গণহত্যা ’৭১:কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া কিছু ইতিহাস(পর্ব- ০২)
1568
বার পঠিতপূর্বের পর্বটিতে আমি তুলে ধরেছিলাম বরইতলা,বাবলা বন এবং বেলতলী বধ্যভূমির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। ১৯৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি বধ্যভূমি কিংবা সেই জায়গাগুলোতে সংঘটিত গণহত্যার কথা তুলে ধরা হলেও, বাদ পরে গেছে অধিকাংশ বধ্যভূমিতে সংঘটিত গণহত্যার ইতিহাস। এমনও হয়তো অনেক বধ্যভূমি রয়েছে যেগুলোর কোন চিহ্নই এখন আর পাওয়া যায় না। শুধু লোকমুখে শোনা যায় সেসব জায়গার ইতিহাস। অনুসন্ধান করতে গেলে তেমন কোন স্মৃতিচিহ্নই পাওয়া যায় না সেসব জায়গা থেকে। কিন্তু এমনটা কি হবার কথা ছিল ? আমাদের শহীদ পিতা মাতাদের বীরত্বগাঁথার ইতিহাসগুলো কি হারিয়ে যাবার ছিল এমনি ভাবে ? অতন্ত্য দুঃখের হলেও সত্যি যে এমনটাই হয়েছে। আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেইসব বীরদের বীরত্বগাঁথার ইতিহাস; যারা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেও একাগ্র চিত্তে উচ্চারন করে গেছে “জয় বাংলা” ।
স্বাধীনতার পরে আমরা রাজাকারদের পূর্ণবাসিত হতে দেখেছি, অনেক রাজাকারদের দেখেছি মন্ত্রীপ্রতিমন্ত্রীদের আসনে আসীন হতে, আবার ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের “লাল-সবুজ” পতাকাটিকেও উড়তে দেখেছি অনেক রাজাকারের গাড়িতে। কিন্তু দেখিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহান ইতিহাসগুলোর সংরক্ষণের কোন যথাযথ পদক্ষেপ। যথাযথা পদক্ষেপের অভাবে অনেক মহান ইতিহাসই আজ মুছে গেছে ইতিহাসের পাতা থেকে। কিন্তু এভাবে যদি একটার পর একটা ইতিহাস হারিয়ে যেতে থাকে কালের বিবর্তনে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কিভাবে জানবে যে বাঙালির জন্মের ইতিহাসের সাথে জরিয়ে আছে “মুক্তিযুদ্ধ” নামের একটি মহান অধ্যায়। কিভাবে জানবে তাঁরা নিজ দেশের জন্মের উপাখ্যান !! জানি না আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসের মাধ্যমে আমি কতোটুকু তুলে ধরতে পারবো, কিন্তু এরপরেও তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে থাকা আমাদের মহান ইতিহাসগুলোর ক্ষুদ্র কিছু অংশ।আজকে আমি তুলে ধরেছি চুকনগর বধ্যভূমি এবং পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমিতে সংঘটিত গণহত্যার ইতিহাসঃ-
চুকনগর বধ্যভূমি, খুলনা
চুকনগর খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার অন্তর্গত একটি অঞ্চল।ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নে চুকনগর বাজার অবস্থিত। চুকনগর খুলনা শহর থেকে প্রায় ৩২ কি,মি পশ্চিমে ভদ্রা নদীর তীরে অবস্থিত এবং ভারতীয় সিমান্তের নিকটে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে চুকনগর বাজারটি বেশ পরিচিত ছিল। তিনদিকে নদী ঘেরা ছিল চুকনগর বাজার। ৭১ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গণহত্যা শুরু হয়। রাজাকার, শান্তিবাহিনী সংগঠিত হবার পর গণহত্যা কার্যক্রম আরও পরিকল্পিত ভাবে চলতে থাকে। স্থানীয় বাঙালি রাজাকার ও বিহারীরা হানাদারদের থানা ইউনিয়ন পর্যায়ের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসতে থাকে। আর ওদের প্রধান লক্ষ্য হয় হিন্দু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী নেতারা। সেই সময় থেকেই সূচনা ঘটে চুকনগরের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের। এছাড়াও ওদের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ছিল- চুকনগরে আশ্রয় নেয়া লক্ষাধিক শরণার্থীর পুরুষ সদস্য যাদের প্রায় শত ভাগই ছিল হিন্দু। পাকিস্তানীরা বাংলার মাটি থেকে বাঙালি জাতির মূল পরিচয় মুছে দিয়ে সেখানে এক জগাখিচুড়ি পাকিস্তানী জাতি প্রতিস্থাপন করতে চেয়েছিল। এই লক্ষে তারা বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি বাংলাদেশের গোটা হিন্দু কমুনিটিকেও আক্রমণের লক্ষে পরিণত করে। ’৭০ এর নির্বাচনের ফলাফল থেকে তাদের ধারণা হয়েছিল হিন্দুরা বাংলাদেশে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘বাঙালি মানস’ এর পক্ষে ভোট-ব্যাংক। ব্যংকটি ভেঙ্গে দিলে গোটা পাকিস্তানে বাঙালি-চেতনা বিশ্বাসী মানুষ সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে। শুরু থেকেই এই অপচিন্তা বিদ্যমান ছিল এবং বিভিন্ন পর্যায়ে হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। ’৭১ এ আমরা এর চূড়ান্ত রূপ দেখি। ’৪৭ এর পার্টিশন পর্বে পাঞ্জাবে যা ঘটেছিল কমপ্লিট এভাকুয়েশন, একাত্তরে এসে তারা পুর্ব বাংলায় ঠিক সেটাই করতে যায়।চুকনগরেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
সারাদেশে যখন হানাদার বাহিনী নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করে তখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ; বিশেষকরে বাটিয়াঘাটা, দাকোপ,সাতক্ষীরা,বাগেরহাট, ডুমুরিয়া অঞ্চলের লোকজন চুকনগরে এসে জড় হতে থাকে ভারতে পালিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে। চুকনগর অঞ্চলটি একেবারে ভারতের সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চল হবার কারণে অনেক মানুষ এই অঞ্চলটিতে আশে ভারতে পাড়ি দিয়ে নিজেদের প্রান রক্ষার তাগিদে। অনেকে চলে যেতে পারলেও অধিকাংশ মানুষই ব্যর্থ হয় সীমানা পাড়ি দিতে। আর সেই সব মানুষকেই পরবর্তীতে শিকার হতে হয় পাকি জানোয়ারদের নির্মম পৈশাচিকতার।
লোকমুখে জানা যায়, ৭১ এর মে মাসের ১৮/১৯ তারিখের দিকে “হানাদাররা আক্রমন করতে পারে” এই আশঙ্কা তীব্র ভাবে বেশ কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পরলে লোকজন প্রানের ভয়ে চুকনগরে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। ফলে ২০/২১ মের দিকে চুকনগর অঞ্চলটি লোকে লোকারণ্য হয়ে পরে।জানা যায়, একদিন নদী পার হবার সময় খান নামের একজন বিহারীর সঙ্গে নদী পারাপারের মূল্য নিয়ে কয়েকজন বাঙালির কিছু কথা কাটাকাটি হয়। ফলে সেই বিহারী “সকলকে দেখে নেয়া হবে” বলে হুমকি দেয়। এবং পরবর্তীতে সেই “দেখে নেয়ার” ফলশ্রুতিতেই সেই বিহারী হানাদারদের খবর দিয়েছিলো বলে জানা যায়। হানাদারদের স্থানীয় সহযোগীরাও এতে ইন্ধন যুগিয়েছিল।
২০ মে, বৃহস্পতিবার, সকাল থেকেই লোকজন সীমান্ত পাড়ি দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই সাথে তাদের প্রত্যেকের মনে একটা চাঁপা ভয় তো ছিলই, যেহেতু পূর্বের দিন বিহারী খান তাদের “দেখে নেয়ার” কথা বলে হুমকি দিয়েছিলো। বেলা ১০ টার দিকে সাতক্ষীরা সড়ক ধরে হানাদারদের ২ টি ট্রাক চুকনগর কলেজের পশ্চিম পাশে কাউতলায় এসে পৌছায়।খুব সম্ভবত ১ প্লাটুন সৈন্য এসে জড় হয়। ট্রাক থেকে নেমেই জানোয়ারগুলো এলোপাথাড়ি গুলি করতে শুরু করে।এবং বেলা ৩ টা পর্যন্ত চলতে থাকে গোলাগুলি লোকে লোকারণ্য হয়ে যাওয়া চুকনগর পরিনত হয় একটি মৃত্যুপুরীতে। থেমে যায় মায়ের কোলে থাকা ছোট্ট শিশুটির চিৎকার, থমকে যায় হাজার মানুষের দ্রুত গতির পথচলা, পিতার হাত থেকে বিছিন্ন হয়ে যায় পুত্রের হাত, বৃদ্ধ মা পরে যায় তাঁর পুত্রের কোল থেকে, মায়ের সাদা শাড়িটি হয়ে যায় একটি রক্তবর্ণের শাড়ি। তামাটে মাটি নিমেষেই ধারণ করে লালবর্ণ। চুকনগরের আকাশ বাতাস লক্ষ মানুষের আর্তনাদে অসম্ভব ভারী হয়ে উঠে। সে আর্তনাদ হানাদার পাকিস্তানীদের পৈশাচিক উল্লাস ও অস্ত্রের ঝনঝনানিতে মাথাকুটে ফিরে এসেছিল সেই হতভাগ্য মানুষগুলোর কাছে। অসহায় মৃত্যু অথবা সবকিছু এমনকি সন্তান ফেলে ছন্নছাড়া পলায়ন ছাড়া সেদিন দ্বিতীয় কোন পথ খোলা ছিলনা চুকনগরে জমায়েত ভাগ্যবিড়ম্বিত লক্ষাধিক মানুষের জীবনে। অগুন্তি মানুষের ভীড় এবং হৈচৈ এর মধ্যে অনেকে বুঝতেই পারেনি, অনেকে বুঝতে পেরেও পালাতে পারেনি পথঘাট চিনতো না, রাঁধতে অথবা খেতে বসেছিল কেউকেউ, অনেকেই ছিল পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন- তাদের একত্র করে পলায়ন সম্ভব ছিলনা। চুকনগর জেনোসাইডে কত লোক শহীদ হয়েছিল তার কোন পরিসংখান নেই। পাকিস্তানীদের ভয়ংকর নৃশংস ‘উড়া দো, জ্বালা দো, তাবা করদো’ নীতি এবং অক্ষরে অক্ষরে তার প্রয়োগ এতদূর আতংক সৃষ্টি করেছিল যে তখন স্থানীয় সরকার ও সিভিল প্রশাসন আদৌ কার্যকর ছিলনা।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চুকনগর গণহত্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে জনকণ্ঠের রিপোর্টার ফজলুল বারী লিখেছিলেন-
“লাশের উপর লাশ, মায়ের কোলে শিশুর লাশ, স্বামীকে বাঁচাতে স্ত্রী জড়িয়ে ধরেছিল। বাবা মেয়েকে বাঁচাতে জড়িয়ে ধরেছিল। মুহূর্তেই সবাই লাশ হয়ে যায়। ভদ্রা নদীর পানিতে বয় রক্তের বহর, ভদ্রা নদী হয়ে যায় লাশের নদী।কয়েক ঘণ্টা পর যখন পাকিস্তানিদের গুলির মজুদ ফুরিয়ে যায় তখন বেয়ানেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো মানুষগুলোকে।”
ধারণা করা হয় সেদিন এই কয়েক মুহূর্তে প্রায় ৬ থেকে ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো। শুধু হত্যাই নয় তার মাঝে পাকি পিশাচরা কিছু নারীকে ধর্ষণও করে আবার অনেককে ট্রাকে করে তুলেও নিয়ে যায়।যারা আটলিয়া ইউনিয়নের পাতাখোলার বিল থেকে ভদ্রা নদী এবং সাতক্ষীরা রোড থেকে ঘ্যাংরাইল নদী পর্যন্ত বিস্তৃত এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জোড়া বধ্যভূমি থেকে লাশ সরানোর কাজে ব্যস্ত ছিল সেই ওয়াজেদ মিয়া প্রমুখ ৪০/৪২ জন লোক সোমবার দুপুর পর্যন্ত চার হাজার লাশ গুনে শেষপর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয়। এই গননার মধ্যে নদী, পুকুর, ডোবা, জলায় ভাসমান হাজার হাজার লাশ অন্তর্ভুক্ত ছিলনা। লাশ ফেলার সময় তারা বেশ কিছু সোনাদানা, টাকাপয়সা পেয়েছিল বলে জানিয়েছে। তার কিছু ইউনিয়ন কাউন্সিলে জমা দেয়, কিছু অন্যদের কাছে গচ্ছিত রাখে যা পরে আর ফেরত পায়নি। চুকনগর বধ্যভূমি থেকে “মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট” এর সংগৃহীত উপাদান পরীক্ষা করে ৯০ টি সাক্ষাৎকার সংকলন করা হয়। সেখানে একটি উল্লেখযোগ্য কথা বলে হয় যে- can you die if you take too much metformin
“এবং এই গবেষণায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে চুকনগরেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গণহত্যাটি ঘটিয়েছিল পাক বাহিনী। একটি এলাকায় এতো কম সময়ে এতো কম মানুষ আর হত্যা করা হয় নি”
চুকনগর গণহত্যা সম্পর্কে চ্যানেল আইতে দেয়া হাসেম আলীর একটি সাক্ষাৎকার দেয়া হল এখানেঃ-
পাগলাদেওয়ান বধ্যভূমি, জয়পুরহাট
জয়পুরহাট শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়ন ও নাওগাঁ জেলার ধামুরহাট উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের সমান্তবর্তী পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি অবস্থিত । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রায় দশ হাজার নিরিহ বাঙ্গালীকে নির্মমভাবে হত্যা করে গন কবর দেওয়া হয়েছে এই পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমিতে ।পাগলা দেওয়ানে ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহীনি ক্যাম্প ও বাঙ্কার । ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে জয়পুরহাটে পাক বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয় এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে। পাকি হানাদার বাহিনী তৎকালীন মহকুমা বর্তমান জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবিতে ১৯ এপ্রিল প্রথম হানা দিয়ে নৃশংস হত্যাকা- চালায়। পরবর্তিতে ২৪ এপ্রিল জয়পুরহাটে একই কায়দায় শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। হানাদার বাহিনীর নির্যাতন চলতে থাকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ নির্যাতন-অত্যাচারে পাকবাহিনীকে সহায়তা করে জয়পুরহাটের রাজাকার, আলবদর বাহিনী। আর এই রাজাকার আলবদর বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় রাজাকার আব্দুল আলীম।
বেছে বেছে হানাদারেরা আর তাদের দোসর রাজাকাররা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড চালাতে থাকে। একই সাথে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত সমর্থকদেরও খুঁজে খুঁজে হত্যা করে। জয়পুরহাট জেলায় যে সমস্ত এলাকায় বধ্যভূমি হিসাবে পাকি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর-রাজাকাররা নির্দিষ্ট করে সেগুলো হচ্ছে জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভারত সীমান্ত সংলগ্ন চকবরকত ইউনিয়নের পাগলা দেওয়ান গ্রাম। এই গ্রামটি জেলার মধ্যে সর্ববৃহৎ বধ্যভূমি হিসাবে চিহ্নিত। ১০ হাজারেরও বেশি বাঙালীকে এই বধ্যভূমিতে পাকি সৈনরা নৃসংশভাবে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই পথেই বাঙালীরা ভারতে জীবনের নিরাপত্তার জন্য পালিয়ে যাওয়ার জন্য আসছিল। পাকবাহিনী তাদের এখানে হত্যা করে। শুধু তাই নয় পাকি বাহিনী এই পাগলা দেওয়ান গ্রামে জুমার দিন মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ধরে এনে গুলি করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমিটি ১৯৯২ সালের ৩০ ডিসেম্বর জয়পুরহাট জেলার মুক্তিযুদ্ধের গবেষক সংস্কৃতি সংগঠক আমিনুল হক বাবুল ও সাংবাদিক নন্দকিশোর আগরওয়ালা আবিষ্কার করেন। এই বধ্যভূমিতে যেখানেই কোদাল দিয়ে মাটি তোলা হয় সেখানেই মানুষের হাড়, মাথার খুলি বেরিয়ে আসছিল। এলাকার বৃদ্ধদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলতে পারে না সংখ্যায় কত লোক এখানে হত্যা করা হয়েছে। শুধুই বলে মানুষের মিছিল আসছিল এমনভাবে আর পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের ধরে ধরে হত্যা করছিল। তাদের হাত থেকে নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউই রেহাই পেত না। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে এই বধ্যভূমির পাশেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে আনা যুবতী ও এই পথে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা পরিবারগুলো থেকে যুবতীদের ধরে রেখে তারা ৯ মাস ধর্ষণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে কয়েকটি ঘরে তাদের ধর্ষণের নানা আলামত যেমন চুরি, শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট পাওয়া যায়। পাকি সৈন্যরা জয়পুরহাট শহরের কড়ই কাদিপুর গ্রামে ২৬ এপ্রিল হিন্দু অধ্যুষিত পালপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। লুটপাট করে এবং ৩৭৩ হিন্দুকে গুলি করে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে একটি পুকুরে ফেলে রাখে। একইভাবে জয়পুরহাট সরকারী ডিগ্রী কলেজের মাঠের পাশে ও মাঠ সংলগ্ন বারোঘাটির পারে দুটি বধ্যভূমিতে শতাধিক বাঙালীকে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখে।জয়পুরহাট শহর থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে খঞ্জনপুর কুটিবাড়ি ব্রিজের পাশে হত্যা করে জয়পুরহাটের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আবুল কাশেমকে। এই বধ্যভূমিতেই শুরু হয় অসংখ্য বাঙালীকে হত্যার মহা উল্লাস। পাঁচবিবির বকুলতলা, কালিপুকুর, কড়িয়া এলাকার বধ্যভূমিতে অসংখ্য বাঙালীকে হত্যা করা হয়। আক্কেলপুরের আমুট্ট, ক্ষেতলালের হাটশহর, হারুঞ্জা বধ্যভূমিতেও চলে হত্যাযজ্ঞ।
জয়পুরহাটের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণারত আমিনুল হক বাবুল জানায় এই জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৭টি বধ্যভূমি রয়েছে; যা সরকারীভাবে এখনও চিহ্নিত হয়নি। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে ১৩টি বধ্যভূমির নাম দেয়া হয়েছে। এই বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে পাগলা দেওয়ান, কড়ই কাদিপুর এবং আমুট্ট ও পাঁচবিবির নন্দুইলে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। জেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মারক চিহ্নগুলো সংরক্ষণেন সরকারী উদ্যোগ ঢিমে তালে চলছে জন্যই এই বধ্যভূমিগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে এবং মানুষের মন থেকে তা মুছে যাচ্ছে। ফলে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি তাদের তৎপরতা চালিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে কলংকিত করছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে।
পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমিতে গণহত্যা সম্পর্কে স্থানীয় একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও তুলে ধরা হলঃ-
আজকের পর্বটি এখানেই শেষ। পরবর্তী পর্বতে তুলে ধরার চেষ্টা করবো অন্যকোনো বধ্যভূমিতে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার ইতিহাস।
১ম পর্বঃ- http://sovyota.com/node/3335
তথ্যসুত্রঃ-
(০১)http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9A%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A6%97%E0%A6%B0_%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE]
(০২)চুকনগরে গণহত্যা –মুনতাসীর মামুন।
(০৩)http://www.somewhereinblog.net/blog/Labutareq/29451038
(০৪)https://www.facebook.com/JOYPURHAT5900/photos/a.165710770134791.32144.158939767478558/165711906801344/?type=1&permPage=1
(০৫)http://www.dailyjanakantha.com/news_view_all.php?nc=51&dd=2014-03-15
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
দারুণ তথ্যবহুল হচ্ছে আপনার এই সিরিজটি। আশা করি আদিসভ্য এই পোস্টটিকো স্টিকি করবেন।
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
prednisone side effects in dogs long termধন্যবাদ
তারিক লিংকন বলছেনঃ
বেশ পরিশ্রমী পোস্ট… আপনাকে স্যালুট! নতুন প্রজন্মের কাছে এইসব তথ্য বেশী বেশী করে তুলে ধরা দরকার! ভাল থাকবেন, অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো যেন দীর্ঘদিন লিখে যেতে পারেন… clomid trying to get pregnant
আর বরাবরের মতই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের স্রদ্ধাবনত শতসহস্র সালাম…
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
সকল মুক্তিযোদ্ধাদের স্রদ্ধাবনত শতসহস্র সালাম…
সহমত জানাই… :-bd
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
@ তারিক ভাইয়া, আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য
sildenafil basics 100 mg filmtabletten
শ্রাবনের রক্তজবা বলছেনঃ
আপনার এই প্রয়াসটি মোটেও ক্ষুদ্র নয়।
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ buy viagra blue pill
সহমত… :-bd উনার চেষ্টাটা সত্যিই ক্ষুদ্র নয়… %%-
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
viagra sildenafil genericধন্যবাদ
সোমেশ্বরী বলছেনঃ
অসাধারণ হয়েছে, ধন্যবাদ আপনাকে… does enzyte work like viagra
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
অনেক পরিশ্রমী একটি পোস্ট। সিরিজটি কন্টিনিউ করার অনুরোধ রইলো।
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
হুম… আমারও ইচ্ছে আছে সিরিজটি কন্টিনিউ করার, ধন্যবাদ
দুর্বার প্রলয় বলছেনঃ
আগের মতই অসাধারন লিখা। cialis 10mg or 20mg
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য
ইলোসিয়া মৌনিন বলছেনঃ
অসাধারন সব লেখা দিয়েই যাচ্ছেন। স্যালুট আপনাকে।