জাতিস্মর– জন্মজন্মান্তরের আক্ষেপমাখা অনন্তবিস্তারী এক ভালোবাসার গল্প…
814
বার পঠিতপ্রথম আলোয় ফেরা, আঁধার পেরিয়ে এসে আমি
অচেনা নদীর স্রোতে চেনা চেনা ঘাট দেখে নামি…
চেনা তবু চেনা নয়, এভাবেই স্রোত বয়ে যায়
খোদার কসম জান, আমি ভালোবেসেছি তোমায়..
রোহিতের জন্ম গুজরাটে হলেও তার শিক্ষা-দীক্ষা বড় হওয়া সবই কলকাতায়। কিন্তু আফসোসের ব্যাপার হল, কলকাতায় এতদিন থেকেও সে বাঙলা ভাষাটা রপ্ত করতে পারল না। বাঙলা ভাষায় তার দৌড় বড়ই শোচনীয়। ভাঙ্গা ভাঙ্গা তিন চারটে বাঙলা শব্দ সে জানে বটে, কিন্তু সেগুলোর ব্যবহার করতে গিয়েই বাধে বিপত্তি। ভুল জায়গায় ভুল শব্দ ব্যবহার করে ভয়ংকর রকমের বেকায়দায় পড়ে যায় সে। মহামায়াকে খুব ভালো লাগে তার, কিন্তু ভালোবাসার কথা তাকে বলতে গিয়েই আবার সেই ভাষাগত বিপত্তি। এই ফটাফট ইংলিশ বলবার যুগেও যেখানে মহামায়া বাঙলা ভাষায় কথা বলতে, গান গাইতে গর্ব বোধ করে, সেখানে একজন গুজরাটির মুখে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভুল বাঙলায় প্রেম নিবেদন শুনলে সে তো রেগে যাবেই। ফলাফলটা তাই অনুমিতই ছিল। একটা বাঙলা গান রচনা করে সেটা শুদ্ধ উচ্চারনে গাইলে তবেই রোহিতের পানিপ্রার্থনা মঞ্জুর হবে… মহামায়ার ভালোবাসা জিততে এক অসম্ভব পরীক্ষায় নামে রোহিত, ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাঙলায় গ্রহন করে চ্যালেঞ্জ…
উচ্চ শিক্ষার জন্য পর্তুগাল এসে রোহিত সঙ্গীতের কোর্স বেছে নিল। এবং তারপর খুব অবাক হয়ে আবিস্কার করল, পর্তুগীজ সঙ্গীতের এক অবিস্মরণীয় দিকপাল উনিশ শতকে জন্মেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে, কবিগানে যার অসামান্য সৃষ্টিগুলো মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল পৃথিবীব্যাপী। জাতিতে ফিরিঙ্গি সেই অসাধারন কবিগাতকের নাম ছিল হেন্সম্যান অ্যান্টনী। প্রচণ্ড কৌতূহল হওয়ায় অ্যান্টনী ফিরিঙ্গির উপর কোর্সের থিসিস রচনা করতে বদ্ধপরিকর হয় রোহিত, অ্যান্টনি সম্পর্কে জানতে চলে আসে ভারত।ততদিনে কিন্তু এই রোহিত আর সেই আগের রোহিত নেই, প্রেয়সীর ভালোবাসা জয় করতে বন্ধু বোধির সাহায্য কঠোর সাধনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু কলকাতায় এসে যেন অকূল পাথারে পড়ে গেল রোহিত। ফর্সাডাঙ্গা, চন্দনগরে যেখানে অ্যান্টনী তার অসামান্য সৃষ্টিগুলো রচনা করেছিলেন, সেখানে এসেও তার জীবন, কর্ম, সৃষ্টি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতে পারল না রোহিত। ভোজবাজির মত যেন উধাও হয়ে গেছে অ্যান্টনী… খুঁজতে খুঁজতে রোহিত অবশেষে অ্যান্টনির দেখা পেল, কিন্তু সে বড় বিচিত্র উপায়ে… স্থানীয় লাইব্রেরিতে বহু খুঁজেও যখন রোহিত অ্যান্টনির উপর কোন বই পেল না, তখন লাইব্রেরিয়ান কুশল হাজরা তাকে জানাল, হেন্সম্যান অ্যান্টনীর খোঁজ সে দিতে পারবে, অ্যান্টনির পুরো জীবনের গল্প সে গড়গড় করে বলে যেতে পারবে, অ্যান্টনির আনন্দ-বেদনা, সুখ–দুঃখের প্রতিটি মুহূর্ত তার খুব চেনা, খুব পরিচিত, কারন সেইই অ্যান্টনী, অ্যান্টনী ফিরিঙ্গি, এই জন্মে কুশল হাজরা হিসেবে তার পুনর্জন্ম হয়েছে পূর্বেকার জীবনের সব স্মৃতি নিয়ে… সে জাতিস্মর…
রোহিতের বিস্ফোরিত চোখের অবিশ্বাসমাখা দৃষ্টির সামনে কুশল হাজরারূপী হেন্সম্যান অ্যান্টনী বলে যায় এক বিচিত্র জীবনের অতি বিচিত্র গল্প, যার সাথে জড়িয়ে আছে জঘন্য সতীদাহ প্রথার জ্বলন্ত চিতা থেকে বেঁচে যাওয়া শ্যামলা বর্ণের একজন সৌদামিনীর কথা, ধীরে ধীরে তার অ্যান্টনির প্রেয়সী হয়ে ওঠার কথা, একজন ভিনদেশী অ্যান্টনির বাঙলা ভাষা আর বাঙলা গানের উপর অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্মাবার কথা, বাঙলা গানের সমৃদ্ধ শাখা কবিগানের একজন অনন্য অসাধারন দিকপাল হয়ে ওঠার কথা… এই অসামান্য গল্প কখন যে রোহিতের ভালোবাসা জয়ের গল্পের সাথে মিলে মিশে এক হয়ে যায়, টের পায় না কেউই… কিন্তু এই অতি বিচিত্র মিল অ্যান্টনী রূপী কুশল হাজরাকে দাড় করিয়ে দেয় এমন এক অকল্পনীয় সত্যের সামনে, জন্ম-জন্মান্তরেও যে সত্যের যন্ত্রণা অবিনাশী বেদনায় পুড়িয়ে যায় , চিরে দিয়ে হৃদয়টা নিপুন শৈলীতে। ভালোবাসার মানুষটিকে আলিঙ্গন থেকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা যে চিরন্তন…
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের রচনা ও পরিচালনায় জাতিস্মর মুক্তি পায় ১৭ই জানুয়ারি, ২০১৪তে। মিউজিক্যাল ড্রামা জনরার এই চলচ্চিত্রটিতে হেন্সম্যান অ্যান্টনীর( অ্যান্টনী ফিরিঙ্গি) এবং কুশল হাজরার ভুমিকায় অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ, রোহিত মেহরার ভূমিকায় ছিলেন যীশু সেনগুপ্ত আর মহামায়া ব্যানার্জী র চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। অসাধারন সিনেমাটোগ্রাফি, অসম্ভব সুন্দর কিছু কবিগান আর মেলোডির ধাঁচে কিছু আধুনিকগান আর সব্যসাচী অভিনেতা প্রসেনজিৎয়ের ক্যারিয়ারের সম্ভবত সবচেয়ে অসাধারন কাজ এই চলচ্চিত্রটাকে করেছে সমৃদ্ধ এবং অসম্ভব সুন্দর এক ভালোবাসার কথাকাব্যে… উনিশ শতকের সাহেবী পোশাকে অ্যান্টনী ফিরিঙ্গি কিংবা এই সময়ের সাদামাটা পোশাকের লাইব্রেরিয়ান— দুটো ক্ষেত্রেই দুর্দান্ত ছিলেন প্রসেনজিৎ, শক্তিশালী অভিনয়শৈলীতে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন তিনি, গল্পে দর্শককে বুঁদ করে রেখেছিলেন সারাক্ষন।কবির সুমনের সঙ্গীত পরিচালনায় অসাধারন কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়েছে চলচ্চিত্রের গানগুলো, আর সুমনের সেই বিখ্যাত জাতিস্মর গানটি শেষ দিকে চলচ্চিত্রে এনেছে এক ভিন্ন ব্যঞ্জনা… “খোদার কসম জান আমি ভালবেসেছি তোমায়” গানটার মুগ্ধতা বর্ণনা করবার মত ভাষা আমার জানা নেই। চলচ্চিত্রের শুরুতে এই গানটা স্রেফ দর্শকের পুরো চিন্তাভাবনায় অসাধারন এক আলোড়ন তৈরি করে, সুমনের মাদকতাময় গলা দর্শককে শুরুতেই বুঁদ করে ফেলে এই চলচ্চিত্রে…
কিন্তু প্রসেনজিৎের দুরন্ত অভিনয় কিংবা উনিশ শতকের কবিগান আর বর্তমান সময়ের সঙ্গীতের অসাধারন কিছু ফিউশন থাকার পরেও মুভিটা মাস্টারপিস হয়ে উঠতে পারেনি শুধুমাত্র সৃজিতের অতি অদ্ভুত কিছু অবহেলার জন্য। গল্পের মূল স্রোত ছিল দুটো, মুখ্য স্রোত ছিল কবিগাতক হিসেবে অ্যান্টনীর গল্প আর অপেক্ষাকৃত গৌণ ছিল রোহিত মেহতার প্রেয়সীর ভালোবাসা জয়ের গল্প… কিন্তু মূল গল্পের বাইরে কাহিনীকার সৃজিত অনেকগুলো শাখা গল্প টেনেছেন, যা মূল গল্পে বাঁধ দিয়েছে বারবার, নষ্ট করেছে গল্পের ফ্লো। দর্শক হিসেবে খুব ইচ্ছে হয় রহিত-মহামায়া- কুশল হাজরার চরিত্রের অব্যক্ত অংশগুলোর আরও গভীরে ডুব দিতে, কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় অংশগুলোকে হাইলাইট করতে গিয়ে সৃজিত দর্শককে অতৃপ্ত রেখেই চলে গেছেন ন্যারেশনে। পানির উপর দিয়ে উড়ে গিয়েছেন, পানি স্পর্শ করেননি। সবচেয়ে আফসোস লাগে তখন, যখন বাঙলা গানের ডাইহার্ড ফ্যান মহামায়ার সাথে বাঙলা গানের এতো বড় একটা সমৃদ্ধ শাখা কবিগানের এতো অসাধারন একজন গাতক অ্যান্টনী ফিরিঙ্গির পরিচয়ই হল না। অথচ চাইলেই পরিচালক মহামায়া এবং দর্শককে এই অতৃপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে পারতেন, তৃপ্ত করতে পারতেন। শত হলেও গানই যেখানে ভালোবাসার সঞ্জীবনী সুধা, আমার মনে হয় সেই সেন্স থেকে এই চলচ্চিত্রে এনাফ ট্র্যাজেডি ঘটেছে, নতুন করে এই ট্রাজেডির দরকার ছিল না…
সবকিছুর পরও জাতিস্মর দর্শক মনে দাগ কেটে থাকবে বহুদিন, শুধু সঙ্গীতপিপাসু দর্শকের জন্য অসম্ভব চমৎকার কিছু গানের জন্য নয়, এক অনন্তবিস্তারী বিরহগাঁথার জন্যও। যে বিরহগাঁথার এক পাশে ছিল বহু আকাঙ্খিত এক ভালোবাসার অদ্ভুত সুন্দর এক পরিণয় আর অপর পাশেই জুড়ে ছিল জন্ম-জন্মান্তরের হাহকারমাখা অনন্ত আক্ষেপ… ভালোবাসা- সে তো এক জনমে ফুরিয়ে যাবার নয়… ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলবার আক্ষেপ- সে তোঁ জন্মজন্মান্তরেও ফুরোবার নয়…
রাহাত মুস্তাফিজ বলছেনঃ
” এ তুমি কেমন তুমি চোখের তারায় আয়না ধরো
এ কেমন কান্না তুমি আমায় যখন আদর করো ”
- এই জনপ্রিয় গান বিষয়ে দু লাইন লিখতে পারতে।
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
সত্যি বলতে কি আমি প্রথম গানটায় এতটাই বুঁদ হয়ে ছিলাম যে, এ তুমি কেমন তুমি গানটা নিয়ে ভাববার ফুরসত মেলেনি। এই লেখার প্রধান সীমাবদ্ধতা অবশ্যই এই পয়েন্টটা। ধরিয়ে দেবার জন্য এবং কষ্ট করে লেখাটা পড়বার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন রাহাত ভাই… %%- >:D<
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
আমার অবশ্য এ তুমি কেমন তুমি গানটাই বেশি ভাল লেগেছে
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
side effects of drinking alcohol on accutaneওইটা তোঁ অসাধারন… :bz
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
প্রথন গানটা আপনার কেমন লেগেছে?
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
viagra vs viagra plusচমৎকার একটি রিভিউ পড়লাম
যদিও মুভিটা দেখা হয়নি, তবে রিভিউটা পড়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
পড়বার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা ফাতেমা… %%- যত দ্রুত সম্ভব মুভিটা দেখে ফেলুন… :!! নইলে বিশাল মিস করবেন… [-X
দেখে এইখানে জানাবেন কেমন লাগলো… অপেক্ষায় রইলাম… :-w
তারিক লিংকন বলছেনঃ
মুভিটি দেখা হয় নি! তবে আপনার রিভিউ পড়ে লোভ হচ্ছে…
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
আপনি লাস্ট কবে মুভি দেখছিলেন,সেইটা আপনার মনে নাই।আমি বাজি ধরে বলতে পারি… [-( >:P কিছু বলব না আর আপনাকে… :-@ আপনার আর কোন অজুহাতও শুনব না… %-(
শ্রাবনের রক্তজবা বলছেনঃ
এটা ভালোবাসার সিনেমা ছিল !!!!!!!!!!!!
বলেন কি ???? সিনেমা দেখে আমি কিছুই বুঝলাম না!!!!!!!
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
আপনি কি মনে করেছিলেন জনাব/জনাবা? :O #-o সঙ্গীত এখানে ভালোবাসার মূল সুর, যে সুরে গাঁথা হয়েছে এক আক্ষেপমাখা ভালোবাসার গল্প… আপনি কি বুঝলেন কে জানে? :-” :-SS
শ্রাবনের রক্তজবা বলছেনঃ
এ তুমি কেমন তুমি ছাড়া আর কোন গান ভাল লাগে নাই। metformin synthesis wikipedia
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
খোদার কসম জান, আমি ভালবেসেছি তোমায়
গানটা ভালো লাগে নাই?
কিংবা কবিগানগুলো? :-SS
লাল লোহিত বলছেনঃ
কুশল হাজরা ওরফে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির সাথে মহামায়ার দেখা হতে দেয়নি কুশল নিজেই, কারণ মহামায়াই যে ছিল আগের জন্মের সৌদামিনী .. এ জন্মে সে রোহিতের প্রেয়সী। এ তুমি কেমন তুমি গানের সময় মহামায়াকে দেখেই তাই কুশল ওইখান থেকে চলে যায় । ছবির মাঝ পর্যায়ে যখন কুশল তার পুর্বজন্মের স্মৃতি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসেন তখন ডাক্তার জিগ্যেস করে যে “আপনি কি কিছু খুজছিলেন ?” এই খোঁজাটাই ছিল সৌদামিনী অর্থাৎ মিনি অর্থাৎ এ যুগের মহামায়াকে খোঁজা । তাঁকে দেখতে পেয়েই তিনি সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে গেছিলেন । পরে অসুস্থ হওয়া ছিল অভিনয় যাতে তাঁকে আর ওদের জীবনে না থাকতে হয় । “এ তুমি কেমন তুমি” এবং শেষে “জাতিস্মর” ছবিতে যে দৃশ্য দেখানো হয় তাতেই এটা পরিষ্কার হয় । যখন রোহিত মায়াকে নিয়ে চলে যায় তখন বারান্দা থেকে কুশল বলে ওঠেন “স্যরি মায়া, আমার ওইদিন থেকে যাওয়া উচিৎ ছিল” এখানে আসলে একই সাথে একটা মিলন আর একটা বিচ্ছেদ দেখানো হয়েছে
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
ইয়ে মানে লোহিতদা, স্পয়লার হয়ে গেল না… :-SS
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
‘খোদার কসম’ ডন ভাই এই সিনেমাটা আমি দেখেছি
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
capital coast resort and spa hotel ciproসূর্য কুনদিক দিয়া উঠলো? :O
ডন কর্লিওনির বাবা বলছেনঃ
kamagra pastillasপুরা আবালমার্কা একটা মুভি, ফালতু -_-