ডাঃ ভূপেন হাজারিকা এবং এক বিস্মৃত ইতিহাসের গল্প…
1074
বার পঠিত– Tarique Linclon & Rahman Raad
মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষদিকে মারাত্মকভাবে আহত হয় বাবু, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের চার নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার; পারিবারিক নাম Ruhel Ahmed। – বোন এবং দুই ভাইয়ের মাঝে মেজো ছিলেন তিনি। একাত্তরে বয়স ছিল মাত্র ১৯, সদ্য এইচ এস সি পাস করে বুয়েটের আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। বাসা ছিল ধানমন্ডিতে, তাঁদের ধানমন্ডির বাসা একাত্তরে ছিল সেইফ হাউজ। এমনকি জাতীয় দৈনিকে একবার তাঁর বাসার টিএনটি নাম্বারটা একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের হেল্প লাইন হিসেবে পত্রিকায় চলে আসে। সে আরেক কাহিনী। আজ অপরাজেয় সেই ১৯ বছরের দামাল ছেলের অন্যরকম একটি ইতিহাস তুলে ধরবো। ৪৩ বছর আগের এক গৌরবময় অনন্যসাধারণ ইতিহাস…
সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানীদের ব্রাশফায়ারে বাম পা উড়ে যায় তার , জরুরীভিত্তিতে তাকে আসামের এক মিলিটারি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সদ্যস্বাধীনতার সংগ্রামরত জন্মভূমি ছেড়ে এতদূরে অজানা অচেনা পরিবেশে বাবুর সময়টা যেন একঘেয়ে স্থির হয়ে যায়। কিছুই ভালো লাগে না। তারপর কাজ করছে যুদ্ধাহত হবার কষ্ট এবং স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে নিজে না থাকতে পারার আশংকা। একদিন হুট করেই এক সরবভারতীয় কংগ্রেস নেতা তার পরিবার নিয়ে উপস্থিত। স্পেশাল পারমিশন নিয়ে এসেছেন, মুক্তিযোদ্ধার সাথে দেখা করবেন বলে। পাকিস্তানী মিলিটারির নরপশুগুলোকে নাকানিচুবানি খাইয়ে দেয়া অপ্রতিরোধ্য মুক্তিযোদ্ধাদের সামনাসামনি দেখে জীবন সার্থক করতে চান এই কংগ্রেসম্যান এবং তার পরিবার। ভদ্রলোক বাবুকে দেখেই প্রচণ্ড আবেগে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, আর তার স্ত্রী পায়ের এই অবস্থা দেখে কেঁদে ফেললেন। পাশে বসে অনেক কথা জিজ্ঞেস করলেন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে চাইলেন। এক পর্যায়ে যখন জানতে চাইলেন কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা, তখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাবুকে এক বিচিত্র অসুবিধার কথা বলতে হল।
হাসপাতালের প্রতিটা বেডে বেডবাগস বা ছারপোকার ছড়াছড়ি। তাদেরই দুটো পরিবার মনের আনন্দে বাসা বেঁধেছে বাবুর পায়ের প্লাস্টারের ভেতর। একটা হাঁটুর নিচে যেখানে তিনটি বুলেটে তার হাড় উড়ে গেছে, আরেকটা উপরে ফিমারের মাংসে যেখানে মর্টারের স্প্লিন্টার আঘাত হানে। নিরবিচ্ছিন্নভাবে তারা খেয়ে যাচ্ছে, প্লাস্টারের ভেতর চলছে তাদের ঘরকন্না। অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কখনো বাবু প্লাস্টারের উপর জোরে জোরে থাবা মারে, কখনো ঝাড়ুদারের কাছ থেকে চেয়ে নেয়া ঝাড়ুর শলা দিয়ে প্লাস্টারের ভেতর খোঁচায়। তাতে কিছুক্ষনের জন্য থামলেও আবার শুরু হয় ছারপোকাদের অভিযান। নিয়মিত প্লাস্টার কেটে ড্রেসিং করার কথা থাকলেও সেবাটা পাচ্ছিল না বাবু যথারীতি, চারদিকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আহাজারি। তবুও হসপিটালের ইন চার্জকে বলেও রেহাই না পেয়ে ভাবলেন বলেই ফেলি কংগ্রেসম্যানকে, যদি কাজ হয়। cialis 20 mg prix pharmacie
ঘটনার কিছুটা বুঝতে পেরে কংগ্রেসম্যান তার প্লাস্টার কাটার ব্যবস্থা করলেন পরদিন, কাটার পর দেখা গেল বিচিত্র দৃশ্য। পায়ের মাঝখানে কোন মাংস নেই বললেই চলে কেবল হাড় আর চামড়া, পোলিও আক্রান্ত পায়ের মত চিকন হয়ে গেছে, ভেতরে সদর্পে সংসার করছে ছারপোকার সংসার। শেষমেষ অনেক জোরাজুরি করে বাবুকে আসামের শিলচরে নিজেদের বাসায় নিয়ে এলেন সেই কংগ্রেসম্যান এবং তার প্রেমময় সহধর্মিণী। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় পেয়ে দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ দেখতে এল বাবুকে। মুক্তিযোদ্ধারা তখন কিংবদন্তী ভিনগ্রহ থেকে আশা কিংবা স্বর্গ থেকে মর্তে আশা একদল দেবদূতের মত যারা কিনা নিজের জীবন বাজী রেখে সাধারণ মানুষের মুক্তির কথা বলে, কৃষকের চাষের জন্যে স্বাধীন জমিটুকু জয় করতে চায়।
ঘরের ছেলের মত যত্ন-আত্মি পেল বাবু। সেখানে প্রতিদিন দুপুরে খাবার পর সংসারের কর্ত্রী সেভেন্টিএইটের রেকর্ডে এক আসামিয়া শিল্পীর গান শোনেন। বেশ গর্ব করে বলেন তাদের নিজস্ব সুরে, ‘ইনি ডক্টর আছেন’, অত্যন্ত বিখ্যাত শিল্পী। দেখেছ কি অসাধারন মিষ্টি তার গলা। কেমন লাগে তোমার? বাবু কিছুক্ষন ভেবে জবাব দিল, গলা তো সুন্দর, কিন্তু আগে তো শুনিনি নাম কি তার? ampicillin working concentration e coli
-ভদ্রমহিলা দ্বিগুণ উৎসাহে বলেন, আরে, উনি হলেন ভূপেন হাজারিকা, ঐযে “ডঃ ভুপেন”, বিখ্যাত গায়ক।
বাবু বিরস মুখে বললেন, নাহ, কমন পড়ে নাই। মানবেন্দ্র কিংবা হেমন্ত বা মান্না দে হইলেও কথা ছিল, ভূপেন হাজারিকার নামই তো শুনি নাই। তখনো বাবু টের পায়নি নিজের অজান্তেই কখন সে ভূপেন হাজারিকার গানের প্রেমে পড়ে গেছে। ব্যাপারটা সে বুঝল বড় বিচিত্র এক ঘটনায়। pharmacie belge en ligne viagra
একসময় বাবু আসাম থেকে দেশে ফিরে আসলো এবং বঙ্গবন্ধু সিভিয়ারলি উন্ডেড মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ব্যাচের সাথে তৎকালীন ইস্ট জার্মানিতে চলে এল বাবু, একা না তাঁরা ২৫ জন। প্রথম যেদিন এই দল জার্মানিতে নামেন তখন তাঁদেরকে ২৫ চে গুয়েভারা বলে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। জার্মানিতে তাঁদের ট্রিটমেন্ট চলছে আর চলছে একের পর এক মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার। পূর্ব জার্মানিতে তখনো বাংলাদেশের কোন অ্যাম্বেসী তৈরি হয়নি, ভারতের অ্যাম্বেসেডর রামু মজুমদার বাবুদের সার্বিক দেখাশোনা করেন। বাবুদের ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার এই প্রথম ব্যাচ তখন ইস্ট জার্মানির সেই লেভেলের ক্রেজ, “Twenty five Che from Bangladesh” নামে নামে চেনে সবাই ওদের। একটু সুস্থ হবার পর প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দেখতে আসেন ওদের, প্রচুর ইন্টারভিউ দিতে হয়, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে হয়।
একদিন হঠাৎ রামু মজুমদার এসে বাবুকে বললেন, –বাবু, একজন ফেমাস সিঙ্গার আসছেন, পলিটিক্যাল সং ফেস্টিভ্যালেব( এই ফেস্টিভ্যালটা প্রথমে সোভিয়েত রাশিয়াতে হয়, তারপর ইস্ট জার্মানিতে আসে) গান করতে। তখন আমেরিকা থেকে সদ্য বিতাড়িত এঞ্জেলা ডেভিস এবং ডঃ ভুপেনের এই দল ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বের হয়। রাশিয়ায় শেষ করে তখন পূর্ব জার্মানিতে তাঁরা। আসামি এই গায়ক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে একটা গান লিখেছেন, গেয়ে শোনাতে চান।
–শিল্পীর নাম কি রামুদা?
–শিল্পীরে মনে হয় চিনবা না, তবে খুব ভালো গান করেন তিনি। অসাধারন কণ্ঠ। উনার নাম ভূপেন হাজারিকা।
–আরে, বলেন কি? চিনব না মানে? আমি তার গানের ভক্ত না? কই উনি? চলেন চলেন।
রামুদা এহেন প্রতিউত্তরে যত না অবাক হলেন, বাবু বোধহয় অবাক হল তার চেয়ে বেশি। আসামে থাকার সময় ক্লান্ত প্রতিটি দুপুরে ভূপেন হাজারিকার মোহময় কণ্ঠ শুনতে শুনতে কবে যে সেটা বাবুর অসম্ভব ভালো লেগে গেছে, সে নিজেও টের পায়নি। সেটা অবশ্য রামুদার কাছে ব্যাখ্যার সময় পাওয়া গেল না। সাঁই সাঁই করে হুইলচেয়ার গড়িয়ে বাবু ছুটে গেল, ভূপেনের কাছে এসে সেই হুইল চেয়ার থেকেই নিচু হয়ে প্রনাম করল। ভূপেনদা বাবুকে দেখলেন, তুই মুক্তি? তুই মুক্তিযোদ্ধা? তুই মুক্তিযোদ্ধা? বলে বাবুকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদে ফেললেন। যেই মুক্তিযোদ্ধাদের অমর বীরত্বগাঁথা শুনেছেন তিনি, শুনেছেন অপরাজেয় কিছু তরুণের কথা গানও লিখেছেন প্রবল ভালোবাসায় কিন্তু এই প্রথম কোন বাঙালী মুক্তিকে দকেহলেন তিনি। তাদের একজনকে সামনাসামনি দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না এই মহান শিল্পী। তোরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিস? দেশ স্বাধীন করেছিস? কত শুনেছি তোদের কথা? ভূপেনদার বাবুকে জড়িয়ে ধরে বলেই চলেছেন, আর চোখ মুছছেন।
একসময় একটু স্থির হলেন, বললেন, তোদের জন্য একটা গান লিখেছি, তোদের গেয়ে শোনাব। বাবু বললেন দাদা আমি ভিতরে বলে আসি, একটা সাক্ষাৎকার চলছে। বাবু হুইলচেয়ার দাবড়ে আবার ভেতরে ঢুকলো, বাকি মুক্তিযোদ্ধারা তখন সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন, সবাইকে জানাতে হবে, উনাকে নিয়ে আসতে বাকি সবার পারমিশন লাগবে। ভেতরে তখন সাক্ষাৎকার দিচ্ছিল মেজর শরীফুল হক, ক্যাপ্টেন হারুন, ক্যাপ্টেন আমিন।
বাবু হুইল করে দৌড়ে এল শরিফুলের কাছে
–ভাই, একজন ফেমাস সিঙ্গার, খুব ভালো সিঙ্গার, আমাদের জন্য একটা গান লিখছেন, শোনাইতে চান। নিয়া আসি ভিতরে?
–নাম কি সিঙ্গারের?
–ডাঃ ভূপেন হাজারিকা।
– এহ, নাম শুনি নাই। বইতে কও।
বাবুর উৎসাহে কে যেন ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিল। বেচারা আবার হুইল দাবড়ে ফিরে গেল ভূপেনদার কাছে,
–ইয়ে মানে ভূপেনদা, একটু বসেন, এখনই আপনাকে নিয়ে যাব। ভিতরে সবাই ইন্টারভিউ দিতেছে তো, এখনই শেষ হয়ে যাবে। ভূপেনদা বসলেন। পাঁচ মিনিট যায়, দশ মিনিট যায়, ভিতর থেকে আর ডাক আসে না। এরপর একটা প্রোগ্রামে যাওয়ার কথা, কিন্তু ভূপেনদা তো এইখানে গান শোনাবেন বলে কথা দিয়েছেন। আবার হুইলচেয়ার করে ছুটে আসলো বাবু, এইবার ক্যাপ্টেন হারুনকে গিয়ে ধরল, — হারুন ভাই, আসামের খুব বিখ্যাত সিঙ্গার, আসছিল আমাদের গান শোনাবে বইলা।
– (সিলেটী টানে হারুন বলল)কিতা, নাম কিতা সিঙ্গারর?
— এই ডাঃ ভূপেন হাজারিকা।
— (হারুনের মুখ দেখে গেল, তারও কমন পড়ে নাই) আইচ্ছা বসতে কও তারে, আমরা একটুক ব্যস্ত আছি।
এইভাবে তিনবার বাবু গেল আর আসলো, ভিতরের ব্যস্ততা শেষ হইল না। বাবু তো বুঝতেছে “কতটা অসাধারণ শিল্পী তিনি”, কিন্তু এরা তারে পাত্তাই দিতেছে না কারন এরা ভূপেন হাজারিকার গান শোনে নাই। বাবু বিশাল ইনসাল্টেড ফিল করছে এবং খুবই লজ্জিত বোধ করছে ভূপেনদার সামনে যেতে, কেননা তার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, তিনিও ইনসাল্টেড ফিল করছিলেন। অবশেষে ৪৫ মিনিট থাকার পর ত্যাক্তবিরক্ত হয়ে বাবু হারুনকে গিয়ে বলল, হারুন ভাই, অ্যাটলিস্ট মানুষটারে ভেতরে নিয়া আসি? হারুন বলল, আচ্ছা নিয়া আও।
বাবু উল্কার বেগে বের হয়ে ভূপেনদা আর তার ভাই জয়ন্ত হাজারিকাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। ভূপেনদা দেখতে কিন্তু মোটেও রকস্টারের মত আকর্ষণীয় ছিলেন না, খুব সাদামাটা বেশভূষায় সাধারন থাকতে পছন্দ করতেন তিনি। যদিও ভুপেনের পাশে তাঁর ছোট ভাই ‘জয়ন্তও’ সে কিছুটা রকস্টার দেখতে। তবুও নজর কারতে পারল না কারো।
তাই তিনি যখন ভিতরে ঢুকে বললেন, “আমি ভূপেন, তোমাদের জন্য একটা গান লিখেছি, তখন কাউকেই বিশেষ মনোযোগ দিতে দেখা গেল না। না। কেবল ক্যাপ্টেন হারুন বেশ নিরাসক্ত গলায় বলল, আচ্ছা দাদা বসেন, ইন্টারভিউগুলা শেষ হোক। সাম্যবাদের শিল্পী, মানবতার শিল্পী ভূপেন হাজারিকা আরো ১৫ মিনিট সেইখানে ঠায় বসে রইলেন আর এইদিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ “ইন্টারভিউ” চলতেই থাকলো। অবশেষে অনেকক্ষন পর শরিফুল হক এদিকে মনোযোগ দেবার সময় পেল, বাবুর দিকে তাকাতেই বাবু অনুনয়ের সুরে বলল, গাইতে কন না ভাই… তারপর কিছুটা এগিয়ে শরিফুল গলায় কৌতুক এনে পরিস্কার কলকাতার টানে বলল,
— কি দাদা, আমাদের জন্য গান লিখেছেন নাকি? শোনান দেখি কি লিখেছেন… ( গলায় তাচ্ছিল্যের ভাবটা পরিকার বোঝা গেল)
বাবু তো জাস্ট তাকিয়ে আছে, ভূপেনদা দাঁড়ালেন, আশ্চর্য শান্ত গলায় বললেন, তোমাদের জন্য যে গানটা লিখেছি, সেটা একটু পরে গেয়ে শোনাচ্ছি। আগে আরেকটা গান শোনাই , কেমন?
বলে “গঙ্গা আমার মা” {১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ভূপেন হাজারিকার গাওয়া অসামান্য একটা গান (গঙ্গা আমার মা ,পদ্মা আমার মা ও ও তার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা যমুনা।। একই আকাশ একই বাতাস এক হৃদয়ের একই তো শ্বাস)} বলে দিলেন এক টান।এক অভূতপূর্ব সুরলহরী ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে, কেবলই তুলতে লাগলো অসামান্য অনুরণন। ভূপেনদার চোখটা বন্ধ, ভেতরের সবটুকু অপমান, ক্রোধ আর আবেগ যেন আগ্নেয়গিরির মতো ছিটকে বেরিয়ে এল, ভেসে গেল চরাচর।( যেটার কথা পরবর্তীতে বাবু বলেছে এইভাবে যে, গঙ্গা আমার মা এরপরেও হাজারবার শুনছি আমি, কিন্তু এইরকম অভূতপূর্ব টান আর কখনো শুনি নাই) কয়েক মুহূর্তের মধ্যে এক বিচিত্র দৃশ্য দেখা গেল। ক্যাপ্টেন শরিফুল হক, মেজর আমীন, ক্যাপ্টেন হারুন—ঘরের সবাই চেয়ার থেকে নেমে গেছে, ভুপেনদার পায়ের কাছে বসে বাকরুদ্ধ হয়ে আসা গলায় ক্ষমা চাইছে আর বলছে, দাদা কি গাইলেন এইটা? ক্যামনে গাইলেন? মাফ করে দেন দাদা, চিনতে পারি নাই আপনাকে। এইদিকে বাবু রাগ দেখে কে? চেয়ারের উপর থাবা দিতে দিতে বলল, কইছিলাম না আমি? কইছিলাম না আপনাগোর, ইনি অসাধারন গান? শোনেন নাই আমার কথা? কেন শুনবেন?
সময় থেমে গেল। ভূপেন হাজারিকার অসামান্য গানের ভুবনে হারিয়ে গেল মহাকাল। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামে যাবার কথা ছিল তার, কিসের প্রোগ্রাম? কিসের কি? ভূপেন হাজারিকার পায়ের কাছে বসে আছে সবাই, কয়েকজন একটু আগের ভুলের প্রায়শ্চিত করতে পা’টা জড়িয়ে আছে। যতই বলেন তিনি, আরে ছাড় ছাড় কি করিস তোরা, ততই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাদুটো। ভূপেন হাজারিকা অসামান্য সুরের মায়াজালে সময় থেমে গেল, একের পর এক গান গেয়ে যেতে লাগলেন তিনি, তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ভূপেনদার একপাশে মাথাটা কাত করে বাবু বসে আছে, গানগুলো তাকে নিয়ে গেছে অন্য এক জগতে।
এক পর্যায়ে রাত দুইটা বেজে গেল। ভূপেন যেই বললেন, এইবার তো উঠতে হয় রে । সাথে সাথে সবাই কেঁদে ফেলল, না আপনাকে যেতে দেব না আমরা। ভূপেন আর কি করেন? গান চলতে লাগলো। আসামিজ, বাঙলা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গান, চলছে তো চলছেই। তারপর অনেক রাতে ভূপেনদা বললেন, এবার তোদের জন্য যে গানটা লিখেছি সেটা শোন। বলে চোখটা বন্ধ করে শুরু করলেন এভাবে, silnejsie ako viagra
জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ,
জয় জয় মুক্তিবাহিনী
হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল উপস্থিত সবাই। গান চলছে, হাউমাউ করে কান্নাও চলছে। কি অসম্ভব আবেগ দিয়েই না গাইছেন ভূপেনদা…
জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ,
জয় জয় মুক্তিবাহিনী
ভারতীয় সৈন্যের সাথে রচিলে
মৈত্রীর কাহিনী।।
ধর্মান্ধতার বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষতা,
বিভেদগামী শক্তির বদলে
গঙ্গা পদ্মার একতা,
বিশাল ভলগা, গঙ্গা-পদ্মার
পাড় ভেঙ্গে এক হল পানি।।
সামন্ততন্ত্রের বিপরীতে, এক নতুন প্রজাতন্ত্র,
সমরতন্ত্রের বিপরীতে,
এক অভিনব সমাজতন্ত্র,
স্থাপনা করে রক্তে লিখিলে
শেখ মুজিবরের বাণী।।
পরবর্তীতে গানটা জার্মান পলিটিক্যাল ফেস্টিভ্যালে গান ভূপেন হাজারিকা, সেখানেও ঠিক এরকম এক আবেগমথিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নানা দেশের নানা ভাষার মানুষ, কিন্তু মনে হচ্ছে সবাই যেন গানটা বুঝতে পারছেন, অনুভব করতে পারছেন। স্টেজে আর সবার সঙ্গে কোরাসে বাবুও গানটা গেয়েছিল ভূপেনদার সাথে, যেটা বাবুর জীবনের অন্যতম অবিস্মরণীয় এক ঘটনা হয়ে আছে আজো। “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য” এই অমর বাণী যে মানবতাবাদী মহান শিল্পীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে বারবার, বাংলাদেশের প্রতি তার এই অকৃত্রিম অসামান্য মমতা আমরা কোনোদিন ভুলব না, বাংলাদেশ কোনোদিন ভুলবে না… cialis new c 100
পরিশিষ্টঃ খুব অদ্ভুত হলেও সত্য, সেদিনের পরে গানটি আর গাওয়া হয়নি কখনো। ৭৫ পরবর্তী মৌলবাদী শকুনেরা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে গানটা নিষিদ্ধ করে। সেই নিষেধাজ্ঞা হয়তো আজো বলবৎ আছে। ডঃ ভূপেন হাজারিকার সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের দেখা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ১০ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে, গানটা অনএয়ার হবার ৪৪ বছর পর আবারো মুক্তিযোদ্ধা রুহেল আহমেদ বাবু’র সাথে কণ্ঠ মেলাবার সুযোগ হয়েছিল আমাদের ক’জনার। তাই বাবু ভাইয়ের কাছে অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞ আমরা, নতুন প্রজন্মকে একটা অসামান্য ইতিহাসের খোঁজ দেবার জন্য, চাপা পড়া ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে সাহায্য করবার জন্য… domperidona motilium prospecto
জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ— https://www.youtube.com/watch?v=On2SIwYLML4
অংকুর বলছেনঃ
অসাধারণ একটা গান ভাই। বাবু ভাই এর কাছে গানটা শুনেছি। এই গল্পটাও অনেক ভাল লাগল
ঘুমন্ত বলছেনঃ sildenafil 50 mg dosage
বাবু ভাই মানে কি এই গল্পের বাবু? উনাকে চেনেন? viagra lowest price
অংকুর বলছেনঃ
হ্যা এই গল্পের বাবু ভাই। চিন উনাকে। অনেল বন্ধুসুলভ মানুষ এই বাবু ভাই
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
হ্যাঁ, উনিই বাবু ভাই, রুহেল আহমেদ বাবু… আপনি চেনেন নাকি, ঘুমন্ত?
ঘুমন্ত বলছেনঃ
ভুপেন হাজারিকার এই গানটা শুনেছি। গানটা কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে বুঝিলাম না। আমাদের কিছু উদ্যোগ নেয়া উচিত
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
গানটা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কেননা গানটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ছিল, গানটায় মৌলবাদ আর ধর্মান্ধতাকে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলার মন্ত্র ছিল, গানটা পচাত্তর পরবর্তী পাকিস্তানী শকুনদের গাত্রদাহ সৃষ্টি করতো…
অবিলম্বে গানটাকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেবার দাবী জানাচ্ছি…
নীহারিকা বলছেনঃ
আমার মানুষ টার সাথে দেখা হল না
তারিক লিংকন বলছেনঃ
আপনার নিজের দোষে!!! pastilla generica del viagra
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
আপনার নিজের দোষে…
সহমত…
তারিক লিংকন বলছেনঃ
অসাধারণ এক ইতিহাসের উন্মোচন করেছেন!!
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
নিজের কথাটা তো একবারও বললেন না…
আপনি না থাকলে এই কাজ একলা কখনই করতে পারতাম না…
তারিক লিংকন বলছেনঃ
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
bird antibiotics doxycycline