপনার অসাধারন মন্তব্যটা আরো পরিপূর্ণ করল… পুরনো সেই ইলেকট্রনকে ফিরে পেয়ে ভালো লাগছে…
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
সহমত। অশেষ ধন্যবাদ ইলেকট্রনকে এতো তথ্যপূর্ণ একটি মন্তব্যের জন্য।