রোমন্থনকাল- কলিমুদ্দির লজ্জা…
493
বার পঠিত১৯৭১ সালে কলিমুদ্দির বয়স ছিলো তেরো বছর। হাতে অস্ত্র তুলে যুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট বয়স। তার সাথের সবাই তখন যুদ্ধে। মা ও মাটির টানে মাথায় কাফন বেঁধে বুকের রক্তে একটু একটু করে ছিনিয়ে আনছে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা সবুজের বুকে পবিত্র লাল। কিন্ত কলিমুদ্দি যুদ্ধে যান না ভয়ে, তিনি মরতে চাননা, তার বাবা বড়রূপনগর গ্রামে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। গ্রামে তাদের অঢেল সম্পত্তি, ঘরে তিন তিনটা সোমত্ত সুন্দরী মেয়ে, অসুস্থ স্ত্রী আর একমাত্র সন্তানকে নিরাপদ রাখতেই সম্ভবত তিনি হায়েনাদের সাথে হাত মেলান। একাত্তর অনেক রহস্যের সময়!দুর্বোধ্য একাত্তরের রহস্যের কীনারা করা কঠিন। পরিস্থিতি মানুষকে অমানুষে রূপান্তরিত করেছিলো সে সময়।
★
তিনদিন ধরে কৃষ্ণটিলা ইউনিয়নের রায়খালী গ্রামে পাকিস্তানীরা তান্ডব চালাচ্ছে, বড়রূপনগরের পাশেই রায়খালী। তাই দিনদুপুরে চমকে উঠতে হয় গুলির শব্দে। কখনো থেমে থেমে একটা দুইটা, কখনো বৃষ্টির মতো ঝা ঝা করে।
বাহার চাচা বলেছিলো ভিটে না ছাড়া হিন্দুদের কাউকে বাঁচিয়ে রাখবেনা পাকিরা,
যে মাগীর বংশেরা বর্ডার পার হয়া গেছে তারা বাইচা গেলো।
বাহার চাচা কথাটা যখন বলছিলো তার চোখে হীরকের মতো দ্যুতি চকচক করছিলো! এতো লোভ মানুষের! মৃত্যুকেও হার মানায় এ লোভ। কলিমুদ্দির বড়বুবু ময়না সেদিন সবাইকে একসাথে জড়ো করে বলেছিলো, আইজকা আমরা সবাই বাহারুদ্দিনের উদ্দেশ্যে থু থু ফালামু। বাহারুদ্দিনের বাড়ি যেহেতু উত্তর দিকে সেহেতু সবাই উত্তরমুখী হইয়া “ছিঃ বাহারুদ্দিন তোর লইজ্জা নাই, তুই কুপয়ার বংশ” বইলা একদলা থু থু নিক্ষেপ করববো।
সেদিন কলিমুদ্দিরা চার ভাইবোন মিলে পালাক্রমে থু থু ফেলেছিলো। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে কলিমুদ্দি একা একা আরেকদফা থু থু তার বাবার ঘরের পাশে ফেলে বলেছিলো,
ছিঃ বাপজান তোমার লইজ্জা করেনা?থুঃ accutane prices
দিন যাচ্ছিলো অন্ধকারে। চারদিকে মৃত্যুর গন্ধ নিয়ে কতোদিন থাকা যায়? কলিমুদ্দির গৃহবাসী জীবনে বিতৃষ্ণা জন্মাচ্ছিলো। বুবুরা সারা দিনরাত রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে, কলিমুদ্দি সেটা বুঝতে পারেনা, সে শুধু জানে যুদ্ধ শেষ হলে দেশ পাল্টে যাবে, দেশে আর শত্রু থাকবেনা। কলিমুদ্দির চিন্তা হয়, মুক্তির সেই শুভদিনে তার বাবা কি করে লোক সমাজে মুখ দেখাবে? সুজলা সুফলা শ্যামল এ মাটির সাথে কিভাবে বিশ্বাসঘাতক হয় মানুষ? মাটি যে মায়ের সমতূল্য এ বোধ কলিমুদ্দির জাগে। বুবুরা বলে,
দেশ হইলো মা, দেশের বিপদ মানে মায়ের বিপদ।
সে রাতে আকাশে একটু আধটু মেঘ করেছিলো যে রাতে পাকিস্তানীরা এসে বড়বুবু আর মেজবুবুকে ধরে নিয়ে যায়। কলিমুদ্দি তাকিয়েছিলো তার বাবার নির্লজ্জ মুখের দিকে! যুদ্ধ কি মানুষকে আসলেই অমানুষ বানিয়ে দেয়!
বুবু চিৎকার করে বলছিলো, বাপজান আমারে তুমি দিওনা, ওরা আমারে মাইরা ফালাইবো বাপজান। মেজবু চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলো বজলু রাজাকারের পাশে! বজলু তার পান খাওয়া কালচে দাঁত খিলি করছিলো অশ্লীল ভঙ্গিতে।
কলিমুদ্দির মা তখন চিৎকার করে কাঁদছিলেন।
আর বাবা বলছিলেন, আমার তো ইচ্ছা করতেছিলো তিন তিনটা মাইয়ারেই অখন্ড পাকিস্তান আর ইসলামের রক্ষক আমার যোদ্ধা ভাইদের দান কইরা দেই, পাক পাকিস্তানের ইতিহাসে আমার ত্যাগ স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে। সংসারে মেয়েছেলে দাতব্য বস্ত। সোনার টুকরা পোলা পাইসি, হেরে লইয়া থাকমু তাছাড়া মাইয়া তো একটা থাকলোই।
বাবার সে কথা স্থায়ী হয়না, কলিমুদ্দির প্রায় পিঠাপিঠি এগারো বছরের বোনকে ধরে নিয়ে যায় তারা। কলিমুদ্দির বাবা বলেন, যাযাকাল্লাহ খায়ের!
মা’র অবস্থা তখন আরো খারাপ! তিনি অনর্গল চিৎকার করে বলছিলেন, ঘরের মান রাখতে রাজাকার হইসিলেন কি লাভ হইলো? আমার সব শেষ!
বাবা তখনো স্বাভাবিক।
কলিমুদ্দির ইচ্ছা করছিলো গলায় দড়ি দিয়ে মারা যায়, কিন্ত ভয় লাগে কলিমুদ্দির! মৃত্যুকে ভয় পায় সে। এই ভয়ের কারনেই হয়তো মৃত্যু তার নোংড়া রূপ নিয়ে ঢুকে কলিমুদ্দিদের সংসারে, শেষ রাতের দিকে হাপানির প্রচন্ড টানে মৃত্যু এসে ছিনিয়ে নেয় কলিমুদ্দির মা’কে! ফজরের পর পর তিন বোনের লাশ পাওয়া যায় মুন্সীডাঙার চরে। ক্ষতবিক্ষত নগ্ন লাশ, তাকানো যায়না এমন বিভৎসতা চালানো হয়েছিলো ওদের উপর, আপন সন্তানদের এমন অবস্থা না দেখতেই হয়তো আগেভাগেই মা বিদায় নিয়েছে। চার চারটি লাশের শোক সেদিন মুছে যাবার আগেই নতুন ঝড় আসে কলিমুদ্দির কৈশোরে।
বিকেলে তাকে এসে ক্যাম্পে নিয়ে যায় বাহার চাচা। বাবা কি জানতো?
কলিমুদ্দি তখনো ভেবে পাচ্ছিলোনা, শুধু মনে পড়ে বাহার চাচা এসে বাবাকে বলছিলো, ছোট মেজর পোলাখোর হে আপনার পোলারে পছন্দ কইরা ফেলসে। কলিমুদ্দি ‘পোলাখোর’ শব্দের অর্থ তখন বুঝতে পারেনি। বাবা ভীষন ভেঙ্গে পড়ে আকুতি জানিয়ে শেষমেষ বলেছিলেন, আমার পোলাটারে যেনো মাইরা না ফেলে বাহার, তুমি একটু দেইখো।
সেদিন কথিত ছোট মেজরকে দেখে চমকে উঠেছিলো কলিমুদ্দি, বটগাছের মতো শরীর, চোখে শুকরের দৃষ্টি। মুখে বিকট লোভাতুর হাসি এনে বলেছিলো, কাপরা উতারো মে তুমহে মুহাব্বাত কারনেওয়ালা হুঁ!….
কলিমুদ্দিকে উপুর করে হাত বেঁধে দিয়েছিলো মেজর। তারপর প্যান্টের ব্যাল্ট, জিপার খোলার শব্দ আর শরীরের পেছনে নরকের আগুন ছাড়া কিছু মনে নেই তার। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে আবিস্কার করেছিলেন তাদেরই উঠানে, রক্তাক্ত শরীর ঘিরে লোকজনের জটলা। কলিমুদ্দিকে নিয়ে যাবার পরপরই বড় আমগাছটার সাথে ফাঁস নিয়েছেন তার বাবা। কলিমুদ্দির আফসোস লাগে নিজের হাতে সে খুন করতে পারেনি তাকে।
★
তারপর কেটে গেছে অনেকটা বছর, সবকিছু মনে করে লজ্জা আর ঘৃনা জাগে কলিমুদ্দির।
এখনো এ দেশে সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজাকারেরা। মুক্ত স্বদেশে সেই পুরনো বিষাক্ত সাপ দেখে তার লজ্জা হয়। অনেক বিরাঙ্গনাদের কথা শোনেন কলিমুদ্দি, কিন্ত তারই মতো কতো শিশু কিশোর যে বিকৃত কামনার পাকিস্তানী সমকামী হায়েনাদের হাতে নীপিড়িত হয়েছে সে খবর কেউ রাখেনা সে নিয়ে কেউ আলোচনা করেনা। সেই আলোচনার লজ্জা ঢাকতে তার নিজেরই লজ্জা লাগে। তিনি পুকুর ঘাটের দিকে এগিয়ে যান। স্বচ্ছ জলে আকাশের ছায়ায় একদলা থু থু ফেলে বলেন, ছিঃ জাতি লজ্জা লাগেনা তোমার?থুঃ
অংকুর বলছেনঃ venta de cialis en lima peru
ভালো বলেছেন ভাই । এ বিষয়ে কারো মুখে কোন কথা শুনিনা । পারলে এ বিষয়ে কিছু তথ্য যোগাড় করে জানাবেন । বানানের দিকে একটু নজর দিবেন । লিখতে থাকুন । ভালো হচ্ছে । :-bd :-bd :-bd thuoc viagra cho nam
দুরন্ত জয় বলছেনঃ
can levitra and viagra be taken together‘ছিঃ জাতি লজ্জা লাগেনা তোমার?থুঃ’
এই থুথু টা আমাদের জন্য। আমরা সেই জারজদের এখনও এদেশের মাটিতে স্বাধীন ভাবে থাকতে দিচ্ছি, তাই এ থুথু আমাদের প্রাপ্য।
আর সাকা তো সে সময়েরই।
ভাল লিখেছেন রণ দা…… চালিয়ে যান side effects of quitting prednisone cold turkey
সফিক এহসান বলছেনঃ puedo quedar embarazada despues de un aborto con cytotec
zithromax azithromycin 250 mgআপনার একটা লেখা পড়ে ইচ্ছা করেই মন্তব্য করিনি। একটা লেখা দিয়ে কাউকে বিচার করা যায় না… তাই একটানা এই ব্লগের সবগুলো (কবিতা পড়িনি, ঐ জিনিসটা ঠিক আমার মাথায় ঢুকে না!) লেখা পড়ে ফেললাম। এবার কিছু বলা যেতে পারে…
রাজু রণরাজ দা’ আমি এক কথায় আপনার লেখার একজন ভক্ত হয়ে গেলাম। এবং সেই সাথে আপনার পরিচ্ছন্ন চিন্তার… আর আপনার ট্যাবু ভাঙ্গা সত্যকে স্পষ্ট ভাষায় অথচ চমৎকার শৈল্পীক ভাবে বলার ক্ষমতারও… >:D<
জাস্ট হ্যাটস অফ টু ইউ ব্রো… অনেকদিন এতো সাহসী ও সাবলীল লেখা পড়ি না!
^:)^
রাজু রণরাজ বলছেনঃ capital coast resort and spa hotel cipro
will i gain or lose weight on zoloftঅনেক অনেক ধন্যবাদ সফিক ভাই ♣♣♣♣
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
এই লেখাটা অনেক আগেই পড়েছিলাম। তখন মন্তব্য করা হয়নি।
অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। কিন্তু এর বেশি বলার কোন ভাষাও নেই আমার কাছে