একজন তাতাবাবু।
293
বার পঠিত‘যাহা আজগুবি, যাহা উদ্ভট, যাহা অসম্ভব, তাহাদের লইয়াই এই পুস্তকের কারবার। ইহা খেয়াল রসের বই, সুতরাং সে রস যাঁহারা উপভোগ করিতে পারেন না, এ পুস্তক তাঁহাদের জন্য নহে।’
নামকরা এক বইয়ের ভুমিকা এটা; লিখেছিলেন লেখক নিজেই।
“বলছিলাম কি, আমি একটা বই লিখেছি কবিতার,
উচু রকম পদ্যে লেখা আগাগোড়াই সবি তার ।
তাইতে আছে “দশমুখে চায়,হ জম করে দশোদর,
শ্মশানঘাটে শষপানি খায় শশব্যস্ত শশধর।”
এই কথাটার অর্থ যে কি ,ভাবছে না কেউ মোটেও-
বুঝছে না কেউ লাভ হবে কি, অর্থ যদি জোটেও।
এরই মধ্যে হাই তুলিস যে? পুতে ফেলব এখনি,
ঘুঘু দেখেই নাচতে শুরু, ফাঁদ ত বাবা দেখনি!
কি বললি তুই? সাতান্নবার শুনেছিস্ ঐ কথাটা?
এমন মিথ্যা কইতে পারিস্ লক্ষ্মীছাড়া বখাটা!
আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধ্যি নেই কো পেরোবার
হিসেব দেব বলেছি এই চোদ্দবার কি তেরোবার।”
এই লেখকের চেহারার একটু বর্ণনা আমরা তার লেখা থেকেই পাই ‘গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।’।
তাতাবাবু হল সেই লেখক।
এই তাতা সৃষ্টি করতে পারেন অদ্ভুত সব প্রাণী—
হাঁস ছিল, সজারু (ব্যাকরণ মানি না)
হয়ে গেল ‘হাঁসজারু’ কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে—‘বাহবা কি ফূর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।’
আরও কত! সিংহরিণ, হাতিমি—কত কী! শুধু নামকরণই শেষ নয়, উদ্ভট প্রাণীদের চেহারা এঁকেও দেখিয়েছেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথের ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসে তাতা আর হাসি নামে ছোট দুই ভাই-বোন আছে। ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর, কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে উপেন আর বিধুর কোলজুড়ে এলো প্রথম ছেলে-সন্তান। উপেন বন্ধু রবীন্দ্রর উপন্যাস থেকে তাতা নামটা রেখে দিলেন ছেলের নাম।
উপেনকে চিনেন তো?? আরে সে হল আমাদের উপেন্দ্র কিশোর। তার সেই ছেলে তাতা কালে কালে হয়ে উঠলেন সুকুমার। খেয়াল খুশির আবোল তাবোল রচয়িতা, উদ্ভট আজগুবি হযবরল-র স্রষ্টা সুকুমার রায়। যাঁর লেখা পড়ে আজো সবার হিয়ার মাঝে ধাঁই ধপাধপ্ তবলা বাজে !
বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে “ননসেন্স্ রাইমের” প্রবর্তক সুকুমার রায়!
১৮৯৫ সালে মাত্র আট বছর বয়সে সুকুমারের প্রথম কবিতা ‘নদী’ প্রকাশিত হয় ‘মুকুল’ পত্রিকায়। এরপর ন’বছর বয়সে ‘টিক্ টিক্ টং’ লেখেন ইংরাজি শিশুপাঠ ‘Hickory,Dickory,Dock’-এর অনুবাদ হিসাবে। ১৯০৪ সালের নভেম্বর মাসে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ‘বয়েজ ওন পেপার’-এর দ্বারা শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রী হিসাবে পুরস্কৃত হন তিনি। এরপর ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বি.এস.সি (অনার্স) পাশ করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে এবং তারপরেই প্রতিষ্ঠা করেন ‘ননসেন্স ক্লাব’ ১৯০৭-এ। এর মুখপাত্র ছিল ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা’নামের একটি পত্রিকা। এই সময় থেকেই তাঁর আবোল-তাবোল ছড়ার আত্মপ্রকাশ। সুকুমার পরবর্তী সময়ে আরেকটা ক্লাব তৈরি করেন। যার নাম ‘মানডে ক্লাব’। তার নিজস্ব ভাষায় ‘মন্ডা ক্লাব’। মন্ডা ক্লাবের সাপ্তাহিক সমাবেশে সদস্যরা ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’ পর্যন্ত সব বিষয়েই আলোচনা করতেন। সুকুমার রায় মজার ছড়ার আকারে এই সাপ্তাহিক সভার কয়েকটি আমন্ত্রণপত্র করেছিলেন সেগুলোর বিষয়বস্তু ছিল মুখ্যত উপস্থিতির অনুরোধ এবং বিশেষ সভার ঘোষনা ইত্যাদি। তিনি ব্রাহ্ম যুবকদের নিয়ে সমিতিও গঠন করেছিলেন।
শুধু হাসির ছড়াই নয়, যদি নাটক বলা হয়, তবু বুঝি সুকুমার বাদ যাবে না। ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’ নাটকে পুঁইশাকের চচ্চরী, বাথগেট কোম্পানি, ব্যায়ামবীর সেন্ডো কেমন অনায়াসেই স্থান পেয়েছে। যমদূতের মাইনে বাকি পড়ে, হনুমান বাতাসা খায়—এ যেন সুকুমারের পক্ষেই সম্ভব। শুধু কবিতা নয়, ছড়া নয়, নাটক নয়, চিত্র নয়—গল্পও সুকুমারের হাত ধরে খেলা করে। আশ্চর্য কবিতা, পাগলা দাশু, দ্রিঘাংচু, বাজে গল্প—১, ২, ৩ তারই লেখা। শুধু কি গল্প! জীবনী, জীবজন্তু, বিজ্ঞান সবই বেরিয়েছে তার হাত দিয়ে। সুকুমার রায় অভিনেতাও ছিলেন। তিনি ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে ‘গোড়ায় গলদ’ নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন।
১৯১১ সালে ‘গুরুপ্রসন্ন ঘোষ স্কলারশিপ’ নিয়ে আলোকচিত্র ও মুদ্রণপ্রযুক্তির ওপর উচ্চতর শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান এবং কালক্রমে ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। হাফটোন মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর ১৯১২ সালে তিনি ‘Halftone Facts Summarized’ রচনা করেন যা Penrose Annual-এ প্রকাশিত হয়। এই সময়ে তিনি ইংল্যান্ডের ‘Royal Photographic Society’-র সদস্য নিযুক্ত হন। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন সময়েই তিনি রবীন্দ্রনাথের গানের ওপর কয়েকটি বক্তৃতা দেন রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির আগে। এরপর ১৯১৩ সালে তাঁর রচিত ‘Standardizing the Original’, ‘Penrose Annual’ – এ প্রকাশিত হয় এবং ‘Pin-hole theory’–র ওপর একটি রচনা ১৯১৩-এর জুলাই মাসে ‘The British Journal of Photography’ – তে প্রকাশিত হয়। কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে সুকুমার কলকাতাতে ফিরে আসেন। সুকুমারের বিলেত থেকে ফেরার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। উপেন্দ্রকিশোর জীবিত থাকতে সুকুমার লেখার সংখ্যা কম থাকলেও উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিশুসাহিত্যিক দীর্ঘ আট বছর সম্পাদনা করেন শিশুপত্রিকা ‘সন্দেশ’। আর এ সময়ই সুকুমারের শিশুসাহিত্য প্রতিভা স্ফুরিত হয়। buy kamagra oral jelly paypal uk
১৯১৯ সালের ১৩ই ডিসেম্বর কালীনারায়ণ গুপ্তর নাতনি শ্রীমতি সু-প্রভা দাসের সাথে সুকুমার রায়ের বিয়ে হয় এবং দুই বছর পরে ১৯২১ সালের ২য় মে সত্যজিতের জন্ম হয়। ১৯২২ সালে তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে ‘Royal Photographic Society’-র সহকর্মী নিযুক্ত হন।
এই শিশুসাহিত্যিক মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। ময়মনসিংহের মসূয়া থেকে কালাজ্বর বাঁধিয়ে ফিরেছিলেন সুকুমার। সেই সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ১০০ নং গড়পার রোডের পৈতৃক বাড়িতে মৃত্যু হয় তার। আবোল-তাবোল এই সাহিত্যিকের জীবদ্দশায় কোনো বই-ই বের হয়নি। তার মৃত্যুর নয় দিন পর বের হয়েছিল তার প্রথম ছড়ার বই ‘আবোল-তাবোল’। তিনি মৃত্যুশয্যায়ই সব ঠিক করে প্রেসে দিয়েছিলেন।
সুকুমারের শেষ রচনা ছিল—
আদিমকালের চাঁদিম হিম
তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম
ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর
গানের পালা সাঙ্গ মোর।
মৃত্যুকালে হাসতে হাসতে মৃত্যুর এমন ইঙ্গিত বোধ হয় সুকুমারই দিতে পারেন। মৃত্যুর অনেক পর ১৯৪০ সালে প্রকাশ হয় সুকুমারের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘পাগলা দাশু’। এরপর ‘হ-য-ব-র-ল’, ‘খাই খাই’, ‘বহুরূপী’, ‘জীবজন্তু’, ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’, ‘অতীতের ছবি’ প্রকাশ পায়।
তাঁর প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই আবোল-তাবোল শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার। তাঁর লেখা কবিতার বই আবোল তাবোল, গল্প হযবরল, গল্প সংকলন পাগলা দাশু, এবং নাটক চলচ্চিত্তচঞ্চরী বিশ্বসাহিত্যে সর্বযুগের সেরা “ননসেন্স” ধরণের ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের অন্যতম বলে মনে করা হয়, কেবল অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড (Alice in Wonderland) ইত্যাদি কয়েকটি মুষ্টিমেয় ক্লাসিক-ই যাদের সমকক্ষ। মৃত্যুর বহু বছর পরেও তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম শিশুসাহিত্যিকদের একজন।
“চুপ করে থাক্, তর্ক করার বদভ্যাসটি ভাল না,
এক্কেবারেই হয় না ওতে বুদ্ধিশক্তির চালনা।
দেখ্ ত দেখি আজও আমার মনের তেজটি নেভেনি-
এইবার শোন বলছি এখন- কি বলছিলাম ভেবেনি!”
ও, আজ সেই তাতাবাবু তথা সুকুমার রায়ের জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন, তাতাবাবু।
কোলাহল

যখন বলেছেনঃ জানু ১২, ২০২৩ 
যখন বলেছেনঃ ডিসে ০৮, ২০২২ accutane prices levitra 20mg nebenwirkungen
doctus viagraযখন বলেছেনঃ মে ৩১, ২০২২ 
যখন বলেছেনঃ এপ্রি ২৯, ২০২২ 
যখন বলেছেনঃ ফেব্রু ২৪, ২০২২ 
যখন বলেছেনঃ জানু ২৫, ২০২২ 
যখন বলেছেনঃ জানু ১৬, ২০২২ 
যখন বলেছেনঃ ডিসে ১৯, ২০২১
capital coast resort and spa hotel ciproMohd Shahanoor Alam Bhuiyan Titu @ বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীকদের তালিকা
shapan @ প্রসঙ্গ নারী : ধর্মীয় আর সামাজিক বর্বর আইন নারী খৎনা Female Circumcision
Mkjk @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
পারভেজ আহমেদ @ বাংলা কবিতায় ছন্দ কত প্রকার ও কি কি?
Md forid mia @ পা চাটা কুত্তার জলকেলি
Juel @ বিদ্রোহী কবি নজরুল ; একটি বুলেট কিংবা কবিতার উপাখ্যান
Juel @ জলচর মৎস্য হতে স্তন্যপায়ী মানুষ; বিবর্তনবাদের মহা নাটকীয়তার পরিণতি
Ask2ans @ The Boy In The Striped Pajamas