ক্ষমা করো তারেক মাসুদ, ক্ষমা করো…
270
বার পঠিতসেদিন সকালে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছিল। থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ছিল তখনও। মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকা ফিরছিল একটা মাইক্রোবাস। বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল ছিল বলে মাইক্রোবাসে বসে থাকা সৌম্য দর্শন ভদ্রলোক ড্রাইভারকে বারবার সাবধান করে দিচ্ছিলেন গাড়ি আস্তে চালাবার জন্য, সাবধানে চালাবার জন্য। ড্রাইভার গাড়ি সাবধানেই চালাচ্ছিল, কেননা তার স্যারকে সে চেনে। মানুষটা খুব সচেতন একটা মানুষ, সমাজ-সংসার-জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষটা সবসময় সেই সচেতনতার পরিচয় রেখে গেছে।জীবনের বেশিরভাগ সময় এই মানুষটার কেটেছে আলো হাতে নিকষ অন্ধকার দূর করতে গিয়ে, অজ্ঞানতার আঁধার দূর করতে গিয়ে… তার স্যার একজন সতিকারের সচেতন মানুষ ছিলেন…
কিন্তু ঢাকা থেকে পাটুরিয়াগামী সেই বাসের চালক সচেতন ছিলেন না। বৃষ্টির দিনে ভেজা রাস্তায় ভয়ানক বেপরোয়া গতিতে বাসটা চালাচ্ছিলেন তিনি। ঘিউরের কাছাকাছি আসার পর বেঁকে যাওয়া অজগরের শরীরের মত বিপদজনক একটা বাঁক ঘুরে আসার পর তিনি বেশ অবাক হয়ে আবিস্কার করেন, তিনি রাস্তার রং সাইডে চলে এসেছেন। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই বাসটার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় সেই সাবধানী ড্রাইভারের মাইক্রোবাসটির। প্রচণ্ড বেগে বামপাশে বসা ড্রাইভারের সিট বরাবর ঢুকে ডানদিকে বসা সবাইকে পিষে চলে যায় বাসটা। এ দেশের চলচ্চিত্রকে ধ্বংসস্তুপের দুয়ার থেকে তুলে বিশ্বদরবারে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেছিলেন যে মানুষটি- চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যিনি দূর করতে চেয়েছিলেন সমাজের গভীরে থাকা পুঁতিগন্ধময় অজ্ঞানতার আঁধার, প্রায় হারিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যে মানুষটি আবার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, নতুন প্রজন্মকে জানিয়েছিলেন এ দেশের স্বাধীনতা এতো সহজে আসেনি, হৃদয়ের গভীরে দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রোথিত করতে পালন করেছিলেন মূল ভূমিকা, সেই মানুষটি নীরবে চলে গেলেন… এক অপরিণামদর্শী অসচেতন অসাবধান মাতাল গাড়িচালকের হাতে ধ্বংস হয়ে গেল একটা নতুন স্বপ্ন দেখানো যুগের… আচম্বিত যবনিকাপাত ঘটল এক অসামান্য আলোর পথপ্রদর্শকের… একজন তারেক মাসুদের…
অনেকেই প্রচণ্ড আফসোস করেন তারেক মাসুদের জন্য, যন্ত্রণায় পোড়েন আরেকটা মাটির ময়না কিংবা নরসুন্দর কিংবা রানওয়ে আর কোনোদিন তৈরি হবে না এই আক্ষেপে। কেন যেন তাদের আক্ষেপের সাথে আমি একাত্মতা প্রকাশ করতে পারি না। আমার মনে হয় আমরা একজন আমরা বড়ই স্বার্থপরের মত শুধু আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করছি। একজন তারেক মাসুদ আমাদের দেশের চলচ্চিত্রকে পৃথিবীর দরবারে অসামান্য মর্যাদার সাথে প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন, আমরা শুধুই সেটা না হবার আক্ষেপে পুড়ছি। অবশ্যই ব্যক্তি তারেক মাসুদের আরও অনেক অনেক কিছু দেবার ছিল তার জন্মভূমিকে, অনেকে উপরে নিয়ে কথা ছিল এই ভগ্নদশা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে। কিন্তু কেন যেন মনে হয় আমরা কেউই তারেক মাসুদের আকাশছোঁয়া স্বপ্নের কথা বলছি না, দেশের প্রতি অপরিমেয় ভালোবাসার কথা বলছি না। যে মানুষটা ইচ্ছা করলেই নিজের যোগ্যতায় পৃথিবীর নামীদামী সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে গড়তে পারতেন ক্যারিয়ার, পৃথিবী কাঁপিয়ে দিতে পারতেন একের পর এক অসামান্য সৃষ্টি দিয়ে, সেই মানুষটি তার সব মেধা, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা নিয়ে নিজের দেশে ফিরে এলেন, একের পর এক বাঁধাবিপত্তির মাঝে বানাতে লাগলেন অসামান্য সব মাস্টারপিস… কেন? কারন এই দেশ, মাতৃভুমির প্রতি ছিল তার অগাধ মমতা, অজ্ঞানতার আঁধারে ডুবে থাকা এই মানুষগুলোকে তিনি বড় ভালবাসতেন, আকাশছোঁয়া স্বপ্ন ছিল তার এই দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে… যে স্বপ্ন দেখবার ক্ষমতা ছিল একমাত্র তারেক মাসুদেরই…
পারলে ক্ষমা করে দিয়ো হে গুণী, আমরা বড়ই অধম জাতি… আমাদের সূর্যসন্তানগুলোকে, স্বপ্নসারথিগুলোকে এভাবেই আমরা পিষে ফেলি নিতান্তই নির্বিকারভাবে… তাদের স্বপ্নগুলো এভাবেই বিলীন হয়ে যায় নীরবে… খুব নিঃশব্দে…
price comparison cialis levitra viagra
তারিক লিংকন বলছেনঃ
অনবদ্য… diflucan dosage for ductal yeast
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
turisanda cataloghi ciproদুরন্ত জয় বলছেনঃ
এই সচেতনতা আমাদের থেকে আরও এ কত তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনির !!!!!!!!!!
শ্রদ্ধা রইল তাদের প্রতি।