একজন কালজয়ী সাহিত্যস্রস্টার কথা…
284
বার পঠিতদরজায় শব্দ হল হঠাৎ, ঠক ঠক ঠক। নুরুল আফসার ঘড়ির দিকে তাকালেন, রাত বাজে সাড়ে ১০টা। এত রাতে কে এল? দরজা খুলে অবাক নুরুল,”বারেক, এতো রাতে ? কি ব্যাপার?
কালো চাদরে ঢাকা সর্বাঙ্গ, হালকা চাপ দাড়ি মুখে, ছেলেটার চোখের দৃষ্টি মাছের মতো, নিস্পলক, ঘষা কাঁচ যেন। সালাম দিল, ঠাণ্ডা স্বরে বলল, “তেমন কিছু না স্যার, আপনাকে একটু আসতে হবে।“
-কোথায়?
–আমার সাথে, ক্যাপ্টেন সাহেবের জরুরি তলব।
–আমি তো খেতে বসেছি।
– ব্যাপারটা স্যার জরুরী। খুব বেশিক্ষন লাগবে না, বাইরে জীপ দাড়িয়ে আছে।
অধ্যাপক নুরুল আফসার হাত ধুয়ে শার্টটা গায়ে চড়াচ্ছেন, রেহানা এসে দাঁড়ালেন সামনে। “ আলবদরের লোকজন নাকি বাড়ি বাড়ি থেকে শিক্ষক, সাংবাদিকদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে, আর ফিরে আসছে না ওরা। ছেলেটার ভাবভঙ্গি ভালো ঠেকল না, তুমি যেয়ো না প্লিজ।
একটু হাসলেন নুরুল, স্ত্রীকে আলিঙ্গনে জড়িয়ে কপালে একটা চুমু এঁকে বললেন, তুমি চিন্তা করো না, আমার কিছু হবে না। আমি যাব আর আসব… glaxosmithkline levitra coupons
অধ্যাপক নুরুল আফসার তার কথা রাখেননি। ফিরে আসেননি তিনি। পাঁচদিনের মাথায় ডিসেম্বরের ১৯ তারিখে রায়েরবাজার বিলে তাকে পাওয়া যায়, বেয়নেটের খোঁচায় খোঁচায় ছিন্নভিন্ন শরীর, মাথায় বুকে দুটো বড় বড় গর্ত, বুলেটের। পিছমোড়া করে বাঁধা হাত, চোখ। বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে ঘষা কাঁচের মতো অস্বচ্ছ চোখের কিছু আলবদর সদস্য কালো চাদর গায়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল নুরুল আফসারদের, উদ্দেশ্য ছিল এই জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল আলবদর, ইসলামের দোহাই দিয়ে সভ্যতার নৃশংসতম গণহত্যা চালিয়েছিল ওরা, জাতির সূর্যসন্তানদের তিলে তিলে হত্যা করেছিল পবিত্র কাজ হিসেবে। নুরুল আফসাররা কথা রাখতে পারেননি, ফিরে আসেননি আর, একটা স্বাধীন দেশের জন্য লাখো নুরুল আফসার প্রান দিয়েছিলেন, অকাতরে, হাসতে হাসতে…
লিখে চলেছেন লেখক, রক্তাক্ত জন্মইতিহাসের কথা, একাত্তরের শকুনের কথা, জাতির সূর্যসন্তানদের কথা। কখন যেন চোখের কোনায় জমে উঠেছিল একবিন্দু অশ্রু, একসময় ক্লান্ত হয়ে সেও গড়িয়ে পড়ল কাগজের উপর, লেখকের অজান্তেই। লেখা চলছে… লেখকের নাম জহির রায়হান, তিনি লিখছেন যন্ত্রণার গল্প, অচিন্তনীয় কষ্টের গল্প, অসামান্য বীরত্বের গল্প, স্বাধীনতার গল্প…
৩০ বছর পর। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক, গল্পকার, অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রনির্মাতা জহির রায়হানের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন এক প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক। নানা বিষয়ে কথা হচ্ছে, একসময় সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করলেন, মিঃ রায়হান, আমরা জানি ৭১রের মুক্তিযুদ্ধের আগে আপনার সাহিত্যকর্মগুলোর মধ্যে অসাধারন সব বৈচিত্র্য ছিল। হাজার বছর ধরে, শেষ বিকেলের মেয়ে, বরফ গলা নদী, আরেক ফাগুনের মতো ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অসামান্য সব উপন্যাস লিখেছেন আপনি, সূর্যগ্রহণ, একুশের গল্পের মতো অসাধারন কিছু ছোটগল্পের গ্রন্থও আছে আপনার, কিন্তু ৭১ পরবর্তী সময়ে আপনার প্রায় সব সাহিত্যকর্ম আর চলচ্চিত্র মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। এটা কেন? মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সৃষ্টিকর্মগুলো কালজয়ী সন্দেহ নেই, কিন্তু আপনার কি মনে হয় না, মুক্তিযুদ্ধের বাইরে ভিন্নধর্মী কোন টপিকেও আপনার লিখবার সুযোগ ছিল?
একটু হাসলেন জহির, তারপর বলতে শুরু করলেন, ১৯৭১রের মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতা,বর্বরতা, যন্ত্রণা আর বীরত্বগাঁথার যে অসামান্য মহাকাব্য রচিত হয়েছিল, তার তুল্য আর কিছু হতে পারে না। হ্যাঁ, লিখবার মতো কিংবা মুভি বানাবার মতো আরো হাজারো বিষয় আছে পৃথিবীতে, আমার হয়তো সেসব নিয়েও লেখা উচিৎ ছিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কি, গল্পের কিংবা মুভির প্লট নিয়ে ভাবতে বসলেই আমার সামনে ৭১ নামক মহাকাব্য চলে আসে। নয়মাসে এমন সব অচিন্তনীয় ঘটনা ঘটতে দেখেছি যে, এরপর আর অন্য কোন প্লট নিয়ে ভাবতে হয়নি আমাকে, ৭১রের বিশাল মহাকাব্যের পাতা উল্টাতেই পেয়ে গেছি প্লট, সেই মহাকাব্যের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে পৈশাচিকতার গল্প, বিশ্বাসঘাতকতার গল্প, দ্রোহের গল্প, বীরত্বের গল্প। লাল টকটকে তাজা রক্তে লেখা এতসব গল্প রেখে অন্য গল্প খোঁজার সময়ই পেলাম না।
না পাঠক, পৃথিবী বিখ্যাত কালজয়ী সেই উপন্যাসগুলো আর লেখা হয়নি, ৭১রের মহাকাব্যের হাতড়ে যিনি অসামান্য সব সাহিত্যকর্ম রচনা করবেন, সেই জহির রায়হানকে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারির পর আর খুজে পাওয়া যায়নি। মিরপুর ১২ নম্বর মুসলিম বাজার বধ্যভূমির নাম না জানা হাজারো শহীদের ভিড়ে সেই হালকাপাতলা সদা হাস্যজ্জল মানুষটা হারিয়ে গেছেন। ১৯৯৯ সালে নূরী মসজিদের সম্প্রসারণকালে মাটির নিচে এক কুয়োর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে হলুদ সোয়েটার আর সাদা শার্ট, তার সাথে মাথার খুলি, অসংখ্য অস্থি। জহিরের ছেলে অনল রায়হান কাপড়গুলো দেখে শনাক্ত করেন, এখানেই ঘুমিয়ে আছেন তার বাবা। ৩০ শে জানুয়ারির সেই অ্যামবুশ থেকে বেঁচে যাওয়া বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক সেনা সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে…
“ আমাদের সাথে যে সাংবাদিক ছিলেন, তিনি কালো মতো একটা প্যান্ট পরেছিলেন। সাদা জামা এবং তার ওপর হলুদ রঙের সোয়েটার ছিল তার গায়ে। আমাদের উপর যখন হামলা হয়, তখন দেখলাম বুকে হাত চেপে ধরে-ওখানে একটা দেয়াল ছিল, তার গায়ে পড়ে গেলেন। দেখলাম, ওনার কাপড় রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তারপর আমি কিছুদূরে একটা গাছের পেছনে আশ্রয় নিয়ে দেখি কয়েকশো বিহারী ড্যাগার আর কিরিচ নিয়ে আল্লাহু আকবর স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে আসল। তারপর তারা মাটিতে পড়ে থাকা দেহগুলো কোপাতে কোপাতে টেনে পানির ট্যাংকের পশ্চিম দিকে টেনে নিয়ে গেল। তারপর আর আমি সেই লাশগুলোকে খুজে পাইনি ”
মাঝে মাঝে ভয়ংকর আক্ষেপ হয়। চাপা আফসোসে ভেতরটা কুঁকড়ে যায়। “আরেক ফাগুন” এর সেই অসম্ভব প্রতিভাধর শিল্পী খুব নীরবেই চলে গেলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অসামান্য উপন্যাসগুলো আর তৈরি হল না। হাজার হাজার আনসাং হিরোর বীরত্বগাঁথাগুলো যিনি শোনাতে পারতেন, যার অতুলনীয় লেখনীতে একাত্তর আজ স্রেফ গণ্ডগোল না হয়ে অসামান্য প্রেরনা আর শক্তির উৎস হতে পারত, সেই জহির রায়হান হারিয়ে গেলেন কিছু না বলেই। মুহূর্তগুলো বয়ে যায়, সময়ের প্রয়োজনে পাল্টে যায় চেনা পৃথিবী, জহির রায়হানরা ধীরে ধীরে বিস্মৃত ইতিহাস হতে থাকেন, প্রজন্ম তাদের ভুলে যায়, খুব সহজে…
viagra masticable dosis
তারিক লিংকন বলছেনঃ
আপনি কীভাবে যে এতো আবেগ মিশান লিখায় আমি আজও বুঝতে পারি না। খুব ভাল লাগলো…
লাল সবুজের ফেরিওয়ালা বলছেনঃ
prednisolone dosing chartগল্পের কিংবা মুভির প্লট নিয়ে ভাবতে বসলেই আমার সামনে ৭১ নামক মহাকাব্য চলে আসে।হাজার হাজার আনসাং হিরোর বীরত্বগাঁথাগুলো যিনি শোনাতে পারতেন, যার অতুলনীয় লেখনীতে একাত্তর আজ স্রেফ গণ্ডগোল না হয়ে অসামান্য প্রেরনা আর শক্তির উৎস হতে পারত, সেই জহির রায়হান হারিয়ে গেলেন কিছু না বলেই।
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
ইমোটা চোখে লাগছে… এই ইমোর মানে কি ভাই?
Iqbal Mahmud Anik বলছেনঃ cuanto dura la regla despues de un aborto con cytotec
mycoplasma pneumoniae et zithromaxএদের কথা পরলেই বুকের ভিতরে এক অদ্ভুত শুন্যতার সৃষ্টি হয়
মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলছেনঃ
জহির রায়হান আমার সবচেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্রকার এবং অন্যতম প্রিয় লেখক।