জামদানিঃ ইতিহাস ও ঐতিহ্য
2527
বার পঠিতবোগদাদ নগরীর অদূরবর্তী সিটি অফ মসুল । সমৃদ্ধ ইরাকের এক সমৃদ্ধ নগরী। একাদশ শতকের মাঝামাঝি। প্রথম ক্রুসেড এর যুদ্ধজয়ী ক্রুসেডাররা সদ্য জয় করা মসুল নগরে ঘুরতে ঘুরতে হঠাত চোখ আটকে গেলো এক টুকরো কাপড়ে। যেনো আটলান্টিকের জলের মতো স্বচ্ছ, যেনো শুভ্র টিউলিপের মতো স্নিগ্ধ। এতো কোমল, এতো মোলায়েম, এতো অসম্ভব সুন্দর কাপড় ; যেনো স্বর্গীয় কিছু। মসুল নগরের বাসিন্দারা চুক্তিতে আসলো। তারা এনে দিবে এই কাপড় ; বিনিময়ে দিতে হবে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার অধিকার।
রোম সাম্রাজ্য থেকে চীন। ব্রিটেন থেকে আরব। সর্বত্র এই স্বর্গীয় বস্ত্রের স্তুতি। মসুল নগরের এই অমুল্য বস্ত্র। পরিচিত হলো মসলিন নামে। মসলিনের খ্যাতি পুরো বিশ্বজোড়া। কিন্তু কোথা থেকে আসে এই মসলিন? মসলিন আসে ঐ ভারত থেকে। ঠিক ভারত না, ভারতের গঙ্গা অববাহিকায় যে পৃথিবীর স্বর্গ, সেই বাঙ্গাল মুল্লুক থেকে আসে মসলিন। মার্কো পোলো তার দ্য ট্রাভেলস বইয়ে এবং গুস্তভ দোর তার হিস্টোরি অফ দ্য ক্রুসেডস বইতে মসলিনের এই বিবরণই দিয়েছেন। পুরো এশিয়া এবং ইউরোপের রাজপরিবারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তম পোশাক ছিলো মসলিন। আমাদের মসলিন।
সময়ের সাথে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভারতে। বাংলা দখলের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মুঘলরাজ আকবর। সম্রাট আকবর তার সেনাপতি মান সিংহ কে পাঠালেন। সে সময় সোনারগাঁ শাসন করতেন ঈসা খাঁ। পরাজিত মুঘল শক্তি পরে সম্রাট জাহাঙ্গীর এর সময় বাংলা দখল করে। সেই সাথে মুঘল রাজপরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায় মসলিন। ইংরেজ আমলের কোম্পানি যুগের শেষ দিকে ১৮৩৩ সালে এক আইন অনুযাঅয়ী ইংরেজরা এই দেশে নীল চাষের বৈধতা পায়। কৃষকদের বাধ্য করা হতো নীল চাষ করার জন্যে। ১৮৫০ এর নীল বিদ্রোহ যদিও সাময়িক বিজয় এনে দেয়, কিন্তু এর প্রতিশোধ ইংরেজরা নেয় ভয়ংকরভাবে।
মূলত ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের কারনে কাপড়ে নীলের চাহিদা বেড়ে যায় প্রচুর। দলে দলে ইংরেজরা ভারতে এসে নামমাত্র মূল্যে কৃষকদের দ্বারা নীল চাষ করাতো। ই এল টাওয়ারের ভাষায়, ” কৃষকের রক্তে না ভিজে এক টুকরো নীলও ইউরোপে যায় নি “। যদিও নীল বিদ্রোহের কারনে নীল চাষ সাময়িক বন্ধ হয়, ইউরোপীয় পোশাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এদেশীয় ইংরেজরা বলির পাঠা করে মসলিনকে। প্রত্যেক মসলিন তাঁতির বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলা হয়। ধ্বংস হয়ে যায় হাজার বছরের পুরোনো বাংগালি ঐতিহ্য মসলিন।
মসলিনের কাপড়ে কারুকার্য করা হতো আরেক ঐতিহ্যবাহী পোশাক শিল্প জামদানি দিয়ে। মসলিনের অনুপস্থিতিতে জামদানি হয়ে উঠে বাংলার প্রধান বস্ত্রশিল্প। নারায়ণগঞ্জ এর যেই স্থানগুলো একসময় মসলিন তৈরি করে পৃথিবীকে অভিভূত করে ফেলেছিলো, সেখানেই গড়ে উঠেছে আজকের জামদানি পল্লী। আমাদের জামদানি পল্লী।
জামদানী শব্দটি মূলত ফরাসি শব্দ। যেখানে ‘জাম’ অর্থ পারস্য দেশের একপ্রকার উৎকৃষ্ট সুরা বা পানীয় আর ‘দানী’ হচ্ছে বাটি বা পেয়ালা অর্থাৎ ‘জামদানী’ শব্দের অর্থ দাঁড়াচ্ছে উৎকৃষ্ট সুরার পেয়ালা বা পাত্র। আবার অনেকে মনেকরেন এই নাম এসেছে রুপকরুপে। রুবি গজনবীর মতে ফরাসি অপর শব্দ জাম-দার অর্থাৎ ফুলকরা বা বুটি দ্বারা খচিত করা (Embossed) থেকে জামদানীর নামকরণ। মোদ্দাকথা, ‘যে সব মসলিন তাঁতে নকশা খচিত করা হয় তাকেই জামদানী বলে’।
“বিচিত্র কারুকার্যে খচিত মসলিনের নাম জামদানী। সুখের বিষয় আজও জামদানীর প্রচলন আছে বলে অল্প বিস্তর সবাই আমরা এই বস্তুর সাথে পরিচিত”— লিখেছেন তোফায়েল তার ‘আমাদের প্রাচীন শিল্প’ বইয়ে।
বলা হয়ে থাকে জামদানীই হচ্ছে আদিমতম তাঁত যার কোন মৌলিক পরিবর্তন হয় নি, হয়তো পরিপার্শ্বের সাথে নকশার পরিবর্তন হয়েছে। ‘তাঁত ও রঙ’ গ্রন্থে শ্রী ত্রৈলোক্যনাথ বসু বলেছেন “আদিম যুগের একপ্রকার দপ্তিবিহীন গর্ত তাঁত, একটি ঝুলান ফ্রেমে শানাটিতে (Reed) আটকাইয়া মাকু হাতে ছুড়িয়া এক অদ্ভুত উপায়ে এই তাঁত কাপড় বোনা হয়। এই তাঁতের মাকুকে থ্রো সালেট (Throw Shuttle)বলে।”
মোহাম্মদ সাইদুর তাঁর ‘প্রাগুক্ত’ গ্রন্থে বলেছেন ‘জামদানীর প্রতিটি নকশার মাঝে রয়েছে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, জীবজগৎ ও বৃক্ষলতাযুক্ত নকশার প্রাধান্য অর্থাৎ একজন তাঁতি বা তাঁত শিল্পী (আমি তাঁত শিল্পী বলাটা বেশী যথার্থ মনেকরি) বস্ত্র বয়ন করতে গিয়ে তাঁর চারপাশে যে দৃশ্য দেখেছেন, বয়নে তিনি তারই প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন।”

জামদানি পডি বা বাংলা cd 17 clomid no ovulation
প্রাচীনকালের সেই মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী জামদানি। জামদানির নামকরণ নিয়ে বহু মতবাদের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হল ‘জামদানি’ শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ফার্সি জামা অর্থ কাপড় এবং দানা অর্থ বুটি, তাহলে জামদানির অর্থ দাড়ায় বুটিদার কাপড়। এখনো অনেকেই ‘জামদানি’ শব্দটা উচ্চারন না করে সেই আগে প্রচলিত ‘ঢাকাইয়া জামদানি’ বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ‘জামদানি’ শব্দটা শোনামাত্রই আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে শাড়ি। অন্তত এখন আমরা তাই বুঝি। তবে একসময় জামদানি দিয়ে নকশী ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা এসবও তৈরি হত। ১৭০০ শতাব্দীর দিকে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির দারুণ প্রচলন ছিল। এছাড়া, মুঘল নেপালের আঞ্চলিক পোষাক “রাঙা’র” জন্যও জামদানি কাপড় ব্যবহার করা হত।
জামদানি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় বাইনের সুতা আর তানার সুতার মোড়া রঙ করনের মধ্য দিয়ে। মুহূর্তের মধ্যেই খাদার ভেতরের গরম রঙে হাজার হাজার মোড়া সুতা রঙিন হয়ে উঠে। সুতার মোড়া রোদে শুকিয়ে পাঠানো হয় ভাতানোর জন্য। ভাত বেটে সূক্ষ্ম চালনি দিয়ে চেলে তার সাথে পানি মিশিয়ে মোড়া মোড়া সুতা তাতে ভিজায়। ভিজা সুতা চড়কাতে চড়িয়ে চড়কা ঘুরানোর পালা আসে। এক হাতে চড়কা ঘুরিয়ে একটা একটা ভেজা সুতার ভাজ খোলে আর এক হাতে একটা একটা ভেজা সুতার ভাজ নাডাড় মধ্যে পাকাতে থাকে। নাডার মধ্যে এই ভাতানো সুতা এক ঘণ্টা রোদে শুকানোর পর সেটা পডিতে পাঠানো হয়। পডির ব্যাপারটা ক্লিয়ার করি। একজন মালিকের পাঁচটা দশটা থেকে শুরু করে একশত দেড়শত জামদানি তাত নিয়ে যেটুকু জমি সেটাই পডি বা বাংলা। একটা এলাকার সবগুলু মালিকের পডি বা বাংলা মিলে হয় সেই এলাকার জামদানি পল্লী। আগের কথায় ফিরে আসি। ভাতানো শুকনা সুতার মোড়া পডিতে এনে ছোট চড়কিতে বসিয়ে হাত আর পায়ের ব্যাবহার করে প্রতিটা সুতা যত্ন নিয়ে একটা থেকে আরেকটা আলাদা করে হোলার তৈরি ছাডাতে ভরা হয়। খালি ছাডাতে সুতা ভরার সাথে সাথে তার নাম হয়ে যায় মউরা। মউরাকে মাক্কুর ভেতরে ঢুকানোর পরে প্রস্তুত হল জামদানির বাইনের সুতা।যেটা তাতের প্রস্থে থাকে।
এবার শুরু তানার সুতা। সুতার মোড়া উপরে রেখে দুজন কারিগর হানায় কাজ করে। হানার দুই পাশে দুই জন কারিগর বসে। একেকটা হানা জামদানি তাতের সমানই লম্বা। চিরুনির মত দাতওয়ালা। তবে চিরুনির মত একপাশে দাত খোলা না, দুইপাশই বন্ধ এবং মাঝখানে চিরুনির দাতের মত দাত। একজন কারিগর একপাশ থেকে হানার একেকটা দাতে একটা করে সুতা চারটা থেকে পাচটা পেচ দিয়ে অন্য পাশে বসে থাকা কারিগরের হাতে দেয় এবং সে সেই একটা সুতা টেনে ধরে বসে থাকে। অন্য পাশ থেকে দশটা থেকে পনেরোটা সুতা আসা পর্যন্ত সে ওভাবেই টেনে ধরে রাখে। পনেরোটা সুতা নিশ্চিত হলে সেগুলু একসাথে গিট দেয়। একটা একটা সুতা দিয়ে এভাবেই দুইজন কারিগর টানা পাচ ঘণ্টা কাজ করে একটা হানা সুতা দিয়ে সম্পূর্ণ ভরতে পারে। হানায় এই সুতা ভরাকে বলা হয় হানায় ‘ব’ ভরা। গিট দেয়া প্রান্তটা হানার সুতার শুরু। এই শুরুটা নরদে পেচানো হয়। সুতা আলাদা আলাদা দাতে বসিয়ে সুতার মোড়া টানে, সুতা লম্বা হয় আর নরদে পেচানো হয়। এই এক হানা দিয়ে চারটা করে শাড়ি বোনা সম্ভব। দুইজন কারিগর জরুরী চুক্তিতে একদিনে সর্বোচ্চ চারটা হানায় ‘ব’ ভরতে পারে। হানায় ‘ব’ বরার এই পদ্ধতিটা বসে করতে হয়। এটা “তানা আডা” নামের আরেক পদ্ধতিতেও করা সম্ভব। একজন হানায় পেচানো কাপড় কোমরে বেধে টান দিয়ে ধরে রাখে আরেকজন একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে হেটে হেটে ‘ব’ ভরে আর নরদে পেচায়। তৈরি জামদানির তানার সুতা যেটা তাঁতের দৈর্ঘ্যে থাকে।
নরদে পেচানো এই তানার সুতা পডিতে এনে তাঁতে সেট করার কাজ শুরু মানে আরেক সংগ্রাম। নরদ তাঁতের পেছনের দিকে বসিয়ে তানার সুতার সাথে মালসি সেট করে তার সামনে দপ্তি রাখে সেই দপ্তির ভেতর থাকে হানা। হানা ভরা দপ্তির সামনের দিকে সুতা টেনে সামনের নরদের সাথে আটকায়। তাঁতের চৌচাল থেকে নেমে আসা নাচনি দড়ি আর নাচনি কাডি বা পুডুল কাডি মালসির সাথে বেধে নাচানোর জন্য তৈরি করা হয়। সাথে তাল দেয়ার জন্য আরও থাকে বিগহাতায় পায়ের নিচে তল পাওর আর জুইতাস। চৌচাল থেকে একটু নিচে কাঠিতে থাকে রঙিন সুতার ববিন। সামনের নরদের সাথে শক্তি হিসেবে থাকে মুনি। তাঁতের চারপাশে ঘোড়ার খুডা, বিসকড়ম খুডা, মুনির খুডা, মুতি কাডা, মুতি কামানি, লোআর খিলির মতো নানান ধরণের খুডা ব্যাবহার করা হয় তাঁতকে টান রাখার জন্য। শাড়ীতে যে ডিজাইন হবে তার সাথে কালার মিলিয়ে শাড়ির পাড়ের জন্য যত রঙের যতটা সুতা লাগবে ঠিক ততটা সুতা আলাদাভাবে শাড়ির দুই পাশে রেখে পাড়ের সুতাকে দড়ি দিয়ে বেধে দড়ির আরেক প্রান্তে ইট বেধে ঝুলিয়ে টান করে রাখে যেন সুতা এলোমেলো হয়ে না যায়। দুইজন তাঁতি কাপড় বোনে। ডানপাশে বসে তাতি বামপাশে বসে হারকিত। ডানপাশের জন ডান থেকে বায়ে বামপাশের জন বাম থেকে ডানে নকশার কাজ করে। মাঝখানে এসে দুজনেই থামে তারপরই দপ্তির সামনের ফাকা জায়গা দিয়ে মউরা ভরা মাক্কু ডান থেকে বামে আবার বাম থেকে ডানে এক কারিগর আরেক কারিগরকে ঠেলে দেয় যেটা দিয়ে বাইনের সুতা দেয়া হল, বাইনের আলগা সুতাটাকে তানার সুতার সাথে দপ্তি দিয়ে সামনের দিকে টান দিলেই শাড়ি তৈরি শুরু। দপ্তির এক টানে মাক্কু দিয়ে ভরা দুইটা সুতা একসাথে হয়ে এক বাইন হয় তারপর ঐ এক বাইনের সুতায় কান্ডুল দিয়ে এক প্রস্থে সুতার নকশা করে তাতিরা। এক প্রস্থ নকশা শেষ হলে আবার মাকু দিয়ে ডান থেক বামে বাম থেকে ডানে দুবার সুতা দিয়ে দপ্তি টানলে একবাইন হল। সেই বাইনে আবার এক প্রস্থ নকশা করে। দুই সুতায় এক নকশা, মাক্কু দেয়া, আবার দপ্তির টান আবার দুই সুতায় এক নকশা… এভাবেই চলতে থাকে। এক হাত পরিমান শাড়ি বোনা হলে তাতে খলান দেয়া হয়। ফ্যানের বাতাসে খলান শুকালে মুনিতে চাপ দিয়ে এক হাত শাড়িটুকু সামনের নরদে পেচান হয়। তারপর আবার মাক্কু ভরা, দপ্তির টান, দুই সুতার উপর এক প্রস্থ নকশা আবার মাক্কু। চলতেই থাকে একদিন, দুইদিন, তিনদিন… বাইনের উপরেই নির্ভর করে একেকটা শাড়ি তৈরির সময়কাল। বাইন পাতলা হলে এক শাড়ি তৈরি করতে এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে বাইন ঘন হলে এক শাড়িতেই ছয় মাস সময়ও লেগে যায়।
জামদানি শাড়ি সর্বমোট চার ধরণের হয়।
১. ফুল সিল্ক
২. হাফ সিল্ক
৩. ফুল কটন
৪. নাইলন
আবার জামদানীর নকশার প্যাটার্নের উপর বা নকশার ধরনের উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু শ্রেণীবিন্যাস করা আছে। যেমন-
তেরছাঃ যে জামদানীর নকশায় তির্যক রেখায় সাজানো থাকে তাকে তেরছা নকশার জামদানী বলে।
বুটিদারঃ সাধারণত ছোট ছোট ফুলের নকশা দেখা যায়, যখন পুরো জমিন জুড়ে ফুল বা ফুলের ছড়ার নকশা করা হয় তখন তাকে বুটিদার জামদানী বলে।
ঝালরঃ যখন ফুলের নকশা জালের মত পুরো জমিনে বিস্তৃত থাকে তখন তাকে ঝালর জামদানী বলে।
পান্না হাজারঃ পান্না হাজার হচ্ছে যখন নকশার ফুলগুলো জোরা দেয়া থাকে অলংকারের মনির মত।
ফুলওয়ারঃ যখন পুরো জমিনে টানা ফুলের নকশা করা থাকে তখন তাকে ফুলওয়ার বলে।
তোরাদারঃ তোরাদার জামদানী হচ্ছে বড় আকারের বাস্তবানুগ ফুলের নকশার জামদানী।
অন্যান্য নকশা তোলা বস্ত্রে নকশার যে নাম ব্যবহার হয় জামদানিতেও সেই সকল নাম প্রচিলিত আছে।
* ফুল সিল্ক জামদানি শাড়ির তানার সুতা আর বাইনের সুতা এবং শাড়ির উপরের নকশা সবই রেশমের। চায়না আর জাপান থেকে রেশম আমদানি করা হয়।
* হাফ সিল্ক শাড়ির তানার সুতা রেশমের। বাইনের সুতা আর নকশা হয় কটনের।
* ফুল কটন শাড়িতে তানার সুতা, বাইনের সুতা, নকশা সবই কটনের। এই সুতি সুতাটা তৈরি হয় কার্পাস তুলা থেকে। কার্পাস তুলা আমাদের দেশেই চাষ হয়।
* নাইলনের জামদানিতে নাইলন তানার সাথে বাইন আর নকশা নাইলন বা কটন দুটাই হতে পারে। নাইলন আর রেশমে খুব বেশি তফাৎ হয় না। খুব পাকা জামদানি ব্যাবসায়ী না হলে ধরা সম্ভব না কোনটা রেশমের জামদানি আর কোনটা নাইলনের জামদানি। নাইলনকে রেশম জামদানি বলে খুব সহজেই ক্রেতাদের ঠকানো সম্ভব।
সব ধরণের শাড়ির ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে শাড়ির নকশাতে আর শাড়ির পাড়ে জরি ব্যাবহার করা হয়। এই জরি ঢাকার মিরপুরে তৈরি হয়। সাধারণত তিন রঙের জরি জামদানিতে ব্যবহৃত হয়।
১. গোল্ডেন
২. সিলভার
৩. কপার
জামদানি শাড়ির দামও বাইন আর নকশার উপরে নির্ভর করে। ১২০০ থেকে শুরু করে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দামও হতে পারে।
জামদানি শাড়ির নকশার এবং পাড়ের আবার আলাদা আলাদা নাম হয়। নামের ব্যাপারটা খুবই চমকপ্রদ। কিছু নকশা আর পাড়ের নাম পড়লেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। ampicillin working concentration e coli
জনপ্রিয় নকশাগুলোর মধ্যে কয়েকটা নামঃ
১। কলার ফানা
২। আদার ফানা
৩। করলা জাল
৪। আংটি জাল বা হানসা
৫। কলমি লতা
৬। শাপলা ফুল
৭। জুই ফুল বুটি
৮। দুবলা জাল
৯। শামুক তেছড়ি
১০। ময়ূরপঙ্খী
১১। কচুপাতা তেছড়ি
১২। সন্দেশ ফুল
১৩। তারা ফুল
১৪। গোলাপ ফুল
১৫। বেলী ফুল
১৬। ঝুমকা ফুল
১৭। চালতা ফুল
১৮। মুরালি লতা
১৯। পুই লতা
২০। প্রজাপতি বুটি
জামদানি শাড়ির জনপ্রিয় কিছু পাড়ের নামঃ
১। বাদুরপাখি পাড়
২। বেলপাতা পাড়
৩। মিহি পাড়
৪। গিলা পাড়
৫। কাউয়ার ঠ্যাং পাড়
৬। ইঞ্চি পাড়
৭। শালগম পাড়
৮। আঙ্গুরফুল পাড়
৯। কলকা পাড়
১০। কাচি পাড় doxycycline monohydrate mechanism of action
জামদানি আমাদের নিজেদের ঐতিহ্য। সম্পূর্ণ আমাদের। যখন দেখি পৃথিবীজুড়ে মানুষ জানে জামদানি ইন্ডিয়ান পণ্য তখন কষ্ট লাগে। আর যখন দেখি আমাদের দেশের বোর্ড বইগুলোতেই আমাদের এই ঐতিহ্যের উৎপত্তির স্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া থাকে তখন আরও বেশি অবাক লাগে। জামদানির জন্ম নোয়াপাড়াতে। নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানার তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া গ্রামে। এই এলাকার তাতিরা পরে ছড়িয়ে পরেছে নারায়ণগঞ্জের রূপসী, কাজীপাড়া, গন্দর্বপুর, বারগাঁও, সোনারগাঁ, মুরগাকুল, মৌকুলি, তালতলা, খাদুন প্রভৃতি এলাকায়। বিভিন্ন জেলার তাতিরা নোয়াপাড়া এসে জামদানি বোনা শিখেছে, এখনো শিখে। এসব তাতিরা সাধারণত উত্তরাধিকার বা পরিচিতদের সুত্র ধরে আসে। এদের এক বছর চুক্তিতে একটা নির্দিষ্ট পরিমান অগ্রিম টাকা দিয়ে নিয়ে আসা হয়। চুক্তিতে আসা এসব তাতিদের খাওয়া দাওয়া ফ্রি। এক বছরে কাজ শিখা হয়ে গেলে তারপর থেকে বেতন দিয়ে কাজ শুরু হয়। তবে মাস শেষে কোন পার্মানেন্ট বেতন নেই তাতিদের। প্রতি শাড়ি হিসেবে টাকা পায় এরা। চুক্তিতে আসা অনেক তাতিই কাজ শিখে নিজের জেলায় ফিরে গিয়ে জামদানি বোনা শুরু করেছে। এভাবে নোয়াপাড়া থেকেই জামদানি ছড়িয়ে পরেছে বিভিন্ন জেলাতে। উল্লেখযোগ্য জেলাগুলো হল কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঢাকার মিরপুর ইত্যাদি।
তাতিরা যত শাড়ি বুনবে তত টাকা। শাড়ি না বুনলে কোন টাকা নাই। মালিক একটা জামদানি বোনার জন্য যে সুতা আনে সেই খরচ মালিকের। এক মাস সেই সুতা নিয়ে কাজ করে তাতিরা। সেই শাড়িটা যদি ১০০০০ টাকা দাম হয় তাহলে তাতিকে দেয়া হবে শাড়ির দামের অর্ধেক টাকা মানে ৫০০০। শাড়ির সুতার দাম যদি ১০০০ হয় বাকি রইল ৪০০০ টাকা। এই চার হাজার টাকা থেকে হারকিত সপ্তাহ শেষে বেতন পাবে ৮০০ টাকা করে। যেহেতু ১০০০০ টাকা দামের শাড়িটা বুনতে এক মাস সময় ধরেছি, একমাসে হারকিত তাহলে বেতন পাবে ৩২০০ টাকা। যদিও হিসাবে দেখা যাচ্ছে মালিকের মাত্র ৮০০ টাকা লাভ তবে এখানে কথা আছে। ১০০০০ টাকা দামের সেই শাড়ি মালিক যদি ৩০০০০ টাকায় বিক্রি করতে পারে তাহলে পুরাটাই মালিকের লাভ। তাতিরা এর কোন ভাগ পাবে না। এর জন্যই তাতিরা জামদানির কাজ করে সন্তুষ্ট না। তাদের মাস শেষে নির্দিষ্ট কোন ইনকাম নেই। মালিক অর্ডার দিলে তাতিরা শাড়ি বুনবে এবং সেই শাড়ির দামে টাকা পাবে। জামদানির বাজার চাহিদা আমাদের দেশে এখন নামে মাত্র। যা কিছু তৈরি হয় বেশিরভাগ চলে যায় ইন্ডিয়ায়। মালিকই যেহেতু পর্যাপ্ত অর্ডার পায় না সে ক্ষেত্রে তারা জামদানির কাজ বন্ধ রাখে। এতে তাতিদের ইনকাম পুরো বন্ধ হয়ে যায়। জামদানি তাতিরা শাড়ি বোনার পাশাপাশি অন্য কোন কাজ করে না। শাড়ি বোনা বন্ধ থাকলে এদের ঘরে খাবার কেনার টাকা পর্যন্ত থাকে না। এর ফলে তাতিরা টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টসের দিকে ঝুকে যাচ্ছে বেশি। আমি নিজে যখন তাতিদের জিজ্ঞেস করেছি তারা মাথায় হাত দিয়ে বলেছে তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মদের কোনমতেই জামদানি বোনার কাজে দিতে ইচ্ছুক না।
জামদানি শাড়ির প্রশংসা নতুন করে করার কিছু নেই। অনেকেই মনে করে জামদানি তিন চারবার পড়লেই নষ্ট হয়ে যায়। এ ধারনাও ঠিক না। জামদানি বোনার সময় খলান দেয়া হয় বলে কাপড় শক্ত থাকে। কয়েকবার ব্যাবহারের পর এই খলান চলে যায় বলে কাপড় নরম হয়ে যায়। চাইলেই এসব শাড়ি আবার নতুনের মতো করা সম্ভব। শাড়ি যতই নরম হোক অন্তত ছিড়ে যাওয়ার আগে সেই শাড়ি ওয়াশ করা সম্ভব। মাত্র ২০০ টাকায় আবার শাড়ি নতুনের মতো করে দেয় তাতিরা। সবচে চমকেপ্রদ খবর হল জামদানির জন্মস্থান নোয়াপাড়ায় প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত জামদানির হাডি বসে যেখানে প্রতি শাড়িতে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় দিয়ে বিক্রি করে। ৫০০০ টাকা বাজার দরের একটা শাড়ি হাডিতে ৩৫০০ টাকায়ও কিনতে পাওয়া যাবে।
মসলিনের মতো জামদানি হয়তো একদিন শুধু জাদুঘরেই দেখতে পাবো ভাবলেই আমার গায়ে কাটা দেয়। আমি চাই না এমনটা কখনো হোক। জামদানির বাজার মন্দা দেখে মালিকপক্ষ এবং তাতিরা এমনটাই মনে করে। আমি ভাবি কেন জামদানির একটা বিপ্লব ঘটবে না ? কেন বাংলাদেশে জামদানির একটা আলাদা শো রুম থাকবে না যেখানে শুধু জামদানি পাওয়া যাবে। শুধু শাড়ি না, জামদানি কাপড় ব্যাবহার করে যা কিছু বানানো যায় তার সবকিছু থাকবে এই শো রুমে। ঐতিহ্যবাহী এই পোশাককে টিকিয়ে রাখতে সরকার কোন উদ্যোগ এখনো কেন নিচ্ছে না ? নিজের পুরোনো একটা কিছু হারিয়ে গেলে কত কষ্টই না লাগে! আমরা যেমন মসলিনের গল্প শুনি আর জাদুঘরে গিয়ে মসলিন দেখি কোন একদিন কোন এক প্রজন্ম তাহলে কি ঠিক এভাবেই জামদানির গল্প শুনবে আর জাদুঘরে গিয়ে দেখবে ?
টীকাঃ
*বাইনের সুতা= তাঁতের প্রস্থে থাকে
*তানার সুতা= তাঁতের দৈর্ঘ্যে থাকে
*সুতার মোড়া= ১০ কুণ্ডলী সুতা সমান ১ মোড়া সুতা
*খাদা= পাথরের তৈরি বড় পাতি বিশেষ
*ভাতানো= ভাত বেটে সূক্ষ্ম চালনি দিয়ে চেলে তাতে পানি মিশিয়ে তৈরি এক ধরণের তরল
*নাডা= লম্বা এক ধরের চরকা। দেখতে লম্বা ছাতা বন্ধ করলে যেমন দেখায়
*পডি/বাংলা= উপরের লেখায় পডির বর্ণনা আছে
*ছাডা=চার ইঞ্চি মাপের ছোট সোলা
*মউরা= ছাডাতে বাইনের সুতা ভরলে বলা হয় মউরা
*মাক্কু= মাকু। এর ভেতরে মউরা ভরা হয়
*কারিগর/তাতি= যে জামদানি বোনে
*হারকিত= তাতির সাহায্যকারী
*হানা= হানার বর্ণনা উপরে দেয়া হয়েছে
*’ব’= হানায় সুতা ভরলে বলে ‘ব’ ভরা
*সামনের নরদ ও পেছনের নরদ=তাঁতে তানার সুতা টেনে রাখার সামনের ও পেছনের দুই বাশ
*মালসি= দপ্তির সামনে ও পেছনে থাকে
*দপ্তি= তানার সুতার সাথে বাইনের সুতা জোড়া লাগানোর জন্য টান দেয়ার কাঠ
*চৌচাল= তাঁতের সবচে উপরের বাশে যেটা থেকে যাবতীয় সুতার সরঞ্জাম ঝুলানো হয়
*নাচনি দড়ি= চৌচাল থেকে ঝুলানো দড়ি
*নাচনি কাডি/ পুডুল কাডি= নাচনি দড়িতে যে কাঠি ঝুলে থাকে
*বিগহাতা= মাটির গর্ত। তাতি এই গর্তে পা রেখে বসে কাপড় বোনে
*তল পাওর= মাটির গর্তে তাতির পায়ের নিচে থাকা বাশ
*জুইতাস= মাটির গর্তে তাতির পায়ের পাশে থাকা কাঠ
*সুতার ববিন= চৌচালের নিচে আরেকটা কাঠিতে ঝুলে থাকে সুতার ববিন, জরির ববিন। এই সুতা দিয়েই শাড়িতে নকশা করা হয়
*মুনি= সামনের নরদের গর্তে থাকা কাঠ। এক হাত শাড়ি বোনা হলে এই কাঠে চাপ দিয়ে নরদে ঐ এক হাত শাড়ি পেচানো হয়
*কান্ডুল= যে কাঠি দিয়ে শাড়িতে নকশা করা হয়
*খলান=ভাতের মাড়
*হাডি= জামদানি হাট
*ঘোড়ার খুডা, বিসকরম খুডা, মুনির খুডা, মুতি কাডা, মুতি কামানি, লোহার খিলি=তাঁতের আশেপাশে থাকা বিভিন্ন বাশের যন্ত্রপাতি। তাঁতের এবং কাপড়ের ব্যাল্যান্স রাখার জন্য
পরিশিষ্ট:
নোয়াপাড়ার জামদানী পল্লী ঘুরে দেখানোর জন্য শাহেদ, সুমন, শ্যামল, রাজু এবং সেতুকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আর ধন্যবাদ তারিক লিংকনকে। আমরা তাহার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করিবো ?
তথ্যসূত্র:
১। বাংলা পিডিয়া
৩। Wikipedia
৪। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ‘চারু ও কারুকলা’।
hcg nolvadex pct cycle
নির্ঝর রুথ বলছেনঃ diflucan 150 infarmed
উপসংহারটা যেন আমার মনের কথাটাই তুলে ধরলো!
“ভারতীয় ঐতিহ্য” থেকে “বাংলাদেশের ঐতিহ্য” হিসেবে জামদানীর পরিচিতি আনতে হবে, শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে, মানুষ যেন বিদেশী কাপড়ের দিকে না ঝুঁকে দেশী কাপড় কেনে সে সচেতনতা বাড়াতে হবে… আরও অনেক কাজ করতে হবে আমাদের।
আর এই জামদানী বোনার জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম আর সময়ের প্রয়োজন হয়, তার তুলনায় দাম তো বেশী হবেই! কোনোভাবে কি আরেক্টু সহজ পদ্ধতি বের করা যায় না, যার ফলে দামও কমে আসবে আর মানুষ সহজেই কিনতে পারবে?
আমার তো মনে হয়, কাউয়ার ঠ্যাং নকশাটা সবচেয়ে বেশী দেখি শাড়ীতে
নকশা অনুযায়ী শাড়ীর ছবি কি সংগ্রহে আছে মেঘ? থাকলে যোগ করে দিও একটু। চিনতে সুবিধা হবে।
পরিশেষে, এতো শ্রমসাধ্য একটা লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ! প্রচুর তথ্য জানলাম।
বাংলার ঐতিহ্য নিয়ে তোমার আগ্রহ সত্যি প্রশংসনীয়
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
নির্ঝর রুথ ঘোষ আসলেও নির্ঝর রুড ঘোষ হয়ে গেছে
এমন অসামান্য একটা কাজ করল মেয়েটা, কই তারে হোটেল ওয়েস্টিনে বুফে খাওয়ানোর দাওয়াত দিবে, নাহ… খালি “তোমার আগ্রহ সত্যি প্রশংসনীয়” বইলাই খালাস… দুঃখজনক রুড থুক্কু রুথ… দুঃখজনক…
নির্ঝর রুথ বলছেনঃ
আমার ধারণা, মেঘ ওয়েস্টিনে বুফে খেতে যতটা না ইচ্ছুক, তার চেয়ে বেশী ইচ্ছুক আমাদের নিয়ে জামদানী পল্লীতে যেতে।
যদি আমরা সবাই মিলে একবার ঘুরে আসি ওখান থেকে, সেটাই হবে এই লেখার সার্থক প্রভাব!
তারিক লিংকন বলছেনঃ
সেইরাম বলেছেন রুথাপু!! কিন্তু বলার জন্য ভলা নআকিআকি আসলেই যাওয়া হইবে?
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
কি সুন্দর কইরা কাটান দিল…
মাই গড…
দেবী রুথ, আপনার উপস্থিত বুদ্ধির প্রেমে পড়ে গেলাম
ওয়াও
মেঘবতী বলছেনঃ
নির্ঝর দি, শাড়ীর ছবি অবশ্যই আছে। ঠিক আছে আমি এড করে দিব কিছু ছবি।
তুমি শাড়ী কিনতে চাইলে মার্কেট প্রাইজ থেকে হাজার খানেক টাকা লেস এ কিনতে পারবে নোয়াপাড়ায় প্রতি শুক্রবার বসা জামদানি মেলা থেকে। আমার এলাকা তো, তাই জানি।
দুরন্ত জয় বলছেনঃ
শেয়ার না দিয়ে কি পারি!
স্টিকি করার আবেদন জানাই……
পোস্ট কিন্তু সেই হয়েছে।
তারিক লিংকন বলছেনঃ
বাঙলার ইতিহাস ঐতিহ্যের ব্র্যন্ডিং না করে আমরা খালি বাইরের জিনিস নিয়ে পরে আছি। কি অসাধারণ আর অনন্য আমাদের এইসব ঐতিহ্য!! আপনাকে একের পর এক চমৎকার বিষয় পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদও… দুর্দান্ত তথ্যবহুল এবং কাজের পোস্ট হয়েছে!! স্যালুট আপনাকে আর জামদানির কারিগরদের…
মেঘবতী বলছেনঃ
লিংকন ভাই, আজ পুরো বাণিজ্য মেলা ঘুরে আমার মন কি পরিমাণ খারাপ বুঝাতে পারবো না। বিশ্বাস করেন, আমাদের পাটশিল্প দিয়ে এত দারুণ জিনিস তৈরি করা যায় জানতামই না। একসাথে ১০ টা স্টলে পাটের জুতা ব্যাগ থেকে শুরু করে এত চমৎকার সব জিনিস! আমি বেশ কিছু কিনেছিও। বের হয়ে দেখলাম আমি আর অর্ফি ছাড়া ৪ জন মানুষ ছিলাম। অথচ পাশের পাকিস্তানি স্টলে মানুষ ঠাই হয় না। কেন! কেন! এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।
আমি পাটশিল্পের এই ব্যাবসায়ীদের জিজ্ঞেস করলাম মেলার পরে আপনাদের শো রুম কোথায় পাব? তারা জবাবে বলল, ম্যাডাম দেশে বিক্রি হয় না। আমরা শুধু এক্সপোর্ট করি। আমি শুধু বললাম, এটা উচিত না।
অর্ফি বলছেনঃ
জুতো নিলাম যেখানে… লোকটা কি খুশি হয়েছিলো… তিন জোড়া মিলে সাড়ে ছশো ! তাও নাকি কেউ নেয় না…
ইলোসিয়া মৌনিন বলছেনঃ
অসাধারন। আমার একটা প্রশ্ন, পুরা বাংলাদেশে এমন কোথাও বা কেউ কি এখনো জীবিত নেই যে পিওর মসলিন আজো তৈরি করতে পারে?
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
বোধ হয় না। ইংরেজ কুকুরগুলা খুঁজে খুঁজে সব মসলিন নির্মাতার আঙ্গুল কেটে দিছিল
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
আমার মনেও একবার এই প্রশ্নটা এসেছিলো। আসলেই কি কেউ নেই !!
মেঘবতী বলছেনঃ
মসলিন কারিগর এবং তাদের বংশধরদের বুড়ো আংগুল কেটে দিয়েছিলো যাতে তারা আর বুনতে না পারে। বুড়ো আংগুল ছাড়া মসলিন বুনন সম্ভব না।
বিবি রাসেলকে এক অনুষ্ঠানে বলতে শুনেছিলাম সে মসলিন ফিরিয়ে আনবে। কি জানি! হয়তো সম্ভব। metformin er max daily dose
কৃষ্ণ গহ্বর বলছেনঃ
domperidona motilium prospectoঅসাধারণ একটা লেখা… জামদানী সম্পর্কে অনেক তথ্য… সত্যি খুব ভালো লেগেছে।
মেঘবতী বলছেনঃ female viagra tablets online
ধন্যবাদ।
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
চমৎকার তথ্যপূর্ণ একটা লেখা। দারুণ হয়েছে…
মেঘবতী বলছেনঃ
prednisone dosage for shoulder painধন্যবাদ ধন্যবাদ
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ use metolazone before lasix
আমাদের বিস্মৃতপ্রায় আড়ালে চলে যাওয়া ঐতিহ্য আর গৌরবগুলো আবারো মেঘবতীর অসামান্য উপস্থাপনা… জামদানী নিয়ে এতো এতো অজানা তথ্য আর আর উপাত্তের এমন নিখুঁত গবেষণা অফলাইনে কিংবা বাঙলা ব্লগস্ফিয়ারেই কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নেই। পুরোটা পড়বার শুধু একটাই শব্দই বেরোল মুখ দিয়ে… আউটস্ট্যান্ডিং…
ক্যারি অন মেঘ, ক্যারি অন…
অর্ফি বলছেনঃ
বিশেষণ কম পরিয়া গেলো না ভাউ ? pharmacie belge en ligne viagra
মেঘবতী বলছেনঃ
অনেক ধন্যবাদ ডন।
বিয়ের সময় বউকে জামদানি দিবা সাথে দিবা পাটের জুতা আর ব্যাগ। রেশমি চুড়ি নয়, রেশমি কাপড়ে মোড়ানো কাঠের অথবা মাটির চুড়ি দিও। বাসাটাও সাজিও আমাদের কাঠ, বেত, মাটি আর কাপড় দিয়ে বানানো জিনিসপত্র দিয়ে।
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
sildenafil 50 mg mecanismo de accionআমার বিয়ের প্ল্যান দেখি তুমিই করে ফেল্লা… ওয়াও… ঝামেলা শ্যাষ… কি মজা…
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
আর পোস্টটা স্টিকি করার জন্য আদিসভ্যকে গোলাপের শুভেচ্ছা…
অর্ফি বলছেনঃ
ছেলে বলিয়া কি আমাদের জামদানি পিন্দিবার অধিকার নাই ? পিন্দিবার জামদানি চাই
মেঘবতী বলছেনঃ
জামদানির পাঞ্জাবী হয়। অর্ফি।
তারিক লিংকন বলছেনঃ
আমার লাগবো!! কই পাওয়া যায় মেঘবতী …
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
free sample of generic viagraতোর বিয়ায় একটা জামদানী শাড়ি গিফট করুম, কেমন?
অনার্য তাপস বলছেনঃ
জামদানী নিয়ে এক নজরে একটা লেখা। ভালো।
তবে ঐতিহাসিক অতিরঞ্জনটাকে লেখক এড়াতে পারেননি। যেমন ওই আঙ্গুল কেটে দেওয়ার গল্প। বাংলাদেশের তাঁত নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আমরা মনে হয় মোটামুটি এবিষয়ের যাবতীয় লেখাপত্র ঘেঁটেছি। কোথাও আঙ্গুল কেটে দেওয়ার রেফারেন্স পাওয়া যায় না। তবে তাঁতীদের উপর অত্যাচারের কথা আছে।
‘মসলিনের কাপড়ে কারুকার্য করা হতো আরেক ঐতিহ্যবাহী পোশাক শিল্প জামদানি দিয়ে।’ – বিষয়টা এমন নয়। মসলিন দুই ধরণের হতো। একটি খুব মিহি- নবাব পরিবারে যেটার কদর ছিলো- যেমন- শবনম। আর একটি একটু মোটা- যেমন, মলমল খাস। মোটা মসলিনের উপর হাতে নকশা তোলা হতো। (ঢাকাই মসলিন) সেটাই পরে জামদানী নামে পরিচিত হয়েছে। তবে জামদানী নামটা যে বাঙ্গালীদের দেওয়া নয়- সেটা ঠিক।
ব্রিটিশ আমলের শেষের দিকে কিংবা পাকিস্তান আমলের শুরুর দিকে মানে ১৯৩০/৪০-৫০/৬০ বাংলাদেশ ভূখণ্ডে কার্পাস চাষ বন্ধ হয়ে যায় মূলত ইংরেজদের ভীষণ নেতিবাচক ব্যাবসায়ীক মনোভাবের জন্য। বলা চলে তারা কার্পাস চাষকে ধ্বংস করে দেয়। নীল চাষও এর জন্যে খানিক দায়ী। কাজেই এখন বাংলাদেশে কোন কার্পাস তুলা চাষ হয় না।
‘জরি’ কি ঢাকার মীরপুরে তৈরি হয়? আমি যতদূর জানি, মীরপুর থেকে হোলসেল করা হয় দেশের বাইরে থেকে বিশেষ করে চায়না থেকে আমদানীর পর।
‘ আবার জামদানীর নকশার প্যাটার্নের উপর বা নকশার ধরনের উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু শ্রেণীবিন্যাস করা আছে।’ জামদানীর কোন শ্রেণীবিন্যাস নেই কিন্তু। নকশার পার্থক্য আছে, নকশা করার ধরণের পার্থক্য আছে। যেমন লেখা আছে- তেরছা, বুটি ইত্যাদি। এগুলো জামদানীর শ্রেনী বিভাজন নয়। জামদানীর নকশার শ্রেনী বিভাগ। জামদানীর নকশা হয় জমিনে এবং পাড়ে। পাড়ের নকশার নাম দিয়েই জামদানীর নামকরন হয়। যেমন- করলা পাইর, ময়ূর পঙ্খি পাইর ইত্যাদি।
একটি বিষয়- অনেকেই অন্যভাবেও নিতে পারেন তাতে আমার কোন সমস্যা নেই- জামদানী কিন্তু শুধু বাংলাদেশেই হয় না। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হয়। না হলে তারা উপাধ্যা জামদানীর জন্য জিআই ক্লেইম করলো কেন? তবে হ্যাঁ, বিষয়টা হচ্ছে আমাদের জামদানীর যে ঐতিহ্য সেটা ভারতের নেই। আমাদের যে আভিজাত্য বুননে, নকশায়, ব্যাবহারে সেটা ওদের নেই। আর আমাদের জামদানী বুননের যে কারিগরি দিক সেটা ওদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিশেষ করে সুতায় মাড়ি করার প্রক্রিয়া। কাজেই জামদানী আমাদের ছিলো আমাদেরই থাকবে। ভারতে এটা নিয়ে যেতে পারবে না। এটা নিয়ে অযথাই একটা ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছে।
ত্রৈলোক্যনাথ বসুর ‘তাঁত ও রং’ এখন প্রায় দুষ্প্রাপ্য বইয়েল তালিকায় চলে গেছে। এটার রেফারেন্স দেখে ভালো লাগলো। লেখক তোফায়েল আহমেদকে আমরা ভুলে গেছি। এটা দুঃখজনক। সাঈদুর রহমানের ‘জামদানী’ নামের বইটা বাংলা একাডেমী আর রিপ্রিন্ট করছে না- এটা খুবই বাজে বিষয়। কারণ জামদানী নিয়ে লেখা ওটাই একমাত্র ফিল্ডওয়ার্ক ভিত্তিক বই। তখন বাংলা একাডেমী এসব করতো!
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
clomid dosage for low testosteroneএই ঐতিহাসিক অতিরঞ্জনটা ছোটবেলার থেকেই শুনে আসছি। যাদের কাছে শুনেছি, তারা আসলে অতিরঞ্জন করবার মত ব্যক্তিত্ব নন। আরও জানতে চাই, বইগুলোর রেফারেন্স দিলে খুশি হব…
অপার্থিব বলছেনঃ
ভাল লাগলো। জামদানি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। তবে আমার মনে হয় পর্যাপ্ত প্রচার চালালে আবারো জামদানী শিল্পের
সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আমাদের সিনেমা -টিভির অভিনেত্রীরা পর্দায় দামি বিদেশী শাড়ি পরার প্রতিযোগিতা করেন অথচ দেশীয় জামদানি শিল্প আজ মৃত প্রায় । দেশীয় পণ্যকে এই হেয় চোখে দেখাই দেশীয় শিল্পের উত্তরণের পথেসবচেয়ে বড় বাধা।
চারুলতা বলছেনঃ
জামদানি আমার খুব প্রিয়। এ সম্প্ররকে অনেক কিছু জানতে পেরে খুব ভাল লাগছে। সেই সাথে মন খারাপও হল কিছু অপ্রিয় সত্য জেনে।
অনার্য তাপস বলছেনঃ
এত রেফারেন্সের কথা উল্লেখ করা সম্ভব না। তবে আপনি আগ্রহী হলে ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। কিংবা বুটিক হাউজ ‘দেশাল’ বাংলাদেশের তাঁত নিয়ে একখানা বই প্রকাশ করতে যাচ্ছে। প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আর জামদানী নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে হলে UNESCO- Dhaka অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা একখানা বই প্রকাশ করেছে। নাম ‘Dhakai Jamdani: Concise History Including 101 Design Motifs’.
অনার্য তাপস বলছেনঃ
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10203875269111507&set=pb.1514258765.-2207520000.1421507666.&type=3&src=https%3A%2F%2Fscontent-b-lhr.xx.fbcdn.net%2Fhphotos-xfa1%2Fv%2Ft1.0-9%2F10155412_10203875269111507_3499839582102156557_n.jpg%3Foh%3D21a12bb2459a08f48191fe2539011303%26oe%3D553202F6&size=720%2C553
অনার্য তাপস বলছেনঃ
ইলোসিয়া মৌনিন বলছেনঃ
অসাধারন। একটা প্রশ্ন,
আজো কি এমন কেউ বাকি নেই যে পিওর মসলিন তৈরির প্রক্রিয়া জানে?
মায়াবী তেজস্বিনী বলছেনঃ
অসাধারন হয়েছে আপু লেখাটা…
এইমলেস ভেনাম বলছেনঃ
জামদানি নিয়ে আর রিসার্চ করতে ইচ্ছে হচ্ছে। একদম প্রাকটিকাল । ইনশাল্লাহ , জামদানি তৈরির কারখানা একদিন ঘুরে আসব ।
মস্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলছেনঃ prednisone side effects moon face
bird antibiotics doxycyclineবাহ! বিস্তর গবেষণার ফসল। শুভেচ্ছা রইলো।
মোহাম্মদ আলী আক্কাছ (জিএম আক্কাছ) বলছেনঃ
lasix dosage pulmonary edemaআসসালামু আলাইকুম, আমাদের ঐতিহ্য জামদানি নিয়ে অনেক অজানা তথ্য জানলাম।জামদানিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে সবারই আগে এগিয়ে আসতে হবে, এমন যেন না হয় মসলিনের মতো হারিয়ে যায়।আমাদের সবাইকে কমবেশি জামদানি ব্যবহার করতে পারলে এবং দেশের কয়েকটি বড় বড় শহরে শুধুমাত্র জামদানির শো-রুম চালু করতে পারলে প্রচার ও প্রসার ঘটবে।