প্রশ্নপত্র ফাঁস : রোধকল্পে করণীয় এবং একটি প্রস্তাব।
358
বার পঠিতশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। বাংলাদেশে শিক্ষা একটি অপরিহার্য বিষয়। বর্তমান সরকার তার গত মেয়াদে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সৃষ্টি করে। নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন, গণহারে এমপিওভুক্তি, ঝরে পড়া রোধে ব্যবস্থা, নকল রোধে কার্যকরী ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি ভাল পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদও ব্যাপক সফলতার সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু নতুন করে দেখা দেয় আরেকটি মারাত্মক সমস্যা ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ বিষয়টি। শিক্ষা বিভাগের কিছু অসাধু, ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কল্যানে প্রাথমিক থেকে বিসিএস পরীক্ষা পর্যন্ত প্রায় সবকটি পাবলিক পরীক্ষারই প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে থাকে। প্রায় সবকটি পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের পর মন্ত্রণালয় প্রথমে অস্বীকার এবং বাধ্য হয়ে পরে স্বীকারও করে। তারই ধারাবাহিকতায় ফাঁস রোধে অভিযান পরিচালনা করে, দোষী কয়েকজনকে আটক ও শাস্তিও প্রদান করা হয়। কিন্তু কিছুতেই পানিধার হয়নি। দেখা যায় পরবর্তী পাবলিক পরীক্ষাতেই আবারো প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেছে। সরকারের বর্তমান মেয়াদে তো এটা মহামারী আঁকার ধারণ করেছে। ফেসবুকের পাতা, ফটোকপির দোকান, মোবাইলের এসএমএস এমনকি মাল্টিমিডিয়া ম্যাসেজেও পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পৌছে যাচ্ছে পরিক্ষাত্রীদের হাতে। যারা ফেসবুকে নেই তাদের জন্য ফেসবুকের জনকল্যানী(!)ছেলেরা ফেসবুক পাতা থেকে স্ক্যানকপি ডাউনলোড করে এমএমএস এর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের কাছে। বিনিময়ে নিচ্ছে টাকা কিংবা ধন্যবাদ সামগ্রী! ভবিষ্যৎ প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার সুবিধার্থে অপেক্ষাকৃত সৎ অভিভাবকেরাও বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের অসৎ উপায়ে প্রশ্ন যোগাড় করে দিচ্ছেন। কেননা এই পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট না করলে পরে ভাল কোন স্কুলে ভর্তির সুযোগ থাকবে না।
বিষয়গুলো পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, অভিভাবক সমাজ, সুশীল সমাজ সর্বোত্রই আলোচিত হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হলে তারা প্রথমে ধুমধাম অস্বীকার, পরে আংশিক স্বীকার এবং বর্তমানে পুরোটাই স্বীকার করে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
আমরাও বুঝে গেছি… এভাবে প্রশ্ন ফাঁস হবে, অভিযোগ উঠলে চোখ বন্ধ করে অস্বীকার করা হবে, পরে বাধ্য হয়ে স্বীকার যাবে, খতিয়ে দেখা হবে, সব যার যার যায়গায়তেই থাকবে এবং আবারো প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে।
কিন্তু এভাবে আর কত???
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের সচেতন মানুষেরা তাদের অভিমত-পরামর্শ তুলে ধরেছেন। কেউ কেউ নিজ উদ্যেগে মন্ত্রণালয়ে পৌছে পর্যন্ত পরামর্শ দেবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মানুষের পরামর্শ গ্রহণ তো দূরের কথা; জৈনিক ব্যাক্তি নাকি মন্ত্রণালয়ে ঢুকারই অনুমতি পাননি! কেউ গ্রহণ করুক বা না করুক আমি এখানে আমার একটি অভিমত প্রস্তাব আকারে সীমাবদ্ধতা এবং জটিলতাসমেত তুলে ধরছি…
#প্রস্তাব : “ইমেইলের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র প্রেরণ”।
বর্তমান সরকার ডিজিটাল সরকার। এই ডিজিটালকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত সহজভাবে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব। যেমনঃ যে পাবলিক পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে সেই পরীক্ষার প্রশ্নের একটি করে মোট ১০টি কপি ১০জন শিক্ষকের কাছ থেকে মিনিমাম একমাস আগে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নিজের কাছে সংগ্রহ করে নিবেন। সেই ১০টি প্রশ্ন থেকে যে কোন একটি কিংবা ১০টির সমন্বয়ে একটি প্রশ্ন তিনি নিজে নির্বাচন করবেন। সেই প্রশ্নের কপিটি তিনি একান্ত নিজের কম্পিউটারে রাখবেন। পরীক্ষার আগের দিন রাত ১০টার পর তিনি সেই প্রশ্নের কপিটি ইমেইলে সবকটি বোর্ড চেয়ারম্যানদেরর কাছে পাঠিয়ে দেবেন। বোর্ড চেয়ারম্যানগণ পরীক্ষার দিন সকাল ৭টার পর এবং ৮টার আগে নিজ নিজ বোর্ডের আওতাভুক্ত সব জেলা শিক্ষা অফিসারের ইমেইলে কপিটি পাঠিয়ে দেবেন। জেলা শিক্ষা অফিসারগণ নিজ দায়িত্বে ঐদিন সকাল ৮টার পর এবং সাড়ে ৮টার আগে কপিটি নিজ নিজ উপজেলা প্রধান শিক্ষা অফিসারের নিকট ইমেইলে পাঠিয়ে দেবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার পাওয়া মাত্র প্রশ্নপত্রটি পর্যায়ক্রমে সব পরীক্ষাকেন্দ্রের কেন্দ্র সচিবের ইমেইলে পাঠিয়ে দেবেন। কেন্দ্র সচিব কপিটি প্রথমে প্রিন্ট এবং পরে ফটোকপি করে প্রত্যেক হলে বিলি করবেন।
এই পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস হবার কোন সুযোগই নেই। আর ফাঁস হলেও ঘন্টা খানেকের মধ্যে কিছু করার থাকবে না। তবে হ্যা, একটা ঝুকি অবশ্য থাকতে পারে! সেটা হচ্ছে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাবনা! যদি একান্ত তাই ঘটে তবে দায়ী শুধুমাত্র বোর্ড চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। কেননা এই সিস্টেমে মন্ত্রীর পর বোর্ড চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কেউ রাতের মধ্যে প্রশ্নের নজর দেখবে না। অবশ্য বিষয়টি পিএস সম্প্রদায়ের আওতামুক্ত রাখতে না পারলে কিছু করার নেই!
সীমাবদ্ধতা : এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহজ, কম ব্যয়বহুল এবং অত্যাধুনিক। তবে এটা বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু অর্থের প্রয়োজন। এই সিস্টেমে সব পরীক্ষাকেন্দ্রে একটি করে নেট কানেকশন সহ ল্যাপটপ, একটি সাদাকালো প্রিন্টার এবং একটি ফটোকপি মেশিন প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে এই পদ্ধতি ব্যয়বহুল মনে হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এটা সাশ্রয়ী।
জটিলতা: এই পদ্ধতিতে কিছুটা জটিলতার সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে। যেমন ইমেইল প্রদানের ক্ষেত্রে সার্ভার সমস্যা, নেটওয়ার্কে ধীরগতি, কেন্দ্র সমূহে বিদ্যুৎ জটিলতায় প্রিন্ট বা ফটোকপি করতে সমস্যা ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলি মোটেও বড় কোন ফ্যক্টর হয়ে দেখা দেবে না।প্রয়োজনে পরীক্ষা কিছুটা সময় দেরীতে আরম্ভ করা যাবে কিংবা বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে জেনারেটর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এরপরও সবদিক থেকে সমস্যা একেবারে জেঁকে বসলে শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দিতে পারেন। এবং ঐ পর্যাপ্ত সময়ে যোগাযোগ করে নিকটস্ত কেন্দ্র(যে কেন্দ্রে প্রশ্ন প্রিন্ট ও ফটোকপি সম্ভব হয়েছে)থেকে প্রশ্ন ফটোকপি করে এনে বিলি করতে পারেন।
শেষকথা: শুধুমাত্র সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষা দেশ-সমাজ গঠনে কোন ভূমিকা পালন করতে পারে না। বর্তমান সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে তা ধরে রাখতে প্রশ্নফাঁস রোধে স্থায়ী ও টেঁকশই কোন পদ্ধতি অবলম্বনের বিকল্প নেই।
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
accutane pricesশিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতে হলে প্রশ্ন ফাস রোধের কোন বিকল্প নেই। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য । will i gain or lose weight on zoloft
এসজিএস শাহিন বলছেনঃ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
irbesartan hydrochlorothiazide 150 mgক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
সাম্প্রতিক সময় বেশ কয়েকটি পন্থা শুনেছি এই প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করার জন্য। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের আদৌ কোন সদিচ্ছা আছে কি’না প্রশ্নফাঁস রোধে।
তারিক লিংকন বলছেনঃ
সেটাই কথা! ইচ্ছা থাকলে উপায় বের করা কোন ব্যাপার না। আমার কথা হচ্ছে সারা বিশ্বের পরীক্ষা পদ্ধতি কি? উন্নত বিশ্বের পোলাপাইন কি ধোয়া তুলশী পাতা? নাকি তাদের পরীক্ষা পদ্ধতি এমন যে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার দরকার পরে না…
এই বিষয়ে আসলেই ব্যাপক গবেষণা দরকার, ভবিষ্যৎকে বাঁচাতে