রিভিউ-১৯৫২
349
বার পঠিতমনে করুন আপনি একটি গাড়িতে বসে।গাড়িটি চলছে কোন পাহাড়ি রাস্তায়।একটু পর পর অজানা তীক্ষ্ণ বাঁক।এরপরেও গাড়ির গতি ক্রমশ বেড়েই চলছে।আপনার কাছে ব্যাপারটা প্রচণ্ড উত্তেজনাকর যেমন মনে হচ্ছে,আবার ভয়ও পাচ্ছেন।না না আমি এর সাথে এই উপন্যাসটির সরাসরি তুলনা করছি না।কারন ঐ দুর্গম রাস্তায় উত্তেজনার চেয়ে বিপদের পরিমাণটাই বেশি।আর এই উপন্যাসটি পড়লে লাভ ছাড়া কোন ক্ষতি নেই।আমি মূলত তুলনা করছি এই দুটির মাঝের উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলোর।তুলনা করছি দুটির ক্রমশ বেড়ে যাওয়া গতির।আর অজানা বাঁকের তো দুই ক্ষেত্রেই ছড়াছড়ি।আসলে উপন্যাসটির তুলনা হয়ত করা উচিত রোলার কোস্টার রাইডের সাথে।তবে হ্যা উপন্যাসটি পড়ার সময় একটা মানসিক অশান্তি আপনার সঙ্গী হবে।আপনার মনে হবে কখন এটা পড়া শেষ করবেন,কখন জানতে পারবেন সকল রহস্য এর সমাধান।এই উপন্যাসের যাত্রায় আপনি যখন যাত্রী হবেন,তখন আপনার মনে একটি প্রশ্নই থাকবে,এই যাত্রার শেষে কি আছে।
কাহিনী সংক্ষেপ-
সায়েম মোহাইমেন।সেই শৈশব থেকে তার স্বপ্ন একটি গাড়ি।তার বন্ধুদের মাঝে গাড়ি সম্পর্কে সে সবচেয়ে বেশি জানে।তাই তো তারা নিজেদের গাড়িও ছেড়ে দিত সায়েমের হাতে নির্দ্বিধায়।সেই সায়েমের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত এই ছিল!!তার নিজের কেনা প্রথম গাড়ি,সেই গাড়িতে প্রথম দিন।সে সময়ই সে ঘটিয়ে ফেলল দুর্ঘটনা,পৌঁছে গেল জেলে।
গোলাম মওলা ।বেচারা!টানা ১১ ঘণ্টা ভ্রমন করে ঢাকায় পৌঁছে কোথায় ঘুমাবে,তা না করে বেচারাকে রাতবেরাতে দৌড়াতে হল পুলিশস্টেশনে।হবে না কেন?সায়েম যে তারই বন্ধু,তাকে ছাড়াতে হবে না!কিন্তু সায়েম আর সে দুইজনেই জানেনা সামনে তাদের জন্য কত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে।কি ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে তারা।আপাতদৃষ্টিতে যেসব ব্যাপার সাধারন মনে হচ্ছিল তা ধারন করবে কি বিশাল ভয়াবহতা!
উপন্যাসটি পড়ার সময় প্রথমেই মাথায় রাখবেন হাতে সময় আছে তো?হাতে কোন কাজ রেখে পড়তে বসবেন না।কারন একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত আপনার আর উঠতে ইচ্ছে করবে না।একবার পড়া শুরু করলে এই উপন্যাসটি আপনাকে তার সাথে বেঁধে রাখবে।দেখা যাবে আপনি কখন যে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টে পড়ে যাচ্ছেন তা নিজেও টের পাচ্ছেন না।
উপন্যাসটির গতিময়তার কথা তো আগেই উল্লেখ করেছি।তবে এই গতি কিন্তু সবসময় একইরকম না।একেবারে শুরুর দিকে গতি খুবই সাধারন।হয়ত সামনের তুমুল গতির জন্য আস্তে আস্তে পাঠকদের তৈরি করছিল।কিন্তু কিছুদূর যাবার পর কাহিনী যে গতিতে চলতে শুরু করে তার তুলনা হতে পারে ব্রেক-ফেল করা কোন গাড়ি।আর সে গতি ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছিল,মনে হচ্ছিল যেন বুলেট ট্রেনকেও হার মানাবে।আর সাথে উপরি পাওনা হিসেবে রোমাঞ্চকর সব টুইস্ট তো আছেই।তবে এই অদ্ভুত গতিও একসময় কমতে শুরু করবে।তখন উপন্যাসের সে পর্যায়কে নিতান্ত সাধারন মনে হতে পারে।আসলে এর আগে যে গতিতে কাহিনী এগোচ্ছিল তাতে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক।অবশ্য এই সময়টা খুবই কম স্থায়ী।একটু পরই কাহিনী আগের গতি ফিরে পেতে শুরু করে।হয়ত আগের সেই ব্রেক-ফেল করা গতি সম্পূর্ণ পায় না,কিন্তু যা পায় তাও কম নয়। levitra 20mg nebenwirkungen
এই উপন্যাসটির শ্রেষ্ঠ সম্পদ কি প্রশ্ন করলে রহস্য,গতিময়তা,মারাত্মক সব টুইস্ট সহ নানা উত্তর দেওয়া যেতে পারে।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলোর একটিও সঠিক উত্তর নয়।সঠিক উত্তর লেখকের লেখনী।দুর্দান্ত সাবলীল,প্রাঞ্জল ভাষায় কাহিনীর বর্ণনা করেছেন তিনি।তবে এ কারনে আমি একে সঠিক উত্তর বলছি না।আরও স্পষ্ট করে বললে এই উপন্যাসের শ্রেষ্ঠ সম্পদ লেখকের লেখার দুর্ধর্ষ রসবোধ।যাকে বাংলায় বলে বাক্যবৈদগ্ধ,ইংরেজিতে “Wit”।আমি এর কোন উদাহরণ দিতে যাচ্ছি না,কারন পুরো উপন্যাসটিই বলতে গেলে এর উদাহরণ।
উপন্যাসটির এতসব ভালগুণ থাকলেও কিছু খামতিও আছে।অনেকে বলে উপন্যাসটির নারী চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত ঘটনাগুলো বিরক্তিকর।আমার কাছে অবশ্য তা মনে হয়নি।এরকম গতির কাহিনীতে মাঝে মাঝে কিছুটা রিলাক্স হবারও দরকার আছে।তবে বিরক্তিকর যা লেগেছে উপন্যাসের তিন প্রধান পুরুষ চরিত্রেরই তাদের ভালভাসার নারীর প্রতি একই ধরনের আচরণ।এক্ষেত্রে মনে হয় তাদের যেন একই ছাঁচে গড়া হয়েছে!একটা-দুটো ঘটনার কারনে আমি এরকম বলছি না।পুরো উপন্যাসটিতেই আমার কথার প্রতফলন পাবেন।উপন্যাসটির আরেকটি খামতি কাকতালীয়টা।জীবনে কাক-তাল(!)জাতীয় ঘটনা ঘটবেই।আর এ ধরনের লেখায় একটু বেশিই ঘটবে এ তো জানা কথা।কিন্তু যখন রুডি চরিত্রের আগমন ঘটে,কিছু কিছু এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে যা ভেঙ্গে দিতে পারে কাকতালীয় ঘটনার সকল রেকর্ড।উপন্যাসটির আরেকটি জায়গা খামতির জায়গা এর ক্লাইমেক্স।একে অবশ্য খামতি পুরোপুরি বলা উচিত নয়।আসলে উপন্যাসটির ১২ আনা জায়গা যে গতিতে চলেছে,আর আপনার মনে যে প্রত্যাশা জাগিয়েছে তার কাছে একটু পানসে মনে হতে পারে ক্লাইমেক্সকে।
কাহিনীর শুরু আস্তে হলেও পরে যে বিশাল গতি পায় তা আগেই বলেছি।আসলে উপন্যাসটির ঐ অংশটি(মানে ১২ আনা অংশ!!) আন্তর্জাতিক মানের।ঐ অংশটি পাল্লা দিতে পারে বিশ্বের যে কোন থৃলারকে।মাথানষ্ট করা এই উত্তেজনাময় অংশ আপনাকে দিবে সর্বোচ্চ তৃপ্তি।লেখক কাহিনীর শেষে সব ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছেন,যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনাকে সন্তুষ্ট করবে।ক্লাইমেক্স পর্যন্ত রহস্য ধরে রাখতেও সক্ষম হয়েছেন তিনি।কিভাবে কি হয়েছে ধরতে না পারলেও সবকিছুর পিছনে কে আছে আমি অবশ্য আগেই টের পেয়েছিলাম।তবে তা লেখক প্রকাশ করার মাত্র কয়েক পৃষ্ঠা আগে!! will metformin help me lose weight fast
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এর সাথে আমার প্রথম পরিচয় তার করা অনুবাদের মাধ্যমে।তার করা বেশ কিছু অনুবাদ পড়ার পর জানতে পারি তার লেখা মৌলিক উপন্যাসগুলোর কথা।পড়ে ফেলি জেফরি-বাস্টার্ড সিরিজের প্রথম দুটি উপন্যাসও(বাকি দুটি এখনো পড়া হয়নি)।বেশ ভাল লেগেছিল পড়ে।ভাল লেগেছিল বাংলাদেশের কোন লেখক এধরনের লেখা লিখেছেন বলে।আমার এই ভাল লাগা এক লাফে কয়েক ধাপ উপরে উঠিয়ে নিয়েছে ১৯৫২।তিনি এই লেখাটি লিখেছেন সত্য এক ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে।তার ভাষায় ঘটনাটি ছিল পোয়েটিক জাস্টিসের চমৎকার উদাহরণ।আর সে উদাহরণ থেকে তিনি সৃষ্টি করছেন সার্থক থৃলার এর বাস্তব উদাহরণ।নাজিম ভাইয়ের এখন পর্যন্ত করা সেরা কাজ সম্ভবত এটাই।সামনে হয়ত তার কাছ থেকে আমরা এর চেয়েও ভাল লেখা উপহার পাব।সে উপহারের অপেক্ষায় রইলাম।
এক নজরে
বইয়ের নাম-১৯৫২-নিছক কোন সংখ্যা নয়…
লেখক-মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশক-বাতিঘর প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ-ফেব্রুয়ারি বইমেলা,২০১৪
প্রচ্ছদ-সিরাজুল ইসলাম নিউটন
গায়ের মূল্য-৩৪০ টাকা
আমার রেটিং-৪.৭৫/৫
তারিক লিংকন বলছেনঃ
আপনার রিভিউ পড়ে পড়ার ইচ্ছা সংবরণ করতে কষ্ট হচ্ছে! এতো বেশী লোভ দেখাইছেবন পুরাই কাবু…
তবে শুধু প্রশংসা না করে পটভুমি নিয়ে একটু বললে ভালই
হত..
সৌর জিত বলছেনঃ
private dermatologist london accutaneআমি আসলে কাহিনী,পটভূমি সম্পর্কে বেশি কিছু বলে স্পয়লার দিতে চাইনি।আর লোভ যখন হচ্ছেই পড়েই ফেলুন।আশা করি পড়ে হতাশ হবেন না।
শঙ্খনীল কারাগার বলছেনঃ
আপনার রিভিউটা ভাল লাগ্লো। আগ্রহ রইলো পড়ার। লিংকন ভাইয়ের মত আমিও একই কথা বলছিলাম।