মিরপুর-দ্যা লাস্ট ব্যাটেলফিল্ড…
735
বার পঠিতঅস্কার পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ। উপস্থাপকের দিকে সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ, টানটান উত্তেজনায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। উপস্থাপকের ঠোঁটে রহস্যের হাসি। শেষ পর্যন্ত সেরা চলচ্চিত্রের নাম ঘোষিত হল, মনোনয়ন পাওয়া গুণী পরিচালকদের বিশ্বসেরা সব চলচ্চিত্রকে পেছনে ফেলে সকলের বিস্ফোরিত দৃষ্টির সামনে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে ঘোষিত হল Mirpur-The Last Battlefield এর নাম। বিস্ময়ের তখনো বাকি ছিল। সেরা স্ক্রিপ্ট, সেরা সিনেমাটোগ্রাফিসহ আরো ছয়টি বিভাগে অস্কার জিতলো মুভিটা, এর মধ্যে সেরা পরিচালকও ছিল। হালকাপাতলা মানুষটা উঠে দাঁড়ালেন, একটু আগে সেরা পরিচালক হিসেবে তার নাম ঘোষিত হয়েছে, মঞ্চে যেতে হবে। ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মানুষটা, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটোয় চিকচিক করছে গর্বমাখা আনন্দ, বাংলাদেশের প্রথম অস্কারজয়ী পরিচালক, জহির রায়হান…
৩০ বছর পর। জহির রায়হানের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন নিউইয়র্ক টাইমসের একজন সাংবাদিক। দীর্ঘক্ষণের সাক্ষাৎকার, সাংবাদিক ভদ্রলোক নির্দিষ্ট কোন টপিকেই থামতে পারছেন না। জহির রায়হানের সাংবাদিক ক্যারিয়ার, অমূল্য সাহিত্যকর্ম, একের পর এক মাস্টারপিস চলচ্চিত্র—একের পর এক টপিকে অসীম কৌতূহলে ছুটে বেড়াচ্ছেন টাইমসের সাংবাদিক, স্মিতহাস্যে স্বভাবসুলভ ধীরগলায় সব জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে যাচ্ছেন জহির।
—“পরিচালক হিসেবে বিশ্ব চলচ্চিত্রে আপনি একটা আলাদা জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ছয়বার অস্কার জিতেছেন পরিচালক হিসেবে, কিন্তু এর মধ্যে প্রথম অস্কারজয়টা এখনো রূপকথা হয়ে আছে। সেই গল্পটা শুনতে চাই। স্বাধীনতার কয়েক বছরের মাথায় এত বিস্তৃত পরিসরে এমন চলচ্চিত্র কিভাবে বানালেন?” প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন সাংবাদিক।
—“ সত্যি বলতে কি, “মিরপুর- দ্যা লাস্ট ব্যাটেলফিল্ড”বানাবার পটভূমিটা একটু বিচিত্র” বলতে শুরু করেন জহির।“ মুভিটার পেছনে আমার ব্যক্তিগত কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে।একাত্তরের শেষদিকে আলবদরেরা আমাদের দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যায়, তার মধ্যে আমার ভাই শহিদুল্লাহ কায়সারও ছিলেন। বিজয়ের পর তাদের লাশ পাওয়া যেতে থাকে এখানে সেখানে। জানুয়ারির ৩০ তারিখ সকালে একটা খবর পাই, মিরপুরের বিহারীপট্টিতে আমার ভাইসহ বেশ কয়েকজনকে আটকে রাখা হয়েছে। মিরপুর তখনো পাকিস্তানীদের দখলে। সেদিনই মিরপুর মুক্ত করতে সেকেন্ড বেঙ্গল রেজিমেন্ট সাঁড়াশি অভিযান চালাবে। ভাইয়ের খোঁজে আমিও ওদের সাথে যোগ দিলাম। মিরপুর ১২ নম্বরের সাদা পানির ট্যাংকির সামনে ঝিলের কাছাকাছি আসতেই অ্যামবুশ করে সাদা পোশাকের পাকিস্তানী মিলিটারি ও বিহারিরা। বেঙ্গল রেজিমেন্টের অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা সেদিন শহীদ হন, স্বাধীন দেশের মাটিতে। ব্রাশফায়ার শেষে কয়েকশ বিহারী ড্যাগার আর কিরিচ হাতে “আল্লাহু আকবর” শ্লোগান দিতে দিতে উপস্থিত হয়, ওদের কোপাতে কোপাতে মুসলিম বাজারের নূরী মসজিদের পিছনে কুয়ার মধ্যে ফেলে দেয়।
একটু থামেন জহির। বিষণ্ণদৃষ্টি, কণ্ঠটা ভারী হয়ে আসে তার,”৭১রের নয়মাস যুদ্ধকালীন নৃশংসতা চলেছে, কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে এই বীভৎস গণহত্যা দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি আমি। মুক্তিযুদ্ধের লাস্ট ব্যাটেলফিল্ড মিরপুর মুক্ত করতে ৩০ আর ৩১ তারিখ ভয়ংকর যুদ্ধ হয়েছিল, প্রান দিয়েছিলেন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। তাদের এই অনন্য আত্মত্যাগ সংরক্ষণ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেই, পাকিস্তানীদের নৃশংসতা বিশ্বকে দেখানোর পন করি। সারাজীবন হাতের কাছে জা আছে, তা দিয়েই মুভি বানিয়ে অভ্যস্ত আমি, কিন্তু মিরপুরের ব্যাটেলফিল্ড নিয়ে মুভি বানাতে দীর্ঘদিন খাটতে হয়েছে আমাকে, খুব কঠিন ছিল কাজটা। আন্তর্জাতিকমানের ফুল স্কেল ওয়ার মুভি বানাতে স্পেশালাইড ইকুইপমেন্ট দরকার, পারফেকশন চেয়েছিলাম আমি। প্রচুর বাঁধা-বিপত্তি আর সীমাবদ্ধতা ছিল, কিন্তু আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। হাল ছাড়িনি কখনো। মুক্তিযোদ্ধারা তো কখনো হাল ছাড়েননি, আমি কেন ছাড়ব? “
না পাঠক, মিরপুর- দ্যা লাস্ট ব্যাটেলফিল্ড মুভিটা অস্কার জিততে পারেনি। মুভিটা তৈরি হয়নি। যিনি তৈরি করবেন, সেই জহির রায়হানকে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারির পর আর খুজে পাওয়া যায়নি। মিরপুর ১২ নম্বর মুসলিম বাজার বধ্যভূমির নাম না জানা হাজারো শহীদের ভিড়ে সেই হালকাপাতলা সদা হাস্যজ্জল মানুষটা হারিয়ে গেছেন। ১৯৯৯ সালে নূরী মসজিদের সম্প্রসারণকালে মাটির নিচে এক কুয়োর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে হলুদ সোয়েটার আর সাদা শার্ট, তার সাথে মাথার খুলি, অসংখ্য অস্থি। জহিরের ছেলে অনল রায়হান কাপড়গুলো দেখে শনাক্ত করেন, এখানেই ঘুমিয়ে আছেন তার বাবা। ৩০ শে জানুয়ারির সেই অ্যামবুশ থেকে বেঁচে যাওয়া বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক সেনা সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে…
“ আমাদের সাথে যে সাংবাদিক ছিলেন, তিনি কালো মতো একটা প্যান্ট পরেছিলেন। সাদা জামা এবং তার ওপর হলুদ রঙের সোয়েটার ছিল তার গায়ে। আমাদের উপর যখন হামলা হয়, তখন দেখলাম বুকে হাত চেপে ধরে-ওখানে একটা দেয়াল ছিল, তার গায়ে পড়ে গেলেন। দেখলাম, ওনার কাপড় রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তারপর আমি কিছুদূরে একটা গাছের পেছনে আশ্রয় নিয়ে দেখি কয়েকশো বিহারী ড্যাগার আর কিরিচ নিয়ে আল্লাহু আকবর স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে আসল। তারপর তারা মাটিতে পড়ে থাকা দেহগুলো কোপাতে কোপাতে টেনে পানির ট্যাংকের পশ্চিম দিকে টেনে নিয়ে গেল। তারপর আর আমি সেই লাশগুলোকে খুজে পাইনি ”
মাঝে মাঝে ভয়ংকর আক্ষেপ হয়। চাপা আফসোসে ভেতরটা কুঁকড়ে যায়। ৭০ বছর আগের ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আজো “ফিউরি”র মত মুভি হয়, “ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস” জয় করে পৃথিবী। অথচ মুক্তিযুদ্ধের উপর আজো একটা ফুলস্কেল ওয়ার মুভি হল না। মিরপুরের সেই রক্তাক্ত ব্যাটেলের আজ ৪৪ বছর পার হয়ে গেল, গল্পটা শোনানো হল না। নাম না জানা সেই শহীদরা আজো অচেনাই রয়ে গেল, তাদের অসামান্য বীরত্বগাঁথা পৃথিবীকে জানানো হল না। জহির রায়হান নীরবে হারিয়ে গেলেন, মিরপুর- দ্যা লাস্ট ব্যাটেলফিল্ডটা আজো বানানো হল না…
অংকুর বলছেনঃ
cialis new c 100দুরন্ত জয় বলছেনঃ
ঠিকই বলেছেন……
অংকুর বলছেনঃ
দুরন্ত জয় বলছেনঃ
এই ইমো কেন!!!
লাল সবুজের ফেরিওয়ালা বলছেনঃ
অবশেষে বহু দিন বাদে ডন ভাইয়ের লেখার দেখা পাইলাম half a viagra didnt work
অংকুর বলছেনঃ
হে হে। ডন ভাই মনে হয় অবসর পেয়েছেন
দুরন্ত জয় বলছেনঃ
হ্যাঁ ঠিক বলেছেন । ডন ভাই তো এখন অমাবশ্যার চাঁদ…
দুরন্ত জয় বলছেনঃ
ঠিক ডন ভাই এর মাত্রার নয় পোস্টটি।
জহির রায়হানকে হারিয়ে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না।
অংকুর বলছেনঃ
ঠিক বলেছ জয়
দুরন্ত জয় বলছেনঃ
কোনটা প্রথমটা নাকি দ্বিতীয়টা?
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
আমার আবার মাত্রা আসলো কই থেকে?
আমি তো জানতাম না। জয় কি একটু ব্যাখ্যা করবেন? metformin gliclazide sitagliptin
নীহারিকা বলছেনঃ
দীর্ঘশ্বাস !
অংকুর বলছেনঃ
শঙ্খনীল কারাগার বলছেনঃ
আপনার লেখায় বিহারীদের চাকু এবং ডেগারের কথার উল্লেখ পেলাম। কিন্তু আমি যতদুর জানি তাঁরা সেই সময়কার কিছু আধুনিক অস্ত্রেরও ব্যাবহার করেছিল। বিহারীদের সাথে সেদিন মিশে ছিল কিছু পাকিস্তানী পলাতক সেনা। যৌথ বাহিনীর সাথে সেখানে তাঁদের গোলাগোলীও হয়েছে। এখানে কিছুটা অস্পষ্ট – জহির রায়হানকে কি দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল? জহির রায়হানের সাথে যে দুজন অথবা একজন এখন মনে পড়ছেনা তাঁদের ভাগ্যেইবা কি ঘটেছিল? কেননা জহির রায়হানের সাথে সাথে তাদেরও আর হদিস পাওয়া যায় নি। আমি মনে করি কেবল ডেগার আর চাকু দিয়ে জহির রায়হানের সাথে থাকা একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর সদস্যদের কাবু করা সম্ভব ছিল না। অথচ যারাই এই কাহিনীর বর্ণনা করেছিলেন তারাই ডেগার চাকুর প্রসঙ্গটা তুলে এনেছেন। এ এক রহস্যই বটে। এই বিষয়ে আমার কাছে একটা পিডিএফ ফাইল ছিল কিন্তু দীর্ঘ লিস্টের মধ্যে এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না। খুঁজে পেলে পূর্ণাঙ্গ মন্তব্য করা যেত।
ইকবাল মাহমুদ অনিক বলছেনঃ
জহির রায়হান বেচে থাকলে “মিরপুর দ্যা লাস্ট ব্যাটেল ফিল্ড” বানাতে ৩০ বছর সময় নিতেন না।
এতদিনে হয়ত কয়েক বার অস্কার জিতে নিতেন
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
শুরুটা তো ঠিকই ছিল !! মাঝপথে কেন সবকিছু এলোমেলো হতে হল ?! একজন জহির রায়হানকে বাঁচিয়ে রাখলে কি উপরওয়ালার খুব ক্ষতি হতো !!
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
স্রস্টার উপর মাঝে মাঝে ভয়ংকর অভিমান হয়… এতোটা নিষ্ঠুরতার কি প্রয়োজন ছিল? আদৌ প্রয়োজন ছিল কি?
মায়াবী তেজস্বিনী বলছেনঃ
buy kamagra oral jelly paypal ukজহির রায়হানরা চলে যায় আর সাঈদিরা বেঁচে থাকে। কেন সবসময় এমনটা হয় ভাইয়া? আমরা জহির রায়হানের লাশটুকু খুঁজে পাইনা আর গোলাম আজমের সাড়ম্বর জানাযা দেখি। এত অক্ষম আমরা…
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
acne doxycycline dosageমাঝে মাঝে আমাদের বিচিত্র অক্ষমতায় খুব যন্ত্রণা হয়, গ্লানির বিষাদে হারিয়ে যাই। ৩০ লাখ শহীদের জমিনে এমন গ্লানির আগুনের পুড়তে হবে আমাদের, এটা অনেক অনেক লজ্জার, অনেক অনেক অপমানের…
মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলছেনঃ
kamagra pastillasএকদম মনের কথাটা বলেছেন। প্রচন্ড আফসোস হয়।
তবে এ লাইনে ঢু মেরে বলতে পারি- অনেকে আগ্রহী। কিন্তু টাকা নাই। এসব কাজে কেউ টাকা ঢালতে চায় না। আমি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য কাকরাইলের প্রযোজক ভবনে গেছিলাম। প্রত্যেকে আমাকে বলেছিল, ‘আমরা সাকিব খান টাইপ মুভি বানাই। আমরা ব্যবসা বুঝি। পুরষ্কার আমার দরকারি নাই।’
দোয়া করবেন, যেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়।