বাঙলার আলোঃ শহীদ জগতজ্যোতি দাস শ্যামা
বার পঠিত
একাত্তর এসেছিলো বাংলাদেশের মাটি থেকে অভিজাততন্ত্রের শেকড় চিরতরে উপড়ে ফেলার দুঃসাহস নিয়ে । একাত্তরের বীরেরা এসেছিল ধর্ম বর্ণ সামাজিক অর্থনৈতিক শ্রেনিভেদ মুছে ফেলতে ঘূর্ণিঝড় হয়ে । আজ জগতজ্যোতি দাশের কথা আমরা জানিনা । যেন মনে রাখার প্রয়োজন ই নেই । শহিদ জগতজ্যোতি আমাদের স্মৃতি প্রকোষ্ঠে বিস্মৃত হয়ে যাওয়া এক অসীম সাহসীর উপখ্যান । স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এসে আমরা দেখতে পাই শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি দাশ কে নিয়ে লেখা প্রবন্ধ বা ইতিহাসভিত্তিক রচনার সংখ্যা ১০ টির অধিক নয় । আমাদের নির্লজ্জতার এক নিষ্ঠুর বলি শহিদ জগতজ্যোতি দাস ডাকনাম শ্যামা । যার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল দাস কোম্পানী নামে ৩৬ জনের ( মতান্তরে ২৫) একটি মুক্তিযোদ্ধা দল ।
শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি ১৯৭১ সালে ছিলেন মাত্র ২১ বছরের এক কলেজ ছাত্র । তো এই কলেজ ছত্র কি করেছিল তা আপনাদের একটু মনে করিয়ে দেই । ভাটিবাংলার বিশাল হাওড়বেষ্টিত এলাকা – সুনামগঞ্জ নেত্রকোনা কিশোরগঞ্জ হবিগঞ্জের প্রায় প্রতিটি থানা মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধিন হয়েছিলো তার নেতৃত্বে । ৩৬ জনের ( মতান্তরে ২৫) দল নিয়ে তার বাহিনী ” দাস কম্পানী” । সাবসেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিল তাহিরপুরের বড়ছরা ( টেকেরঘাট) । সেই তাহিরপুর থেকে জামালগঞ্জ দিরাই খালিয়াজুড়ি মদন মার্কুলি আজমীরিগঞ্জ বানিয়াচং বাহুবল হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সে ছুটে বেরাত দেশী নৌকা নিয়ে । মার্কুলির কাছে পাক আর্মির জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার কৃতিত্ব তার । জগতজ্যোতির ও তার দাস পার্টির ভয়ে ভৈরব থেকে সুনামগঞ্জ নৌ চলাচল বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় পাক আর্মি এবং এয়ার সাপোর্ট সহ বিশেষ কমান্ডো টিম পাঠানো হয় শুধুমাত্র শহিদ মুক্তিযোধা জগতজ্যোতি কে নিশানা করে । জগতজ্যোতি দাশ । সহযোদ্ধাদের রক্ষার জন্য একাকী প্রান দিয়ে যাওয়া বাংলার সূর্য সন্তান , ভাটি অঞ্চলের মহানায়ক শ্যামা । হবিগঞ্জের জলসুখা গ্রামের জীতেন্দ্র চন্দ্র দাস ও হরিমতি দাসের কনিষঠ পুত্র জগতজ্যতি দাসের জন্ম ২৬ এপ্রিল ১৯৪৯ সালের । বাবা ও বড় ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন । হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি ১৯৬৮ সালে এস রস সি পরীক্ষায় ২ ইয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন । ১৯৬৮ সালে তিনি ভর্তি হন সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে । ১৯৭১ সালে ছিলেন এইচ এস সি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ।
যুদ্ধের রণকৌশল রপ্ত করতে ট্রেনিং এর জন্য চলে যান মেঘালয়ে । প্রায় ৩২ দিনের প্রশিক্ষন ক্যাম্পের মধ্যে ইকো ১ ট্রেনিং ক্যাম্পের ডিউটি সার্জেন্ট এর দায়িত্ব পালন করেন । ঐ সময়ে এম্বুশে পা দিলে কিভাবে বের হউয়া যায় গ্রেনেড নিক্ষেপ বিমান ধ্বংশ স্থলপথে শত্রুকে পরাস্ত করার কৌশল সহ গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধের ময়দানে একজন দক্ষ সৈনিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তলেন জগতজ্যোতি । নেতৃত্বের গুনাবলী থাকায় ৩৬ জনের সাহসী যুবক কে নিয়ে গড়ে তোলেন দাস পার্টি । সহ অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন ইলিয়াছ । সহদ জগতজ্যোতি দাশ বীরবিক্রম তার প্রথম কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন । তার দ্বিতীয় কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন ইটনার ছিলনি গ্রামের ই সহযোদ্ধা শহিদ সিরাজুল ইসলাম বিরবিক্রম এবং সর্বশেষ কম্পানি কমান্ডার ছিলেন মতিয়ুর রহমান বীরবিক্রম ।
মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাত সাব সেক্টরের অধীনে বিস্তীর্ণ ভাটি অঞ্চল শত্রুমুক্ত রাখার দায়িত্ব পরেছিল তার উপর । দিরাই , শাল্লা , ছাতক , আজমিরিগঞ্জ বানিয়াচং জামালগঞ্জ তাহিরপুর কিশোরগঞ্জ ও নেত্র কোনার নৌ পথ পাক দখলমুক্ত রাখার যুদ্ধে প্রানের বাজি রেখে লড়ে যান দাস পার্টির যোদ্ধারা । মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তিনি ছিলেন পাকি বাহিনীকে দলিত মথিত করে এগিয়ে যাবার অগ্র পথিক । শুধু মাত্র তার সাহসী অভিযানের কারনে পাকিস্তান সরকার রেডিওতে ঘোষনা দিতে বাধ্য হয় ” এই রূট দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জান মালের দায়িত্ব সরকার নেবে না । ” মাত্র ১৩ জন সহযোদ্ধা নিয়ে বানিয়াচং এ পাকবাহিনীর ২৫০জন সেনা ও দোসরদের অগ্রগতি রোধ করে দেন যুদ্ধে প্রান হারায় পাকি বাহিনীর ৩৫ জল্লাদ । পাকি বাহিনী অ তাদের দোসর রাজাকার আলবদরদের কাছে তিনি ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক । বিশাল ভাটিবাংলায় পাকি বাহিনিকে পরাভুত করতে দাবড়ে বেরিয়েছেন তিনি । ( অসমাপ্ত)
লাল সবুজের ফেরিওয়ালা বলছেনঃ
জগতজ্যোতি দাশ কে নিয়ে লেখা প্রবন্ধ বা ইতিহাসভিত্তিক রচনার সংখ্যা ১০ টি না ২টি ও নেই মনে হয়