আরেক পাগলাবাবার সাথে আমার পরিচয় হয় যেভাবে
232
বার পঠিতকলেজ জীবনে চট্টগ্রাম কলেজে পড়তাম, প্রায়ই যেতাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। দাপ্তরিক সেমিনারে গতমাসে চট্টগ্রাম গিয়ে বিকেলে প্লান করি পতেঙ্গা সৈকতে যাবো অনেকদিন পর। নদী আর সমুদ্রের প্রতি প্রচণ্ড টান আমার, মনে হয় তীরে দাঁড়ালেই বুড়ো সেন্টিয়াগোকে দেখতে পাবো হারপুন হাতে কিংবা নৌকোয় বাঁধা তিমিসহ। অনেক বছর যাবত আমার মননে সমুদ্র আর সেন্টিয়াগো গাঁথা কেন যেন ! সেন্টিয়াগো পুরুষ এবং আমি সমকামি না হয়েও, তার সাথে অনেক দিনের প্রেম আমার। ইহকাল ত্যাগ না করলে হয়তো দেখা করতাম এ পুরুষ প্রেমিকের সাথে তার বরফ ঢাকা ওক গাছের ভেঙে পড়া বাড়িতে গিয়ে! glyburide metformin 2.5 500mg tabs
পড়ন্ত বিকেলে একাই প্রস্তুতি নিয়ে কাঠগড়ের পথে হাঁটছি পতেঙ্গার দিকে। একা হাঁটার পথে ১৪/১৫ বছরের এক ছেলের সাথে দেখা, সেও যাচ্ছে ঐ দিকেই নাচতে নাচতে। যেচে আলাপে জানতে চাইলাম, ‘কি নাম তোমার বাবা’? “পাগলাবাবা” হেসে জবাব দিল সে। উত্তর শুনে কিছুটা বিরক্ত আর বিস্মিত হয়ে বললাম, ‘তুমি ভদ্র ঘরের ছেলে বলেই আমার ধারণা, অন্তত জামাকাপড়, চেহারায় তাই মনে হচ্ছে, তো বয়স্ক এ অপরিচিত ব্যক্তির সাথে ‘ফান’ করা কি খাটে তোমার? কিসে পড় তুমি’? বিষ্ময়কর ভাবে সে বললো, ‘তার নাম পাগলাবাবা-ই’ এবং সে ‘ফান’ করেনি। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সে তার সঠিক নামই বলেছে। হাঁটতে হাঁটতে গল্প জমে যায় পাগলাবাবার সাথে।
তার কণ্ঠ ও মুখের কমনীয়তায় নারীত্ব লক্ষ্য করলে সে জানায়, আসলে সে মেয়ে। পোশাকে চিন্তনে নারী-পুরুষের বৈষম্য মানেনা সে। আধুনিক পশ্চিমা বিজ্ঞানসম্মত পোশাক, প্রকৃতির মাঝে বিচরণ, হাঁটাহাঁটি, সব কাজ করতে দারুণ পছন্দ তার! প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায় সে। আসলে নারীবাদি পাগলাবাবা, তাই হয়তো নামটি এমন। তসলিমা নাসরিনের দারুণ ভক্ত এ পাগলাবাবা। কুসংস্কারমুক্ত, বাংলাদেশে বিশ্বাসী আর নারী স্বাধিনতায়!
এ বয়সে আমি নারীবাদ, পুরুষবাদ, জেন্ডার, সেক্স এসব টার্ম বুঝতামই না হয়তো ভাল করে। তার চিন্তন দক্ষতা ও কথোপকথনে বিস্মিত হই। জানলাম পাগলাবাবা নামধারী মেয়েটি কেবল নারীবাদীই নয়, মারাত্মক দেশপ্রেমিক তথা মুক্তিযু্দ্ধপন্থী। কিছুক্ষণ আলাপে তার বুদ্ধির ঝলকে চমকিত আর মোহিত হই আমি।
একটা বিষয়ে জানতে চাইলাম তার কাছে, পতেঙ্গার একদম শেষ সিমায় (মানে যেখানে কর্ণফুলি শেষ) একাত্তরে শহীদ সোভিয়েত সৈনিকদের যে “স্মৃতিসৌধ” আছে তা সে দেখেছে কিনা? সে জানালো এ বিষয়ে কিছুই জানেনা সে, আর ঐ শেষ পয়েন্টে এখন নৌবাহিনীর লোকেরা সাধারণ পাবলিককে যেতেও দেয়না, নিরাপত্তার জন্যে আটকে দিয়েছে দেয়াল করে। তবে তার বহুল পরিচিত এলাকা বিধায়, সে জানে ভাঙা ওয়ালের ফাঁক দিয়ে কিভাবে ওখানে যেতে হয়, তারা বন্ধুরা দল বেঁধে অনেকবার সেখানে গিয়েছে কিন্তু না জানার কারণে ঐ ধরণের স্মৃতিস্তম্ভ তাদের চোখে পড়েনি কখনো।
এবারো তার বুদ্ধিমত্তায় শিহরিত হলাম। সত্যিই সে আমায় একটা বিশেষ ভাঙা দেয়ালের পথ দিয়ে কাঙ্খিত পয়েন্টে নিয়ে গেল। ভদ্র পোশাকের কারণে কেউ আমাদের কিছু জানতে চাইলো না বা আটকালো না পথ। কিন্তু নানা খোঁজাখুঁজির পরও আমার ইতোপূর্বে দেখা মৃত সোভিয়েত সৈনিকদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিশৌধটি খুঁজে পেলাম না আমরা। হয়তো কোন কারণে ভেঙে ফেলা হয়েছে কিংবা অন্য কোন কারণে আমরা তার সঠিক লোকেশন খুঁজে পাইনি এবার। অবৈধ অনুপ্রবেশকারি হিসেবে তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম বাইরে একাত্তরের যুদ্ধশেষে বঙ্গোপসাগরকে নিরাপদ জলপথ হিসেবে মাইন সুইপ করতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত ৮-সোভিয়েত সৈনিকের স্মরণে নির্মিত মিনার না দেখেই। পাগলাবাবা আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো বিস্ফোরণের ঘটনাটি। পাকিস্তানিরা চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের আগে আমাদের চট্টগ্রামে বন্দরকে অনিরাপদ করার জন্য অসংখ্য ভাসমান মাইন ছড়িয়ে দেয় বঙ্গোপসাগরে, যাতে দেশটির পোর্টে কোন জাহাজ ঢুকতে না পারে। ১৬-ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশের অনুরোধে ক’টি সোভিয়েত যুদ্ধজাহাজ বঙ্গোপসাগরকে মাইনমুক্ত করতে গিয়ে বিস্ফোরণে একটি জাহাজ ডুবে গেলে, ৮-নৌ সেনা নিহত হয় সাগরেই। ৭২-সনে কোন এক পত্রিকায় [নাম না জানা] প্রকাশিত একটি পেপার কাটিং কেটে রেখেছিল আমার মৃত মুক্তিযোদ্ধা বাবা, যাতে তাদের নামগুলো ছিল নিম্নরূপ : [১] Aleksandar Ustanov [Александр], [২] Demyan Andripov [Демьян], [৩] Dimitri Feodor [Димитрий], [৪] Gerasim Istonov [Герасим], [৫] Gennady Lyov [Геннадий], [৬] Lavrenti Yuriy [Лаврентий], [৭] Igor Vladimir [Игорь] এবং [৮] Fyodor Irinei [Фёдор] সম্ভবত তাদের স্মৃতিতেই মূলত পতেঙ্গা কর্নারে এ স্মৃতিশৌধটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৭২-সনে।
দেখলাম মৃত ভিনদেশি এ সৈনিকদের আত্মত্যাগের কথা শুনে চোখে জল চিকচিক করছে পাগলাবাবার, যাদের জন্ম হয়েছিল প্রাক্তন সোভিয়েতের স্তেপ তৃণভূমি, সাইবেরিয় তুন্দ্রা অঞ্চলে কিংবা ভলগা, কিয়েভ, তুরা, ইস্কটস্ক, লেনা, আমুর, উড়াল বা অন্য কোন নদী তীরে ছিল যাদের গাঁ, আর এরাই জীবন দিয়ে গেল অপরিচিত এক জাতির মুক্তির সংগ্রামে। জানিনা তাদের মৃতদেহ আর পাওয়া গিয়েছিল কিনা কিংবা ফেরত গিয়েছিল কিনা প্রাক্তন সোভিয়েত রাশিয়ায় তাদের তমস্ক, নভোসিভিরস্ক, ভরখয়ানস্ক, সিস্ত্রা বা ভেতলুগা গাঁয়ে। এ সৈনিকদের মায়েরা কি জানে তাদের সন্তানেরা লীন হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের অথৈ সমুদ্রে? এখনো কি তারা প্রতিক্ষা করছে তাদের প্রিয় সন্তান ভ্লাদিমির, ফিউদর, ইগর, আলেকসন্দর, দেমিয়ান, দিমিত্রি, গেরাসিম আর গেন্নাদি লিওভের জন্যে? বাঙালিরা কি এ ঋণ শোধ করেছিল কখনো তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায়?
পঞ্চমুখী স্মৃতিকাতরতা আর কথকতায় পাগলাবাবার সাথে সারা বিকেল আর সন্ধ্যা কাটলো আমার আনন্দ আর বর্ণিত স্মৃতির কষ্টের নিগড়ে। নানাবিধ আধুনিক চিন্তনে, বুদ্ধির প্রখরতায়, দেশপ্রেমের ঝলকানিতে, আর প্রকৃতি প্রেমে একদিনেই নিবিড় ঘন বন্ধুত্ব হলো অসম বয়সি দু’প্রান্তের ২-মানুষের।
অবশেষে ফিরে এলাম নিজ কর্মস্থল ঢাকায়। নানা কর্মব্যস্ততার মাঝেও পাগলাবাবার সাথে প্রায় যোগাযোগ হয় নেটে। প্রগতি আর নারী মুক্তির বিষয়ে নানাবিধ পোস্ট ছাড়ে পাগলা বাবা প্রতিনিয়ত। হঠাৎ বিস্মিত করে একদিন জানায় আমাকে- পরিবার, সমাজ আর শহর থেকে পালাতে চায় সে, চায় স্বাধিনতা। ঘেরাটোপের জীবন ভাল লাগেনা তার। সে কোন জনমাবনহীন দ্বীপে গিয়ে বসবাস করতে চায় সে একাকি কিংবা কাউকেসহ! প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াতে চায়; মাছ ধরে, গাছে চড়ে, শিকার করে প্রকৃতির অনুসঙ্গ হয়ে বাঁচতে চায় সে। রাতে ঘাসের বিছানায়, তারার আলোয় ঘুমোতে চায় পাগলাবাবা। ছুঁয়ে দেখতে চায় অন্ধকার আকাশে স্বাতী, উত্তরাষাঢ়া, অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা, অশ্লেষা, পূর্বফাল্গুনী, উত্তরফাল্গুনী, চিত্রা, বিশাখা, অনুরাধা, পূর্বাষাঢ়া, শ্রবণা, শতভিষা, উত্তরভাদ্রপদ আর রেবতী নক্ষত্রের অনন্তে ছুটে চলা আর আলোক বিচ্ছুরণের চিত্রায়ণ। আমি যেন তাকে সহযোগিতা করি এমন কোন দ্বীপের সন্ধান দিয়ে কিংবা সহযাত্রি হয়ে তার!
১৪-বছরের পাগলাবাবাকে সান্ত্বনা দেই আমি, এটা এখন বাস্তবসম্মত নয় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। কোন দ্বীপই এ অঞ্চলে নেই এখন জনমানবহীন। গিজগিজে ঠাসা নিঝুম দ্বীপ, চরকুকড়িমুকড়ি, ফাতরারচর, চরমন্তাজ, চরআলেকজান্ডার, ঢালচর সবই। দু’য়েকটি যা নতুন চর জেগেছে বঙ্গোপসাগরে, তা যেমন জলদস্যুদের আড্ডাখানা, তেমনি জীবন ধারণের অনুপযোগি এখনো। বরং তুমি চলে যেত পার বাংলাদেশ ছেড়ে ডারউইনের ‘গালাপাগোস’ দ্বীপে! নানা প্রাণিদের সাথে মিলেমিশে থাকবে ওখানে পরম প্রশান্তিতে।
তার চেয়ে বরং প্লান করতে পারো পৃথিবীর ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোকে ঘুরে দেখার। ঘুরে দেখতে পারো – সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সামোয়া, তিমুর লিসতি, টগো, টুকালু, ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো, তুর্ক ও কইকস দ্বীপপুঞ্জ, এন্টিগুয়া, বারবুদা, অরুবা, বাহামাজ, বারবাডোজ, কেপভার্দে, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ, ক্রিসমাস দ্বীপপুঞ্জ, টোঙ্গা, ককোস দ্বীপপুঞ্জ, কুক আইল্যান্ড, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, গুয়াম, কিরিবাতি দ্বীপপুঞ্জ, ম্যাকাও, মাদাগাস্কার, নাউরু, পালাউ, পাপুয়া নিউগিনি, পলিনেশিয়ান দ্বীপমালা, সেন্ট হেলেনা, সেন্ট লুসিয়া, কিটস এন্ড নেভিস, গ্রেনাডা, সেন্ট ভিনসেন্ট এন্ড গ্রিনাডিনস, সেন্ট মেরিনো, সোয়াতম এন্ড প্রিসিপ দ্বীপপুঞ্জ, তুভালু, ভেনাতু, ওয়ালিস ও ফরচুনা আর ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ। তাকে খুলে বলি পলিনেশিয়ায় আমার ‘টোঙ্গা’ দ্বীপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, ঘুরে বেড়ানো আর আনন্দের কথা! side effects of quitting prednisone cold turkey
এতো দ্বীপমালার নাম শুনে ১৪-বছরের প্রজাপতি মনা পাগলাবাবার মন নেচে ওঠে নতুন সব দ্বীপরাষ্ট্র ঘুরে দেখার, গুগলে সার্চ দিয়ে এসব দ্বীপের অবস্থান জেনে পুলকিত আর রোমাঞ্চিত হয় সে। যেন সে আজই যেতে চায় তাসমানিয়া, হাইতি কিংবা ভেনাতু আইল্যান্ডে। এখন প্রত্যহ পাগলাবাবার তাগাদা শুনে গভীর রাতে ঘুমোতে যাই আমি, আর সকালে ঘুম ভাঙে তার ডাকে কখন যাবো তাকেসহ বর্ণিত সব দ্বীপমালায়? যেখানে সে টুকালু দ্বীপের আদি বাসিন্দাদের ট্রাডিশনাল ‘হাইতা’ পোশাক পড়ে নেচে বেড়াবে তাদের প্রাগৈতিহাসিক দেবি “উতাপিকাতুর” কাঠের মূর্তির সামনে? পুরণ হবে কি পাগলাবাবার এ স্বপ্ন-কথন কখনো? পারবে কি সে পলিনেশিয়া, ক্যারিবিয়ান, প্যাসিফিক, প্রশান্ত আর ভারত মহাসাগরিয় হাজারো ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রে বসবাসকারি সপ্তপদি মানুষ আর তার সমাজকে দেখার স্বপ্ন পুরণ করতে? হয়তো পারবে হয়তো পারবে না, ভবিষ্যতই পাগলবাবার পথ বলে দেবে, কোথায় যাবে সে তার অজানা পথের সন্ধানে! ছুঁতে পারবে কিনা কোনদিন অনন্ত বিশ্বের মহাজাগতিক নক্ষত্রপুঞ্জকে !
ব্লগারের ফেসবুক লিংক : https://www.facebook.com/logicalbengali
যারা ‘ধর্ম, দর্শন, মানুষ আর জীবন জিজ্ঞাসা’ জানতে চান তাদের জন্যে জ্ঞানের চমৎকার মিউজিয়াম। প্রত্যহ হাজারো ছবি আর নলেজ দিয়ে আপডেট করা হয়। পেজটি লাইক করুন আর পড়ুন। দেখুন লিংক : https://www.facebook.com/drlogicalbangali
তারিক লিংকন বলছেনঃ
kamagra pastillasলিখাটা প্যারায় প্যরায় ভাগ করেন দেন পড়তে ভাল লাগবে। আপনার লিখনি ভালই। আমিও চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র আপনারটা জেনে ভাল লাগল…
আর আপনি প্রতিটি পোস্টের নীচে এই জিনিসটা লিখে দেন খুবই খারাপ দেখায়। আপনিতো তা আপনার প্রোফাইলেি দিয়েছেন। কি দরকার প্রতি পোস্টে দেয়ার?
ভাল থাকবেন!! :দে দে তালি: :দে দে তালি: :কুপায়ালাইছ মামা-ভিক্টরি: :কুপায়ালাইছ মামা-ভিক্টরি:
প্রাগৈতিহাসিক বলছেনঃ
প্যারা করে পোস্ট দিলাম। তারপরো এমন। তোমার কথাশুনে আবার এডিট করলাম, প্যারায় আরো স্পেস দিলাম। কিন্তু একই দেখছি।