বাতাসে রুদ্রের গন্ধ
437
বার পঠিতকবিতার সংজ্ঞা দেওয়া খুব কঠিন। যে লেখাটি সমকালের স্মৃতি বা স্বপ্নকে তুলে আনতে সক্ষম এবং একই সাথে সমকালকে অতিক্রমের যোগ্যতা রাখে তাকেই বোধহয় কবিতা বলা যেতে পারে। অবশ্য তা হবে কবিতার অন্যান্য ব্যাকরণের শর্ত সাপেক্ষে। — এভাবেই কবিতার সংজ্ঞা দিয়েছিলেন রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।[1] এবং নিজের জীবনে তার নিজের দেয়া সেই সংজ্ঞার প্রতিফলনও ঘটিয়েছেন যথার্থতার সাথেই। একই সাথে তিনি তার লেখায় তুলে এনেছেন সমকালীন স্মৃতি-স্বপ্ন-সাধ। আবার তার কবিতার মূর্ছনাই তার নিজস্ব সময়ের গণ্ডিকে অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে সর্বকালীন। মৃত্যুর দুই যুগ পর আজও তাই রুদ্র আছে আমাদের ভেতরে, আমাদের বাহিরে। রুদ্র আছে আমাদের হৃদয় জুড়ে।
আনুমানিক উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে তৎকালীন খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমার রামপালের জঙ্গল কেটে বাসযোগ্য কর হয়েছে। অত্যন্ত সাহসী ও পরিশ্রমী কিছু মানুষের সদ্য সৃষ্টি জনবসতিটিকে ঠিক গ্রামও বলা যায় না। কাছেই দেশখ্যাত পীর খানজাহান আলীর মাজার। সেখানে প্রায়শই আসতেন তার ভক্ত ধোনাহ খা। পরে সেখানেই বসবাস করা শুরু করেন এবং কালক্রমে বিশাল ভূ-সম্পত্তির অধিকারী হন। পরবর্তীতে তার পুত্র মোংলাই হাজীর মেজো পুত্র শেখ ইউসুফ বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি ও ক্ষমতার অধিকারী হন এবং পরিবারে শিক্ষার প্রচলন ঘটান। তার সাত সন্তানের মধ্যে শেখ ওয়ালীউল্লাহ হন অত্র অঞ্চলের প্রথম ডাক্তার। শিরিয়া বেগমের গর্ভে ডাঃ শেখ মুহম্মদ ওয়ালীউল্লার প্রথম সন্তান শেখ মুহম্মদ শহিদুল্লার জন্ম হয় ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর, বরিশাল রেডক্রস হাসপাতালে। [2]
রুদ্রের আবাস ছিল সুন্দরবনের কাছেই। কিন্তু, বাঘের কাছে বড় হলেই সবাই বাঘ হয়না। হরিণের কাছে বড় হলেই সবাই হরিণ হয় না। রুদ্র হয়েছিলেন বাঘের চেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু। রুদ্র হয়েছিলেন হরিণের চেয়েও সুন্দর কিছু। শৈশবে তার অধিকাংশ সময়ই কেটেছে নানাবাড়ি মিঠেখালি গ্রামে। এখানের পাঠশালাতেই তার পড়াশোনা শুরু হয়। দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন সাহেবের মিঠেখালি গ্রামে তাঁর নানার নামে প্রতিষ্ঠিত “ইসমাইল মেমোরিয়াল স্কুল” – এ। এ সময় থেকেই তার মাঝে বিশেষ সাহিত্য-প্রীতি দেখা যায়। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নিয়মিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পড়া এবং কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করেন। স্কুলে পড়ার সময় নিয়মিত কবিতা আবৃত্তি ছাড়াও বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু, নানার নামে স্কুল হওয়ায় এবং বাবা ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান হওয়ায়, রুদ্র প্রথম হওয়ায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারতো যে, রুদ্র আদৌ সেই পুরষ্কার নিজের মেধার জোরে পেয়েছে কিনা। তাই তার বাবা, প্রথম পুরষ্কার দেন দ্বিতীয় জনকে এবং রুদ্রকে দেন দ্বিতীয় পুরষ্কার। কিন্তু, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সদাবিদ্রোহী রুদ্র সেই ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময়ই এই অন্যায় মেনে নেননি। তিনি পুরষ্কার প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে তার বাবা ভুল বুঝতে পেরে, তাকে প্রথম পুরষ্কার দিলেও তা গ্রহণ করেননি রুদ্র। এ ঘটনা থেকেই আমরা বুঝতে পারি, শিশুকালেই কতটা আপোষহীন মানসিকতার ছিলেন রুদ্র।[4] যদিও এই আপোষহীন মানসিকতার কারণেই পরবর্তী জীবনে তিনি বড্ড বেশি একা হয়ে পড়েছিলেন। পরবর্তীতে মোংলা থানার “সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়” – এ চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় নানীর ট্রাংক থেকে টাকা চুরি করে মামাতো ভাইদের সাথে নিয়ে তৈরি করেন বনফুল নামের একটি গ্রন্থাগার। এ ছাড়াও খেলাধুলার প্রতি ছিল তার সীমাহীন আগ্রহ। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন, মোংলার প্রথম ক্রিকেট দল।
পরের বছরটি ছিল পুরো বাংলার ইতিহাসেই বিশেষ তাৎপর্যবহ — ১৯৬৯; গণঅভ্যুত্থানের বছর। রুদ্র তখন কেবল ক্লাস সেভেনের ছাত্র। কিন্তু, আজন্ম প্রতিবাদী কবিকে কি আর বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায়? না’কি বাঁধা যায় দ্রোহের কবিকে? আর তাই সেই ক্ষুদে বয়সেই সর্বাত্মক অংশ নেন গণঅভ্যুত্থানে। হরতাল, মিটিং, মিছিলে তার অংশগ্রহণ ছিল নিয়মিত।
দু’বছর পরে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল, তখন রুদ্র ক্লাস নাইনে। তিনি রীতিমত অস্থির হয়ে ওঠেন যুদ্ধে যোগদানের জন্য। কিন্তু, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার অভিযোগে তার বাবাকে পাকসেনারা ধরে নিয়ে যায়। সীমাহীন অত্যাচার করে যশোর কেন্দ্রী কারাগারে আটকে রেখে। ফলে, তাদের প্রতি সীমাহীন আতঙ্কের সৃষ্টি হয় তার মায়ের মনে। তাই বয়ঃজৈষ্ঠ্য সন্তান শহীদুল্লাহকে যুদ্ধে যেতে দেন নি।[4] প্রেম ও দ্রোহের কবিও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন মাতৃপ্রেমের কাছে। যুদ্ধে যেতে না পারলেও সেই সময় পাকসেনাদের তুমুল অত্যাচার, খুন, ধর্ষণ, হত্যাযজ্ঞ, নিষ্ঠুরতা, পৈশাচিকতা তার চেতনজগতকে আন্দোলিত করে তুমুলভাবে। হয়তো সে থেকেই তার মানসিকতায় দ্রোহের স্থান গেঁথে যায় পাকাপাকিভাবে। পিতার ইচ্ছা ছিল বড় ছেলে শহীদুল্লাহ বড় হয়ে তার মত ডাক্তার হবে। কিন্তু, যুদ্ধের নৃশংসতা রুদ্রের মনে রুদ্রতাকে এঁকে দেয় গভীর ক্ষতে। রুদ্র ডাক্তার হয়েছিলেন। কিন্তু, সে ডাক্তার শরীরের নয়, মনের।
যুদ্ধের পরে তিনি চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। থাকতেন লালবাগে, সেজ মামার বাসায়। ভর্তি হন ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলে। [3] এ সময় থেকেই তিনি নিয়মিত গল্প, কবিতা, গান ও নাটক লিখতে শুরু করেন। ১৯৭২ সালের ২৬শে নভেম্বর দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা — আমি ঈশ্বর আমি শয়তান । পরের বছর ১৩ই ফেব্রুয়ারি রেডিওতে আবৃতি করে স্বরচিত কবিতা — এখনও বেঁচে আছি । মূলত এ সময় থেকেই তার সরাসরি সাহিত্য সম্পৃক্ততা শুরু হয়। মানসিকতায়ও আসে ব্যাপক পরিবর্তন। তৎকালীন প্রেক্ষাপটে তার মানসিকতাকে পুরোপুরি অধিকার করে নেয় দ্রোহ। আর তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনে নামের আগে যুক্ত করেন — রুদ্র। তখন থেকে তার নাম হয় — রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ; যে নামেই তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন পরবর্তী জীবনে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় চার বিষয়ে লেটার সহ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হন।ভর্তি হন ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে।দুই বছরে মাত্র আঠারো দিন ক্লাসে উপস্থিত থেকেও দ্বিতীয় বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন রুদ্র।[5]
এরই মধ্যে মূলধারার সাহিত্যের সাথে তার সংযুক্তি ঘটে। দুর্বিনীত, অনামিকার অন্য চোখ এবং চুয়াত্তরের প্রসব যন্ত্রণা, অশ্লীল জ্যোৎস্নায় — শীর্ষক সংকলন এবং কবিতাপত্রের সম্পাদনা করেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরে গর্জে ওঠে তার কলম – জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন ।তার কলম গর্জে ওঠে স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে। সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি তিনি লিখেন — দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো – কোন পক্ষে যাবে? [4]
১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন। মূলত এ সময় থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। পঁচাত্তর থেকে নব্বই — এমন কোন আন্দোলন হয়নি, যেখানে তিনি সশরীরে অংশগ্রহণ করেন নি।[3][7] ১৯৭৯ সালে আহমদ ছফার প্রকাশনায় বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয় রুদ্রের প্রথম কাব্যগ্রন্থ – উপদ্রুত উপকূলে । প্রথম কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমেই রুদ্র ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হন। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বচনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মনোনীত পরিষদে সাহিত্য সম্পাদক পদপ্রার্থী হন। অবশ্য নির্বাচনে বন্ধু আলী রিয়াজের কাছে পরাজয় বরণ করেন। এ বছর তার স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষা দেবার কথা ছিল। কিন্তু, ক্লাসে উপস্থিতির হার বেশ কম থাকায় বিভাগীয় সভাপতি তাকে পরীক্ষার অনুমতি দেননি। পরের বছর দ্বিতীয় শ্রেণীতে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এসময় তিনি ‘উপদ্রুত উপকূলে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য লাভ করেন মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরষ্কার।
১৯৮১ সালের ২৯শে জানুয়ারি তিনি বিয়ে করেন প্রখ্যাত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে।
রুদ্রের বাবা কখনই এই বিয়ে মেনে নেননি। মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই রুদ্রের মনন-মানসিকতার ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে, পিতা-পুত্রের দ্বন্দ্ব ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে বাবার সাথে রুদ্রের উল্লেখযোগ্য কোন যোগাযোগ ছিল না। তসলিমাকে তিনি বিয়েও করেন পরিবারের কাউকে না জানিয়ে। যা ফুটে ওঠে বিয়ের পর তার বাবাকে লেখা চিঠিতে —
আব্বা,
পথে কোন অসুবিধা হয়নি। নাসরিনকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গত পরশু ঢাকায় ফিরেছি। আপনাদের মতামত এবং কোনোরকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আমি বিয়ে করে বৌ বাড়ি নিয়ে যাওয়াতে আপনারা কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু আমি তো আমার জীবন এভাবেই ভেবেছি। আপনার সাথে আমার যে ভুল বোঝাবুঝিগুলো তা কখনই চ্যালেঞ্জ বা পিতা-পুত্রের দ্বন্দ্ব নয়, স্পষ্টতই তা দুটো বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব। ব্যক্তি আপনাকে আমি কখনোই ভুল বুঝিনি, আমি জানি না আমাকে আপনারা কিভাবে বোঝেন। এতো চরম সত্য যে, একটি জেনারেশনের সাথে পরবর্তী জেনারেশনের অমিল এবং দ্বন্দ্ব থাকবেই। যেমন আপনার সাথে আপনার আব্বার অমিল ছিল, আপনার সাথে আমার এবং পরবর্তীতে আমার সাথে আমার সন্তানদের। এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাত কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব নয়। আমরা শুধু এই সংঘাতকে যুক্তিসঙ্গত করতে পারি; পারি কিছুটা মসৃণ করতে। সংঘাত রোধ করতে পারিনা। পারলে ভালো হতো কিনা জানিনা। তবে মানুষের জীবনের বিকাশ থেমে যেতো পৃথিবীতে।আমার মনে পড়ে না। এই ছাব্বিশ বছরে একদিনও পিতা হিসাবে আপনার সন্তানদের আদর করে কাছে টেনে নেননি। আশেপাশে অন্য বাবাদের তাদের সন্তানদের জন্য আদর দেখে নিজেকে ভাগ্যহীন মনে হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কখনো কষ্ট প্রকাশ করিনি। ছেলেবেলায় আমার খেলতে ভালো লাগতো। খেললে আমি ভালো খেলোয়াড় হতাম। আপনি খেলতে দিতেন না। ভাবতাম, না খেললেই বোধ হয় ভালো। ভালো মানুষেরা বোধ হয় খেলে না। আবার প্রশ্ন জাগত, তাহলে আমার খেলতে ভালো লাগে কেন? আমি কি তবে খারাপ মানুষ? আজ বুঝি, খেলা না খেলার মধ্যে মানুষের ভালো-মন্দ নিহিত নয়। কষ্ট লাগে। আমিও স্বপ্ন দেখতাম, আমি ডাক্তার হবো। আপনার চেয়ে বড় ডাক্তার হয়ে আপনাকে ও নিজেকে গৌরব দেবো। সন্তান বড় হলে পিতারই তো সুখ। আমি সেভাবে তৈরিও হচ্ছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কি যে এক বিরাট পরিবর্তন এলো ! একটি দেশ, একটি নতুন দেশের জন্ম হল, নতুন চিন্তার সব হতে লাগলো। নতুন স্বপ্ন এলো মানুষের মনে। সবাই অন্যরকম ভাবতে শুরু করলো। আমিও আমার আগের স্বপ্নকে ধরে রাখতে পারিনি। তারচেয়ে বড় এক স্বপ্ন, তারচেয়ে তাজা এক স্বপ্ন, তারচেয়ে বেগবান এক স্বপ্নকে আমি কাছে টেনে নিলাম। আমি সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করলাম। আগেও একটু আধটু লিখতাম, এবার পুরোপুরি। আমি আমার আগের সব চিন্তা-ভাবনার প্রভাব ঝেড়ে ফেলতে লাগলাম। চিন্তা থেকে, জীবন থেকে, বিশ্বাস-আদর্শ থেকে, অনেক কিছুর সঙ্গেই সংঘর্ষ হতে লাগলো। অনেক কিছুর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির শুরু হল। কখনো ক্ষোভে আমি অপ্রত্যাশিত কিছু করে ফেলতে লাগলাম। আপনার সাথে আমার সাথে বিশ্বাসের সাথে মিল এমন মানুষের দেখা পেলাম। তাদের সাথে সংঘাতও হল। একি ! সবার সাথে সংঘর্ষ হয় কেন? মনে মনে আমি ভীষণ অস্থির হয়ে পড়লাম। তাহলে কি এপথ ভুল পথ? আমি কি ভুল পথে চলেছি? কখনো মনে হয়েছে, আমিই ঠিক, এই প্রকৃত পথ। মানুষ যদি নিজেকে ভালোবাসতে পারে তবে সবচেয়ে সুন্দর হবে। নিজেকে ভালোবাসতে গেলে সে তার পরিবারকে ভালোবাসবে। আর পরিবারকে ভালোবাসা মানেই একটি গ্রামকে ভালোবাসা। একটি গোষ্ঠীর মানুষকে ভালোবাসবে। আর একটি গ্রাম মানেই তো সারা পৃথিবী। পৃথিবীর সব মানুষ — সব মানুষ সুন্দর হয়ে বাঁচবে। পৃথিবীতে কত বড় বড় কাজ করেছে মানুষ। একটা ছোট্ট পরিবারকে সুন্দর করা যাবে না? অবশ্যই যাবে। একটু যৌক্তিক হলে, একটু খোলামেলা হলে কত সমস্যা এমনিতেই মিটে যাবে। সম্পর্ক সহজ হলে কাজ সহজ হয়। আমরা চাইলেই তা করতে পারি।
জানিনা এ চিঠিখানায় আপনি ভুল বুঝবেন কিনা। ঈদের আগে আগে বাড়ি আসবো। আম্মাকে বলবেন, যেন বড় মামার কাছ থেকে হাজার চারেক টাকা নিয়ে আমাকে পাঠায়। বাসায় রান্নার কিছুই কেনা হয়নি। বাইরের খাওয়ায় খরচ বেশী এবং অস্বাস্থ্যকর। আম্মার তদারকিতে দেওয়া সম্পত্তির এটুকুই তো রিটার্ন মাত্র। আপনার সেন্টিমেন্টে লাগতে পারে। লাগাটাই স্বাভাবিক। কারণ আপনার শ্বশুরবাড়ি। আমাদের কিসের সেন্টিমেন্ট? শিমু মংলায় পড়বে, বাবু স্কুলে। আপনারা না চাইলেও এসব করা হবে। দোয়া করবেন।
- শহিদুল্লাহ। [6]
এ বছরই বের হয় রুদ্রের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম । এর জন্য তিনি যুগ্মভাবে মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরষ্কার লাভ করেন।
১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ৪২টি সাংস্কৃতিক সংগঠন মিলে তৈরি হয় — সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট । রুদ্র ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তখন তিনি কেবল স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র।
দু’বছর পরে তিনি বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সে বছরের এপ্রিলে সব্যসাচী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ — মানুষের মানচিত্র । দ্রাবিড় প্রকাশনী থেকে চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ — ছোবল প্রকাশিত হয় আরও দু’বছর পরে। এ বছরই অর্থাৎ ১৯৮৬ সালে তার বিচ্ছেদ ঘটে তসলিমা নাসরিনের সাথে।
স্বঘোষিত কবি এরশাদের অনুগামী ও ভাড়াটে কবিরা ১৯৮৭ সালে তাদের বাহাদুরি দেখাতে আয়োজন করে — এশীয় কবিতা উৎসব এর। রুদ্র দাঁড়িয়ে যান এর বিরুদ্ধে। পহেলা ও দোসরা ফেব্রুয়ারি তিনি আয়োজন করেন — জাতীয় কবিতা উৎসব ।[7] এর স্লোগান ছিল — শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা । উৎসবের উদ্বোধনী সংগীতটিও ছিল তার লেখা।[5] পরের বছর যখন দ্বিতীয় জাতীয় কবিতা উৎসব আয়োজিত হবার কথা, তখন এর আয়োজকদের সাথে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন রুদ্র। তিনি মন্তব্য করেন — স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গঠিত জাতীয় কবিতা পরিষদের মধ্যেও স্বৈরাচার ঢুকে পড়েছে । এছাড়াও তিনি সকল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে মঞ্চে কবিতা পাঠ করেন। এতে মতবিরোধ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। অভিমান আর ক্ষোভ নিয়ে রুদ্র নিজেকে গুটিয়ে নেন প্রিয় সংগঠন থেকে।[5]এ বছর (১৯৮৮) মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত হয় তার ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ — দিয়েছিলে সকল আকাশ । দু’বছর পরে (১৯৯০) তার সপ্তম কাব্যগ্রন্থ — মৌলিক মুখোশ প্রকাশিত হয় সংযোগ প্রকাশনী থেকে।
এ সময়ে প্রাক্তন স্ত্রী তসলিমা নাসরিনের সাথে তার পুনরায় প্রণয়ের কথা শোনা যায়। অবশ্য সেটা ছিল তসলিমার দ্বিতীয় বিবাহ থেকে তৃতীয় বিবাহে উত্তরণের মধ্যবর্তী সময়।[7] এ ছাড়া শিমুল নামে এক আরেক মেয়ের সাথে রুদ্রের প্রণয়ের কথা জানা যায়। তবে, শিমুলের অভিভাবক রাজী না হওয়ায় এই সম্পর্ক কোন পরিণতি লাভ করেনি। ফলে, আরও বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন রুদ্র। ভেতরে ভেতরে এই নিঃসঙ্গতা তাকে গ্রাস করত। নিঃসঙ্গতাকে দূর করার একটাই উপায় ছিল তার কাছে — মদ আর সিগারেট । সেটারই পূর্ণ ব্যবহার শুরু করেন তখন। ফলে ভেতরটা আরও বেশি ক্ষয়ে যায় তার। অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার ফলস্বরূপ আলসারে পেয়ে বসেছিল তাকে। পায়ের আঙ্গুল ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। একই সাথে দেখা দেয় দগদগে ঘাঁ আর পুঁজ। ডাক্তার বলেছিলেন, পা বাঁচাতে হলে সিগারেটকে মারতে হবে। রুদ্র সিগারেটকেই বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯১ সালের ১০ই জুন আলসারজনিত অসুস্থতায় ভর্তি হন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। ঠাঁই হয় ২৩১ নাম্বার কেবিনে। দিন দশেক পরে সুস্থ হয়ে ফিরেও আসেন পশ্চিম রাজাবাজারের বাড়িতে। কিন্তু, ২১শে জুন সকালে ব্রাশ করার সময় হঠাৎই Sudden Cardiac Arrest – এ আক্রান্ত হন তিনি। মাত্র ১০/১৫ মিনিট পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই শব্দ শ্রমিক।
তার মৃত্যুর পরে হঠাৎ করেই আকাশ ফুঁড়ে আবির্ভাব হয় তার অজস্র শুভাকাঙ্ক্ষীর। যারা রুদ্রকে জীবদ্দশায় দু’চোখের বিষ বলে গণ্য করত, তারাই মুহূর্তে হয়ে যায় তার শুভাকাঙ্ক্ষী। অবশ্য ইতিহাসে তা বিরল নয়। উঁকুনেরা সর্বদাই মহামানবদের শরীর আশ্রয় করে বাঁচতে চায়। তার প্রাক্তন স্ত্রী তসলিমা নাসরিন যেমনটা বলেছেন - will i gain or lose weight on zoloft
আমার বড় হাসি পায় দেখে এখন তোমার শয়ে শয়ে বন্ধু বেরোচ্ছে, তারা তখন কোথায় ছিল যখন পয়সার অভাবে তুমি একটি সিঙারা খেয়ে দুপুর কাটিয়েছ? আমি না হয় তোমার বন্ধু নই তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম বলে, এই যে এখন তোমার নামে মেলা হয়, তোমার চেনা এক আমিই বোধহয় অনুপস্থিত থাকি মেলায়,যারা এখন রুদ্র রুদ্র বলে মাতম করে বুঝি না তারা তখন কোথায় ছিল, কেন আমি তোমাকে ত্যাগ করবার পরও আমাকেই তোমার পকেটে টাকা গুঁজে দিতে হত? মাতম করা বন্ধুদের বেশির ভাগই যে কেবলই তোমার বাংলা-মদ-পানের পার্টনার ছিল, সে আমি জানি।[8]
ব্যক্তিগত জীবনে কখনই স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখেন নি রুদ্র। এক সাক্ষাৎকারে তার প্রিয় জিনিসের তালিকা দিতে গিয়ে বলেন — পছন্দের তালিকা তো অত্যন্ত দীর্ঘ। তবে মদ্যপান, সুন্দরী ও সমমনস্কদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ও চিংড়ি ও চুমু খেতে পছন্দ করি ।[9] তিনি কবিতা লিখেছেন মদ খেতে খেতে, লিখেছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজার আড্ডায়, এমনকি নারীসঙ্গের সঙ্গেও রচিত হয়েছে তার কবিতা। সেই ক্ষোভ ফুটে উঠেছে তসলিমার লেখায় — তুমি যে মালিটোলায়, লালবাগে, টানবাজারে, বাণিশান্তায় এত নারী ছুঁয়েছ তোমাকে কিন্তু কেউ চরিত্রহীন বলে না ।[8] রুদ্র নিজেই বলেছেন — কীভাবে যেন লেখাটি হয়ে ওঠে, ঠিক বস্তুতান্ত্রিকভাবে আমি ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে পারি না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিলে বসে লেখার খাতা মেলে কলম খুলে বসে থেকেও অনেকদিন একটি লাইনও লিখতে পারিনি। আবার সিগারেট ছেঁড়া প্যাকেটেও, এমনকি শুঁড়িখানায় বসেও দীর্ঘ কবিতা লিখে ফেলেছি ।[9]
তার এই ছন্নছাড়া জীবনের কাছেই তিনি পেয়েছেন তার দ্রোহ, পেয়েছেন তার প্রেম। মাত্র পয়ত্রিশ বছর স্থায়ী ছিল তার জীবন। এই স্বল্প জীবনেই যেটুকু রচনা করেছেন, অমরত্বের জন্য তার চেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই:
কবিতা:
উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯) viagra en uk
ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম ১৯৮২
মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪)
ছোবল (১৯৮৬)
গল্প (১৯৮৭)
দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮)
মৌলিক মুখোশ (১৯৯০) nolvadex and clomid prices
ছোটগল্প:
সোনালি শিশির
নাট্যকাব্য:
বিষ বিরিক্ষের বীজ [3]
missed several doses of synthroid
আজ আমাদের এই ঘুণে ধরা সমাজে তার মত শুদ্ধবাদী কেউ খুব বেশি প্রয়োজন। প্রতি মুহূর্তে যখন স্বার্থের কাছে মানুষ বিকিয়ে যায়, তখন খুব বেশি মনে পড়ে রুদ্রের কথা। বাতাসে পাওয়া যায় রুদ্রের গন্ধ। তার ছোট ভাই সুমেল সারাফাতের মত করেই বলতে হয় — আজ আমরা ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু’ হয়ে আছি। ব্যক্তিগত স্বার্থ যেখানে বিপন্ন হতে পারে, সেখানে অন্যায় দেখেও আমরা উটপাখির মতো মুখ ঘুরিয়ে রাখি। আমরা মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়েছি। আমরা যখন চরম অস্থির একটা সময় পার করছি, তখন তোমার কথা বড় বেশি মনে পড়ে।
তথ্যসূত্র
- http://www.banglamail24.com/index.php?ref=ZGV0YWlscy0yMDE0XzAyXzI1LTk1LTc5MDM0
- http://www.kobiruddro.com/
- http://bn.wikipedia.org/wiki/রুদ্র_মুহম্মদ_শহীদুল্লাহ
- http://archive.prothom-alo.com/detail/news/267360
- https://www.facebook.com/Rudrooo/info acne doxycycline dosage
- http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=26850
- http://www.shobdoneer.com/pavelcc/13922
- https://www.amarblog.com/index.php?q=tamosodeep/posts/125804
- http://www.banglamail24.com/index.php?ref=ZGV0YWlscy0yMDE0XzAyXzI1LTk1LTc5MDM0
জন কার্টার বলছেনঃ
কাকা দা চমৎকার। প্রিয় কবি কে চমৎকার একটি লেখা ।অজস্র ধন্যবাদ কাকা দা……
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
capital coast resort and spa hotel ciproভালো আছি
ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো…
তারিক লিংকন বলছেনঃ side effects of quitting prednisone cold turkey
তারুন্যের দ্রোহের এবং ভালবাসার কবিকে নিয়ে দুইটা চমৎকার পোস্ট পড়লাম সভ্যতায়। ভাল লাগলো…
কি হত যদি আরও কিছুদিন বাচতেন রুদ্র তার ক্ষুরধার দ্রোহ আর প্রেম নিয়ে আমাদের মাঝে থাকলে। অতি দ্রুতই চলে গেছেন…
মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলছেনঃ
আমার প্রিয় কবি