আমার মা
97
বার পঠিতমানুষ মরে গেলে আর ফিরে আসে না বা মারা যাওয়া ব্যাপারটা কি তার সাথে আমার পরিচয় ১লা ফেব্রুআরি ২০০৩।আম্মু মারা যাওয়ার প্রায় চার মাস পর।সেদিন আমার স্টেপমমের প্রথম দিন ছিলো আমাদের বাসায়।সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আম্মু রান্না ঘরে এই দৃশ্যে কোনই অবাক করার মত কিছুই নাই কিন্তু কেন জানি হঠাৎ করে মার কথা মনে পরে গেল সাথে সাথে আমি আমার দাদির রুমে চলে যাই।সেখানে ততোদিন পর্যন্ত মার কতগুলো শাড়ি রাখা ছিল।দেখেই কেমন যেন কান্না পেয়ে গেল।১লা ফেব্রুআরি আমি শেষবারের মত কেঁদে ছিলাম। আমার তারপর কখনোই কান্না আসেনি। কান্না না আসার পিছনেও কিছু কারন ছিলো।সময়টা মেবি ২০০২ এর সেপ্টেম্বরের শুরুর বা মাঝের দিকে তখন মার অবস্থা খুবই খারাপ।মা ঠিক মতো কথাও বলতে পারে না আর বলতেও চায় না।আমি সেসময় দুনিয়ার স্বাধীনতা পেলাম।আব্বু থাকতো অফিসে আর বাসায় বড়জন বলতে শুধু দাদি। দাদি কখনোই আমাদের শাসন করে নাই।আর সে সময়তো সবার মেন্টালিটি অনেক নিচের দিকে শাসন করার প্রশ্নই আসে না।সেদিন খুব বৃষ্টি ছিলো আমি বাহিরে গিয়ে কাদায় মাখামাখি করে ৭.৩০ এর দিকে বাসায় ফিরি।সেসময় এতো দেরি করে বাসায় ফেরা জঘন্য অপরাধের মধ্যে পরে।আমিও চুপচাপ ঘরে ঢুকেই নিজের রুমে ঢুকে পরি।কেন জানি পড়তে ইচ্ছা করতে ছিলো না।আমার রুমের পিছনের দরজা দিয়ে মার রুমে যাওয়া যেত। আমার কেন জানি মার কাছে যেতে ইচ্ছে করতেছিলো।মার রুমে গিয়ে দেখি মা ঘুমায় লাইট অফ।আমি মার খাটে বসে ছিলাম অনেক্ষন। মার মুখটা অল্প আলোতে বুঝা যাচ্ছিলো।মা অনেক অসুস্থ হয়ে গেল হঠাৎ করেই কান্না এসে গেল।মার ঘুম ভেঙে গেল।মার প্রথম কথাই ছিলো কাঁদতেছিস কেন? আমি কিছু বলি নাই।পরে মা বলতেছিলো খবরদার কান্নাকাটি করবি না বিরক্তিকর লাগে।আর মানুষের সামনে কান্নাকাটির কোন মানেই হয় না।কান্নাকাটি করলেই মানুষ সুযোগ নেয়।দুর্বল ভাবে।কান্নাকাটি বন্ধ কর।
আজকাল শাশুড়ির সাথে বৌদের সম্পর্ক দেখি আর মার কথা মনে হয়।আমার মার সাথে আমার দাদির অনেক ভাল সম্পর্ক ছিলো।অনেকটা মা-মেয়ের মত।আমি আমার মাকে শুধু একদিন দাদির সাথে মন খারাপ হতে দেখছি।সেদিন আমার ছোট মামা আমাদের বাড়িতে এসেছিলো।বাসায় খাবার ব্যাবস্থা খুব বেশি ভাল ছিলো না।দাদি মামাকে দেখেই মুরগি রান্না করতে বলেছিল কিন্তু মা বললো সে কি মেহমান নাকি যে তার জন্য স্পেশাল কিছু করতে হবে।তারপর মা মামাকে একটা ডিম ভাজি করেই খেতে দিছিলো বাট দাদি এটাতে অনেক রাগ করেছিলো।দাদির সাথে আমি শেষদিন পর্যন্ত দেখেছি যখনই দাদি মাকে নিয়ে কথা বলতেন দাদির চোখে একধরণের ভালবাসা চোখে লেগে থাকতো।
আমার বাবা-মার এরেঞ্জ ম্যারেজ ছিলো কিন্তু তাদের ভালবাসা লাভ ম্যারেজ থেকে কোন অংশেই কম ছিলো না।আমার বাবা তার প্রথম জীবনে অনেক স্ট্রাগল করে আজকের এই পর্যায়ে আসা।কিন্তু মা শুধু বাবার স্ট্রাগলই দেখে গেছেন কিন্তু আফসোস করেন নাই কখনো। বরং বাবা থেকে কিছু না পেয়েও তিনি হেপি ছিলেন।মা অনেক অল্পতেই খুশি থাকতেন।মা মারা যাবার পর দাদি প্রায়ই বলতেন যেই সুমির মার আরাম করার সময় আসলো,যেই সংসার গুছাই আনা শেষ হইলো সেই সুমির মা হারাই গেল।বাই দা ওয়ে সুমি আমার বড় বোনের নাম।আমার মা আমাদের বাড়ি গাড়ি কিছুই দেখে যেতে পারে নাই।এমনকি মার অনেক ইচ্ছে ছিলো আমার ছোট ভাইকে কোরআনে হাফেজ বানানোর ইচ্ছে ছিলো।আজকে ছোট ভাইটা হাফেজ ঠিকই বাট মা দেখে যেতে পারে নাই।২০০৩ এ আমি পড়াশোনার জন্য হোস্টেলে চলে যাই সে সময় আমার বড় বোন আর দাদি বাবাকে বিয়ের জন্য চাপাচাপি করতেছিলো।আমি এসবের কিছুই জানি না।তো জানুয়ারির ৩০ তারিখ বাবা আমাকে বাসায় নিয়ে আসে।বাসার কাছাকাছি এসে বাবা অন্যদিকে তাকিয়ে তার বিয়ের কথা বলতে ছিলো।আমি বাবার চোখের দিকে না দেখেও বাবার টোনে বুঝতে পারি বাবার চোখে পানি আর বাবা নিজেকে অপরাধী মনে করতেছে আবার বিয়ে করতেছে বলে। কিন্তু আমি এসব কিছুই ভাবি নাই।আমি স্বাভাবিকই ছিলাম।বাবার বিয়ে আমাকে কোন ইফেক্টই করে নাই।বাট আমরা ভাই বোনরা যদি এখনো কিছু বলি বিয়ে নিয়ে আমি সিউর বাবা মেনেই নিবে সব দোষ তার, তার দ্বিতীয় বিয়ে করা উচিৎই হয় নাই।কারন আমার বাবা এখনো মাকে ভুলে নাই।
আমার মা বছরে শপিং করতে একবারই বাহিরে যেতেন।সেটাও ঈদের সময়।বাকিটা সময় বাবা নিজেই সবার শপিং করতেন।তাও মা যখন যেতেন তখন শুধু আমাদের ফেমিলির মহিলাদের শপিং মানে আমার ফুপু ও চাচীদের জন্য ঈদের গিফট এর জন্য।মা যে কি খুশি হতেন তাদের জন্য গিফট কিনে সেটা শুধু মাইই বুঝতেন। সবার জন্য একই রকমের শাড়ি কিনে আনতেন পরে নিজেই সবাইকে দিতেন এগুলো।আমার মা এতটুকুতেই হেপি থাকতেন।আমার ফুঁপিদের জন্য উনার ভালবাসাও অন্যরকম ছিলো।।২০০২ এ মা চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া গেল কিন্তু সে সেখানে গিয়ে চিকিৎসা পরে আগে শপিং করতে হবে কারন মা ছোট ফুঁপিকে বলেছিলেন তার বিয়ের শপিং ইন্ডিয়ায় করবেন।কতগুলো শাড়ি কিনে আনলেন মার জন্য ফুঁপির জন্য কিন্তু মা সেগুলা পরতেই পারলো না।ফুঁপির বিয়ের আগেই মা মারা গেল।শাড়ি গুলো এখনো আমাদের বাসায় আছে কেউ পরে নাই।কারন মার পরার কথা ছিলো এগুলো।তাই যত্ন করে রাখা এখনো আলমারি তে।শুধু ফুঁপি না মা আমার ফুফাতো ভাইদের আমাদের থেকে বেশি আদর করতেন।সেসময় শুধু Nayeem একটু বড় ছিলো।আর নাইম মাকে পছন্দও করতো অনেক।আমরা যখন গ্রামে যেতাম ওরা একই সময় গ্রামে আসতো শাকিল সারাক্ষণ মার কাছেই থাকতো।সারাদিন শুধু মামি মামি করতো। আমার মনে আছে শাকিল আমাদের সাথে আমার নানা বাড়িও যেত সবসময়। একবার আমার নানী শাকিলকে বকা দেয়াতে মা নানীর সাথে ঝগরা করে চলে আসছিলো।জানিনা এখন শাকিলের মার কথা মনে আছে কিনা।সবাইকে একসাথে রাখতে আর ভালবাসার অসম্ভব ক্ষমতা ছিলো মার।
আর মাকে কেমন ভালবাসতো আমার পরিবার?মার মত বাসতে পারতো না বাট বাসতো ঠিকই।২০০২ এ আমার মেঝ চাচা বিদেশ থেকে দেশে আসে। চাচাকে এয়ারপোর্টে বাবা জিজ্ঞেস করে কই যাবি এখন বাড়িতে চাচা বলে উঠে বাড়িতে কেন যাবো ভাবি হসপিটালে আমি বাড়ি কেন যাবো?আমি হাস্পাতালে যাবো ভাবির সাথে দেখা করবো আগে।আমার ছোট চাচাও সে সময় বিদেশ মার মৃত্যুর কথা শুনে চাচার সে কি কান্না ছিলো বলার মত না।চাচা অনেকদিন দেশে আসতে চাচ্ছিলো মাকে দেখতে বাবা মানা করতেছিলো।পরে চাচা অনেকদিন রাগ করেছিলো বাবার সাথে।
আমি ঠিক জানি না এ লেখাটা এখানে লেখার যোগ্য কিনা!!এটাই আমার সভ্যতায় লিখা প্রথম কোন কিছু। ব্যক্তিগতভাবে আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইন্টারেস্ট হলেও শুরুটা আমার মায়ের সাথেই মাকে নিয়েই করার ইচ্ছে হল…… venta de cialis en lima peru
কোলাহল
Mohd Shahanoor Alam Bhuiyan Titu @ বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীকদের তালিকা
shapan @ প্রসঙ্গ নারী : ধর্মীয় আর সামাজিক বর্বর আইন নারী খৎনা Female Circumcision
Mkjk @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
পারভেজ আহমেদ @ বাংলা কবিতায় ছন্দ কত প্রকার ও কি কি?
Md forid mia @ পা চাটা কুত্তার জলকেলি
Juel @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
Juel @ জলচর মৎস্য হতে স্তন্যপায়ী মানুষ; বিবর্তনবাদের মহা নাটকীয়তার পরিণতি
Ask2ans @ The Boy In The Striped Pajamas