শেখ মুজিবঃ অন্য আলোয় দেখা। (পর্ব-দুই)
326 doctus viagra
বার পঠিতবাকশাল গঠনের পরপরই খোদ আওয়ামীলীগে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। কেউ কেউ নানা রকমের সুবিধা ও পদ প্রাপ্তির লোভে বাকশালের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আবার কেউ কেউ এর নানা ধরনের আইনি ফাঁক ফোকরের কারনে কঠোর সমালোচনায় লিপ্ত হন। আপনারা হয়তো জানেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বাকশাল মেনে নিতে পারেননি। এ ব্যাপারে তিনি বঙ্গবন্ধুর ওপর ক্রুদ্ধ’ও ছিলেন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু গবেষক আবদুল মতিন তাজউদ্দীন আহমদের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন একান্ত সচিব আবু সাঈদ চৌধুরীর ‘একান্ত আপন’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেনঃ ‘তিনি সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোন করে বলেন, …আমি আপনার একদলীয় শাসনের সঙ্গে একমত নই।… আমি আমার সারাজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, মানুষের কিন্তু গত্যন্তর থাকবে না। ভবিষ্যতে আপনাকে কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে চাইলে সেই সরানোর জন্য গণতান্ত্রিক কোনো পথ আপনি খোলা রাখছেন না। তখন একটা মাত্র পথ খোলা থাকবে আপনাকে সরানোর জন্য আর সেটা হচ্ছে বন্দুক।”- বস্তুত চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু’র‘আজীবন’ প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থাকার এই হটকারী শিদ্ধান্ত তাকে এই কথা বলতে বাধ্য করে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আর অপরিসীম ধিশক্তি’র অধিকারী তাজ উদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অপমৃত্যু’র পূর্বচিত্র সেদিন’ই দেখতে পেয়েছিলেন। এখানে একটি কথা না বললেই নয় যে, চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু’র‘আজীবন’ প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থাকার যে কথা বলা হয়ে থাকে তা পুরোপুরি সঠিক নয়। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে প্রতিস্থাপিত ৫১নং অনুচ্ছেদের দফা ১-এবলা হয়েছে, এই সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণেরতারিখ হইতে পাঁচ বত্সরের মেয়াদে তাঁহার পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন। তবে শর্তথাকে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁহার পরবর্তী উত্তরাধিকারীকার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।লক্ষ্য করুন, ক্ষমতা গ্রহনের পর পাঁচ বছর মেয়াদ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকবেন, এখানে “সারাজীবনের জন্য” কথাটা বলা হয় নাই। কিন্তু পরবর্তী শর্তটি একজন রাষ্ট্রপতিকে ভয়ানক রকমভাবে স্বেচ্ছাচারী করে তুলতে পারে বিধায় তাজ উদ্দিন বাকশালের বিরোধিতা করেছিলেন।
বাকশাল গঠনের পরপরই নানা মহল থেকে শেখ মুজিব নানা প্রশ্ন বিশেষ করে বিদেশী মদদপুষ্ট বাম নেতাদের বিরোধিতার প্রবল সম্মুখিন হলে তিনি তাদের যথাসম্ভব উত্তর দিতে সচেষ্ট হন। বাকশাল একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সাম্রাজ্যবাদের অবশেষ পুঁজিবাদী সমাজসভ্যতা ও শোষক পরজীবিদের দৃষ্টিতে ‘বাকশাল’ তো একদলীয় শাসনব্যবস্থা হবেই। কারণ বাকশাল কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে আমি সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধি বহুজাতিক পুঁজিবাদী শোষক, তাদের সংস্থা সমূহের লগ্নিকারবার এবং তাদের এদেশীয় সেবাদাস, এজেন্ট, উঠতি ধনিক গোষ্ঠীর একচেটিয়া শোষণ ও অবৈধ প্রভাব প্রতিপত্তি-দুর্নীতি-প্রতারণার সকল বিষদাঁত ভেঙ্গে দেবার ব্যবস্থা করেছি। এজন্য তাদের আঁতে ঘাঁ লেগেছে, বাকশাল ও আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে। মূলত বাকশাল হচ্ছে বাঙালীর সর্বশ্রেণী সর্বস্তরের গণমানুষের একক জাতীয় প্লাটফর্ম, রাজনৈতিক সংস্থা, একদল নয়। এখানে স্বৈরশাসনেরও কোনো সুযোগ নেই।কারণ বাঙালী জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত বা সমষ্ঠিগত শাসন ব্যবস্থায় লে কার উপর স্বৈরশাসন চালাবে?”
যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা আওয়ামী রাজনীতির বৃহৎ ছাতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে, এই গোষ্ঠিটি কিন্তু যুদ্ধকালীন মুজিব নগর সরকারকেও কম সমস্যায় ফেলেনি। এদের সম্ভবত সবচেয়ে বড় সাফল্য মুজিব-তাজউদ্দিনকে আলাদা করতে পারা। স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানপন্থী, এবং সুবিধাবাদীরা বঙ্গবন্ধুর সঠিক মন্ত্রণাদাতাদের অনেককেই বঙ্গবন্ধুর নিকটবলয় থেকে দুরে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল; তাজ উদ্দিন ছিলেন সেই সরিয়ে দেওয়া মন্ত্রণাদাতাদের অন্যতম।নুরুল ইসলাম, আনিসুজ্জামান, কামাল হোসেন প্রমুখ, এঁদের প্রত্যেককেই বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চেষ্টা করে গিয়েছিলেন তাজ উদ্দিন আহমেদকে বঙ্গবন্ধুর কাছে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু তাঁরা সফলকাম হতে পারেন নি। তাই, এই সব বিষয়গুলো বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র পরিচালনাগত ব্যার্থতা নয় বরং প্রাসাদ ষড়যন্ত্র কিংবা নোংরা পলিটিক্সের সাথে সমানে সমান তাল মিলিয়ে না চলতে পারার ব্যর্থতা।বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দিনরাও মানুষ ছিলেন, এ ব্যর্থতা তারাও এড়িয়ে চলতে পারেননি। synthroid drug interactions calcium
১৫ আগস্ট ২০০৯-এর সমকালে আবদুল গাফফার চৌধুরীর কলাম “কালের আয়নায়” বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা “পনেরো আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডটি যদি সংঘটিত না হতো” প্রবন্ধে তিনি শেখ মুজিব সম্পর্কে লিখেছেনঃ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে ছুটেগেছেন। চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শত্রুতা করা সত্ত্বেও বেইজিংয়েরদিকে মৈত্রীর হাত বাড়িয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে শেখ মুজিবের টি-ডিপ্লোমেসি নামে খ্যাত মৈত্রীর হাত বাড়ানোর নীতি অধিকাংশ আরব দেশকে এই বলে আশ্বস্থ করেছিল যে, তিনি সংগ্রামী আরব স্বার্থের বন্ধু। পাকিস্তানের ভুট্টোকেও তিনি বিপজ্জনক ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনেছিলেন শুধু এই দেশটির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। তখনকার দিল্লি-মস্কো জোটের সমর্থন ও সাহায্যপ্রাপ্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও তিনি মার্কিন নিক্সন-কিসিঞ্জার প্রশাসনের আরও বৈরিতা সৃষ্টির মতো কোনো পদক্ষেপগ্রহণ করেননি। ভারতের ইন্দিরা সরকারের সঙ্গে তিনি যে মৈত্রী গড়ে তুলেছিলেনতা ছিল কিংবদন্তির মৈত্রীতুল্য। একটি বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশীর দ্বারা তিন দিক থেকে পরিবেষ্টিত থাকা অবস্থায় কীভাবে একটি ছোট দেশ তার আত্মমর্যাদা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে বড় দেশটির সঙ্গে সমান মর্যাদার ভিত্তিতে মৈত্রী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে তার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
বাকশাল পদ্ধতিতে সমাজের মাথাওয়ালাদের সুযোগ ও স্বাধীনতা প্রয়োজনে খর্ব করে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে সুদূর অতীত থেকে অনুপস্থিত গণতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা ও অধিকারগুলো এই প্রথম বারের মতো পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলে বাকশালের বিরুদ্ধে যে বিরাট চিৎকার শুরু হয়েছিল, তা সমাজের উপরতলার শিক্ষিত ও সুবিধাভোগী শ্রেণীগুলোর চিৎকার। তৃণমূলের জনগোষ্ঠীর চিৎকার ছিল না।
বঙ্গবন্ধুর অগাধ আত্মবিশ্বাস ছিল, বাঙ্গালী জাতিকে তিনি তার নিজের পরিবার মনে করতেন। বাঙ্গালী হয়ে কেউ তার বুকে বন্দুক তাক করবে সেটা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করতেন না। কোন এক শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেনঃ ১৫ আগস্ট দিনগত রাতে বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনের নিচে এসে দেখেন, তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ঘুমাচ্ছেন।হাতে সিগারেট, পুড়তে পুড়তে আঙুল ছুঁই ছুঁই।চড় মেরে বললেন, ‘সিগারেটটা শেষ করে ঘুমা’।পাশেই ঘুমিয়েছিলেন মুহিতুল ইসলাম। তাকে বললেন, ‘ওই বেটা উঠ্। শেখ মুজিব তো লাট হয়ে যায় নাই যে, তারে রাত জেগে পাহারা দিতে হবে। তোদের জন্য খাটের ব্যবস্থা করতেছি। অফিসার রে ফোন লাগা!’ পরে তাদের খাট দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারকে নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। ওই রাতেই ঘাতকের বুলেটেসপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করতে আর আওয়ামীলীগকে জনগনধিক্কৃত একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দেশ ও সমগ্র পৃথিবীতে যে মিথ্যে প্রোপাগান্ডা প্রচার করা হয়েছিল বাকশাল ছিল তার অন্যতম। স্বাধীনতা যদি বিপ্লব হয়, সেই বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় এসেছিল বাকশাল। হঠাৎ করে নয় । প্রথমবিপ্লব স্বাধীনতা, রাজনৈতিক মুক্তি। দ্বিতীয় বিপ্লব অর্থনৈতিক মুক্তি, সাধারণ মানুষের। চীন-রাশিয়া বাদ দিলাম, কিউবায় ফিদেলক্যাস্ট্রো, ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর ইমাম খোমেনী ও বিপ্লবের রেশ বজায় রাখতেই একদলীয় শাসনব্যবস্থাই চালিয়ে গেছেন। এদের কাউকে নমস্য মানেন? তাহলে মুজিবের কি দোষ? সবশেষে একটা ছোট্ট তথ্য দেই, বাকশালে অবলুপ্ত দলগুলোর মধ্যে তালিকার প্রথম নামটি জানেন তো- বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ!
(কৃতজ্ঞতাঃ তথ্য উপাত্ত নানা ব্লগ এবং উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত এমনকি কোন কোন বাক্য বা বাক্যাংশ পাঠকের মন্তব্য থেকেও সরাসরি বা কিঞ্চিৎ সংযোজন বা পরিমার্জন করে সংযুক্ত করা হয়েছে।)
তারিক লিংকন বলছেনঃ
পরে অনেকক কিছি জানলাম! দারুন এই সিরিজটি চালিয়ে জান..
ধন্যবাদ! অনেক কিছুই নতুন করে জানলাম!!!
একজন আইজুদ্দিন বলছেনঃ
সাথে থাকবার জন্য ধন্যবাদ।
তবে আপনার মন্তব্য ছোট হলে কোথায় যেন সুক্ষ একটা ব্যথা লাগে, বড় কষ্ট পাই।
এরপর পোস্টের চাইতে বড় মন্তব্য আশা করছি।
ভাল থাকবেন।
শঙ্খনীল কারাগার বলছেনঃ
বাকশাল নিয়ে চমৎ্কার একটি সিরিজ।অনেক কিছুই নতুন জানতে পারলাম। চালিয়ে যান। সত্য উন্মোচনে পাশে আছি, পাশে থাকবো।
একজন আইজুদ্দিন বলছেনঃ
can levitra and viagra be taken togetherপড়ার জন্য আন্তরিকভাবে অভিনন্দন। আপনাদের পাশে পেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, লেখার প্রেরণা পাই।
ভাল থাকবেন। wirkung viagra oder cialis