শিল্পের আচার্য আমাদের ‘শিল্পাচার্য’ জয়নুল আবেদিন
2791 cuanto dura la regla despues de un aborto con cytotec
বার পঠিতবাংলার প্রকৃতি, জীবনাচার, ঐশ্বর্য, দারিদ্র্য এবং বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহা যিনি তুলি আর ক্যানভাসে বিশ্ববাসীর সামনে মূর্ত করে তুলেছিলেন, সেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মৃত্যুদিবস ছিল গতকাল। তাই তাঁআ মহৎ কর্মজীবনের কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
জয়নুল আবেদীনের পূর্বপূরূষের বাসস্থান ছিল ময়মনসিংহের অন্তর্গত ত্রিশাল থানার দরিরামপুর গ্রামে। তাঁর প্রপিতামহ অবশ্য ময়মনসিংহের কাচিঝুলি গ্রামে বসবাস করতে। পিতামহ ছমিরউদ্দিন ছিলেন ছন ব্যবসায়ী। সন্তানদের সুশিক্ষিত করে তোলার ইচ্ছা থাকলেও অকালে প্রয়াত হওয়ায় তাঁর এই ইচ্ছা পূরণ হয় না। জেষ্ঠ্য পুত্র ৮ম শ্রেনী পাশ করে শিবপুর ইঞ্জইনিয়ারিং স্কুলে ভর্তি হতে চাইলেও অর্থসংকট ও রুঢ় বাস্তবতার জন্য তাঁকে পুলিশ বিভাগের লিটারেট কনস্টেবলের চাকরি নিতে হয়। পরে পুলিশের এস।আই হিসেবে কিশোরগঞ্জ থানায় চাকরি পান এবং স্ত্রী কন্যাসহ কিশোরগঞ্জ থানা সংলগ্ন একটী ছোট বাসভবনে ওঠেন। এই বাসভবনেই ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ২৯শে ডিসেম্বর সকাল সাড়ে আটটায় জয়নুল আবেদীনের জন্ম হয়। নরসুন্দা নদীর তীরবর্তী এই বাসভবনটিতে জন্ম নেওয়া নবজাতকের নাম রাখা হয় টুনু। মা জয়বুন্নেসা ও বাবা তমিজউদ্দিনের তৃতীয় সন্তান জয়নুল আবেদীন। তাঁর বড় ২ বোন ও ছোট ৪ ভাই ছিল যাদের মধ্যে এক বড় বোন ও এক ছোট প্রতিবন্ধী ভাই, চানমিয়া পরবর্তীতে অকালে মারা যান। বাবার চাকরিসুত্রে জয়নুল আবেদীন ময়মনসিংহে চলে আসেন। থাকতে শুরু করেন আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টার এলাকার একটি চৌচালা টিনের ঘরে। ১৯৩২ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির আগ পর্যন্ত এই বাসাটিতে বড় হন জয়নুল আবেদীন।
সেই সময়ে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল ময়মনসিংহ। বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় এ অঞ্চলে বেশ কিছু স্কুল কলেজ, জনকল্যানমূলক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বাংলার খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিক ও গবেষকদের তথ্য, শিল্পকর্মের প্রতিলিপি নিয়মিত ময়মনসিংহের পত্রিকায় প্রকাশ পেত। বাংলা ভূভাগের প্রথম আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার সর্বপ্রথম উদ্যোগটিও নিয়েছিলেন ময়মনসিংহ সুধী সমাজ। সূর্যকান্ত আচার্য ও জাহ্নবী দেবী চৌধুরানী জমিদারদের কাছ থেকে নানারকম সহযোগিতা নিয়ে এ অঞ্চলের শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যয় করতেন। শশী কুমার হেশ, হেমেন্দ্র নাথ মজুমদার ও অতুল বসু ছিলেন ময়মনসিংহের কৃতি সন্তান। ময়মনসিংহের কাচিঝুলির মৌলভী হামিদউদ্দিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়ীয়েছিলেন। বস্তুত কাচিঝুলিতে অবস্থানের সময় এরকম পরিবেশই জয়নুলের শৈল্পিক প্রতিভা বিকাশে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। ছবি আঁকার সাথে জয়নুলের প্রথম সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় ৪ বছর বয়সে। শেরপুরে রামরঙ্গিনী এম ই স্কুলেছবি আঁকা শেখানোড় জন্য একজন ড্রয়িং শিক্ষক ছিলেন। এই স্কুলের বাস্তবানুগ রুপ আঁকবার বিষয়ে বালক বয়সেই জয়নুল আকৃষ্ট হন। এরপর আকুয়া মাদ্রাসায় এলাকায় এসে পড়লে প্রায়ই তাঁকে স্কুল থেকে ফিরে কাঠি দিয়ে পাঠ্যবইয়ের ইলাস্ট্রেশন দেখে রাখাচিত্র আঁকতে দেখা যেত। তবে এই সময়ে বাড়ির লোক তাকে কোনরকম উতসাহ দেয়নি।
জেলা স্কুল ও মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে পড়ার সময় ছবি আঁকার বিষয়ে জয়নুল এত আগ্রহী হয়ে ওঠেন বইয়ের পাতা এমনকি পরীক্ষার খাতায় উত্তর না লিখে তিনি ছবি এঁকে দিয়ে আসতেন। তবে ৭ম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় Bombay Chronicle পত্রিকার আহবানে গলফ খেলা নিয়ে ছবি আঁকা প্রতিযোগীতায় পুস্কার অর্জন করায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ তার এরকম অদ্ভুত আচরণে অবাক হতেন না। বরং তারা তাঁর শিল্পচর্চা বিষয়ে অভিভূত ও আশান্বিত ছিলেন। মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে থাকা অবস্থায়ই সম্ভবত জয়নুল আবেদীন ঠিক করে ফেলেছিলেন যে তিনি আর্ট নিয়ে অড়াশোনা করবেন। এসময়ে তিনি আর্ট স্কুল সম্পর্কে খোঁজখবরও নিতেন। মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে যাওয়ার পথে ‘অগফা’ স্টুডিও পড়োত, যেখানে চিত্রশিল্প বোদ্ধা কিছু ব্যক্তিবর্গ আড্ডা দিতেন। স্টুডিও-এর মালিক প্রেমরঞ্জন দাসের সাথে যোগাযোগ ছিল শিল্পী হেমেন মজুমদার ও প্রহ্লাদ কর্মকারের। প্রেমরঞ্জনের এক ভাইও ছবি আঁকতেন এবং কলকাতা আর্ট কলেজে পড়ালেখা করতেন। ছুটিতে ময়মনসিংহে এরকম কিছু ছাত্র বেড়াতে আসত। তাদের সাথে জয়নুল আবেদীনের যোগাযোগ হত। তাঁদের উতসাহেই ১৯৩০-৩১ সালের দিকে অভিভাবকের অগোচরে জয়নুল আবেদীন কলকাতা আর্ট কলেজ দেখে আসতে যান। cialis online pharmacy forum
এরপর জয়নুল আবেদীনের কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হবার প্রবল ইচ্ছা জাগে। কিন্তু অবসরগ্রহন করা ৩০ টাকা পেনশন পাওয়া পিতার পক্ষে কলকাতা আর্ট কলেজের ব্যয়বহুল পড়ালেখা চালানোর সামর্থ ছিল না। অবশেষে ছেলের ইচ্ছা পূরণের জন্য জয়নুল আবেদীনের মা তাঁর সোনার অলংকার বিক্রি করেন। এই স্বর্নালংকার বিক্রি করে কলকাতায় অবস্থানের খরচ, পড়ালেখা ও যাতায়াত খরচ সংগৃহীত হয়। ঐ সময়ে কলকাতা আর্ট কলেজের পরিবেশ ছিল যথেষ্ট উদার। শিল্পী মুকুল দে কলকাতা আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ (রবীন্দ্রনাথে আশীর্বাদপুষ্ট শিল্পী)। শিল্পচর্চা বিমুখ মুসলিম সম্প্রদায়ের এক তরূন সুদূর ময়মনসিংহ থেকে এসে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করায় অধ্যক্ষ ও অন্যান্য শিক্ষকদের চোখে পড়েন জয়নুল আবেদিন।
পরবর্তীতে জয়নুলের আর্থিক দূরাবস্থার কথা জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানের বিধি ভঙ্গ করে ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের কাছে বৃত্তির সুপারিশ করেন। এরপর সেই বৃত্তির টাকায় পড়ালেখার খরচ চালান জয়নুল আবেদীন। কলকাতা পৌঁছে তিনি প্রথমে তাঁর মামার বাসায় ওঠেন কিন্তু পরে অর্থ সংকট, বাসস্থানের অভাব ও অন্যান্য অনেক কারণে সেই বাসা ছেড়ে দেন। কয়েকরাত আশ্রয়হীনের মত মসজিদ , এখানে সেখানে কাটিয়ে পরে ৩১ নম্বর ওয়ারসেলি স্ট্রিটের একটি মেসে ওঠেন। যদিও প্রথম কিছুদিন এই মেসে খালি ঘর না পেয়ে সিঁড়ির তলায় ফাকা স্থানে ছিলেন। এরকম অসম্মানজনক অবস্থায় দিন যাপনের প্রধান কারণ তখনকার সমাজ ব্যবস্থা। যদিও পড়াশুনার ক্ষেত্রে সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল এবং শিক্ষার প্রসারে হিন্দু মুসলিম বৈষম্য ঘোঁচানোর চেষ্টা চলছিল। কিন্তু একসাথে থাকা খাওয়ার মত মানসিকতা বা পরিবেশ তখনও গড়ে ওঠেনি। আর্ট স্কুলে ভর্তি হবার পর প্রথম ২/৩ বছর জয়নুল ৩১ অয়ারসেলি স্ট্রিটেই ছিলেন। এরপর শিল্পী আনোয়ারুল হকদের ব্যান্ডেল রোডের বাড়ির কাছাকাছি পুরাতন দোতলা বাড়ির নিচতলায় বারান্দায় বাখারি-চাটাঈয়ের ছাপ দেওয়া একটি ঘরে ওঠেন। এখানে বসবাসের সময় আর্ট স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি অভাবী মা-বাবার সংসারের খরচ ও ছোটভাইকে কলকাতা এনে তাঁর পড়ালেখা খরচের ভার নিতে হয়েছিল তাঁকে। এই খরচ চালাতে পড়াশোনার পাশাপাশি হানাফী পত্রিকায় কার্টুন আঁকতেন, ল্যাম্প শেডের নকশা করতেন ইত্যাদি নানা কাজে পরিশ্রম ও সময় দিতেন। কিন্তু এসব বাড়তি চাপ কখনই তাঁর পড়ালেখা বা শিল্পকর্মের ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি। তিনি বরাবরই ক্লাসের সেরা ছাত্র ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই প্রতিকূল পরিবেশের নির্মম বাস্তবতাকে দৃঢ়চিত্তে দ্বিধাহীনভাবে মোকাবেলা করে এগিয়ে চলার এই অভ্যাস পরবর্তী জীবনে তাঁর আদর্শে পরিণত হয়। বাংলার মুসলিম সমাজে শিল্পকলার বিকাশে ধর্মীয় ও সামাজিক বাধা-বিপত্তিকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ছাত্রজীবনের সেই বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন পাওয়া যায়। side effects after stopping accutane
কার উতসাহে, কিভাবে জয়নুল আর্ট কলেজের প্রতি আগ্রহী হলেন সে নিয়ে অনেক বিতর্ক ও রহস্য রয়েছে। কেননা তখনকার যুগে মুসলিম বাঙ্গালীর মনোভাব ছিল খুবই সংকীর্ণ। ধর্মীয় উত্তরাধিকারে পাওয়া শিল্প-কর্মের প্রতি অনীহা ও বিদ্বেষ তখনকার সমাজে চরমভাবে পরিলক্ষিত হত। এমনকি সাংস্কৃতিক এসব চর্চাকে হিন্দুয়ানী ছাপ মনে করা হত। এরকম একটি পরিবেশে বেড়ে ওঠা জয়নুল কিভাবে শিল্পের প্রতি প্রবল আকর্ষন অনুভব করেন তা সত্যিই বিস্ময়ের বিষয় ।
জয়নুল তাঁর বাল্যকাল ও কৈশরে যেসব শিল্পীর সান্নিধ্য পেয়েছেন তারা সবাই পশ্চিমা বাস্তানুবেগ ধাঁচের ছাপ ছবি ও তেলচিত্রের শিল্পী ছিলেন। এসব বাস্তবানুগ চিত্র এঁকে তাঁর আর্থিক সমৃদ্ধি ও খ্যাতি দুইই লাভ করেছিলেন। তাঁরা রাজদরবারের শিল্পীও ছিলেন। যদিও তখন এই রীতির বাইরে সম্পূর্ণ নতুন, নব্যবঙ্গীয়ধারার শিল্পীও ছিলেন এবং তারাও যথেষ্ট খ্যাতিমান ছিলেন তথাপি জয়নুল তাদের শিল্পচর্চার রীতির প্রতি আগ্রহী না হয়ে তেলচিত্রই বেছে নেন। ৩য় বর্ষে উত্তীর্ণ হবার পর তাই মুকুল দে’র পরামর্শ উপেক্ষা করে তিনি ‘তেলরং-এর ছবি শিখতে ‘ফাইন আর্ট’ বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তীতে এই বিভাগটি ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং নামে পরিচিত হয় এবং এখানে শুধু ধ্রুপদী ঢং-এর তৈলচিত্রই শেখানো হয়। এই বিভাগে ভর্তি হবার সুবাদে প্রতিকৃতি আঁকায় দক্ষ ও খ্যাতিমান শিল্পী অতুল বসুর সাথে তাঁর সখ্যতা তৈরি হয়, অতুল বসুর স্টুডিও-তে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন এবং পরবর্তীতে অতুল বসুর স্টুডিও-এর কাছাকাছি নিজের স্টুডিও তৈরি করে সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন। ইলাস্ট্রেশন আঁকার দক্ষতা কিংবা প্রতিকৃতি আঁকায় বিপুল দীক্ষা থাকা সত্তেও তিনি ইলাস্ট্রেটর বা পোট্রেইট পেইন্টার হিসেবে নিজের পরিচিতি তৈরি না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি লক্ষ্যে অগ্রসর হন। জয়নুলের উদ্দেশ্য ছিল মূলত পাশ্চাত্যের শিল্পকৌশল ভালভাবে রপ্ত করে তার চর্চায় জীবিকা নির্বাহ করা এবং পাশাপাশি নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলা। জীবন ও প্রকৃতিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার প্রবণতা তাঁর ছেলেবেলা থেকেই গড়ে ওঠে এবং সেই বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর লেখা ‘ আমি যখন ছোট ছিলাম’ শীর্ষক স্মৃতিকথায়। ছাত্রবস্থায় তাঁর আঁকা শম্ভুগঞ্জ (কালি ও কলম, ১৯৩৩), বাঁশের সাঁকো ( জলরং, ১৯৩৩), পল্লীদৃশ্য ( ১৯৩৪), ফসল মাড়াই (তেলরং, ১৯৩৮), মজুর (১৯৩৫) ইত্যাদি চিত্রকর্মে এসব পর্যবেক্ষণের প্রকাশ ঘটে। সেসময়ের একাডেমিক শিক্ষায় পুরোধা শিল্পীদের আঁকায় প্রাধান্য পেত নগ্নিকা, ফরমাশে আঁকা প্রতিকৃতি অথবা রোমান্টিক আবেগে আপ্লুত দৃশ্যকল্প। কিন্তু জয়নুলের ছবি এসব সীমা অতিক্রম করে ফুটীয়ে তুলেছিল গ্রামবাংলার দৃশ্য ও জীবন যার আড়ালে ছিল প্রত্যক্ষ জগতের অনুভব , স্বভাবনিষ্ঠতা ও গভীর ঐতিহ্যবোধ।
ছাত্রাবস্থায় এরকম পরিবর্তিত চেতনার কারণ খুব সম্ভবত তখনকার আর্ট কলেজের পরিবেশ। আর্ট কলেজে তখন মুকুল দে’র অধ্যক্ষ পদে যোগদানই একটি প্রথা বিরোধী ঘটনা। এক দিক থেকে তিনি ঐ স্কুলের প্রথম ভারতীয় অধ্যক্ষ, অন্যদিকে তখনকার শিক্ষাপদ্ধতির বিরোধীতাকারী নব্যধারার চিত্রশিলী। তিনি যথেষ্ট পরিমাণে পাশ্চাত্যের আধুনিক শিল্পকর্ম সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাঁর শিল্পকর্মে তিনি বিশ্ব ও স্বদেশের এক মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। সেই আদর্শ উদ্বুদ্ধ করে জয়নুল আবেদীনকে। আর্ট স্কুলের শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী শান্তিনিকেতন কলাভবন, কলকাতার আর্ট স্কুল ও লন্ডনের স্লেড স্কুলে শিক্ষাপ্রাপ্ত। অন্য একজন শিক্ষক মণীন্দ্রভূষন গুপ্ত ছিলেন শিল্পকতলার ইতিহাস ও তত্ত্বজ্ঞান বিষয়ে পন্ডিত ও সুলেখাক। এই দুই শিক্ষকের সান্নিধ্যে ততকালীন আর্টকলেজের ছাত্ররা সমকালীন বিভিন্ন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।
মুকুল দে ও রমেন্দ্রনাথের বিভিন্ন ছবির বিষ্পয়গত প্রনোদনা জয়নুলকে প্রভাবিত করেছিল। রমেন্দ্রনাথের কাছ থেকে তিনি ছাপচিত্র শিখেছিলেন এবং মুকুল দে নিয়মিত তাঁর স্কেচ খাতা দেখতেন। ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ বর্ষের শিক্ষক প্যারিস ফেরত আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির শিল্পী বসন্ত গাঙ্গুলীর জলরঙ্গ ব্যবহারের কৌশল জয়নুল আবেদীনকে আকৃষ্ট করে।
দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রত্বকালে ‘বাঁশের সাঁকো’ শীর্ষক জলরঙ্গটি বিশুদ্ধ স্বচ্ছ পদ্ধতি অনুসারে আঁকা। কিন্তু শেষ বর্ষে এসে আঁকা অন এন্ড ওভার দি ব্রক্ষ্মপুত্র শীর্ষক জলরং চিত্রমালায় ইম্প্রেশনিস্ট ধাঁচ দেখা দিল। জল ও তুলি-কালি মাধ্যম দুটিই ছাত্রাবস্থায় জয়নুলের ছবি আঁকার প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে। তেলরং-এর প্রতি আগ্রহ কমে আসতে শুরু করে এসময়। এই বৈশিষ্ট্যটি নব্যবঙ্গীয় শিল্পীদের মধ্যে দেখা দেয়।
ছাত্র জীবনে জয়নুল আবেদিন কঠোর পরিশ্রমী এবং মেধবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ৫ম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় অধ্যক্ষ মুকুল দে তাঁকে আর্ট স্কুলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেবার অভূতপূর্ব কাজটি করেন। অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান জয়নুল আবেদিন। ১৯৩৮ সালে চূড়ন্ত পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে তিন বছরে বৃত্তি পেলেও দ্বিতীয় চিশ্বযুদ্ধের জন্য তা স্থগিত হয়ে যায়। এরর আর্ট স্কুলের শিক্ষক আব্দুল মঈন মারা গেলে সেই পদে অধিষ্ঠিত হন জয়নুল আবেদিন এবং দেশভাগের আগ পর্যন্ত সেই পদেই কর্মরত ছিলেন। rx drugs online pharmacy
শিক্ষক জীবনেও তিনি ইলাস্ট্রেশন এবং প্রচ্ছদ অংকনের সাথে জড়িত ছিলেন। কম খরচে ছাপার জন্য কাল রঙের নানারকম প্রয়োগ তাঁর ছবিতে পাওয়া যায়। চল্লিশের দশকে এ ধরনের কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তার বহিপ্রকাশ ঘটে পরবর্তী মৌলিক ছিত্রকর্মগুলোতে। সেই চিত্রকর্মগুলো ক্রমেই বাহুল্যবর্জিত, সংসিদ্ধ, জটিলতা মুক্ত ও রেখাপ্রধান হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখে ১৯৪৩ এর সিরিজ চিত্রকর্ম দূর্ভিক্ষ। এই সিরিজের একটি সুন্দর বর্ননা ফুটিয়ে তুলতে আমি সংগৃহীত অংশটি অবিকৃতভাবে তুলে দিচ্ছি (একইসাথে লেখকের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি)। ramipril and hydrochlorothiazide capsules
“তেতাল্লিশের কলকাতা মহানগরে ঘটেছে মানবতার চরম অবমাননা। ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট থেকে খাদ্যান্বেষণে তীব্র প্রতিযোগিতা চলেছে মানুষ আর কুকুরের মধ্যে। ঊনত্রিশ বছর বয়স্ক জয়নুল এ রকম অমানবিক দৃশ্যে প্রচণ্ডভাবে মর্মাহত হন, আতঙ্কে শিউরে ওঠেন, আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কিন্তু সে আবেগকে তিনি কাজে লাগান সেসব দৃশ্যাবলির শিল্পরূপ দিতে। অন্যভাবে বলা যায় সেই আবেগই তাঁকে তাড়িত করে, বাধ্য করে অমানবিক পরিস্থিতির এক মানবিক নির্মাণে। তিনি রাতদিন শুধু কলকাতার দুর্ভিক্ষের সেসব নারকীয় দৃশ্যাবলির স্কেচ করতে থাকেন।জয়নুল তখন আর্ট স্কুলের একজন শিক্ষক, তাঁর আয় সামান্য। দুর্ভিক্ষের বাজারে উন্নতমানের শিল্পসামগ্রী তখন যেমন ছিল দুর্লভ তেমনি দুর্মূল্য। সে কারণে তিনি বেছে নেন শুধু কালো কালি আর তুলি। শুকনো তুলিতে কালো চীনা কালির টানে স্কেচ করতে থাকেন অতি সাধারণ সস্তা কাগজের ওপর। ব্যবহার করেছেন কার্টিজ পেপার। এসব কাগজ ছিল ঈষত্ পীত বর্ণের। এমনকি তিনি প্যাকেজিং কাগজও ব্যবহার করেছেন। সাধারণ স্বল্পমূল্যের এসব অঙ্কন সামগ্রী ব্যবহার করে তিনি যে শিল্প সৃষ্টি করলেন তাই পরিণত হলো অমূল্য সম্পদে। এমন এক অসাধারণ শক্তিশালী অঙ্কন শৈলীর মাধ্যমে তিনি দুর্ভিক্ষের করুণ বাস্তব দৃশ্যাবলি চিত্রায়িত করলেন, যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত উপমহাদেশের চিত্র ঐতিহ্যে ছিল না। জয়নুলের দুর্ভিক্ষের স্কেচগুলো দেখার পর ‘ভারতের নাইটিঙ্গেল’ শ্রীমতি সরোজিনি নাইডু মন্তব্য করেছিলেন, “সব চাইতে মর্মস্পর্শী ও আবেগময় বর্ণনার চাইতেও তাঁর এসব ছবির আবেদন অধিকতর।” ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষ নিয়ে সে বছরই কলকাতায় যে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল তাতে জয়নুল তাঁর দুর্ভিক্ষ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।”
জয়নুলের পাশাপাশি একই সময়ে চিত্তপ্রসাদ, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ হোড় প্রমূখ শিল্পী একইভাবে আমাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ছবি আঁকায় আত্মনিবেদন করেছিলেন। সামাজিক আন্দোলন থেকে জেগে ওঠা এই ধারাকে আজও কিছু কলাতত্ত্ববিদ চল্লিশের আধুনিক ধারা এবং জয়নুল আবেদীনকে তার রুপকার মনে করেন। scary movie 4 viagra izle
‘দুর্ভিক্ষ’ সিরিজ ছবিটির সুবাদে ১৯৪৪ সালের সমকালীন চিত্রশিল্পীদের মাঝে মাত্র ত্রিশ বছরের জয়নুল অনেক উঁচু স্থান অর্জন করেন। students’ federation -এর উদ্যোগে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য বেঙ্গল পেইন্টার্স টেস্টিমনি নামক একটী অ্যালবাম প্রকাশ পায়। যেখানে মাত্র তিনজন শিল্পীর জন্য একাধিক পৃষ্ঠা বরাদ্দ ছিল। জয়নুল আবেদীন তাঁদের একজন ছিলেন। এই সাফল্য কিংবা খ্যাতির পিছুটান ইত্যাদি ;দূর্ভিক্ষ চিত্রমালার আদর্শগত ও শৈলীগত দিককে পরবর্তীতে জয়নুলের অন্যান্য কাজে স্থায়ী বৈশিষ্ট্যে পরিণত করে। এই বৈশিষ্ট্যবলে তাঁর ছবি মানব-মানবীরা নিম্নবিত্ত অভাবী শ্রমজীবী সমাজের প্রতিনিধি হয়েও কোন অতিজাগতিক শক্তির করূণা প্রার্থনাকারী কিংবা পরাজিত, আত্মসমর্পিত মানুষ ছিলেন না। মৃত্যু পথযাত্রী মানুষটিও হয়ত শেষ মুঊর্ত পর্যন্ত বাঁচার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। জয়নুলের ছবিতে গুরুভার জুড়ে, দ্রাঘিষ্ট করে আঁকা হয়েছে এসব মানুষের ছবি। ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে এসব মানুষের পরিচয় পাওয়া গেছে ‘নিজেই নিজের নিয়ন্তা’ হিসেবে, কখনও বা মহাকালেরও।
‘দূর্ভিক্ষ’ ছবিটিতে আরো একটী বিষয় লক্ষ্যণীয় তা হল রেখার আধিপত্য। সল্প রঙের ব্যবহজারে মৌলিক রঙের স্বশাসিত চরিত্র বজায় রেখে পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র ও সুপষ্ট করার জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে এই রেখাচিত্র। প্রাচ্য শিল্পাদর্শজাত বৈশিষ্ট্য এটি। ১৯৪৩-এর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু করে ১৯৪৪-এর শেষ পর্যন্ত প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কলকাতার দৈনিক দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায়, কমিউনিস্ট পার্টির সাপ্তাহিক জনযুদ্ধ এবং পিপল্স ওয়রে আবেদিন সাহেবের দুর্ভিক্ষ-প্রপীড়িত নর-নারী-শিশু আর সঙ্গী কুকুর-কাকের স্কেচের প্রতিলিপি ছাপা হয়েছে।
চল্লিশের দশকের শেষের দিকে জয়নুলের ছবিতে কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। শ্রমজীবী মানুষের পরিবর্তে মধ্যবিত্ত আয়েশী জীবন_ ছবি আঁকার উপকরণ হিসেবেও কালি-তুলি-জলরঙ্গের পরিবর্তে অভিজাত তেলরঙ্গের ব্যবহার দেখা যায়। ধারনা করা হয়, ১৯৪৬ সালে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল ও শিক্ষিত জাহানারা বেগমকে বিয়ে করার পর এবং ‘দূর্ভিক্ষের চিত্রমালার আঁতুরঘর’ ১৪ নম্বর সার্কাস রোডের এক কামড়ার বাসা ছেড়ে তাড়কদত্ত রোডের উন্নত ফ্ল্যাটে ওঠা তাঁর ছবির বিষয় পরিবর্তনের পেছনে বিস্তৃত এক প্রভাব পালন করেছে।
৪৬’এর সাম্রদায়িক দাঙ্গা সব স্তরের মানুষের মধ্যেই এক স্বজাত্যবোধ জাগ্রত করেছিল। জয়নুলকেও তাই এমনই এক চেতনা পরবর্তীতে আচ্ছন্ন করে ফেলে যে বাঙ্গালী মুসলমান কখনো স্বচ্ছল জীবনযাপন করেনি, করেনা। ক্ষমতাহীন-দারিদ্রের দংশন তারা ভোগ করেছে সমগ্র অস্তিত্ত্ব দিয়ে। ১৯৪৬ সালের শেষের দিকে কলকাতা ইসলামীয়া কলেজে মুসলিম শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনীতে তাই জয়নুলের অংশগ্রহন দেখা যায়। দেশভাগের পর পিছিয়ে থাকা এই অঞ্চলের মুসলমানদের জন্য ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হলে সেখানে শিল্প সাহিত্য শিক্ষা সংস্কৃতি বিকাশের এক গুরুদায়িত্ব পেয়ে জয়নুল আবেদীন সস্ত্রিক ঢাকায় চলে আসে। এরপর আরমানিটলায় অবস্থিত একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। একইসাথে আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ চালিয়ে যান। ১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাসে এসকল কার্যক্রম চলতে থাকায় অবস্থায় জয়নুল আবেদীন করাচী চলে যান। করাচী থেকে ফিরে ১৯৪৯ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী আর্ট কলেজে যোগ দেন।
যদিও জয়নুলের গড়ে তোলা আর্ট ইন্সটিটিউটটি ধর্মীয় আদর্শের উপর ভিত্তি করে এবং পাকিস্তান সরকারে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা নিয়ে তৈরি তথাপি এই ইন্সটিটিউটে ধর্মীয় সংকীর্ণতার লেশমাত্রও ছিল না। এমনকি এও সংকীর্ণতা আবেদিনের নিজস্ব চিত্রশৈলীতেও প্রকাশ পায়নি।
১৯৫১ সালে কমনওয়েলথ বৃত্তির অধীনে স্লেড স্কুলে শিক্ষা গ্রহনে যান। এ সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জাদুঘর ও শিল্প প্রদর্শনী দেখেন, পরিচিত হন সেখানকার খ্যাতিমান অনেক শিল্পীদের সাথে। এই অভিজ্ঞতা তাঁর পরবর্তী চিত্রকর্মকে ব্যপকভাবে প্রভাবত করে। ১৯৫২ সালের জানুয়ারী মাসে (১৪-২৬ জানুয়ারী পর্যন্ত) জয়নুলের কাজগুলো নিয়ে একক প্রদর্শনী হয় বার্কলেতে এবং এই প্রদর্শনী নিয়ে প্রকাশিত পুস্তিকায় পাশ্চাত্যের শিল্প সমালোচকগণ নিবন্ধ লেখেন। এতে জয়নুলের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। এরপর ইউরোপ থেকে দেশে ফিরে আসলে তখনকার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাঁর পরবর্তী বেশ কয়েকটি ছবিতে লোকঐতিহ্য বিশেষভাবে প্রকাশ পায়। বস্তুত ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালের রাজনৈতিক আন্দোলন মানুষের মধ্যে ধর্মীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে বাঙ্গালি পরিচয় স্থান পেয়েছিল। এই চেতনার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় জয়নুলের চিত্রকর্মগুলোতেও। একইভাবে এই ছবিগুলোতে পাওয়া যায় মৌলিক রঙের সমতল প্রয়োগ এবং রেখার আলংকারিক আয়োজন। can you die if you take too much metformin
১৯৫৫ সনে সমালোচক রিচার্ড উইলসন জয়নুল সম্পর্কে লেখান, ‘এক হিসেবে বলতে হয় এসব কাজ পাক-ভারতীয় চিত্রকলায় আধুনিক যুগে উত্তরণের সূচনা করেছেন। ভারত ও পাকিস্তানের তিনিই প্রথম শিল্পী যিনি অত্যন্ত সফলভাবে বিমুর্ত চিত্রকলার টেকনিক ও স্থানীয় ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটাতে পেরেছিলেন, অনুকরণের ওপর মোটেও গুরুত্ব দেননি’।
লোকশিল্পকে সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৪ ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা আর্ট ইন্সটিউটে লোকশিল্পের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এসময়ে লোকশিল্প কেন প্রয়োজনীয় তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে প্রস্তাবনামূলক নিবন্ধ প্রকাশ করা হয় এবং পরে এটি পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়। এসবের পিছনে জয়নুলের মূল লক্ষ্য ছিল সমকালীন শিল্পীদের পাশ্চাত্যের অনুসারী না করে নিজ ঐতিহ্যের রসদ গ্রহনে উতসাহী করে তোলা। অনেক পরে তিনি আর্ট ইন্সটিউটের অংশ হিসেবে মৃৎশিল্পের একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালু করেন, লোকশিল্প সংগ্রহশালা ও কারুশিল্প বিভাগ তৈরির সূচনা করেন।
৫৪’এর পরবর্তী সময় জয়নুল আবেদিন ব্যয় করেছিলেন আর্ট ইন্সটিটিউটের মান উন্নয়ন, ছাত্র ও শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি যুগোপযোগী করে তোলা, গ্রন্থাগার তৈরি, আর্ট ইন্সটিটিউটের জন্য মনোজ্ঞ ভবন নির্মাণ ইত্যাদি কাজে। এভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে শিল্পের প্রতি অনুরক্ত করতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এসম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আনি নিজে শিল্পকর্ম করে যতটা আনন্দ পাই তার চেয়ে বেশি আনন্দ পাই শিল্পকে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে দেখলে’।
১৯৬৯ সালে জয়নুল আবেদিন ৬৫` ফুট দৈর্ঘ্যের বিশাল ম্যুরাল সদৃশ চিত্রকর্ম নবান্ন আঁকেন। যখন এই ছবিটি আঁকেন তখন বাঙ্গালি স্বাধিকার আদায়ের জন্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিভেদ ঘুচিয়ে বিশাল গণুভ্যত্থানে অংশ নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটই তাঁর চিত্রকর্মের বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে দেয়। নবান্ন’ চিত্রটিতে তিনি তুলে ধরেন কৃষকের দুঃখ কষ্ট স্বপ্নের সামগ্রিক রুপ। ঐশর্যশালী সূখী জীবন কিভাবে ঔপোনিবেশিক শোষনে নিষ্পেষিত হয়ে দৈন্যের চরম সীমায় পৌঁছে তাঁর ইতিহাসও ফুটে ওঠে এই চিত্রে।
নবান্ন’ চিত্রের একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক হল এই ছবিটিকে ঐক্যের দলিলে পরিণত করার জন্য এর ফাঁকা স্থানগুলোতে প্রদর্শনীতে আসা দর্শকদের সাক্ষর নিয়ে রাখা হয়। এভাবে ছবিটি ‘উভয় বাংলার আধুনিক চিত্রকলার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যুক্ত করে’। এর আগে অবশ্য ১৯৫৭ সালে ‘নৌকা’ চিত্রটিতে জলরঙ্গের পশ্চাদপটটি দর্কদের প্রদত্ত সাক্ষরে ভরে তুলেন এবং উপমহাদেশে মিথস্ক্রিয়া শিল্পের (interactive art) সূচনা করেন।
১৯৭০ সালে panoramic view তে ৩০`ফুট দীর্ঘ মনপুরা-৭০ চিত্রকর্মটি তৈরি করেন জয়নুল আবেদিন। বিরাট উপকূলীয় অঞ্চলে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক প্রলয়ের সার্বিক উপলব্ধি উঠে এসেছে এই ছবিটি। গোলাকার গ্যালারি প্রাচীরের অন্তঃপরিধি সংলগ্ন করে উপস্থাপিত এ চিত্রটি হেঁটে হেঁটে পর্যবেক্ষণের সময় দর্শকদের মনে সরেজমিনে বীভৎস পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র ফুটিয়ে তোলে। শিল্পকর্ম ও দর্শক এ দুয়ের মাঝে ‘শূণ্য তলাট’-এর সম্পর্ক তৈরিকারী আজকাল যে ‘ইন্সটলেশন’ধর্মী কাজগুলো দেখা যায় তার সঙ্গে অর্ধশতাব্দী আগে জয়নুলের করা শিল্পকর্মের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
১৯৭০ সালে ফিলিস্তিনের যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করে ও ১৯৭১ সালে এদেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হলে জয়নুল সেসব নিয়েও বিভিন্ন চিত্রকর্ম তৈরি করেন।মুক্তিযুদ্ধ। নিজ দেশে বন্দি জীবন কাটাতে বাধ্য হলেন জয়নুল। পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালেন কিন্তু সর্বক্ষণই তাঁর দুর্ভিক্ষের সময় আঁকা চিত্রমালা আঁকড়ে ধরে রাখলেন। মুক্তিযুদ্ধ জয়নুলের মনে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তখন পাক সরকারের দেওয়া হিলাল-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন। এএ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি তাঁর আন্তরিক সমর্থন প্রকাশ পায়। তবে এ সময়ে নানা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য তাঁর কাজগুলোর পরিমাণ সীমিত করে দেয়।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকারে অনুরোধে সংবিধানের হাতে লেখা অনুলিপি তৈরি, অলংকরণ ও তত্ত্বাবধানের কাজ করা, প্রতি অনুচ্ছেদে একটি করে রেখাচিত্র আঁকা, বাংলা একাডেমির সভাপতিত্ত্বের দায়িত্ত্ব গ্রহন, ১৯৭৩ সালে সমকালীন বাংলাদেশ-ভারতের শিল্প প্রদর্শনীর প্রতিনিধিত্ব করা, ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা ও সোনারগাঁইয়ে লোকশিল্প জাদুঘর নির্মাণের গুরুভার- এসব কাজের চাপ একসাথে বহন করতে হওয়ায় সাময়িকভাবে তার সৃষ্টিকর্মের পরিধি হ্রাস পায়।
ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পরার পর তাঁর আঁকা কিছু চিত্রকর্মে মানসিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার দিক প্রকাশ পায়। যদিও হতাশার কোন স্থান তাঁর চেতনার মাঝে ছিল না। তাই মৃত্যুর আগে চিত্রকর্ম ‘দুই মুখ’-এও রঙ ও রেখার স্বতস্ফুর্ত প্রয়োগে প্রত্যক্ষ, প্রণবন্ত ও বলিষ্ঠ প্রয়োগ দেখা যায়। তাঁর মৃত্যুর মাত্র ক’দিন আগে হাসপাতালে শুয়ে তিনি তাঁর নিজস্ব ঢঙে শেষ ছবিটি আঁকেন। বলিষ্ঠ মোটা রেখায়, কালো কালি আর মোম ব্যবহার করে।
দীর্ঘ ছ’মাস ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগে ১৯৭৬ সালের ২৮ মে মাত্র ৬২ বছর বয়সে এদেশের এক মহান শিল্পী জয়নুল আবেদিন মৃত্যুবরণ করেন।
জয়নুল আবেদিন ছিলেন তিন পুত্রের জনক। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সাইফুল আবেদিন (টুটুল) স্থপতি। দ্বিতীয় পুত্র খায়রুল আবেদিন (টুকুন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে এম.এ এবং কনিষ্ঠ পুত্র মঈনুল আবেদিন (মিতু) প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পানি-সম্পদ প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক।
তাঁর অসাধারণ শিল্প-প্রতিভা এবং তাঁর মহত্ মানবিক গুণাবলির জন্যে তিনি দেশে ও বিদেশে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, সরকার এবং জনগণের কাছ থেকে পেয়েছেন সম্মান। রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে তিনি অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। বাংলাদেশে চারুকলার উন্নয়নে জয়নুল আবেদিন তাঁর অবদানের যথার্থ স্বীকৃতি পেয়েছেন ‘শিল্পাচার্য’ সম্বোধনে। এ শিরোপা তাঁকে উপহার দিয়েছে তাঁরই দেশের গুণমুগ্ধ ও কৃতজ্ঞ জনগণ।
তারিক লিংকন বলছেনঃ
illustration শব্দের বাংলা ‘চিত্রালংকরণ’ করলে ভাল হত!! আর ইম্প্রেশনিস্ট আর্টিস্ট বা
প্রতিচ্ছায়াবাদী বা প্রতীতিবাদী (impressionist) সম্পর্কে কিছু সাম্মক আলোচনা দরকার ছিল!! যাহোক পোস্টটি অসাধারণ…
এক যায়গায় ‘শিল্পাচার্য’কে নিয়ে এতো তথ্য বাংলায় কোন সাইটেই একসাথে নাই! আপনার লিখনিও অনবদ্য… দারুণ লাগলো!!
:-bd :-bd :-bd :-bd :-bd =D> =D> =D> =D> viagra masticable dosis
শিল্পের আচার্য আমাদের ‘শিল্পাচার্য’কে স্যালুট ^:)^ ^:)^ ^:)^ ^:)^ ^:)^ ^:)^
স্পীকার বলছেনঃ
:-bd :-bd :-bd :-bd
অংকুর বলছেনঃ
:-t :-t অসাধারন পোস্ট :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
অসাধারণ লিখেছেন মাশিয়াত! সত্যিই উকিতেও জয়নুল আবেদীনকে নিয়ে এত তথ্য নেই যতটা আপনি একটা ব্লগ পোস্টেই জুড়ে দিয়েছেন!
নতজানু শ্রদ্ধা রইলো শিল্পাচার্যের প্রতি।
স্পীকার বলছেনঃ
উকিতেও জয়নুল আবেদীনকে নিয়ে এত তথ্য নেই যতটা আপনি একটা ব্লগ পোস্টেই জুড়ে দিয়েছেন! :-bd :-bd :-bd :-bd
নীহারিকা বলছেনঃ
অনবদ্য পোস্ট
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
soulcysters net metforminধন্যবাদ
স্পীকার বলছেনঃ
জয়নুল আবেদীনের প্রতি শ্রদ্ধা :-bd :-bd :-bd :-bd :-t :-t :-t
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
লাল সালাম
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ viagra generico prezzo farmacia
malaria doxycycline 100mgএক কথায় অসাধারন। clomid trying to get pregnant