মালালার নোবেল জয় ও আমাদের দীনতা
373
বার পঠিতপাকিস্তানী কিশোরী মালালা নোবেল জিতেছে এটা বেশ পুরোনো খবর।যথারীতি কয়েকদিন ধরে এটা নিয়ে ফেসবুক থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার আড্ডা মহা সরগরম ।কয়েকদিন ধরে মালালার নোবেল জেতা নিয়ে অনেকের ষ্ট্যাটাস পড়ছি ।খুব অল্পকয়েকজন মানুষই মালালার নোবেল জয়কে স্বাগত জানিয়েছে।কারও মতে মালালা গুলি খেয়েছে এ আর এমন কি ? আমরাও হরতালের দিন জীবনের ঝুকি নিয়ে ভার্সিটিতে গিয়েছি।কারও মতে মালালা সাম্রাজ্যবাদীদের হাতের পুতুল ।গত কাল এক ব্লগে দেখলাম একজন বলছেন গাজায় ইসরাঈলের বর্বরোচিত হামলার প্রুতিবাদে মালালাকে খুজে পাওয়া যায়নি।কাজেই মালালা সাম্রাজ্যবাদীদের হাতের ক্রীড়নক ছাড়া আর কিছুই নয় ,তাকে পুজি করে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের নীল নকশা আটছে ইত্যাদী । সকলের প্রুতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যারা এধরনের কথা বলেন তারা ভুলে যান যে মালালার বয়স মাত্র ১৭ বছর। ১৭ বছরের একজন তরুণীর পক্ষে সাম্রাজ্যবাদ, পুজিবাদের মত জটিল দুর্বোধ্য সব বিষয় কী করে বুঝা সম্ভব তা আমার মাথায় ঢোকে না ।পৃথিবীর সকল অন্যায় ,সকল আগ্রাসনের প্রুতিবাদে তাকে রাস্তায় নামতে এমন কোন কথা নেই, অন্তত এখনো সে ঐ অবস্থায় পৌছায় নি।যে বয়সে মানুষ নুতুন স্বপ্ন চোখে একে কৈশোর থেকে যৌবনে পা দেয় সেই বয়সে তাকে এমন সব পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে যা আমাদের মত অনেকের পক্ষে হয়তো সারা জীবনেও সম্ভব নয়।সভা সেমিনারে শিক্ষার অধিকার নিয়ে বক্তব্য দেয়া, দেশে জি পি এ ফাইভের হার নিয়ে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেয়া আর তালেবানদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্কুলে যাওয়া এক জিনিস নয় ।
এর জন্য প্রয়োজন দৃঢ সাহস। মালালা সেই মুষ্টিমেয় সাহসীদের একজন। সারা বিশ্বের নারীদেরকে শিক্ষার অধিকার পেতে সংগ্রাম করতে হয়। নারীরা শিক্ষিত হোক তা আসলে কোন সমাজই প্রকৃত ভাবে চায় না ।কারন সমাজপতিরা জানে নারীরা শিক্ষিত হলে ঘুণে ধরা এই পুরুষতান্ত্রীক সমাজের ফাটলগুলো আরো কিছুটা উন্মুক্ত হয় । তবুও সকল প্রুতিকূলতা উপেক্ষা করে নারী শিক্ষার বিস্তার থেমে নেই । পত্রিকায় পাতায় উঠে আসা আমাদের দেশের পাহাড়ী ছেলেমেয়েদের পাহাড়, ঝর্না, নদী ডিঙ্গিয়ে স্কুলে যাবার খবর ,চীনের জেনজুয়ান প্রদেশের জুইঝু গ্রামের ছেলেমেয়েদের দুর্গম পথ অতিক্রম করে স্কুলে যাবার খবরগুলো সেটারই সাক্ষ্য দেয় ।মালালার সংগ্রাম ছিল এর থেকেও অনেক বেশী কঠিন ,এর থেকেও অনেক বেশি গৌরবময়।তালেবানদের হুমকি ধামকিকে উপেক্ষা করে সে স্কুলে গিয়েছে ।নিজের আকাংখা,চাওয়া-পাওয়া নিয়ে লিখেছে বিবিসির ব্লগে ।শত প্রুতিকূলতার মাঝেও নিরাপদ জীবনের প্রলোভনে সে তার নিজ এলাকা ছেড়ে যায়নি। বস্তুত মালালার চাওয়া ছিল খুব সামান্য । তার চাওয়ার সাথে পৃথিবীর আর দশটা কিশোর-কিশোরীর চাওয়ার কোন পার্থ্যক্য নেই আর তা হল একটু শিক্ষা লাভের অধিকার।কাজেই মালালার উপর নিক্ষিপ্ত একেকটি বুলেট সাধারণ একটি একে ৪৭ রাইফেল হতে নিক্ষিপ্ত দেড় ইঞ্ছির কোন সাধারন বুলেট হয়ে থাকে না, হয়ে যায় সারা বিশ্বের নারীদের শিক্ষার অধিকারের উপর একেকটি করুণ চপেটঘাত।
নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক নুতুন কিছু নয় ।এই বিতর্ক অতীতেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই । কোন একটি বিষয়ে পৃথিবীর সব মানুষ এক মত হবে এমনটি আশা করাও ঠিক নয় । অতীতে মাদার তেরেসা , ন্যালসন ম্যান্ডেলার মত ব্যক্তিরা নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতায় নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে মানুষের আগ্রহ ও প্রত্যাশার পারদ দুটোই অনেক বেশী । অধিকাংশ মানুষের মধ্যে মানুষকে কে সাদা ও কালো এই দুই শ্রেণীতে শ্রেণী বিভাগ করার প্রবণতা বিদ্যমান । তারা মনে করে যারা ভাল তাদের সব কিছু ভাল আর যারা খারাপ তাদের সবকিছুই খারাপ ।তাদের ধারনা নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হতে হলে তাকে এমন কেউ হতে হবে যে প্রায় নিষ্কলুষ ,এমন কেউ যাকে পৃথিবীর কোন পাপ,তাপ ষ্পর্শ করে নি । বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে হয় কোন প্রাণঘাতী যুদ্ধ থামাতে হবে কিংবা করতে হবে মানবতার কল্যাণে বিশাল কোন কাজ । এই প্রত্যাশার ব্যতিক্রম হলে তাকে পাশ্চাত্যের দালাল তার নোবেল প্রাপ্তিকে সাম্রাজ্যবাদীদের নীল নকশা ইত্যাদী হিসেবে অভিহিত করা হয় ।অবশ্য এই মনোভাব সৃষ্টির পিছনে নোবেল কমিটিরও দায় আছে ।তারা বারাক ওবামা , হেনরী কিসিঞ্জারের মত ব্যক্তিকে এই পুরষ্কার দিয়ে এই বিতর্ককে উষ্কে দিয়েছে ।কিন্তু তাই বলে তাদের নির্বাচিত সকল ব্যক্তিকে রাজনৈতিক ভাবে নির্বাচিত বলে দোষারোপ করা হবে এমনটি হওয়া মোটেও উচিত নয়।
সারা বিশ্বের বহু মানুষ শিক্ষার বিস্তারে , মানবতা কল্যানে কাজ করছে । মালালার নোবেল জয়ে তাদের কারো অবদান ছোট হয়ে যায়নি।সভ্যতার উন্নয়নে তাদের অবদান চিরকালই ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এও মনে রাখতে হবে যে সবাই সাফল্যের স্বীকৃতি সমান ভাবে পায় না। মালালা সেই মুষ্টিমেয় সৌভাগ্যবানদের একজন যে সাফল্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।এই পৃথিবীতে বহু কীর্তিমান মানুষ রয়েছে যারা নোবেল পুরষ্কার পায় নি যেমন গান্ধী,টলষ্টয়। শুধু নোবেল জয়ই কারও কাজের এক্ মাত্র স্বীকৃতি হতে পারে না । গান্ধী,টলষ্টয়রা নোবেল না জেতায় ব্যক্তিগত ভাবে তাদের কোন ক্ষতি হয়নি ,হয়নি ইতিহাসে তাদের অবস্থানের কোন হের ফের ।কাজেই মালালার নোবেল জয়ে কারও আহত বোধ করার কিছুই নেই। মালালা নোবেল জয়ের আগেও আরো অনেক পুরষ্কার জিতেছে যেমন ওয়ার্ল্ড চিলড্রেন প্রাইজ, শাখারব পুরস্কার ইত্যাদী। হয়েছিল ২০১৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনের নির্বাচিত বিশ্বের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্বদের একজন । এমন কি গত বছর নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনীতদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল সে । কাজেই মালার নোবেল জয় যথেষ্ট কৌতুহল উদ্দীপক হলেও মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয় । অন্যকে সম্মান দিলে কেউ ছোট হয়ে যায় না ,মালালার নোবেল জয় আমাদের সমাজে এই বাণীটির দীনতাকে আবারও প্রমাণ করেছে ।
দুরন্ত জয় বলছেনঃ
missed several doses of synthroidযে মেয়েটি পরিবার পরিজন ছেড়ে একলা চলে এসেছে শুধু নিজের পড়ালেখার জন্য তাকে কি বলবেন? শুধু গুলির জন্যই মালালাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না?
অপার্থিব বলছেনঃ
side effects of drinking alcohol on accutaneদেখুন শিক্ষা বিস্তারের জন্য অনেকে কাজ কর ছেন ,মালালার সং গ্রাম ছিল এর থেকে অনেক ভিন্ন ,প্রুতিনিয়ত তালেবান দের গুলির ভয় কে উপেক্ষা করে স্কুলে যাওয়া কোন সহজ কাজ ছিল না ,সে তো চাইলে ঐ শহর ছেড়ে অন্য কোন নিরাপদ শহরে আশ্রয় নিতে পারতো তাহলে হয়তো তার পক্ষে আজকের মালালা হ ওয়া সম্ভব হতো না। আসলে আমাদের এই নিরাপদ পৃথিবীতে বাস করে মালালার সং গ্রাম বোঝা বেশ কঠিন.
উদ্ভ্রান্ত পথিক বলছেনঃ doctus viagra
মালালার কাজ বা ইচ্ছাশক্তি, কর্মোদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন নেই। তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাও বোকামি হবে। কারন সে মাত্র ১৭। তবে নোবেল (আলফ্রেড) যে উইল করেছিলেন তাতে লেখা আছে — “কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ এ পুরষ্কার প্রদেয় হইবে” । আমার প্রশ্নটা এখানে, “ সে কি নোবেল পাবার মত কাজ করেছে, কোথাও শান্তি সে আনার চেষ্টা চালিয়েছে?” দ্বিতীয় প্রশ্ন – আর কি কেউ যোগ্য ছিলেন না??
মালালা অনেক বড় হবে।গোটা পৃথিবী তার পক্ষে, তাই তার ইচ্ছা দেখে পুরষ্কারটা না দিয়ে, ইচ্ছা পুরনের পর পুরষ্কার দিলে ভাল হতো, এবং এটাই আলফ্রেড চেয়েছিলেন।
অপার্থিব বলছেনঃ
metformin tabletআলফ্রেড নোবেল এই উইল করেছিল ১৮৯৫ সালে কিন্তু সে সময় থেকে বর্তমান বিশ্ব ও সমাজ ব্যবস্থা অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। এমন কি বিস্তৃত হয়েছে নোবেল পুরস্কারের আ ওতা ও অর্থ মূল্য যেমন অর্থনীতি বিষয়টি আলফ্রেড নোবেলের উইলে ছিল না। কাজেই আলফ্রেড নোবেলের নির্দেশ কে সবসময় আক্ষরিক হিসেবে নিতে হবে এমন কথা নেই। মালালা প্রত্যক্ষ ভাবে বিশ্ব শান্তির জন্য কিছু করেনি বটে কিন্তু সারা বিশ্বের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে চাওয়া নারীদের কাছে এক বিরাট অনুপ্রেরণার নাম। প্রকৃত শিক্ষার চেয়ে আর কোন কিছু কি এই পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারে ?বিশ্বের আরো অনেকে হয়তো শিক্ষা বিস্তারে , শান্তির জন্য কাজ কর ছে কিন্তু তাদের স্বীকৃতি পাবার সময়তো শেষ হয়ে যায় নি।অমুক পেলে অমুক কে আগে পেতে হবে এই ধরনের সংকীর্নতা ত্যাগ করাই উত্তম। পশ্চিমা মিডিয়ার অবিরাম প্রচার হয়তো মালালার নোবেল জয়ে ভূমিকা রাখতে পারে কিন্তু মালালার কীর্তিকে ছোট করার কোন অবকাশ নেই