দেবোফোবিয়া ২
272
বার পঠিতরিমঝিম মেঝেতে বসে এক মনে জলরঙে ছবি আঁকছে। প্রজাপতির ছবি, ঘাসফড়িঙের ছবি। বিপিনবাবু চুপিচুপি মেয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকা দেখছেন। এতটুকু মেয়ে কী সুন্দর ছবি আঁকে ভাবা যায়না। রিমঝিমের বয়স এখন মাত্র চার। কী ফুটফুটে দেখতে আর কী যে চটপটে কথাবার্তা। আজকাল ওর কথার তোড়ে টেকা দায়। সবকিছুতেই প্রশ্ন জুড়ে দেবে কেন এবং কীভাবে এই দু শব্দে। রিমঝিম ছবি থেকে মাথা না তুলেই বললো, বাবা আমি কিন্তু জানি তুমি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে। তুমি কিন্তু এখন আমায় চড়কে ভড়কে দিতে পারবে না। রিমঝিম সেই আড়াই বছর বয়সে যখন থেকে আধো আধো কথা বলে তখন থেকেই ‘চমককে ‘ বলে ‘চড়কে ভড়কে ‘। বিপিনবাবু একগাল হেসে বললেন, না মা কুটকুট তোমায় আমি চড়কে ভড়কে দিতে আসিনি। দেখো তোমার জন্য আমি কী এনেছি। বিপিনবাবু আদর করে মেয়েকে কুটকুট বলে ডাকেন। রিমঝিম মাথা না ঘুরিয়েই বলল, না তুমি এত্তগুলা পঁচা। তুমি আমার জন্য ক্যাডবেরি আননি আর তোমার বাড়ি ফেরার কথা বিকেলে কিন্তু এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তাছাড়া আমি কাজ করছি তুমি তা দেখতে পারছো না?
বিপিনবাবু বেশ আহ্লাদি গলায় বললেন, এই যে তোমার ক্যাটবেরি। আমার দিকে তাকাও মা কুটকুট। রিমঝিম তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, কৈ দাও আমার চকলেট। আর তোমার জন্য এইটুকু সময় ঝটপট বলে ফেল। রিমঝিম আঙ্গুলে করে সময় দেখিয়ে দিল। বিপিনবাবু একটা নীল ফ্রক ব্যাগ থেকে বের করে বলল, এটা তোমার জন্য। রিমঝিমের খুশি দেখে কে? সে ছবি আঁকা ফেলে বাবার কাছ থেকে জামা নিয়ে কিচেনের দিকে দিল ছুট। বাবার সাথে আর কোনো কথা নেই। অনন্যাদেবী চা করছিলেন রিমঝিম কিচেনে ঢুকেই মায়ের আঙ্গুলে ধরে টানতে টানতে চিৎকার করে বললো, মা দেখ বাবা আমার জন্য কী এনেছে? অনন্যাদেবী মেয়ের হাতে নতুন জামা দেখে বললেন, সুন্দর তো! বাবাকে থ্যাংকস দিয়েছো? রিমঝিম দুদিকে মাথা দুলিয়ে বলল, না ভুলে গেছি। এক্ষুনি দিচ্ছি কিন্তু মা এ নতুন জামা কাকুর বিয়ের জন্য? গত বছর রিমঝিমের কাকার বিয়ে হয়েছে। সেই বিয়েতে সে অনেকগুলো নতুন জামা পেয়েছে। সেই থেকে নতুন জামা পেলেই সে ভাবে কাকুর বিয়ের জন্য নতুন জামা। অনন্যাদেবী হেসে বললেন, না মা এ জামা পূজোর জন্য। সামনে তো কালী পূজো। রিমঝিম যেন সব বুঝে গেছে এমন ভাব নিয়ে দিল ছুট বাবাকে থ্যাংকস বলতে। বিপিনবাবু ফ্রেস হয়ে টিভি অন করে বসে আছেন। রিমঝিম নতুন জামা রেখে এসে বাবার কোলে বসে আদুরে গলায় বাবাকে থ্যাংকস দিয়ে টিভি দেখতে লাগলো। acquistare viagra in internet
বিপিনবাবুর মনটা ভরে গেল মেয়েটা এত দুষ্টু আর মিষ্টি হয়েছে যে বলার বাইরে। বুদ্ধিও বেশ। টিভিতে ডিসকভারি চ্যানেলে একটা লোকের ফড়িং ধরে কাঁচা খেয়ে ফেলা দেখে রিমঝিম বলল, ইস লোকটা একেবারে রাক্ষস! আচ্ছা বাবা ঐ লোকটা ঐভাবে ফড়িং খাচ্ছে কেন? ওকে বুঝি কেউ খেতে দেয় না? বিপিনবাবু এর কী উত্তর দেবে ভেবে পেল না। ওদিকে রিমঝিমের প্রশ্নের শেষ নেই। সে আবার প্রশ্ন করলো, আচ্ছা বাবা কালী পূজো কী? বিপিনবাবু এ প্রশ্নে খুশী হলেন। যাক এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া যাবে। আর মেয়েটাও ঠাকুর দেবতা সম্পর্কে জানবে। বিপিনবাবু বলতে শুরু করলেন, কালীপূজো হচ্ছে মা কালীকে খুশী করার জন্য বিভিন্ন খাবার, ধূপ -আগরবাতি -মোমবাতি এবং আরো অনেক কিছু দিয়ে তার আরাধনা করা। বিপিনবাবু কথা শেষ করতে না করতেই একরাশ প্রশ্ন বেরিয়ে এলো রিমঝিমের মুখ থেকে। কালীকে মা বলা হয় কেন? তাকে খুশী করতে হয় কেন? এতকিছু দিয়ে খুশী করার কারণ কী? আরাধনা আবার কী? বিপিনবাবু বেশ জ্বালায় পড়লেন। এত প্রশ্নের উত্তর দেয়া খুবই যন্ত্রণাদায়ক। তবু তিনি বুঝিয়ে বলতে লাগলেন। মা কালী হচ্ছেন শক্তির দেবী। তিনি আমাদের রক্ষাও করেন। আর এজন্য তাকে মা বলা হয়। তাকে খুশী করতে পারলেই মানুষ বিপদ আপদ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে, সুখে থাকতে পারবে, স্বর্গে যেতে পারবে। এরপর আরো ভয়াবহ প্রশ্ন এলো ছোট্ট রিমঝিমের কাছ থেকে। স্বর্গ কী? দেবী কী? আর যাকে মা বলা হয় তাকে কেন এত কিছুর বিনিময়ে খুশী করতে হবে? রিমঝিমের মাকে তো সে শুধু একটা চুমু দিলেই সে খুশী হয়ে যায়। রিমঝিমের উপর মা রাগ করলেও ঐ চুমুতেই তার রাগ কমে যায়। আর মা কালী মাই বা হলেন কীভাবে? এতসব প্রশ্নের তোড়ে বিপিনবাবু খেই হারিয়ে ফেলে। সে হঠাৎ রেগে যান। তিনি ধমক দিয়ে বলেন, এত কিছু তোর এখনই জানতে হবে না। সামনে পূজোর দিন দেখিস কালীপূজো কেমন? রিমঝিমের মন খারাপ হয়ে যায়। সে জানে বাবা একমাত্র রেগে গেলেই তাকে তুই করে বলেন। কিন্তু বাবা এই ছোট্ট প্রশ্নে কেন রেগে গেলেন তা ছোট্ট রিমঝিম বুঝেনা। বাবাকে তো সে প্রতিদিন কত প্রশ্নই করে। সব প্রশ্নের জবাব বাবা দিতে না পারলেও কখনো এমনভাবে রেগে যায়না। আজ কী হল? রিমঝিম মন খারাপ করে ঘর থেকে বেরিয়ে শোবার ঘরে এসে শুয়ে পড়লো। আর কালীপূজোর দিনের জন্য অপেক্ষা করলো। তাকে দেখতে হবে কালী কীভাবে মা হল। এদিকে বিপিনবাবুরও খারাপ লাগতে লাগলো। মেয়েটার সাথে এমন ব্যবহার ঠিক হয়নি। এই বয়সেই তো ওরা সবকিছু জানার আগ্রহ দেখাবে। তিনি মনে মনে ভাবলেন আর কোনোদিন মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করবেন না।
২)
সকাল থেকেই রিমঝিমের খুব আনন্দ। আজ শনিবার দ্বীপাবলি কালীপূজো। গতরাতেই বাবা বলেছে আজ তাকে পূজো দেখাতে নিয়ে যাবে। ভিতরে ভিতরে রিমঝিম খুব আগ্রহ বোধ করছে আর ভাবছে সে কখন পূজো দেখতে যাবে? ঘুম থেকে উঠেই সে মায়ের কাছে জেনে নিয়েছে আজ সন্ধ্যার পর তারা পূজো দেখতে বেরুবে। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। অনন্যাদেবী মাটির প্রদ্বীপ আর মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘর সাজালেন। রিমঝিম তার মাকে সাজানোয় সাহায্য করতে করতে জানতে চাইলো এত প্রদ্বীপ -মোমবাতি দিয়ে সবাই ঘর সাজায় কেন? পাশের বাড়ির আন্টিও সাজিয়েছে।এর কারণ কী? অনন্যাদেবী উত্তরে বললেন, সারাবছর যেন আমাদের ঘর আমাদের পৃথিবী এমন আলো করে থাকে সেই উদ্দেশ্যেই মঙ্গলদ্বীপ জ্বেলে এই কালীপূজোতে ঘর সাজাই। রিমঝিম আবার প্রশ্ন কী একটা প্রশ্ন করতে যাচ্ছিল এমন সময় বিপিনবাবু কিছু পটকা -বাজি এনে রিমঝিমকে বলল, চল মা ছাদে গিয়ে পটকা ফুটাই। রিমঝিম খুশিতে নাচতে নাচতে ছাদে গেল। বাবা মেয়েতে খুব আনন্দ করে শেষে অনন্যাদেবীর ডাকে রাতের খাবার খেতে নিচে নামলো। খাবার টেবিলে বসে রিমঝিম নিজের হাতে দুধ ভাত খেতে খেতে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, কখন পূজো দেখতে যাবে?
কিছুদিন হল রিমঝিম নিজের হাতেই খেতে শিখেছে। অনন্যাদেবী খাইয়ে দিতে চাইলেই সে বলে সে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে নিজের হাতেই খেতে পারে। যদিও খাবারের বেশির ভাগই ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার করে ফেলে তবু অনন্যাদেবী মানা করেন না। রিমঝিমের সেই প্রশ্নে বিপিনবাবু বলেন, আমরা খেয়ে দেয়ে সবাই এক সাথে পূজো দেখতে যাবো। খাওয়া শেষে রেডি হয়ে রিমঝিম তার বাবা মায়ের সাথে বের হল। তারা প্রথমেই গেল শহরের সবচেয়ে যে প্রাচীন মন্দির সেখানে। মন্দিরে গিয়ে রিমঝিম যে প্রথম কথাটি বলল তা হল, ছিঃ এই মেয়েটা কাপড় পড়েনি কেন? সে নিজের থেকেই বলতে লাগলো:এভাবে কেউ জ্বিব বের করে থাকে। আমার খুব ভয় করছে মা। ওর হাতে ওটা কী? মানুষের মাথা কেন? অনন্যাদেবী বললেন, ভয় পেয়ো না মা। ও আমাদের কিচ্ছু করবে না। তখন রিমঝিম মায়ের কাছে সাহস পেয়ে বলল, আচ্ছা বাবা মা কালী কোথায়? বিপিনবাবু এক গাল হেসে বললেন, আরে বোকা মেয়ে এইই তো মা কালী। নমঃ কর। রিমঝিম দুদিকে মাথা ঝাকিয়ে বলল, না না না একে আমি নমঃ করবো না। এ নেংটু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কি জামা নেই?আচ্ছা বাবা তুমি গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে এসো না ও কেন এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে? বিপিনবাবু একটু বিরক্ত হয়েই বলল, ছিঃ মা ওভাবে বলে না। ঠাকুর পাপ দিবে। আর ঠাকুরকে সবসময় নমঃ করতে হয় তা সে যেভাবেই থাকুক। রিমঝিম প্রবলভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, না না না আমি ওই পাগলকে কক্খনো নমঃ করবো না।
অনন্যাদেবী লক্ষ্য করলেন মন্দিরের প্রায় সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। শেষমেষ মেয়েকে নিয়ে মন্দিরের সামনে থেকে বেরিয়ে এসে দূরে রাখা চেয়ারে বসলেন অনন্যাদেবী। দেবদবীদের নিয়ে এমন কথা শুনলে যে কেউ সরু চোখে তাকিয়ে থাকে। বসেই রিমঝিম মাকে একদিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল, মা ঐখানে এত গরু কেন? অনন্যাদেবী বিরক্ত হয়ে বলল, ঐগুলো গরু নয় মহিষ। বলি দেবার জন্য রাখা আছে। সে তৎক্ষণাত বলে উঠল, বলি কী? আমি বলি দেখবো। বিপিনবাবু মন্দির থেকে ভোগের আর দর্শনের টাকা দিয়ে কেবল মেয়ের সামনে দাঁড়িয়েছেন।মেয়ের আবদার শুনে বিপিনবাবু বলল, আচ্ছা দেখবে এখন চল অন্য ঠাকুর দেখি। রিমঝিম বলি না দেখে যাবেনা। শেষ পর্যন্ত বিপিনবাবু খোঁজ নিয়ে জানলো আর আধ ঘণ্টা বাদেই বলি হবে। মেয়ের জেদের জন্য তারা অপেক্ষা করতে লাগলো। রাত কম হলনা। প্রায় ১২টা বাজে। তবু রিমঝিমের চোখে ঘুম নেই। সে তার বাবাকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে, ঠাকুর কী? ঠাকুর কীভাবে হয়? এর মাঝে সে জেনে গেছে ঐখানে যে নেংটু মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে, সবাই যাকে নমঃ করছে সে আসলে একটা মাটির পুতুল। সে বাবাকে জিজ্ঞেস করছে, মানুষ কেন পুতুলকে নমঃ করছে, খাবার দিচ্ছে। পুতুল তো খেতে পারে না।
কিন্তু অন্যদিনের মতন বাবা আজ আর তেমন কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছে না। তবু সে প্রশ্ন করে যাচ্ছে। হঠাৎ রিমঝিম আঙ্গুল তুলে মূর্তিকে দেখিয়ে বলল, ঐটা একটা রাক্ষসী! কথাটা বলার সাথেসাথে বিপিনবাবু রিমঝিমের গালে একটা চড় কসিয়ে দিলেন। দেব দেবতা নিয়ে এসব বলতে আছে? মেয়েটা বড্ড পাঁজি হয়েছে। রিমঝিম একদম চুপ হয়ে গেল। একটু বাদে মহিষ বলি শুরু হল। রিমঝিম অবাক চোখে দেখছে মানুষগুলো একটা একটা করে মহিষ এনে কী অদ্ভুত হিংস্রতায় মহিষের ধড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলছে। রক্তের হিল্লোল খেলে যাচ্ছে। রিমঝিমের চোখ কেমন জলে ভরে যাচ্ছে। সে ভেবে পাচ্ছে না মানুষগুলো কেন একটা পুতুলকে খুশি করতে এমন হিংস্রতায় মেতে উঠেছে।সে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে মা একটু পর পর হাত উঁচিয়ে নমঃ করছে। আর বাবা অন্য সবাই বলির সময় চিৎকার করে উঠে সেও চিৎকার করে মন্ত্র বলে। রিমঝিম তার মায়ের আঙ্গুলে চেপে ধরে বলল, মা আমি বাড়ি যাবো। অনন্যাদেবী মেয়ের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন। রিমঝিমের চোখ কেমন ঘোলাটে হয়ে গেছে। তার মুখ একেবারে নীল। কপালে হাত দিয়ে দেখলেন মেয়ের ভিষণ জ্বর। অথচ একটু আগেও তো স্বাভাবিক ছিল।
অংকুর বলছেনঃ
:O :O :O :O :)] :)] :)] :-bd :-bd :-bd :-bd =D> =D> =D> =D> 8-X 8-X 8-X 8-X
অসীম নন্দন বলছেনঃ
wirkung viagra oder cialis%%- %%- %%-
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
@};- @};- আমার ভাল লেগেছে
অসীম নন্দন বলছেনঃ
%%- %%- %%- দিদিমণি
স্পীকার বলছেনঃ
:-bd :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd
অসীম নন্দন বলছেনঃ
%%- %%- %%- দাদাভাই