কুরসি নামা
717
বার পঠিতকুরসি নামা বইটি ২০১২ এর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নান্দনিকপ্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। জাকির তালুকদার বাংলা সমকালীন সাহিত্যে ইতিমধ্যেই পরিচিত নাম। বড় বোন ক্যামেলিয়া দিন কয়েক আগে বইটা দিলো গিফট হিসেবে। পড়ে ফেললাম। পড়ে ফেললাম না বলে বইটা আমাকে দিয়ে নিজেকে পড়িয়ে ফেললো বললেও খুব একটা অন্যায় বলা হবে না।
শুরুতেই বইটার পাঠসংক্ষেপ, যা বইয়েই লেখা আছে সেটা
একাত্তরের অব্যবহিত পরে জন্ম নেয়া পিতৃপরিচয়হীন একটি শিশুর প্রতিকূল সমাজবাস্তবতায় মনস্তাত্ত্বিক ঘাত প্রতিঘাতে বেড়ে ওঠা দিয়ে উপন্যাসের শুরু। যার মা যৌবনে বিরুপ প্রতিবেশের মাঝে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিয়েছে উদ্বন্ধনে। তার জন্মঅ থেকে বড় হয়ে উঠার পুরো সময়কাল শুধু নিগৃহীত হওয়ার বিবর্ণ ঘটনায় ভরপুর। সে কখনো রুখে দাঁড়াতে, প্রতিরোধ করতে কিংবা প্রতিকার চাইতে শেখেনি। নির্যাতন এবং বঞ্চনাকে সে ললাটলিখনের অমোঘ বলে মেনে নিয়েছে। কিন্তু সহ্য শক্তির পরীক্ষায় শেষ পর্যন্ত সে হেরে যায়। বাচার রাস্তা খুজে। নিজের ভিতর অন্তত নিগৃহীত হওয়ার কারন খুজতে গিয়ে বুঝতে পারে পিতৃপরিচয়হীন বলেই সে বর্তমান অবস্থার শিকার। পুরো উপন্যাসে তার সমান্তরালে বিন্যস্ত হয়েছে মধ্যযুগের কবি শুকুর মামুদের গুপিচন্দ্রের সন্যাস আখ্যানটি। গুপিচন্দ্রের পিতৃপরিচয় জানার আকুলতার সাথে মিশে যায় একাত্তরের যুদ্ধশিশুর আকুলতা ও দীর্ঘশ্বাস।
প্রথমেই বলে রাখি, প্যারালাল টেক্সটে রচিত কোনো গল্প আমি আগে কখনো পড়ি নি। সমসাময়িক দুইটি ঘটনা হয়তো একই সময়ে বিন্যস্ত হয়েছে অনেক বইয়ে। কিন্তু সেগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। কুরসি নামা বইটাতে দুটি ভিন্ন বিচ্ছিন্ন গল্প কেমন একটা মৃদু সূতায় আবদ্ধ। গল্পটা যদিও দুলাল নামের এক যুদ্ধশিশুর, গল্পের পুরো সময়কাল জুড়ে এমনকি আজ এক সপ্তাহ পরেও গল্পের আকর্ষণ বলতে গুপিচন্দ্রের কাহিনী। গত এক সপ্তাহে বইটা তিন বার পড়েছি। প্রতিবার থমকে গিয়েছি গুপিচন্দ্রের আখ্যানে।
গল্পটা শুরু হয় মৃকুল নগরের রাজা মানিক চন্দ্র এবং তার সাধ্বী স্ত্রী ময়নামতী রাইকে ঘিরে। মৃকুল নগরের পরাক্রমশালী রাজা মানিক চন্দ্র, স্ত্রী তার সাধ্বী ; স্ত্রী মিলন থেকে তিনি বঞ্চিত। মিলনে অনাসক্ত স্ত্রীর প্রতি তার কাতর স্বগতোক্তি, ‘ তুমি কি মানবী নও? তোমার আহার নিদ্রা প্রয়োজন হয় না কেনো? ভরা যৌবনেও কেনো নও মৈথুনকাতরা? ‘
এক নামে অনন্ত নাম, অনন্ত এক হয়
সেইও অজপা নাম গুরুদেবে কয়
পত্নীবিরহে কাতর রাজার প্রাণ ময়নামতীকে ফাকি দিয়ে হরণ করে নিয়ে যায় যমরাজের দূত। ময়নামতী অজর অমর অক্ষয়। সে চিরযৌবনা। স্বামীকে ফিরিয়ে আনার পণ নিয়ে যাত্রা করে যমালয়ে। শেষতক যমরাজ রাজী হলেও বেকে বসে মানিক চন্দ্র।
কি করিব ফিরা গিয়া কি পাব জীবনে।
ঘরে আমার মন টিকে না চল্যা যাব বনে।।
তাহার চেয়ে যমের বাড়ি অনেক ভালো।
আথার বিথার নাই ; মন কষ্ট কালো।।
ফাল্গুনের জোছনা রাতে গুপিচন্দ্রের পুথি পড়ে শুনাচ্ছিলেন ফকির আলি কথনীয়া। তার সাথে তার নয় বছরের নাতি দুলাল। নিজের নাতি না। তবে নিজের থেকেও আপন।
আসলে দুলালের গল্পটা শুরু হয়েছিলো সেই সময়ে যখন এই দেশটা মহাশোকে আর মহা আনন্দে থরথর করে কাঁপছিল। সেই সময় এক যুবতী আশ্রয় নেয় ফকির আলির ঘরে। ফকির আলি চমকে উঠে তাকে দেখে, দীর্ঘ নয় মাস অত্যাচার সহ্য করা বাংলাদেশের মতো মুখ তার অবিকল। কিন্তু তার গা জুরে আসন্ন মাতৃত্বের আগমনী গন্ধ।
সেই কোল জুড়ে আসে দুলাল। ঠিক ঘর আলো করে না হলেও, মায়ের যক্ষের ধন হয়ে থাকে সে। দুলাল বড় হতে থাকে। পরিচিত হতে থাকে নির্মম নৃশংস বাস্তবতার সাথে। মা ডাকে দুলাল ; ফকির আলি ডাকে দুলাল ; বাদ বাকি গাঁয়ের লোক ডাকে – খানের পোলা।
খানের পোলা খানের পোলা
গুটুর গাটুর হাটে
পকিস্তানে যাবার জন্যি
যায় জাহাজের ঘাটে
এই ভাবে দুলাল নিজেও ছয় বছরে পা দেয়। লোকে দুলাল ডাকলেও সে সাড়া দেয় ; খানের পোলা ডাকলেও সে সাড়া দেয়। স্কুলে ভর্তি হতে পারে না সে। কারন ‘বাপের নাম ছাড়া তো ছাত্র ভর্তি করা যায় না ‘। দেশটাও আর নাই আগের মতো। কারন ততদিনে ‘শ্যাখের পো ‘ কে মেরে ফেলেছে একদল আর্মি। ওদিকে সহমরণের চিতায় গর্ভবতী হয় ময়নামতী ; জন্ম হয় গুপিচন্দ্রের।
নানা ঘাত প্রতিঘাতে জীবন এগিয়ে চলে গুপিচন্দ্র আর দুলালের। তারা দুজনই খুজে ফেরে নিজনাম। পাগলের মতো হাতরে বেড়ায় নিজের বংশ পরিচয়। নিজের কুরসি নামা। গল্পটা পড়ে নিবেন। পুরো গল্প বলে আগ্রহ নষ্ট করতে চাই না।
গুপিচন্দ্রের আখ্যানে গুপিচন্দ্র রাজা। চার রানি নিয়ে তার সুখের সংসার এলোমেলো হয়ে যায় যখন তার মা ময়নামতী তাকে সংবাদ দেয় যে তার আয়ু মাত্র আঠারো বছর। গুপিচন্দ্র রাজী হয় মন্ত্র পাঠ করে সিধ্ব হতে। এরপরেই তার সামনে আসে নির্মম বাস্তবতা । তার মা সাধ্বী হলেও সতী নয়। মানিক চন্দ্র তার পিতা নয়। বরং তার পিতা এমন কেউ যাকে সে হত্যা করতে চেয়েছিল।
অন্যদিকে দুলাল তার বোধ হওয়ার পর থেকে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি, “তর বাপ ক্যাডা? বাপের ঠিক নাই ” অবস্থান এবং সামাজিক প্রতিপত্তির বিচারে রানি ময়নামতী এবং দুলালের মা বিপরীত মেরুর মানুষ। ময়নামতী অসতী ; দুলালের মা নৃশংসতার শিকার। তবুও, সবকিছুর পরেও মাতৃহৃদয় ; সন্তানের মঙ্গলের জন্যে সাধ্যমত চেষ্টা করে। এবং হেরে যায়।
হায় দুলাল ! হায় গুপিচন্দ্র !
একলা দুলালকে রেখে মারা যায় ফকির আলি। বাড়ি দখল করে ফেলে গ্রামের চেয়ারম্যান। এক মৌলভী আশ্রয় দেয় দুলালকে। কিন্তু সেও নোংরামির চুরান্ত করে, দুলাল স্থান পায় এক চায়ের দোকানে।
এগিয়ে চলে জীবন পরিনতির দিকে।
স্বাধীনতা উত্তর সময়ে পাকিস্তান বিরোধী মনোভাব এত তীব্র ছিলো, পাকিবিদ্বেষ এত প্রখর ছিলো যে এদেশের মানুষ যুদ্ধশিশুদের ঘৃণা করতে শুরু করে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এমন নৃশংস নির্যাতন চালায় যে তাদের বংশোদ্ভূত সন্তানদের রীতিমতো পশুর পর্যায়ে বিবেচনা করা হয়। এটা যে এদেশের মানুষের দোষ তা বলবো না। এটা সবাই জানতো যে ধর্ষিত মেয়েটির উপর কি নির্যাতন হয়েছে। তারপরেও পাকসেনাদের কিছু করতে না পারার ক্ষোভ এদেশের মানুষ উগরে দেয় বীরাঙ্গনা আর যুদ্ধশিশুদের উপরে।
সামগ্রিক বিবেচনায় কুরসি নামা উপন্যাসটিকে স্বার্থক উপন্যাস বলা যায়। নিজের শিকরের সন্ধানে, নিজের ব্যুৎপত্তির খোজে ছুটে চলা দুই ভিন্ন সময়ের আকুলতা কি নিদারুণভাবে মিলে গেছে তা উপন্যাসটি না পড়লে বোঝা সম্ভব না। অসাধারণ বর্ণনাশৈলী আর গল্পের দারুণ পটপরিবর্তন একে নিয়ে গিয়েছে অন্য উচ্চতায়।
কান্দে কান্দে প্রজাগণ করে হায় হায়
ষোল বঙ্গের রাজা দেখ যুগী হইয়া যায় ।।
অংকুর বলছেনঃ
বইটা পড়ার ইচ্ছা আছে। রিভিউটা পড়ে আরো বেশি পড়তে ইচ্ছা করছে can you tan after accutane
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
এই প্রথম কোন বইয়ের রিভিউ পড়ে মুগ্ধ হলাম। শুভেচ্ছা নেবেন।
ণ বলছেনঃ metformin tablet
private dermatologist london accutaneধন্য ধন্য বলি তাঁরে. . .
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
গভীর বিশ্লেষণ… ^:)^ বইটা পড়বার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না। বরাবরের মতই মোহনীয় লেখনী… চমৎকার লাগলো… =D>
আশা করি, নিয়মিত লেখা পাব এখন থেকে, পরবর্তী লেখাটার জন্য আর চাতক পাখির মত চেয়ে থাকতে হবে না… :-w
ণ বলছেনঃ
আমি এটা দেখেছি। আপনার চোখেও হয়তো পরেছে। এমনকি এটা আমাদের গালির অংশ হয়ে গিয়েছে। অজান্তেই।
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
দুঃখ লাগে,কষ্ট পাই, যন্ত্রণা হয়… [-( মধুসূদন ঘরামির স্ত্রী শেফালি ঘরামির উপর দেলু শিকদার আর তার সহযোগীরা অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছিল। স্বাধীনতার পর শেফালি একটা সন্তান জন্ম দেন, যাকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকেরা অভ্যর্থনা জানায় নষ্টা মায়ের জারজ সন্তান হিসেবে। সহ্য করতে পারেননি শেফালী, অপমান আর গ্লানি নিয়ে পালিয়ে যান ভারতে…
এতো লজ্জা কোথায় রাখি…
ণ বলছেনঃ
লজ্জা নামক মানবিক গুণাবলী আমরা ‘৭২ এই বিসর্জন দিয়াছি synthroid drug interactions calcium
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
সাথে গ্লানিবোধ, অপমান আর ন্যায়বিচার শব্দগুলোও… [-( ovulate twice on clomid
তারিক লিংকন বলছেনঃ all possible side effects of prednisone
উপন্যাসটি পড়া হয় নি তাই কিছু বলতে পারছি না অসামান্য গ্রন্থটি নিয়ে তবে আপনার লিখার তারিপ করতে হয়! অসাধারন মুন্সিয়ানায় রিভিউটি লিখেছেন! সংগ্রহ করে পড়তে হবে…
আরও আরো রিভিউ চাই
ণ বলছেনঃ doctorate of pharmacy online
আপনাদেরও আরো অনেক মন্তব্য চাই
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
চমৎকার রিভিউ! বইটা সংগ্রহ করে নেয়ার ইচ্ছা রাখি। বইয়ের আরো রিভিউ চাই।
ণ বলছেনঃ
তথাস্তু
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
মনে থাকে যেন… :-w
ণ বলছেনঃ
আমি তো আছি বেঁচে
তোমাদেরই মাঝে,
ভয় নেই প্রিয়তম,
আমি আবার আসবো !
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
:!! :-w
দুরন্ত জয় বলছেনঃ
বই খানে পার্সেল করবেন
রিভিউ ভাল লাগলো……
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
walgreens pharmacy technician application onlineযাক, এখন পার্সেল করেওজদি আপনাকে বই পড়ানো যায়… :-w metformin synthesis wikipedia
ণ বলছেনঃ
বই পার্সেল করা আছে, নিকটস্থ বই বিতান হইতে সংগ্রহ করিয়া নিবেন
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
জয় সাব, যান সংগ্রহ করে পড়ে ফেলেন।
জানাবেন কেমন লাগলো…