পথ
504
বার পঠিত scary movie 4 viagra izle“রা’আদ ভাই, গল্প তো আরেকটা লাগবে। হাজার দেড়েক শব্দের।” নির্ঝর ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা রহমান রা’আদের দিকে ছুড়ে দিল। রা’আদ সাহেব অবাক হলেন না। নির্ঝরের কথা বলার ধরণই এমন। কোন ভূমিকা ছাড়া হঠাৎ কিছু নিয়ে কথা বলতে শুরু করবে। যেমনটা এখন করল। কারও বাসায় এলে দরজা খোলার পর সাধারণত অভিবাদনমূলক কিছু বলা হয়। ঘরের বাসিন্দা বলে ভেতরে আসতে। তারপর অতিথি ঘরে ঢোকে। নির্ঝর তার ধারে কাছে দিয়েও গেল না। কলিং বেল এ শব্দ করল। রা’আদ সাহেব দরজা খুললেন। আর অনুমতির অপেক্ষা না করেই মোটামুটি নির্দেশের স্বরে হাজার খানেক শব্দের একটা ছোট্ট গল্পের অনুরোধ করে নির্ঝর ঘরে ঢুকে গেল। রা’আদ সাহেব কিছু মনে করলেন না। ছেলেটার কাজকর্মই এমন। অন্যরকম! “অন্যরকম” শব্দটা আর সবাই খারাপ ব্যবহার করলেও রা’আদ সাহেব ভাল অর্থেই করেন। অন্যরকম বলেই হয়তো এত কম বয়সে একটা প্রকাশনীর কর্ণধার হতে পেরেছে। আর দশটা প্রকাশনীর মালিকরা যেখানে হয় বুড়ো-হাবড়া সেখানে নির্ঝর এখন মধ্যতরুণ। ছেলেটাকে তার বেশ ভালই লাগে। হাস্যোজ্জ্বল মুখেই উত্তর দিলেন, “আবার গল্প কীসের জন্য? আর একেবারে শব্দসংখ্যা বেধে দিয়ে?”
রা’আদ সাহেবের নিজের জন্য পিরিচ দিয়ে ঢেকে রাখা চা’টা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলল, “সাতসকালে এত চিনি খান কীভাবে? ঘুম থেকে উঠে খাবেন কড়া লিকারের আদা চা। সারাদিন চাঙ্গা থাকবেন।… ও আচ্ছা, বইয়ের ফর্মা মেলানো যাচ্ছে না কোনভাবেই। হয় তিন পাতা বেশি হয়ে যায়। নইলে পাঁচ পাতা কম হয়ে যায়। তো ফন্ট আরেকটু ছোট করে নয় পাতা কম আছে। হাজার দেড়েক শব্দের আরেকটা গল্প ঢুকিয়ে দিলে ঠিকঠাক হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা, তুমি বুধবার সকালে একবার…” রা’আদ সাহেব মুখের কথা শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই নির্ঝর আবার বলল, “না না! আমার আজকেই লাগবে। পারলে এখুনি। নইলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বই বের করা যাবে না।”
“এখুনি!” রা’আদ সাহেব রীতিমত আকাশ থেকে পড়লেন, “গল্প লিখতে একটা আইডিয়া তো আমার চাই, না’কি?”
“বললাম তো যাচ্ছেতাই গল্প। যা খুশি লিখে ফেলেন। আপনি যা লিখবেন, পাবলিক তাই খাবে।”
কথাটা শুনে রা’আদ সাহেব খানিকটা ভ্রু কুঁচকলেন। প্রকাশকেরা সবখানেই ব্যবসার চিন্তা করে। ঠিক এই কথাটাকেই যদি বলা হত, “আপনি যা লিখেন, তাই পাঠক পছন্দ করে” তাহলে কত সুন্দর শোনাত! কিন্তু, নির্ঝর রা’আদ সাহেবের প্রতিক্রিয়ার দিকে খেয়াল করল না। সে জানালার মরিচা খুটতে খুটতে বলল, “লুতুপুতু প্রেমের গল্প হলে ভাল হয়। এইসব পাবলিক বেশি খায়।” রা’আদ সাহেবের ভ্রু’র কুঞ্চন বেড়ে গেল, “এখুনি গল্প লেখা আমার পক্ষে…” কথাটা শেষ করার আগে নির্ঝর আবার বলতে শুরু করল, “নিন। শুরু করে দিন।” বিছানার ওপর থেকে খাতা কলম নিয়ে টেবিলে গুছিয়ে দিল।
রা’আদ সাহেব দেখলেন, গল্প না লিখে দিলে এই পাগলের হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই। অগত্যা এসে চেয়ারে বসলেন। নির্ঝর আরেকটা চেয়ার টেনে নিয়ে রা’আদ সাহেবের পাশে বসল। রা’আদ সাহেব লিখতে শুরু করলেন—
সম্পর্কটার যেভাবে শুরু হয়েছিল তাতে এর আয়ু হবার কথা ছিল বড়জোর মাস ছয়েক। ফেসবুকে শুরু হওয়া প্রায় সব সম্পর্কের আয়ু এর চেয়ে বেশি কখনও হয়ও না। সম্পর্কের শুরুতে জয়ের বন্ধুরা ট্রিট নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল পরের ট্রিটের শুরুর জন্য। মৌরির বান্ধবীরা “পাইছি তোরে” ভঙ্গিমায় বলতে শুরু করল, “কী রে! খুব করে তো বলেছিলি, ফেসবুক থেকে প্রেম হয় না। হয়ে গেল তো? এখন দেখবি শুধু টপাটপ একটার পর একটা প্রেমে পড়তে শুরু করবি।” অথচ, সব নিয়ম নীতি আর বন্ধুদের ট্রিটের স্বপ্নটাকে ভেঙ্গে দিয়ে, সম্পর্কটা টিকে গেল পুরো ছয় বছর। এবং তা টিকে আছে আজও।
এখনও জয়ের মনে হয়, এই তো সেদিনই বোধ হয় বন্ধুদের থেকে কীভাবে কীভাবে যেন মেয়েটার সম্পর্কে জানাশোনা হয়। ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়। এই তো সেই দিনই তো বোধ হয় কাঁপাকাঁপা হাতে অচেনা একটা মেয়েকে নক দেয়া হল। কথা শুরু হল। দু’মিনিট থেকে শুরু হয়ে কথা বেড়ে গিয়ে দু’ঘণ্টায় গড়াল। আলোচনার বিষয় পরীক্ষার চাপের মত বড় বিষয় থেকে শুরু হয়ে গায়ের ওপর পিঁপড়া বেয়ে ওঠার মত ছোট বিষয় পর্যন্ত গড়াল। তার মাঝে কেমন করে যেন ছয়টা বছর গড়িয়ে গেল। মৌরির এখনও মনে হয়, এই সেদিন বোধ হয় অচেনা একটা ছেলে তাকে নক করল। “হাই! কেমন আছেন?” দিয়ে কথা শুরু হয়ে, কখন যে সেটা “তুমি আমার বুকের মধ্যখানে আছো” হয়ে গেল মৌরি সেটা নিজেই বুঝতে পারল না। বুঝতে পারল না এই অচেনা আলাভোলা ছেলেটা ঠিক কবে তার এতটা আপন হয়ে গেল। মনে হয়, সবকিছু হল এই সেদিন। এই সেদিনের মাঝে কীভাবে যেন ছয়টা বছর কেটে গেল। glaxosmithkline levitra coupons
অথচ, গত ২৪ ঘণ্টায় জয়ের কাছে মনে হয়েছে যেন ২৪টা বছর কেটে গেছে। না, জয়ের সাথে মৌরির কোন ঝগড়া হয় নি। এমনও না যে, দু’জনের দেখা করার কথা, তাই আগের দিনটা পেরোতেই চাইছে না। আমাদের এই গল্পটার বর্তমান অবস্থা বোঝাতে সেদিনের তারিখটা বলাই যথেষ্ট। তারিখটা ৬ই ফেব্রুয়ারি ২০১৩; গতকাল দুপুরে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কসাই কাদেরের রায় হয়েছে। জয় আগের দিন মিষ্টি কিনে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিল। যখন রায় পড়া হচ্ছিল, তখন হাতে মিষ্টি নিয়ে পাশে ছোটবোনকে নিয়ে বসে ছিল। ছোট বোনকে মিষ্টি খাইয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় উজ্জাপন করবে। যখন টিভির পর্দায় ব্রেকিং নিউজ হিসেবে রায় দেখা গেল, “যাবজ্জীবন কারাদণ্ড” জয়ের মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠল। মাথার ভেতরটা মুহূর্তেই অদ্ভুত রকম ফাকা হয়ে গেল। মনে হল, তার কানে কোন শব্দ ঢুকছে না। বাবার উঁচু গলায় সরকার আর ট্রাইব্যুনালের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে দেয়ার কিছুই সে শুনতে পাচ্ছে না। শুনতে পাচ্ছে না রিপোর্টারের মোটা গলার রিপোর্টিং। টিভির সামনে দিয়ে বারবার ব্রেকিং নিউজ স্ক্রল করে যেতে থাকল। মনে হল, সে তার কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। হঠাৎ, ছোট বোন পাশ থেকে তার শার্ট টেনে বলল, “ভাইয়া, রায় তো দিয়ে দিয়েছে। মিষ্টি খাইয়ে দাও।”
হঠাৎ করেই কোন কারণ ছাড়াই জয় ছোট বোনের গালে শব্দে একটা চড় মেরে বসল। ছোট বোন কিছু না বুঝতে পেরে, হতভম্ব চোখে খানিকক্ষণ জয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপরেই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে, জয়ের মা ছোট বোনকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। হাতের সবগুলো মিষ্টি নিয়ে জয়ও বেরিয়ে গেল। বাথরুমে গিয়ে সবগুলো মিষ্টি কমোডে ফ্লাশ করে দিল। ফিরতে গিয়েই হঠাৎ তার মাথা ঘুরে উঠল। দেয়াল ধরে কোন মতে সামলে নিলো। দু’হাতে মাথা শক্ত করে চেপে ধরে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ড্রয়িং রুম থেকে বাবার শাপশাপান্তের শব্দগুলো যেন মাথার ভেতর সুঁইয়ের মত করে বিঁধছে। শার্টটা খুলে ফুল স্পিডে ফ্যানটা ছেড়ে বিছানায় পড়ে গেল। খানিক পরেই যন্ত্রণাগুলো ভোঁতা হয়ে গেল। প্রবল ঘুম নেমে এলো দু’চোখে।
ঘুম ভেঙ্গে গেল ঘণ্টা দু’য়েক পরেই। ঘুম ভাঙ্গার কারণ বোঝা গেল প্রায় সাথে সাথেই। মোবাইল বাজছে। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল তারিকের কল। কল কেটে দিতেই দেখতে পেলো, সতেরোটা মিসকল। বুঝল গুরুত্বপূর্ণ কিছুই। ছয় সেকেন্ড পরেই আবার কল এলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে গালির তুবড়ি ছুটল, এতক্ষণ ফোন রিসিভ না করায়। অজস্র গালাগালির ভেতরে যেটুকু বোঝা গেল, কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ডাকা হয়েছে শাহবাগে। সবাই আসতে শুরু করেছে। জয় যেন এখনই রওনা দেয়।
হঠাৎ করেই জয় টের পেল তার ঝিমিয়ে পড়া ভোঁতা অনুভূতিগুলো আমার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। মাথা এখনও চক্কর দিচ্ছে। কিন্তু, এটা অন্যরকম। রক্তে অদ্ভুত একটা নেশা ভর করেছে। দরজা খুলে রীতিমতো দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। মোড়ের রিকশাওয়ালাকে “মামা টান দেন” বলেই লাফিয়ে উঠে গেল। তারপর খানিকটা দম ফেলে বলল, “শাহবাগ চলেন।” রিকশাওয়ালা খানিকটা মুচকি হেসে রিকশা ঝড়ের বেগে টান দিল। সেও কি খবর পেয়ে গেছে?
শাহবাগে যখন পৌঁছুলো তখন মাত্র পঞ্চাশ ষাট জন লোক হবে। জয় খানিকটা হতোদ্যম হয়ে গেল। কিন্তু, হঠাৎ খেয়াল করল মানুষ বাড়ছে। চারটা রাস্তা ধরেই মানুষ আসছে। হঠাৎ দেখলেন রাস্তার পাশে একটা মেয়ে বসে আছে। হাতে একটা প্ল্যাকার্ড – রাজাকারের ফাঁসি চাই। জয়ের মাথার ভেতরে বো বো করে ঘুরতে শুরু করল – ফাঁসি… ফাঁসি… ফাঁসি… ফাঁসি…। একটা সিএনজিতে করে দু’টো মানুষ এসে নামল ব্যানার নিয়ে। কাউকে চেনে না জয়। তার সামনেই ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল সবাই। কাউকেই চেনে না সে। তারিককে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। মোবাইল বের করে তারিককে কল করল একটা। “হারামজাদা!” বিড়বিড় করে গালি দিল জয়। তারিক কল রিসিভ করছে না। তারপর আবার মানববন্ধনের দিকে তাকাল। হঠাৎ করে মনে হল, এরা সবাই যেন তার কতদিনের চেনা। অনন্তকাল ধরে এদের সবাইকেই সে চেনে। গিয়ে দাঁড়াল তাদের সাথে।
খানিকবাদে কেউ একজন বলে উঠল, “দরকার পড়লে আমরা শাহবাগের রাস্তা বন্ধ করে দেব।” জয় দেখল সবাই ছড়িয়ে বসে শাহবাগ মোড়ে বসে গেল। ধীরে ধীরে ফাঁকা জায়গাগুলো পূরণ হতে শুরু করল। প্রথমে ধীরে ধীরে। তারপর দ্রুত। টিভি ক্যামেরা এসে ভিড় করল। প্রেস মিডিয়া এলো। রাতের দিকে মানুষ খানিকটা কমে এলো। জয় থেকে গেলো। শেষ রাতের দিকে খানিকটা তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। সকালে যখন তার ঘুম ভাঙ্গল, তখন সে নিজেই চমকে গেল। হাজার হাজার মানুষ। একটার পর একটা মিছিল নদীর মত করে এসে জনসমুদ্রে মিশে যাচ্ছে। একটু পরপর গান হচ্ছে, স্লোগান হচ্ছে।
ছবির হাঁটে গিয়ে এককাপ চা খেয়ে এসে সবার সাথে স্লোগান দিতে শুরু করল। একটানা অনেকটা স্লোগানের শেষে যখন চিৎকার করে “জ-য় বা-ং-লা” বলে তখন মনে হতে লাগল যেন সবার গলায় জিউসের বজ্র এসে লুকিয়ে গেছে। এত মানুষের মধ্যে মৌরি কোথায়? নিশ্চয়ই এসেছে এখানে। মোবাইল বের করল মৌরিকে কল করার জন্য। কিন্তু, মোবাইল আউট অব নেটওয়ার্ক।
আগের দিন কিছু খাওয়া হয় নি। আজ সারাদিনে জয়ের শুধু খাওয়া হয়ে ছয় কাপ চা। তারপরও এতটুকু ক্লান্তি নেই। প্রতিটা স্লোগান যেন বুকের মাঝখান থেকে উঠে আসছে। বিকেলে মানুষ বাড়তে শুরু করল বানের জলের মত করে। চিৎকার রব উঠল, “একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার”, “জামাত শিবিরের আস্তানা, ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও।”
“আপনি তো মনে হয় অলরেডি হাজার কভার করে ফেলেছেন। একটু তাড়াতাড়ি শেষ করেন না।” পাশ থেকে নির্ঝর নিঃস্পৃহ গলায় বলল।
রা’আদ সাহেব বিরক্ত চোখে নির্ঝরের দিকে তাকালেন। এই গাধাটা কি বোঝে, এই একটা কথায় তার লেখার ধারাটাই নষ্ট হয়ে গেল? এখন একটা ছাতার মাথা এন্ডিং দিয়ে এটা ওকে গছিয়ে দিতে পারলেই তিনি বাঁচেন। আবার লেখা শুরু করলেন:
সন্ধ্যার মশাল মিছিল শেষ করে অবশেষে সাতটার দিকে জয় বাসার দিকে রওনা দিল। বাসায় গিয়ে সবার আগে মৌরির সাথে কথা বলতে হবে। তারপর গোসল আর খাওয়া সেরে একটা লম্বা ঘুম। কাল সকালেই আবার চলে আসতে হবে এখানে। কোন রিকশাওয়ালা দেখা যাচ্ছে না। জয় দ্রুত পা চালাল। একবার পেছনের দিকে তাকাল। এখনও স্লোগানের আওয়াজ ভেসে আসছে। কে বলবে এখানে সে মাত্র একদিন ছিল? মনে হচ্ছে, যেন সে অনন্তকাল ধরে এই মোড়ে কেবল স্লোগানই দিয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টাকে মনে হচ্ছে চব্বিশ সহস্রাব্দ।
শাহবাগ এলাকা থেকে বেরোতেই মৌরির কল এলো। জয় কল রিসিভ করতেই অভিযোগের তুবড়ি ছুটল। সারাদিন ফোন কেন বন্ধ ছিল, মৌরির কি চিন্তা হয় না, জয় তো ভুলেই গেছে মৌরিকে…।
জয় হাসিমুখে অপেক্ষা করতে লাগল, মৌরির কথা শেষ হবার জন্য। তারপর বলল, “আরে পাগলি, আমি তো শাহবাগ ছিলাম। এত মানুষের ভিড়ে নেটওয়ার্কই ছিল না।”
ওপাশ থেকে উত্তর এলো, “তুমি শাহবাগ কী করছিলেন?”
জয়ের ভ্রু কুঁচকে গেল, “শাহবাগ কী করছিলাম মানে?”
“ওসব পলিটিকাল ইস্যুতে তুমি নিজেকে জড়াও কেন? তোমার তো কেউ মারা যায় নি। আর এসব তো আওয়ামী লীগের চাল আগামীবার ক্ষমতায় আসার জন্য। বোঝ না এসব?”
জয় পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেল। তার এত দিনের সব স্মৃতি আর এখন ঘটে চলা ঘটনাগুলো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেল। কানের কাছে ঝাঁ ঝাঁ করতে শুরু করল। অনেক দূরে দিগন্ত থেকে ভেসে আসছে “জ-য় বা-ং-লা।” শব্দ দু’টোকে কেমন যেন ভোঁতা মনে হচ্ছে। জয় আর কোন কিছুকেই অনুভব করতে পারছে না। cialis online pharmacy forum
ওপাশ থেকে মৌরি আবার বলল, “কী হল? কিছু বলছ না কেন?”
“মৌরি তোমার আর আমার দেখা করা দরকার। এখুনি!”
“এখন! পাগল হয়েছ? রাত হয়ে গেছে। এখন বেরুবো কীভাবে?” মৌরির গলায় বোঝা গেল যথেষ্ট অবাক হয়েছে।
“আমি কিচ্ছু জানি না। তুমি এখন যেভাবে পারো, আমার সাথে দেখা করবে।”
“ঠিক আছে। দেখছি কী করা যায়।”
আধ ঘণ্টা পর মৌরি এসে পৌঁছল। রিকশা থেকে নামতেই জয় ওর হাত ধরে ফুটপাতেই বসে পড়ল। কড়া গলায় বলল, “আমি এখন তোমাকে কিছু কথা বলব। চুপচাপ সব শুনবে। তারপর তুমি নিজে ঠিক করবে, আমাদের পথ কি এক থাকবে না আলাদা হয়ে যাবে।”
মৌরি ঘটনার আকস্মিকতায় একেবারে হতভম্ব হয়ে গেল। শুধু যন্ত্রচালিতের মত মাথা নাড়ল।
জয় শুরু করল – আসাদের কথা, সার্জেন্ট জহুরুল হকের কথা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কথা, সত্তরের নির্বাচনের কথা, ক্ষমতা দেয়ায় ইয়াহিয়ার টালবাহানার কথা, ২৫শে মার্চে এক রাতে ত্রিশ হাজার মানুষ হত্যার কথা, একটু একটু করে প্রতিবাদ শুরু হবার কথা, লাইন ধরে দাঁড়িয়ে গুলি করার কথা, নদীতে একটানা লাশ ভেসে যাবার কথা, কোটি মানুষের দেশান্তরী হবার কথা, সবুজ ঘাস লাল রক্তে ভিজে যাবার কথা, মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করার কথা, গর্ভবতী মায়ের পেট কেটে বাচ্চা বের করার কথা, কামড়ে যুবতীর স্তন ছিঁড়ে ফেলার কথা, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে স্বামীকে হত্যা করার কথা, গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কথা, একটু আশ্রয়ের জন্য মানুষের নিরন্তর ছুটে চলার কথা, থ্রিনটথ্রি রাইফেল হাতে বীরদের কথা, মাঠে ঘুড়ি ওড়ানো ছেলেটার তুখোড় গুপ্তচর হয়ে যাবার কথা, মাকে ফেলে মায়ের জন্য পালিয়ে আসা ছেলেটার কথা, রাত জেগে অচেনা আহত ভাইয়ের সেবা করা মেয়েটার কথা, বিজয়ের ঠিক আগে এদেশকে মেধাশূন্য করে দেবার ঘৃণ্য চক্রান্তের কথা, স্বাধীনতার পরেও মিরপুরে চলা রক্তের উৎসবের কথা, এই সবকিছুতে জড়িয়ে থাকা এদেশেরই কুলাঙ্গার পিশাচদের কথা।
যখন শেষ করল তখন দেখল, মৌরির চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। জয় বলল, “এবার সব সিদ্ধান্ত তোমার।”
মৌরি চোখ তুলে জয়ের চোখের দিকে তাকাল। বলল, “ভালবাসি।”
জয় সাথে সাথে চিৎকার করে উঠল, “জ-য় বা-ং-লা।”
মৌরির ঠোঁট চিরে একটা হাসি বেরিয়ে এলো। আদুরে গলায় বলল, “জয় বাংলা।”
জয় মৌরির হাতটা ধরল। আবার শাহবাগের দিকেই হাঁটতে শুরু করল। আজ সারারাত এই পথে দু’জনে একসাথে স্লোগান দেবে।
“হ্যাঁ, গল্প শেষ। বেশি বড় করে ফেলেছি…” কথাটা বলতে বলতে রা’আদ সাহেব নির্ঝরের দিকে তাকালেন। তাকিয়েই চমকে উঠলেন। চোখ দু’টো টকটকে লাল। কেমন অস্বাভাবিকভাবে এক দৃষ্টিতে খাতাটার দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি শঙ্কিত গলায় বললেন, “নির্ঝর! তুমি ঠিক আছ তো?”
নির্ঝর কোন উত্তর দিল না। তিনি আবার ডাকলেন, “নির্ঝর!”
হঠাৎ করেই নির্ঝর টান দিয়ে তার খাতাটা নিয়ে গেল। একটানে খাতাটা ছিঁড়ে ফেলল। ক্রমাগত ছিঁড়ে যেতে থাকল, যতটা পারা যায়। তিনি অবাক হয়ে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বললেন, “কী হল তোমার?”
নির্ঝর উন্মাদের মত বলতে শুরু করল, “ওরা কখনও ফিরে আসে না। কক্ষনো না। ওদের কাছে ওদের মায়ের চেয়ে মায়ের ধর্ষক বড়। ওদের কাছে পিশাচেরা হয় ইসলামের সৈনিক।” নির্ঝর সশব্দে ঘরের ভেতরেই থুথু ফেলল “ওরা জানে না। আর কোনদিন জানতেও চায় না। ওদের কাছে মায়ের চেয়ে মায়ের ধর্ষক… ওদের কাছে ধর্ষকই বড়।”
রা’আদ সাহেব অবাক হয়ে নির্ঝরের দিকে তাকালেন। নির্ঝরের চোখের দিকে। মনে হল, অব্যক্ত অনেকটা যন্ত্রণা সেখানে জমা হয়ে আছে। অব্যক্ত অনেক ছেঁড়া স্বপ্ন তার হাতের ছেঁড়া কাগজগুলোতে অজান্তেই লেখা হয়ে গেছে। prednisolone dosing chart
ইলোসিয়া মৌনিন বলছেনঃ
তরে খাইছি আমি…..
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
তুই আসলেই ডাইন। :/ diflucan one time dose yeast infection
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
ইয়াল্লা, এইখানে রনহুংকার দিতেছেন কেন আপনারা? :O :-S malaria doxycycline 100mg
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
রোমান্টিক আলাপ আলোচনা ইনবক্সে করিস। o.O
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
তুই কি জীবনে কোনদিন শুধরাবি না? :/
ণ বলছেনঃ
পাঁচ তারিখ বিকেলে কলেজ শেষে যখন ফেসবুকে দেখি এই অবস্থা, মিসবাহকে নিয়ে দৌড় শাহবাগে। ব্যানার যোগার করছে কেউ, হাতে লেখা ফেস্টুনই বেশি। বৃত্তদা কে দেখলাম জাদুঘরের গেটে সিগারেট টানে, সবাক পাখি কে দেখলাম, পুলক ভাই দেখা হইলেই এক গাদা কাজ ধরায় দিবে, যেচে আর মরতে গেলাম না। শাহবাগের রাস্তা বন্ধ করার কথাটা বাধন ভাই বলেছিলেন।
পরদিন সকালে অংকুরকে নিয়ে গেলাম, সানি ভাই গলায় প্লেকার্ড ঝুলায় দিলো। আমার কাছে কিছু ছবি আছে। পেপার নিয়ে কেউ রোদ ঢাকছে, মাঝে একটা কুশপুত্তলি, তীরন্দাজের। নাস্তা করে যখন ফিরি, লাকি আপা ততক্ষণে তার অমর স্লোগান ধরেছেন, “আ তে আব্দুল আলীম. . . “
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
আমি প্রথমদিন যেতে পারিনি। রায় শোনার পরেই এমন মাথার যন্ত্রণা শুরু হল, সাথে সাথে বিছানায় পড়ে মড়ার মত ঘুম! যখন উঠেছি, তখন আর শাহবাগে যাবার মত সময় ছিল না। আমার শাহবাগের স্মৃতি শুরু ছয় তারিখ থেকে। পাঁচ তারিখের অংশের ধারণা পুরোটা করা বন্ধুদের কাছ থেকে শোনা বর্ণনায় আর বিভিন্নজনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে।
রাস্তা বন্ধ করার কথা যে বাঁধন ভাই বলেছিল, সেটা জানি। বৃত্তদার স্ট্যাটাসেই পড়েছিলাম। কিন্তু, আগেই বলেছিলাম, সেখানকার বেশিরভাগ লোকই কথকের অপরিচিত। তাই লিখেছি, কেউ একজন বলল।
সেদিনই ক’তে কাদের মোল্লা শুরু হয়েছিল কি’না ঠিক মনে নেই। তবে লাকি আক্তারকে নিয়ে মজার একটা স্মৃতি আছে। ৬ তারিখ থেকেই তো রাজনৈতিক নেতাগুলো ওখানে জায়গা পাবার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তো এমনই কোন নেতা এলো ভাষণের জন্য। সে এক লাইন ভাষণ দেয়। সাথে সাথে ছাত্র ইউনিয়নের লোকজন শুরু করে স্লোগান। নেতা আর ভাষণ দিতে পারে না। স্লোগান শেষ হলে আবার ভাষণ দিতে যায়। আবার স্লোগান শুরু হয়। আবার নেতা অফ যায়। একটু পরে আর ভাষণ না দিয়ে শুরু করল গান। পুরো গান শেষ হবার পরে অবশেষে নেতা ভাষণ দেওয়া শুরু করে। পুরো ঘটনায় অসম্ভব মজা পেয়েছিলাম।
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
৫ই ফেব্রুয়ারি, এখনও ভাবায়, রক্তে আগুন ধরায়… ^:)^
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
ছিলাম চট্টগ্রামে। এখনো মনে আছে সেই ৫ ই ফেব্রুয়ারির কথা। আমার এক ফ্রেন্ড মেসেজ দিয়ে বললো, জামালখান প্রেসক্লাব চলে আয়। তখনো বুঝিনি প্রেসক্লাব কি অপেক্ষা করতেছে আমার জন্যে। কোনোরকম রেডি হয়েই ৬ নাম্বার বাসে করেই প্রেসক্লাব দৌড় দিছিলাম। গিয়ে দেখি, বাস বৌদ্ধমন্দিরের পরে আর যাচ্ছেনা। পরে চেরাগী পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে দেখি মানুষের ঢল। না জানি তাহলে শাহবাগের কি অবস্থা হইছিলো ঐদিন! চেরাগী থেকে হেঁটে প্রেসক্লাব যেতে এক মিনিটের বেশি লাগে না। সেই পথ অতিক্রম করতে পাক্কা আধাঘন্টা লাগছিলো! তার মানে কি পরিমাণ অবস্থা যে ছিলো! আর “রক্তে আগুন ধরা” কি জিনিস সেইদিন প্রথম বুঝছিলাম। sildenafil efectos secundarios
ণ বলছেনঃ
শাহবাগ থেকে টিএসসি হেটে যেতে মিনিট তিনেক লাগে, সেই উত্তাল অথচ সুশৃঙ্খল সময়ে চাইলেও কেউ তিন ঘন্টায়ও বেরুতে পারতো না
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
বের হতে চাইতো না কেউ। একচুয়ালি সেই দ্রোহের আগুনে যে একবার পুড়েছে,তার পক্ষে এটা অতিক্রম হয়ে চলে আসাটা একেবারে অসম্ভব ছিল…
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
তারপরও বেশিরভাগই কিন্তু চলে এসেছে।
otc viagra uk
banglakobita বলছেনঃ
আজকের কবিতা: মাটি নরম নাকি শক্ত ভাবতে যেও না।
ভিজিট করুন: https://bit.ly/2UY5MFz