বিশ্বকাপ ১৯৯৯– এক অনন্তবিস্তারী গর্ব, বাঁধভাঙ্গা আনন্দ ও চিরন্তন হতাশার গল্প…
512
বার পঠিতছেলেটা বেশ বিরস মুখে রাস্তায় হাঁটছে। মনে মনে হিসাব কষবার চেষ্টা করছে, আজ সারাদিনে সে মোট কতগুলো অপরাধ করল। সাত সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল সে, কেননা আজ সকালে তার বিরুদ্ধে স্পেশাল কোর্ট বসবার কথা রয়েছে বাসায়। গতকাল প্রথম সাময়িক পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। এবং সে সাফল্যের সাথে চার বিষয়ে ফেলসহ অংকে ক্লাসের মধ্যে সর্বনিম্ন নাম্বার পেয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সবার ভেতর। তবে সে আলোড়নের রেশ তার বাসায় যে টর্নেডো বইয়ে দিয়ে গেছে, সেটা আর না বললেও চলছে। খাতা হাতে পাবার পর প্রথমেই আম্মুর হাতে এক দফা পিটুনিপর্ব হয়ে গেছে, সেটা অবশ্য এতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। প্রায় দিনই স্কুল ফাঁকি দিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ননস্টপ ক্রিকেট খেলার দায়ে এ ধরনের মাইর ডালভাতের মত খেতে হয়। কিন্তু আজ সকালে যে স্পেশাল কোর্ট বসবার কথা তার বিরুদ্ধে, সেখানে বিচারপতি স্বয়ং পিতা। রেগে গেলে যার আগুনের ভাটার মত চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবার চেয়ে বড় শাস্তি আর হয় না। তাই সকাল সকাল বালকের বাড়ি হতে পলায়ন। উদ্দেশ্য আব্বু বের হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আব্বুর চোখের আগুন হতে নিরাপদ দুরুতবে অবস্থান। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা আর সেখানেই থেমে থাকেনি। সকালে স্কুল কামাই দিয়ে, সারাদিন ঠা ঠা রোদের ভেতর ননস্টপ ক্রিকেট খেলে, পাঁচখানা আইসক্রিম খেয়ে ঠোঁট-মুখ সব লাল করে দুপুর তিনটার দিকে সে যখন ধীর পায়ে বাড়ি ফিরছে, তখন সে মোটামুটি নিশ্চিত, আজকে কপালে বড় ধরনের মাইর আছে। ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ করে চোখ তুলে দেখল, তার মা হাতে বরই গাছের একটা ডাল নিয়ে তাকে খুঁজতেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল ছেলেটার, কেননা আজকের ডালটা অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশিই মোটা দেখাচ্ছে। এতো তাড়াতাড়ি ভাঙবে না। হঠাৎ করেই ক্লাবের সামনে থেকে সুজন ভাই ডাক দিলেন। কিরে কই যাস, খেলা দেখবি না? খেলা তোঁ শুরু হইয়া গেছে। বিদ্যুৎচমকের মত ছেলেটার মনে পড়ে গেল, আজকে না পাকিস্তানের সাথে খেলা আছে বাংলাদেশের… যন্ত্রচালিতের মত ঘুরে গেল সে, গন্তব্য পাল্টে গেল মুহূর্তে। ঠিক সেই সময় ছেলেটাকে দেখতে পেলেন তার মা। চিৎকার করে ডাকলেন, আই শয়তান, এইদিক আয়… আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন… ছেলেটা সেই দিকে একবার তাকায়েই দৌড় দিল। যেভাবেই হোক একবার ক্লাবের ভিতর ঢুকে যেতে পারলে তাকে আর আম্মু বের করতে পারবে না। আপাতত বড়ইয়ের ডালের ট্রিটমেন্ট থেকে বেঁচে গেলেও এইটা যে নির্ভেজাল একটা সুইসাইড, সেইটা সে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারল। কিন্তু বাংলাদেশের খেলা হবে এখন, সেইটাও আবার বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সাথে, এই অসামান্য আনন্দে সে আসন্ন মহাবিপদ সংকেত ভুলে গেল এক নিমিষেই। দিনটা ছিল ৩১শে মে, ১৯৯৯।
ক্লয়াবের সামনে গিয়ে তোঁ চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল ছেলেটার। পুরো ক্লাব ভর্তি মানুষ, ইভেন ক্লাবের সামনে যে গাছগুলা আছে, সেইগুলোতেও ঝুলে আছে পোলাপান খেলা দেখার জন্য। বহু চেষ্টা করেও ছোট্ট ছেলেটা এতগুলো মানুষের মধ্যে ঢুকে যেতে পারল না, এদিকে একটু পর পর একের পর এক চার হচ্ছে আর সবাই চিৎকার করে উঠছে। সবার সাথে সাথে সেও চিল্লাচ্ছে, কিন্তু ভিতরে ঢোকার চেষ্টায় বিরাম নাই। অবশেষে সে বুঝল ভিতরে ঢোকা সম্ভব না। হঠাৎ করেই মনে হল, গাছে উঠে তোঁ দিব্যি চমৎকার খেলা দেখা যায়। সেই ভাবা সেই কাজ, বহু কসরত করে পা পিছলায়ে দুইবার পড়তে পড়তে সামলে নিয়ে ছেলেটা গাছে উঠল। আর ওঠা মাত্রই শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ অসাধারন এক কাভার ড্রাইভে আঝার মেহমুদকে বুলেটের বেগে ছুড়ে ফেললেন সীমানার বাইরে। ছেলেটা ভুলে গেল সে কোথায় আছে, দুই হাত তুলে লাফ দেবার ভঙ্গি করতেই পিছলে গেল সে ডাল থেকে। কপাল ভালো নিচের ডালে আটকে যাওয়ায় সে গাছ থেকে পড়ে গেল না। কোনোভাবে হাচড়েপাঁচড়ে আবার উঠলো সে ওই ডালে, পাশ থেকে এক বড় ভাই তীব্র ভৎসনা করলেন, এহ, একটা চাইর মারছে আর এতেই পুলাপাইনের ফালাফালি দেখো না… আরে গাধারা, সাইদ আনোয়ার একলাই ম্যাচ জিতায়া দিব , বুঝছস… হুদাই এতো ফালাফালি করিস না। পাকিস্তানকে প্রানের চেয়েও বেশি ভালোবাসা ওই বড় ভাইয়ের দিকে একটাবার শুধু তাকালো ছেলেটা, কিন্তু মুখে কিছুই বলল না। তার কষ্টটা বাড়িয়ে দিতে এবং ক্লাবের চারপাশে এতক্ষন মোটামুটি ঝিম ধরে থাকা পাকিপ্রেমীদের পাকিস্তান পাকিস্তান চিৎকার করবার সুযোগ এনে দিলেন মেহরাব হোসেন অপি। হুট করে সাকলাইন মুশতাকের একটা ওয়াইড বল সামনে এগিয়ে খেলতে এসে ষ্ট্যাম্পড হলেন তিনি। বিস্ময় কাটিয়ে উঠবার আগেই এতক্ষন অসাধারন খেলতে থাকা শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ মুশতাকের নির্বিষ একটা ডেলিভারি মিসজাজ করে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেলেন ৩৯ রানে। পাকিপ্রেমীদের আনন্দ দেখে কে? উইকেটে এলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এবং মুশতাকের করা ২১ তম ওভারের প্রথম বলটি বাঘের গর্জনে সপাটে লং অন দিয়ে ফেললেন সীমানার বাইরে। গলার রগগুলো ফুলিয়ে চিৎকার করে উঠলো ছেলেটা, তার সাথে আরও অনেকে। ততক্ষনে পাকিস্তানী ভাইয়েরা আবার গর্তে হান্দাইছেন। ২৫ তম ওভারের প্রথম বলটা আমিনুল ফ্লিক করলেন, সিঙ্গেল-ডাবলে স্কোর এগিয়ে যাচ্ছে দলীয় সেঞ্চুরির দিকে, বলের পেছন পেছন দৌড়াচ্ছেন আপু এবং ভাইয়াসমাজের নতুন সেনসেশন শহীদ খান আফ্রিদি। গাছে ছেলেটার পাশে বসে থাকা বড় ভাইয়ের গলায় দৌড়া আফ্রিদি দৌড়া শুনে মনে হল আফ্রিদির এই চার বাঁচানোর উপর নির্ভর করছে মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ। শেষ পর্যন্ত আমিনুলের বুলেট গতির শটটা আটকাতে পারলেন না আফ্রিদি, মহাবিশ্ব রক্ষা করতে না পেরে হতাশ হয়ে গাছের পাতা ছিঁড়তে লাগলেন বড় ভাই। হতাশার চোটে একসময় হয়তো ছেড়া পাতাগুলো খেতে শুরু করতেন বড় ভাই, তাকে বাঁচিয়ে দিল দুই ওভার পরে আফ্রিদির একটা ডেলিভারি। আমিনুল উচ্চাভিলাষী এক শট খেলতে গিয়ে বল টেনে আনলেন ষ্ট্যাম্পের ভেতর। ১২০ রানে বাংলাদেশের ৩য় উইকেটের পতন। যা শালার পুত, ভাগ… খেলা পারস না, আবার পাকিস্তানের লগে খেলতে আহস… আমিনুলকে এভাবেই সম্বোধন করে তিনি যে উল্লাসটা দেখালেন, তা দেখে ছেলেটার মনে হল আফ্রিদিকে এখন সামনে পেলে উনি চুমু খাওয়ার একটা নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়তেন। অবশ্য জাস্ট খালি সেই ভাইই না, আশেপাশের সকল পাকি সমর্থকেরাই ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত লাফাচ্ছিল। বল যে পাকিস্তানী বোলাররা খুব খারাপ করছিল, তা নয়। কিন্তু বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা খুব সহজ কোন সুযোগ দিচ্ছিলেন না। বিশেষ করে আকরাম খান সিঙ্গেলের উপর খেলছিলেন। আর তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন বুলবুল ও পরে নাইমুর রহমান দুর্জয়। কিন্তু ৩৪ তম ওভারের ২য় বলে যখন আকরাম খান ওয়াকার ইউনুসের বলে মিসটাইমড করে বল তুলে দিলেন আকাশে, ছেলেটা চোখ বন্ধ করে ফেলল। কিন্তু ওয়াসিম আকরাম ক্যাচটা মিস করল না। উইকেটে এলেন তৎকালীন বাংলাদেশের সবচেয়ে টেকনিক্যালি সবচেয়ে পারফেক্ট ব্যাটসম্যান মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। কিন্তু সেই ওভারেই ওয়াকারের ইনসুইংয়ে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন নাইমুর। পাশ থেকে বড় ভাই বেশ খুশী খুশি গলায় বলে উঠলেন, বাঙ্গালীর ফালাফালি দেখি থাইমা গেল। ব্যাপার না, দেড়শর আগে প্যাকেট হয়া যাইব। অবাক হয়ে গেলো ছেলেটা, যদিও অবাক হওয়ার কিছুই নাই। সেই ভাইয়ের বাপ ৭১ সালে রাজাকার ছিল, এখনও প্রায়ই বলে বেড়ায়, ভারতের কূটনামীর জন্য ৭১রে ভাগ না হয়ে গেলে আজকে দুই পাকিস্তান কত ভালো থাকত…
ছেলেটার ভাবনায় ছেদ পড়ল নান্নুর অসাধারন এক কাভার ড্রাইভে। বলটা সীমানার দড়ি পার হবার সাথে সাথে রান গিয়ে দাঁড়াল ১৫২। ছেলেটা সেই বড় ভাইয়ের দিকে তাকায়ে বলল, ভাইজান, দেড়শ কিন্তু পার হইয়া গেল। নিখুঁত কাভার ড্রাইভটা দেখে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাওয়া বড় ভাই সাথে সাথে সামলায়ে নিল নিজেরে, জোর গলায় বলল, আরে আর কদ্দুর যাইব। যাইতে দাও, আমাদের সাইদ আনোয়ার আছে না এর পরের টানা আট ওভার সিঙ্গেল, ডাবল আর বাউন্ডারিতে স্কোর চলতে লাগলো তরতর করে। বড় ভাই বেশ কনফিডেন্টের সাথে যাইতে দাও বললেও তার ভুরুর ভাজ ক্রমেই গাড় হচ্ছিল। হঠাৎ করেই সেইটা সহজ হয়ে গেল। ১৮৭ রানে নান্নু মুশতাকরে একটা সিম্পল ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন। আসলেন মাসুদ, ক্রিজে ৪২ তম ওভারের প্রথম বলটা খেলবেন খালেদ মাহমুদ সুজন। হাতে আছে আরও সাত ওভার, কিন্তু মাহমুদ যেভাবে চারপা আগায়ে ডাউন দ্যা উইকেট খেলতে চাইলেন, তাতে মনে হইল এইটাই লাস্ট বল আর এই বলে ছয় না মারতে পারলে দুনিয়ার ধ্বংস নিশ্চিত। এতে অবশ্য অবাক হবার কিছু নাই, উনি এভাবেই খেলেন। লাগলে লাগলো, নাইলে নাই। ওইদিকে রফিক আর মাসুদ মিলে দলের রান ২০০ পার করাইলেন, ৫০ ওভার শেষে দলের স্কোর গিয়ে দাঁড়াল ২২৩ নয় উইকেটে। পাকিস্তানের মত তারকাভরা একটা দলের বিপরীতে তখনকার সময়ে বাংলাদেশের মত নবীন দলের জন্য এইটা বিশাল স্কোর। পাকি প্রেমী বড় ভাইয়েরা এই ঝড়ে বকে মারা এই স্কোরের জন্য বিশাল আফসোস করলেন এবং হিসাব করতে বসলেন, ২৫ ওভারের মধ্যে যদি খেলা শেষ হয়ে যায়, তাহলে আফ্রিদি সেঞ্চুরি পাবে নাকি সাইদ আনোয়ার পাবে? একজন আবার দেড়শ করে ফেললে তোঁ সমস্যা, তাহলে আরেকজনের আর সেঞ্চুরি হবে না। বন্ধুদের সাথে ইনিংস পরবর্তী আলোচনার মাঝে আইসক্রিম আর বরইয়ের আচার খেতে খেতে সে হঠাৎ করেই বুঝতে পারল, তার প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে, কিন্তু বরই ডালের বাড়ি আর বাংলাদেশের ব্যাটিং –এই দুইটা জিনিস তাকে ক্ষুধার ব্যাপারটা মুহূর্তের মধ্যে ভুলায়া দিল…
খেলা শুরু হয়ে গেছে, ছেলেটা আবার তার পূর্বস্থানে ফিরে গেল। এইবারও সে ক্লাবের ভেতর ঢুকতে পারল না কারন যারা ভেতরে ছিল ,তারা কেউই বাইরে আসে নাই। পাকিস্তানের ব্যাটিং যেন কোনোভাবেই মিস না হয়। প্রথম ওভারে বল করবেন মিডিয়াম পেসার খালেদ মাহমুদ সুজন। ওভারের পঞ্চম বলটা আফ্রিদি ফ্লিক করতে চাইল লেগে, টপ এজ হয়ে বল উঠে গেল আকাশে। মেহরাব যে মুহূর্তে বলটা ধরে ইয়েস বলে লাফ দিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তটাতে ছেলেটাও ইয়েস বলে লাফ দিল এবং এইবার আর রক্ষা পেল না। গাছের গোঁড়ায় থাকা বেশ কিছু বালুর বস্তার উপর গিয়ে পড়ল। হাতে পায়ে আঘাত পেয়েছে, কিন্তু ছেলেটার আর সেদিকে খেয়াল নাই। আবার কসরত করে গাছে ওঠা এবং তারপর আগ্রহ নিয়ে বড় ভাইয়ের মুখের অবস্থা দেখা। বড় ভাই তখন হঠাৎ ধাক্কা সামালায়ে উঠছেন, বেশ জোরেসোরে বলতেছেন,একটা খারাপ দিন আসতেই পারে। ব্যাপার না, ইজাজ আর আনোয়ার মিলেই খেলা শেষ করে আসবে। মুখের কথা শেষ করতে পারেন নাই, শফিউদ্দিন আহমেদের অসাধারন এক ডেলিভারি ব্যাটের কানা গলে ধ্বংস করে দিল ইজাজের মিডলষ্ট্যাম্প। নর্দাম্পটন ছাড়িয়ে গর্জনে ছড়িয়ে পড়ল সারা পৃথিবীতে। পাকিস্তানের সমর্থকেরা হতাশায় তলিয়ে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে ৩য় ওভারে তাদের উদ্ধার করল ইনজামাম। তার একটা কাভার ড্রাইভ দেখে বড় ভাই যে পরিমান খুশি হইলেন, দেখে মনে হইল, ইনজামাম সেঞ্চুরি মারলেও সেইটা এর কাছে কিছু না। সপ্তম ওভারে হঠাৎ করেই থেমে গেল সব বন্দনা। সিঙ্গেল নেওয়ার কল পাইলেই বয়রা হয়ে যাওয়া ইনজামাম সাইদ আনোয়ারের সিঙ্গেল কল শুনল ওই প্রান্তে কিপার ষ্ট্যাম্প ভেঙ্গে দেওয়ার পর। মানুষের চিৎকারে ঢেকে গেল ভোটকা ইনজামামরে পাকি সমর্থকদের দেয়া বাছাই করা বাঙলা গালি। যেইটা গালি মেশিনগান চলতেই থাকলো আট ওভার পর্যন্ত। যেইটা শেষ হইল মাহমুদের বলে ইনজামাম এলবি হবার পর। ছেলেটা হঠাৎ পাশে তাকায়া দেখে তার বড় ভাই বজ্রাহতের মত বসে আছে। যেন সামনে কি হইতেছে, এই ব্যাপারে তার কোন ধারণা নাই। খুশি খুশি গলায় ছেলেটা বলল, ভাই, ভোঁটকা তো শেষ। ভাই হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে বলল, “তাতে কি হইছে? এখনও ইজাজ আছে, আজহার মাহমুদ আছে। এই দুইটা একাই একশ… তুই দুই দিনের বাচ্চা পুলা, খেলার কি বুঝস? চুপচাপ বইয়া খেলা দেখ।“ ক্রোধ আর রাগে মাথায় যেন আগুন ধরে গেল ছেলেটার। কিন্তু সে কিছুই বলল না। এমনকি যখন সেলিম মালিক মাহমুদের বলে এলবি হয়ে ফিরে গেল, তখনো না। শুধু বড় ভাইয়ের দিকে তার গলার রগ ফুলিয়ে কণ্ঠ ফুঁড়ে বের হওয়া জান্তব গর্জনটা মিশে গেল আরও অনেকগুলো গর্জনের সাথে… funny viagra stories
তারপর অবশ্য পাক ক্যাপ্টেন ওয়াসিম আকরাম আজহার মেহমুদকে নিয়ে ৫০+ রানের একটা পার্টনারশিপ গড়ে পাকিস্তানের এ দেশীয় সন্তানদের গর্ত থেকে বের করে আনলেন। তাদের দেখে মনে হতে লাগলো, জয় আর সামান্য সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এমনকি খালেদ মাহমুদের বলে আকরাম লং অন দিয়ে একটা ছয় মারার পর বড় ভাই চাপা স্বরে করে বলে উঠলেন, ভইরা দে হালারপোগুলারে, বেশি ফালাফালি করে… ভইরা দে এক্কেরে। ২৭ তম ওভারে নান্নুর বলটা আকরাম অনে পুশ করেই সিঙ্গেলের কল দিলেন, আর বুলেটের বেগে বা দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমিনুল বলটা থ্রো করলেন কিপারের হাতে। আজহার মাহমুদ কোন এক উদ্ভট উপায়ে দম দেয়া পুতুলের মত কিছুক্ষণ এইদিক, কিছুক্ষন ওইদিক নাচানাচি করে ফেরত গেল খোঁয়াড়ে থুক্কু প্যাভিলিয়নে। ঠিক পাঁচ রান পর নান্নুর বলেই আকরাম লেগ সাইডে ফ্লিক করল, বলটা বেশ কিছুক্ষন বাতাসে ভেসে অবশেষে বিদ্যুতের হাতের মুঠো খুঁজে নিল। তবে বিদ্যুৎ বল খুঁজে পেলেও টাইগাররা সবাই মিলে আনন্দে যেভাবে বিদ্যুতের উপর ঝাঁপাইয়া পড়লেন, এতে বিদ্যুৎকে খুঁজে পেতে বেশ কষ্টই হল। বড় ভাইকে দেখে মনে হল একটু আগে পদ্মায় তার জমি-জিরাত বাড়ী-ঘর সব ভাইঙ্গা নিয়া গেছে। তারপরও কিছু ডাইহার্ড পাক সমর্থক, যারা মিনমিনে গলায় নিজেদের বুঝ দিতেছিল যে, এখনও তোঁ মইন খান আছে, আশা এখনও হারায় নাই, তাদের বাকশক্তি স্তব্ধ হয়ে গেল যখন মইন ১২৪ রানে ডিপ স্কয়ারে মেহরাবের হাতে ধরা পড়ল। মেহরাব ক্যাচটা ধরেই বল এক হাতে আর মাথার টুপিটা এক হাতে নিয়ে দুই হাত তুলে এমনভাবে দৌড়ে আসতে লাগলেন যেন তিনি মাত্রই পৃথিবী জয় করে ফিরছেন… ব্যাপারটা আসলে এর চেয়ে কম কিছু ছিল না।
সবাই যখন আশা ছেড়ে দিয়েছে, দাঁড়িয়ে গেল ওয়াকার ইউনুস সাকলায়েন মুশতাককে সঙ্গে নিয়ে। বেশ কয়েকটা লম্বা চওড়া শটে যখন মোটামুটি ৩০-৩৫ রান করে ডুবন্ত পাকি সমর্থকদের খড়কুটো হয়ে দাঁড়াল ওরা, সেই মুহূর্তে মোহাম্মদ রফিক তার অসাধারন জাদু দেখালেন। একেবারে আনপ্লেয়েবল একটা আরম বলে বোল্ড করে দিলেন ইউনুসকে, ১৬০ রানে পড়ল নবম উইকেট। জয় তখনো ৬৪ রান দূরে.. viagra sildenafil generic
ঠিক সেই মুহূর্তে দেখা গেল ক্লাবের সামনে ছেলেটার বাবা, বাসার ভাড়াটে দুইজন এবং পাশের বাসার এক প্রতিবেশি। রাত বাজে সাড়ে দশটা, কিন্তু সে এখনও বাসায় ফেরেনি। তার বিরুদ্ধে আনীত পুরনো অভিযোগগুলোর বিচার হতে না হতেই নতুন এবং আরও বিস্তৃত পরিসরে বিশাল অভিযোগ এসেছে। তাই তারা সবাই চলে এসেছেন তাকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে। আজ তার কপালে যে কি আছে, সেটা একমাত্র খোদা জানেন। ছেলেটার কিন্তু এইদিকে কোন হুশ নাই। সে তখন নাটকের শেষ দৃশ্যের অকল্পনীয় উত্তেজনায় ভাসছে। ৪৪ তম ওভারের ৩য় বলটা করবার জন্য প্রস্তুত নাইমুর রহমান। বলটা শোয়েব আখতার অফ সাইডে জাস্ট পুশ করেই দৌড় দিলেন, বিদ্যুৎ বাজ পাখির মত ছোঁ দিয়ে বলটা তুলেই কিপার এন্ডে মাসুদকে থ্রো করলেন, মাসুদ ষ্ট্যাম্পটা উপড়ে ফেলে আম্পায়ারকে জানালেন, হাউস দ্যাট, আম্পায়ার?
ঠিক সেই মুহূর্তে, ঠিক সেই অবিশ্বাস্য মুহূর্তে ১৫ ফুট উপর থেকে লাফ দিল ছেলেটা, মাটিতে পড়বার সঙ্গে সঙ্গে মচকে গেল পা, আধলা ইট ঢুকে গেল নখের গোড়ায়, ওসবের দিকে থোরাই কেয়ার করে প্রচণ্ড আনন্দ আর অকল্পনীয় গৌরবে ছেলেটার কণ্ঠ দিয়ে শুধু বেরিয়ে এল, জিতছিরে… যদি লাফ না দিত, তবে ছেলেটা দেখত এক অনন্য অসাধারন দৃশ্য, যে দৃশ্যটা নর্দাম্পটন প্রত্যক্ষ করল এক অভূতপূর্ব বিস্ময়ে… থার্ড আম্পায়ার তখনও সিদ্ধান্ত দেননি, কিন্তু হাজার হাজার মানুষ সব নিয়মকানুনের বাঁধা ভেঙ্গে নেমে এসেছে মাঠে, আনন্দের অকৃত্রিম জোয়ারে ভেসে গেছে সবকিছু… যে দৃশ্য দেখে ধারাভাষ্যকার অবাক বিস্ময়ে হাসতে হাসতে বলে উঠলেন, ওয়েল, দ্যা ক্রাউড হ্যাজ অবভিয়াসলি ডিসাইডেড দ্যাট ইট’স অল ওভার, হোয়াট অ্যা অ্যামেইজিং সিচুয়েশন দিস ইজ… লুক অ্যাট দ্যা জুবিলয়েশন দেয়ার, দে আর সেলিব্রেটিং ইট অ্যান্ড ইট ওয়াজ অ্যাবসুলেটলি ওয়েল ডিজারভড… scary movie 4 viagra izle
চিৎকার করতে করতে ততক্ষণে ছেলেটার গলা ভেঙ্গে গেছে, ইট ঢুকে কেটে যাওয়া পা দিয়ে রক্ত পড়ছে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে তার পিতা সবই দেখছিলেন, বিজয় মিছিলের অংশ হয়ে যাবার পথে পুত্র খোঁড়াতে খোঁড়াতে হঠাৎ করেই তার সামনে এসে পড়ল। ভূত দেখার চমকে উঠে ভয়ে সিটিয়ে গেল সে, পিতা তাকে যদি এখন তুলে একটা আছাড় মারেন, অবাক হবার কিছু থাকবে না। পিতা ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন, পুত্রকে বেশ গম্ভীর গলায় বললেন, চল মিছিলে যাই। এই বলে পুত্রকে হঠাৎ কাঁধে তুলে নিলেন তিনি, আর তারপর বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্লোগানে এক অনন্য আনন্দযাত্রায় হারিয়ে গেল তারা… যে আনন্দ বুকভরা গর্বের, অমূল্য গৌরবের… sildenafil efectos secundarios
তারপর অনেক দিন পার হয়ে গেছে। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ আর জিততে পারেনি। মুলতান, পেশোয়ার, ঢাকা—বারবার ছেলেটার আশার ভেলা ডুবে গেছে। জিততে জিততে হেরে যাওয়ার এ অকল্পনীয় যন্ত্রণায় পুড়তে পুড়তে অনুভূতিশূন্য হয়ে গেছে ছেলেটা। টাইগারদের উপর জমাট বাঁধা অভিমানে আটকে গেছে সব কান্না। ছেলেটার কিছু বন্ধু মাঝে মাঝে নর্দাম্পটনের স্মৃতিচারন করে, বুকভরা আশা নিয়ে বলে, এরপর যেদিন বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারাবে, সেইদিন তারা বাঁধভাঙ্গা আনন্দের জোয়ারে ভাসবে, নাচবে, গাইবে, বাংলাদেশ বাংলাদেশ চিৎকারে প্রকম্পিত করবে পৃথিবী। ছেলেটা চুপচাপ শুনে যায়। একটা কথাও বলে না। কেননা বাংলাদেশ এরপর যেদিন পাকিস্তানকে হারাবে, সেইদিন সে হাসবে না, গাইবে না, গলার রগ ফুলিয়ে বাঘের গর্জনে চিৎকার করে বাংলাদেশ বাংলাদেশ ধ্বনিতে প্রকম্পিত করবে না আকাশ বাতাস। সেইদিন সে কাঁদবে, প্রানখুলে কাঁদবে। অনেকগুলো দিনের কান্না, অনেকগুলো মাসের কান্না, ১৫ টা বছরের কান্না। সেইদিন সে খুলে দেবে প্রানের বাঁধ, কান্নায় ধুয়ে ফেলবে এতদিনের জমে থাকা সবটুকু অপমান, সবটুকু অভিমান, সবটুকু যন্ত্রণা,সবটুকু কষ্ট…
হৃদয়ের সবটুকু যন্ত্রণা কান্নার জলে ভাসিয়ে দেবার একটা সুযোগ কি ছেলেটি কোনোদিন পাবে? ছেলেটি এতো হতাশার মহাকাব্যের পরেও অপেক্ষায় থাকে, ছেলেটির অপেক্ষার পালা আর ফুরোয় না…
উদ্ভ্রান্ত পথিক বলছেনঃ
ভাল ভাল ভাল ভাল ভাল ভাল ভাল আরে ভাই খুব ভাল…….
কিন্তু তাহার সেই ভাইয়ের কি দশা হইল? তার সেই অভিজ্ঞতা, তার পরবর্তী জেনারেশন কি ধরে রেখেছে…………..:( does accutane cure body acne
আর পাকিস্তানের বাংলাদেশি সমর্থক অর্থ রাজাকারের ক্লোন…….
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
সেই বড় ভাইয়ের পরবর্তী জেনারেশন সাফল্যের সাথে পাকিস্তানের ডাইহার্ড দালালী করে আসতেছে… লেখার কলেবর বেড়ে যাবে বলে ওই ব্যাপারটা এখানে আনি নাই। তবে পাকিস্তান হারার পর বহুদিন জোঁকের মুখে চুন পড়ছিল… :bz
পড়বার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ব্রাদার… :-bd mycoplasma pneumoniae et zithromax
তারিক লিংকন বলছেনঃ
সেদিন আর বেশী দূরে নয় যখন বাংলাদেশ হায়েনার বংশধরদের সাথে সবগুলো ম্যাচেই জিতবে…
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
acheter viagra pharmacie en franceসেইদিন কবে আসবে ভাই? [-( আদৌ আসবে তো? #-o
তারিক লিংকন বলছেনঃ
আসতে হবে… আপনার আমার মত পাগল ভক্তদের জন্য আসবেই!! clomid and metformin success stories 2011
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
সেই দিনের অপেক্ষাতেই কেটে গেল আজ প্রায় ১৫ বছর… [-( কবে আসবে সেইদিন?
ছেলেটার অপেক্ষার প্রহর আর ফুরোয় না…
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
কোনোদিন আসবে না মনে হয়… -_-
উদ্ভ্রান্ত পথিক বলছেনঃ
get viagra nowআরেক দিন কষ্ট করে লিখবেন ………
প্রতীক্ষায় রইলাম ……..
ধন্যবাদ আপনাকেও…………..
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
অবশ্যই চেষ্টা করবো ব্রাদার… :-bd আপনাকেও অশেষ কৃতজ্ঞতা আবারো… >:D<
নীহারিকা বলছেনঃ
ভাল হইছে … ছেলে টা ভাল আছে … জয় বাংলা
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
জয় বাঙলা… :-bd diflucan dosage for ductal yeast
শঙ্খনীল কারাগার বলছেনঃ
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
পড়বার জন্য আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ কারাগার ভাই… >:D< :-bd side effects of doxycycline in kittens