মা_ তোমাদের সালাম
479
বার পঠিত‘বীরাঙ্গনা শুনে মনে হয় আমাকে করুণা করা হচ্ছে’
‘আমি সম্মানের সাথেই বলছি, প্লিজ নারী বলবেন না। আমার কাছে রুমী যেমন মুক্তিযোদ্ধা তারা বানুও একই রকম একজন মুক্তিযোদ্ধা। আলাদা করে নারী মুক্তিযোদ্ধা বললে আমার মনে হয় আলাদাভাবে দূর্বল প্রকাশ করার জন্য বলা হয়।’- ইসরাত নিশাত para que sirve el amoxil pediatrico
মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনাদের এধরনের বক্তব্যের সামনে আমি ভীত, বিভ্রান্ত, লজ্জিত। জাতির এই শ্রেষ্ঠ কন্যাদের সামান্য সম্মান জানানোর মত কোন সম্বোধনও কি আমাদের শব্দ ভান্ডারে নেই? zoloft birth defects 2013
WUCFFC এর পরিসংখ্যান অনুসারে ১৯৭১ সালে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৮৬ হাজার।
দেশের অভ্যন্তরে- ২ লাখের বেশি শরনার্থী ক্যাম্পে- ১ লাখেরও বেশি
ধর্ষনের শিকার- ৭০% ক্যাম্পপে রেখে নির্যাতন- ১৮% অন্যান্য- ১২%
বিবাহিত- ৬৬.৫০% অবিবাহিত- ৩৩.৫০% কুমারী- ৪৪%
মুসলমান- ৫৬.৫০% হিন্দু- ৪১.৪৪% অন্যান্য- ২.০৬%
মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা- এই প্রশ্নে প্রথমেই আমাদের সামনে চলে আসে ‘বীরাঙ্গনাদের অবদান’। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা যত না মুক্তিযোদ্ধা নারীদের কথা তুলে ধরি তার চেয়ে ঢের বেশি তুলে ধরি বীরাঙ্গনা নারীদের কথা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আফসান চৌধুরী বিশাল একটা সময় ধরে মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা নিয়ে কাজ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘ ১৯৭১ সালে নারীর তিনটি ভূমিকার কথা আমরা বলে থাকি। যোদ্ধা হিসেবে, সহায়ক হিসেবে, নির্যাতিত হিসেবে। কিন্তু নারীর সবচেয়ে বড় ভূমিকাকেই আমরা অগ্রাহ্য করে যাই। সামাজ টিকিয়ে রাখা। বাবা, ভাই অন্যান্যরা যখন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে সেই মুহূর্তে সমাজ, সংস্কার পরিবারকে আসলে রেখেছে। সেই ক্রান্তিকালে সমাজকে রক্ষা করেছে নারী’।
আফসান চৌধুরী আরও বলেন, ‘একজন নারী ৯ মাস মিলিটারী ক্যাম্প থেকে ফিরে আসে। তার বাবা তাকে ফিরে পেয়ে প্রথমে এক্যে কথাটি বলেন, ‘যদি তোর ধর্ষন হয়ে থাকে তাহলে কাউকে বলিস না’। ৯ মাস পর বেঁচে ফিরে আসার পর বেঁচে ফিরে পাওয়ার চেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ ধর্ষন চাপা দেওয়া’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনতাসির মামুন তার ‘বীরাঙ্গনা ৭১’ বইটিতে ৭১’এ বীরাঙ্গনা নারীর চাপা পড়া ইতিহাস অনেকটুকু তুলে ধরেছেন। সেই তথ্যের আলোকে জানা যায়, ৭১’ পরবর্তী সময়ে বীরাঙ্গনা নারীর সংখ্যা দশ লাখ বলা হত। ধীরে ধীরে সাত লাখ, পাঁচ লাখ করে বর্তমানে ২ লাখ বলা হয়। ৭১’ সালে বীরাঙ্গনাদের নির্যাতন বা ধর্ষনের টেস্ট করা হত। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ধানমন্ডি ৪ নম্বরের একটি বাড়ী ও সেখানকার একটি ক্লিনিকে। সেখানে নির্যাতিত নারীদের নির্যাতনের প্রমাণ বিভিন্ন কাগজে সংরক্ষিত ছিল। ৭১’সালের পরবর্তী সময়ে ৭২’ সালেও মানুষ বীরাঙ্গনাদের গ্রহন করে এবং মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বিয়েও করে-এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নির্যাতিত নারীদের ‘বীরাঙ্গনা; উপাধি দেন। বীর থেকে বীরাঙ্গনা উপাধিটি দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরবর্তী সময়ে দৃশ্যপট ভিন্ন হয়ে যায়। মানুষ বীরাঙ্গনাদের মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। বীরাঙ্গনা সাক্ষ্যটি একটি বড়ো অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায় নারীর জীবনে। এই প্রমাণই তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলে। রাষ্ট্র তাদের স্বীকৃতি দিলেও সমাজ তা মেনে নেয় না। এরকম সময় যে বঙ্গবন্ধু নিজে এ দলিল সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনিই আদেশ দেন এসব সাক্ষ্য- প্রমাণ, দলিল পুড়িয়ে ফেলতে। যেন এগুলো আর কোন নারীর জীবনকে দূর্বিষহ করে না তুলে। ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায় বীরাঙ্গনা নারীদের তাতক্ষনিক সব সাক্ষ্য।
মুনতাসির মামুন ব্যক্তিগতভাবে যে পরিসংখ্যান চালিয়েছেন তাতে তিনি ৫-৬ লাখ বীরাঙ্গনা খুঁজা পান। প্রশ্ম হচ্ছে বীরাঙ্গনা নারীর সংখ্যা এত মত পার্থক্য তৈরি হল কেন এবং কিভাবে? এর পিছনে মূলত দু’টি কারণ দায়ী। প্রথমত super power America, china-এর মত রাষ্ট্রগুলো একসময় এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানী শাষকগোষ্ঠির সাথে তাদের সম্পৃক্ততাই এসব অন্যায়ের সাথে এই দেশগুলোকে জড়ীয়ে ফেলে। যার ফলত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা এই অন্যায়ের ব্যপকতাকে ধামাচাপা দেবার জন্য তাদের ক্ষমতা বলে প্রসাশনিকভাবে এ সংখ্যা কমাতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয়ত ইতিহাস বিকৃত করার প্রবনতা। স্বাধীনতোত্তরকালে রাজাকার, আলবদরদের হাতে ক্ষমতা আসলে তারা প্রকৃত সংখ্যাকে পরিবর্তন করে নিজেদের সুবিধামত করে তা প্রচার করতে থাকে।
তাই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বীরাঙ্গনাদের উপর দিয়ে চলে যাওয়া পাশবিক ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমরা খুব ভাল মত জানতে পারিনি। আমরা কখনই অবগত হইনি এই গভীরতম নির্মমতাগুলোর সাথে। তারপর কখনো কখনো বিভিন্ন সাহসী মানুষদের ঐকান্তিক চেষ্টায় আমরা সামান্য হলেও বীরাঙ্গনাদের সম্পর্কে জানতে পারি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নারীর ভূমিকা? সহায়িকা হিসেবে নারীর ভূমিকা? তার হয়ত সামান্য অংশটুকুও আমরা জানিনা। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নারীর ভূমিকা বলতে আমরা খুব বেশি হলে জানি তারামন বিবি, সেলিনা পারভীন অথবা কবি মেহেরুন্নেসার কথা। কিন্তু আমাদের অজান্তে নারী মুক্তিযোদ্ধাগণ এতটাই গহীনে হারিয়ে গেছেন যে আমরা আজ সন্ধান করেও তাদের খুঁজে পাই না। আমাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নারীর অবদান ধোঁয়াশায় থেকে যায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল, ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইট এবং অন্যন্য কিছু তথ্যসুত্র অনুসারে সেরকমই কিছু হারিয়ে যাওয়া সাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষ্যাতকার তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
মুক্তিযোদ্ধা আমিনা
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন viagra en uk
কলেজ জীবনের শুরু থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন আমিনা৷ ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে তৎকালীন সিরাজগঞ্জ মহকুমার বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছেন৷ সেসময় সিরাজগঞ্জ কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত যুগ্ম সম্পাদিকা৷ পরে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন৷ ফলে হঠাৎ করে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েননি, মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি পটভূমি তৈরির কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আমিনা এবং তাঁর সহকর্মী ছাত্র নেতারা৷ সেই বিবেচনায় মুক্তিযুদ্ধের জন্য সকলকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন আমিনা৷
১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চের ১৪ তারিখ তৎকালীন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বকুলের সাথে বিয়ে হয় আমিনার৷
হাতের মেহেদির রং মিলিয়ে না যেতেই বিয়ের মাত্র ১১ দিনের মাথায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আমিনা বেগম৷‘‘বলতে গেলে সে সময় দেশের পরিস্থিতিই আমাকে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে নেয়৷ আর আমার স্বামী এ সময়ই মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে ভারতে চলে যান৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বহুবার বিভিন্ন স্থানে দেখা হয়েছে আমাদের৷ কিন্তু এসময় আমরা দু’জন অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মতো দেশের সম্ভ্রম বাঁচাতে এতটাই আন্তরিক ছিলাম যে আমাদের নিজেদের দিকে নজর দেওয়ার সময় ছিল না৷” দীর্ঘ নয়মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের সক্রিয়তার কথা এভাবেই তুলে ধরলেন বীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা আমিনা বেগম৷
পঁচিশে মার্চ জাতির জনকের উচ্চারিত শব্দমালা শুনে তাড়িত হন তাঁরা৷ স্বামী সংসারের হাতছানি দূরে ঠেলে উভয়েই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷
ডয়চে ভেলের সাথে টেলিফোন আলাপে মুক্তিযুদ্ধে নিজের সাহসী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন আমিনা৷ তিনি বলেন, ‘‘সিরাজগঞ্জের প্রায় ২০০ মুক্তিযোদ্ধা এবং পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের প্রায় দেড় হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য নির্দেশ আসে৷ সিদ্ধান্ত হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল নৌকাযোগে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে ভারতের শিলিগুড়ির পাঙ্গা চর থেকে অস্ত্র কিনে আনবে৷ চারটি নৌকা নিয়ে আমরা মাইনকারচরের উদ্দেশ্যে রওনা করি৷ এর মধ্যে একটি নৌকার আরোহী ছিলাম আমি একা৷ মাঝপথে যাত্রীবোঝাই একটি নৌকায় দেখা মেলে আমার শিক্ষয়িত্রী জ্যোৎস্না দিদি ও তাঁর দেড় বছরের শিশুকন্যা সঞ্চিতার সঙ্গে৷ নানা দিক ভেবে আমি এ দুজনকে আমার নৌকায় তুলে নিই৷ এর কিছুক্ষণ পরই পাকিস্তানি দুটি গানবোট আমাদের পিছু ধাওয়া করে৷
এক পর্যায়ে আরেক নৌকায় থাকা আমার স্বামী আমাকে অস্ত্র সরবরাহকারীদের নাম-ঠিকানা দিয়ে আমাদের নদীর পাড়ে নামিয়ে দেন৷ চুক্তি হয়, প্রয়োজন হলে তিনি গ্রেনেড হামলা চালাবেন পাকিস্তানি গানবোটের ওপর, আর আমি ও জ্যোৎস্না দিদি যেকোনো মূল্যে অস্ত্র আনতে ভারতের শিলিগুড়ি যাব৷ দীর্ঘ পথ দৌড়ে আমরা একটি গ্রামে এসে পৌঁছাই৷ উত্তেজনার পাশাপাশি ক্ষুধা-তৃষ্ণায় তখন আমরা কাতর৷ দীর্ঘ সময় পর এক কিশোরী গৃহবধূ আমাদের কিছু মুড়ি ও পানি খেতে দেয়৷ সন্ধ্যায় আমরা নৌকাঘাটে এসে দেখি, আমার স্বামী উৎকণ্ঠিত হয়ে আমাদের ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন৷ তাঁর কাছে শুনেছি, পাকিস্তানি গানবোট দুটি খুব কাছে এলেও পরিত্যক্ত নৌকা ভেবে ফিরে গেছে৷ গভীর রাতে আমরা মাইনকারচরে পৌঁছাই৷
পরদিন সড়কপথে আমরা জলপাইগুড়ির পাঙ্গা চরে যাই৷ পরে আমরা ট্রাকযোগে সেখান থেকে ৪০০ রাইফেল, ৪০ হাজার গোলাবারুদ, ১০ ব্যাগ বিস্ফোরক, চারটি আরসিএল এবং কিছু গ্রেনেড নিয়ে আসি৷ মাইনকারচর থেকে অস্ত্রগুলো আমরা তিনটি নৌকা বোঝাই করে সিরাজগঞ্জে নিয়ে আসি এবং সেসব মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বণ্টন করি৷” will metformin help me lose weight fast
এরপর রৌমারি ইয়ুথ ক্যাম্পে সিরাজগঞ্জের বেশ কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধা দলের হয়ে যোগাযোগ এবং অস্ত্র সরবরাহের কাজ করেছেন৷ অক্টোবর মাসে শিলিগুড়ির পাঙ্গা চর থেকে আরো এক চালান অস্ত্র মাইনকারচরে এসে পৌঁছায়৷ এ সময় বেশ কিছু অস্ত্র নৌকাযোগে সিরাজগঞ্জে পাঠানো হয়৷ এর কিছুদিন পরই আমিনার উপর দায়িত্ব পড়ে, আরো কিছু অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে৷ কিন্তু অস্ত্র নিয়ে নৌকাযোগে সিরাজগঞ্জ শহরের কিছুটা উত্তরে ব্রহ্মগাছায় পৌঁছালে আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়৷ এ যুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও যুদ্ধের পুরো সময় তিনি ছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রের কাছেই৷ এক পর্যায়ে অস্ত্রসহ ফিরে আসেন৷ পরে কাজীপুর উপজেলার নাটুয়ারচরে গিয়ে অস্ত্র ও গ্রেনেডগুলো মাটিতে পুঁতে রাখেন৷ নির্দেশ ছিল, বিশেষ প্রয়োজনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে অস্ত্রগুলো সরবরাহ করতে হবে৷
স্বাধীনতার পর উপজেলা নারী ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে পেশাগত ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন আমিনা৷ ২০০৮ সালে অবসরে যান৷
মুক্তিযোদ্ধা হেলেন করিম
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন মা কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। একজন নারী দেশকে কতটা ভালবাসলে তিন মাসের সন্তান, নিজের স্বাস্থ্য, সংসার-সবকিছু ছেড়ে দেশের জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে ছুটে যেতে পারে তার দৃষ্টান্ত হেলেন করিম।
তিন মাসের ছোট্ট শিশুকে রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন মির্জা হেলেন করিম৷ নানা কৌশলে পাকিস্তানি সেনা এবং রাজাকারদের উপর হামলা চালাতে মুক্তি সেনাদের সাহায্য করেন৷ দাবি করেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির৷
১৯৫৮ সালে টাঙ্গাইলের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম মির্জা হেলেন করিমের৷ পিতা মির্জা শুকুর আহমেদ এবং মা আনোয়ারা খাতুন৷ টাঙ্গাইলে জন্ম হলেও ঢাকাতেই বড় হয়েছেন এবং বাস করছেন হেলেন৷
১৯৭১ সালে বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী ছিলেন হেলেন৷ কলেজ জীবন থেকে জড়িত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে৷ বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরযুক্ত হন মহিলা পরিষদের সাথে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সবচেয়ে বেশি করে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ এরপর টাঙ্গাইলে যুদ্ধের জন্য স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরির ডাক আসলে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল চলে আসেন তিনি৷
হেলেনের ছেলের বয়স তখন তিন মাস। টাঙ্গাইলের গয়লাহোসেন চরে এপ্রিলের শেষের দিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ শুরু করেন তিনি৷ সেখানে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের প্রশিক্ষণের সুযোগ ছিল। পাঁচ জন মেয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন৷
হেলেন করিম তাদেরই একজন। যুদ্ধের নয় মাস টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন হেলেন৷ প্রথমদিকে তাঁরা পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বন্দুক নিয়ে চর অঞ্চল এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় সতর্ক পাহারা দিতেন সাথে সাথে পাক সেনা ও রাজাকারদের গতিবিধি লক্ষ্য করতেন৷ এর মধ্যে রাজাকারেরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব নারী যোদ্ধাদের সম্পৃক্ততার তথ্য জানতে পারে ৷ এ তথ্য সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানায় অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটিতে পৌঁছে দেয় রাজাকারেরা। সেখান থেকে আট-দশটা গানবোট নিয়ে এসে একদিন ঐ চর এলাকা ঘিরে ফেলে পাকবাহিনী৷ সেদিন আত্মরক্ষার জন্য পুরুষ যোদ্ধাদের সাথে ফায়ার করতে করতে নারী যোদ্ধারাও এলাকা থেকে সরে পড়েন৷ দূর্ভাগ্যবশত মনোয়ারা নামের এক নারী যোদ্ধা হানাদার পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এবং ধর্ষিত হন৷ কোম্পানি কমান্ডার ইদ্রিস আলী এই ঘটনার পর মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য তাদের কাছ থেকে বন্দুকগুলো নিয়ে নেন৷ তবে হেলেনের উপর সিরাজগঞ্জ এবং টাঙ্গাইলের চর অঞ্চলে গ্রেনেড পারাপার করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷
এসময় হেলেন ঐ অঞ্চলে পাকসেনা এবং রাজাকারদের অবস্থান ও পরিকল্পনা জানার জন্য গোয়েন্দাগিরির কাজ করেছেন৷ এজন্য প্রায় সময় পাতিলে গ্রেনেড ভর্তি করে তার উপর ডিম সাজিয়ে নিয়ে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পৌঁছে দিয়েছেন৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র, গ্রামীণ মেয়ের ছদ্মবেশে নৌকা করে পাক সেনা এবং রাজাকারদের সাথে এক নৌকায় গ্রেনেড নিয়ে নদী পাড়ি দিয়েছেন হেলেন৷ পাকসেনারা তাঁর পরিচয় এবং গন্তব্যস্থল জানতে চাইলে তাদের নানা কৌশলে উত্তর দিয়ে সফলভাবে লক্ষ্যে পৌঁছে নিয়ে গেছেন এই সাহসী নারী৷
ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসময়ের দুঃসাহসী ঘটনার কথা জানালেন হেলেন করিম৷ তিনি বলেন, ‘‘নৌকায় রাজাকারেরা আমাকে জিজ্ঞেস করতো ডিমের হালি কতো৷ আমি বলতাম৷ তখন জিজ্ঞেস করতো, ওপারে তোমার কে থাকে? আমি বলতাম, আমার স্বামী থাকে৷ তখন বলতো, ও সেজন্যই যাচ্ছো৷ আমি বলতাম, হ্যাঁ৷ তখন তারা আর কিছু বলতো না৷ একদিন দুই জন পাক সেনা আর তিন জন রাজাকার নৌকায় উঠেছে৷ আমিও নৌকায় আছি৷ ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কোথায় নামবে? আমি মুক্তিসেনা ভাইদের আগেই বলে দেওয়া নির্দিষ্ট জায়গার কথা বললাম যে, সেখানে না নামলে তো আমি রাস্তা চিনতে পারবো না৷ ফলে তারা আমাকে সেখানে নামানোর জন্য তীরে নৌকা ভিড়ালো৷ আমি নামার সাথে সাথে সেখানে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের উপর ব্রাশফায়ার করেন৷ ফলে দুই জন পাকিস্তানি সেনা এবং একজন রাজাকার সেখানেই মারা যায়৷ অন্য দু’জন রাজাকারকে ধরে আনা হয়৷ তারা পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ শুরু করে৷”
দিনের পর দিন এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ করেছেন হেলেন করিম। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে ঘুরে শত্রুপক্ষের খবর এনে দিতেন৷ তাঁর তথ্যের উপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা সফল অভিযান চালাতেন৷ যুদ্ধের শেষের দিকে হেলেন করিমের সংকেত অনুসরণ করে বেলকুচি থানার শক্ত ঘাঁটিতে হামলা চালান মুক্তি সেনারা৷ সেদিন ৫-৭ জন পাক সেনা নিহত হয়৷ আনোয়ার নামের একজন সেনা আত্মসমর্পণ করে৷ এরপর থেকে ঐ অঞ্চল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে৷
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলনের সাথে জড়িত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা হেলেন৷বর্তমানে মহিলা আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হেলেন করিম৷ উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি৷তাঁর বাসাতেই গঠিত হয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী৷ খেলাঘরের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য৷
হাসিনা বেগম
প্রযত্নেঃ আফছার আলী খান
থানা ও জেলাঃ পাবনা
‘২৮শে মার্চ ৭১ আমার স্বামী তখন বাড়ীতে। বেলা ১১/১২টায় একটি পাকসেনাদের গাড়ী এসে থামে, জোর করে তারা বাড়ীতে ঢুকে স্বামীকে যেতে বলে। তখন উনি মটোর সাইকেল পরিস্কার করছিলেন। লুঙ্গি পড়া অবস্থায় মটোর সাইকেল নিয়ে যেতে বললেন। কিছুক্ষণ পরেই খবর পেলাম চাঁচড়ার মোড়ে আমার স্বামীকে গুলি করে মেরেছে। লাশ আনতে গেলে পায়না, মটর সাইকেলও তারা নিয়ে যায়। তারপর বাসায় থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। আমার দু’টি ছেলে নিয়ে পথে নামি। যশোর থানা, কালিগঞ্জ থানা, কোটচাঁদপুর, শ্রীপুর থানা, মাগুরা থানা, বেলেডাঙ্গা থানা, শৈলকুপা থানা, কাতলাগড়া থানা ইত্যাদি তখন কাজে নামি। কাজ শুরু করি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে।
আমার আব্বা ডি এস পি। ছিলেন। সেই বরাত দিয়ে উপরিউক্ত থানা গুলিতে গেছি। পরিচ দিয়েছি, থেকেছি এবং সেখান থেকে থানার বর্তমান ফোর্স কত, অস্ত্র কত ইত্যদি খবর আমি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পরিবেশন করতাম। তারপর মুক্তিবাহিনী ঐসব থানাগুলিতে অপারেশন চালাতো। এতে করে কাজ এগিয়ে চলছিলো। আমি বিভিন্ন থানা ঘুরে ঘুরে কাজ করতে থাকি, সাফল্যও বেশ আসে। আমার দু’টি বাচ্চা নিয়ে ঐভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছিলাম।আমি তখন শৈলকুপা থানাতে এক বাড়ীতে। লোকজন কেউ নেউ আমি একাই ছিলাম বাচ্চা দু’টিকে নিয়ে। চারদিকে ঘরবাড়ী সব বিধস্ত শূণ্য নিঃসঙ্গ ভৌতিক একটি অবস্থা।
ভাদ্র মাসে ( তারিখ মনে নেই )। তখন বেলা ১০/১১টার দিকে ভাত রান্না করছিলাম। হঠাত করে ২ জন পাকসেনা ও ৪জন রাজাকার এসে আমাকে থানাতে যেতে বলে। তারপর জোর করে বাচ্চাটিসহ থানায় নিয়ে যায়। অপর বাচ্চাটি পাকসেনা দেখে পালিয়ে যায়। থানাতে গিয়ে মারধোর শুরু করে। থানাতে বহু পাকসেনা ও রাজাকারে ভর্তি ছিল। তখন অন্ম্য পাঁচটি ছেলেকে ধরে আনা হয়। তাদের সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে। ঐ গুলি এসে আমার পায়ে লাগে। পরে অপারেশন করে আমার গুলি বের করে। মারতে মারতে আমি রায় অজ্ঞান হয়ে পড়তাম। দারোগা আনিসুর রহমান আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করত। তারত অনুরোধে আমাকে গুলি করে না। ডানাতে এবং মাজাতে দড়ি বেঁধে শৈলকূপা ব্রীজের নিচে পানিতে ডুবিয়ে রাখে ১৪/১৫ ঘন্টা। এ অবস্থায় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। তার পরদিন পানি থেকে তুলে থানার মাঠে ফেলে রাখে। আমার তখন নড়বার মত অবস্থা ছিল না। ঐভাবে আছি। একজন রাজাকার এসে ‘এখনো মরেনি’ বলে বুকের উপর লাথি মারে। আমার জ্ঞান ছিল না। দারোগার বারবার অনুরোধে আমার প্রাণ ভিক্ষা দেয়। আমার চিকিতসা করায় আমি সুস্থ হয়ে উঠি। আমার পুরাতন বাড়িতে ফিরে আসে।
বীর সাহসী দুই বোন ড. এস এম আনোয়ারা বেগম এবং মনোয়ারা বেগম৷ about cialis tablets
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
১৯৫৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীর কালিকাপুর গ্রামে জন্ম ড. এস এম আনোয়ারা বেগমের৷ পিতা শরীফ হোসেন সরদার এবং মা সোনা বানু৷ পাঁচ বোন, এক ভাই৷ পারিবারিকভাবেই রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন তাঁরা৷ বড় ভাই সরদার আবদুর রশীদ তখন পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন৷ বড় ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন দুই বোন আনোয়ারা এবং মনোয়ারা৷ পাড়ার লোকেরা তাঁদেরকে অনু আর মনু নামে ডাকত৷
মুক্তিযুদ্ধের আগেই দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের সক্রিয় কর্মকাণ্ডের কথা জানালেন ড. এস এম আনোয়ারা বেগম৷ তিনি বলেন, ‘‘ভাইয়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দেশের তৎকালীন পরিস্থিতি আমাদের মনে নাড়া দেয়৷ দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে জাগে৷ তখন ভাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি রাজনীতিতে৷ ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন ছিল রাজনীতিতে আমার হাতেখড়ি৷ এলাকার সবার মুখে মুখে তখন আমাদের দুই বোনের নাম৷ আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেওয়ার কারণে আমাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি আসে৷ তবু থেমে থাকিনি৷ বড় ভাইকে প্রায়ই কারাগারে যেতে হতো৷ আইয়ুব খানের মার্শাল কোর্টে তাঁকে সাজাও দেওয়া হয়৷ ১৯৬৮ থেকেই আন্দোলন সংগ্রামে মেতে ছিলাম আমরা৷ মিছিলে মিছিলে যখন প্রকম্পিত হতো রাজপথ৷ আমরা তখন মিছিলের সামনে অবস্থান করে স্লোগান দিতাম৷”
১৯৭১ সালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ছাত্রী আনোয়ারা এবং মনোয়ারা৷২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এলাকার তরুণদের সাথে নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন তাঁরা৷ এলাকায় বেশ কিছু বাংকার তৈরি করেন৷ তিন ভাইবোন পটুয়াখালী জুবিলী কলেজের মাঠে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ২৬ মার্চ থেকে প্রায় এক মাস অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন৷ এ খবর পাকিস্তানি হানাদার ও শান্তি বাহিনীর লোকদের কাছে পৌঁছায়৷ তারা তাঁদের ধরার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে৷
১১ এপ্রিল আক্রান্ত হয় পটুয়াখালী৷ মেজর নাদের পারভেজ নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে৷ মা বোনদের সম্ভ্রমহানি এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়৷ মাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা৷ এসময় তাঁদের ঝুঁকিপূর্ণ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আনোয়ারা বেগম৷ ‘‘গ্রামের কাঁচা রাস্তা, খাল, বিল, নদী, সাঁকো পার হয়ে চার পাঁচ দিন পর এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিই৷ ওই রাতে মাকে সেখানে রেখে আমরা অন্যত্র চলে যাই৷ সে রাতেই হানাদার বাহিনী মাকে ধরে নিয়ে প্রথমে গলাচিপা থানা এবং পরে পটুয়াখালী সদর থানায় চালান করে৷ তখন এলাকায় ঘোষণা করা হয় অনু ও মনুকে জীবিত অথবা মৃত ধরে দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা ও ৩০ ভরি স্বর্ণ পুরস্কার দেওয়া হবে৷ তখন আমাদের আশ্রয় দিতে অনেকেই আপত্তি জানায়৷ তবে নিশানবাড়িয়ার সফিউদ্দিন বিশ্বাস নামের একজন পীর তাঁর মুরিদদের বলেন আমাদের আশ্রয় দিতে৷ তারাও আশ্রয় দিতে ভয় পাচ্ছিল৷ পরে তারা আমাদের আগুনমুখা নদীর ধারে একটি গভীর জঙ্গলে রেখে আসে৷ সেখানে তিন দিন না খেয়ে অবস্থান করি৷ ওই জঙ্গলেও হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা গিয়ে হাজির হয়৷ একদিন প্রায় ধরা পড়েই গিয়েছিলাম৷ পীরের মুরিদ হেলাল নামের এক যুবক জানত আমরা কোথায় লুকিয়ে আছি৷ তাকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা জঙ্গলের মধ্যে যায়৷ খুঁজতে খুঁজতে আমাদের লুকিয়ে থাকার জায়গায় এসে পড়ে৷ হেলাল তখন বলে, স্যার, ওইখানে যাবেন না৷ ওখানে বিষধর সাপ আছে৷ ওখানে কোনো মানুষ যায় না৷ হেলালের কথা ওরা বিশ্বাস করে৷ আমরাও সেদিনের মতো বেঁচে যাই৷ ইতিমধ্যে পীরের লোকজন ৯ নম্বর সেক্টরের অধীন সাব সেক্টরের প্রধান মেজর জিয়া উদ্দিনের কাছে আমাদের বিপদের খবর পৌঁছে দেয়৷ একদিন রাত ২টার দিকে মেজর জিয়াউদ্দিন একদল মুক্তিযোদ্ধা পাঠান অস্ত্রশস্ত্রসহ তিনটি বোটে করে৷ তাঁরা এসে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যান৷”
মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সালেহা বেগম
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় যশোর মহিলা কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী সালেহা৷ মূলত মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই ১৯৬৯ সালে যে নিউক্লিয়াস হয় সেটার সদস্য ছিলেন সালেহা৷ নিউক্লিয়াসের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন করা৷ সমাজতান্ত্রিক শোষণমুক্ত সাম্রাজ্যবাদমুক্ত একটা দেশ গড়া৷ এভাবে তাঁরা সংগঠিত হতে থাকেন৷ গড়ে তোলেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র৷
১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়৷ সেখানে প্রায় ২০০ ছেলে এবং পাঁচ জন মেয়েকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ প্রশিক্ষণের মধ্যে ছিল অস্ত্র চালনা, বোমা তৈরি, বোমা নিষ্ক্রিয় করণ ইত্যাদি৷ এরপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রাণ বাজি রেখে সরাসরি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন সালেহা এবং তাঁর দল৷ যশোরের বিভিন্ন জায়গায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন সালেহা৷ এছাড়া ওয়ারলেস এবং গেরিলা হামলার মতো আরো উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে চলে যান৷ ভারতের দত্তফুলিয়া এবং এপারে মহেশপুর অঞ্চলে দীর্ঘ সময় কাজ করেন তিনি৷
ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনার কথা জানান সালেহা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি একদিন যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ এটা ছিল যশোরের বাহাদুরপুর অঞ্চল৷ প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ৷ বাহিনীর অন্যান্য সবাই বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে একত্রিত হয়৷ এসময় আমার কাছে ছোট্ট একটা চিরকুট আসে৷ এতে লেখা যে, আমরা না বলা পর্যন্ত আপনি বেরুবেন না৷ এটা থানা কমান্ড থেকে আমার কাছে নির্দেশ হিসেবে পাঠানো হয়৷ ফলে আমি ভাবলাম যে, এটা আমার মেনে চলা উচিত৷ হয়তো মারাত্মক কোন ঘটনা ঘটেছে৷ ফলে আমি আর সেখানে গেলাম না৷ পরে জানতে পারি যে, সেখানে আমাদের যে ছেলেরা ছিল তারা চারপাশ দিয়ে পাক সেনাদের ঘেরাও এ পড়ে গিয়েছিল৷ প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়৷ সবচেয়ে মনে রাখার মতো বিষয় হলো যে, আমাদের মাত্র ৫/৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল৷ অথচ তারা কেউ পিছু হটেনি৷ তাদের কি অদম্য দেশপ্রেম? বরং নিজেদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তারা পাক সেনাদের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে যায়৷ আমি সেখানে গেলে আমিও সেদিন মারা যেতাম৷ সেজন্যই আমাকে চিরকুট পাঠানো হয়েছিল৷”
নারী হিসেবে গুপ্ত হামলা, গোয়েন্দাগিরি কিংবা অস্ত্র সরবরাহের মতো তুলনামূলকভাবে কিছুটা সহজ কাজ নয় বরং নিয়মিত বাহিনীর সদস্য হিসেবে অনেকগুলো সম্মুখযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন সালেহা৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাক সেনাদের গুলি করে মেরেছেন৷ খুব কাছে থেকে পাক সেনাদের উপর হামলা চালিয়েছেন৷ তবে পাক সেনাদের ধরে আনার ঘটনা ঘটেছে মাত্র একবারই৷ অন্যান্য সময় পাক সেনারা নিহত হলেও তারা নিহত সেনাদের লাশ নিয়ে পালিয়ে যেতো৷ ফলে পাক সেনাদের লাশ পাওয়া যেতো না, বলে জানালেন এই বীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা৷
আরেকদিনের ভয়ংকর কিন্তু মজার ঘটনার কথা জানান সালেহা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘প্রথমদিকের ঘটনা এটি৷ আমরা প্রশিক্ষণ নিলেও সবাইতো আর এক রকমভাবে প্রশিক্ষিত কিংবা যুদ্ধে অভিজ্ঞ ছিলাম না৷ এ অবস্থায় একদিন বারান্দিপাড়ায় আমরা যুদ্ধের জন্য অবস্থান নিয়েছি৷ নিজেদের অবস্থানের জন্য প্রয়োজন মতো মাটি খুঁড়ে ট্রেঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল৷ সেসব ট্রেঞ্চে শুয়ে সেখান থেকে গুলি করতে হবে৷ তবে সবাই ট্রেঞ্চে অবস্থান নিতে না পারায়, অনেকে যে যেখানে জায়গা পেয়েছে শুয়ে অবস্থান নিয়েছে৷ গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে৷ সামনে পাক সেনাদের লক্ষ্য করে আমরা গুলি ছুঁড়ছি৷ কিন্তু হঠাৎ করে দেখা গেল পেছন থেকে কয়েকটি গুলি আসল৷ আমাদের একেবারে কানের পাশ দিয়ে চলে গেল৷ তবে ভাগ্যিস হেলমেট পরা ছিলাম৷ ফলে কেউ আমরা আহত হইনি৷ কিন্তু আমরা তো সবাই হতবাক৷ পাক সেনারা তো সামনে আছে৷ পেছনে তো পাক সেনা নেই৷ তাহলে গুলি আসল কোথা থেকে? পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে পেছনে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদেরই কেউ গুলি ছুঁড়েছে৷ বিষয়টা বোঝার সাথে সাথে তাদেরকে থামানো হলো৷ অবশ্য পরে আর এমন ঘটনা ঘটেনি৷”
all possible side effects of prednisone
মুক্তিযোদ্ধা খালেদা
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ private dermatologist london accutane
চট্টগ্রামের অগ্নিকন্যা‘ খ্যাত মুক্তিযোদ্ধা খালেদা. পালং থানায় সফল অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন খালেদা খানম এবং তাঁর সহযোদ্ধারা৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দিতেন বীর সাহসী নারী খালেদা খানম৷‘‘আমাদের বাড়ি থেকেই পালং থানায় অভিযান চালানো হয়৷ আমরা দেখলাম, পালং থানা দখল করতে না পারলে শরীয়তপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাফেরা ও কর্মকাণ্ড খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে৷ কারণ পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন মাদারীপুরে থাকতো, তখন স্পিড বোটে করে তাদের শরীয়তপুর আসতে মাত্র ১০/১৫ মিনিট লাগতো৷ এছাড়া পালং থানায় পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ছিলই৷ এ অবস্থায় আমরা পরিকল্পনা করলাম স্টুয়ার্ড মুজিবের নেতৃত্বে পালং থানা দখল করার৷ তখন আমাদের বড় বড় চারটা ঘর ভর্তি অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ছিল৷ আরো কিছু সামনের সারির মুক্তিযোদ্ধা এসে হাজির হলেন৷ আমি মেয়েদের নিয়ে বৈঠক করলাম৷ পালং থানা অভিযানে আমি, আমার বোন এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেয়েদের কয়েকজন অংশ নিলাম৷ তখন অনেক বর্ষা৷ নৌকায় করে আমাদের সেই অভিযানে যেতে হয়েছিল৷ আমরা পরিকল্পনা মাফিক সফলভাবে পালং থানা অভিযান চালিয়েছিলাম৷ আমাদের দখলে চলে আসে পালং থানা৷ কিন্তু এরপরই আমাদের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি থাকার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেল৷ একদিন পাক সেনারা আমাদের বাড়ি আক্রমণ করতে আসে৷ তারা লঞ্চে করে আমাদের বাড়ির বেশ কাছেই চলে এসেছিল৷ কিন্তু পথে একটি খাল কাটা ছিল৷ ফলে সেখান দিয়ে সৈন্যরা আসতে দেরি হয়েছিল৷ আর এসময় একটি ছোট্ট ছেলে চিৎকার দিয়ে জানিয়ে দেয় সৈন্যদের আসার খবর৷ ফলে সেদিন আমরা দ্রুত বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাই৷” এভাবেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নিজেদের অভিযানের কথা বলছিলেন বীর সাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধা খালেদা খানম৷ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন নানা ঘটনা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি উঠে যাওয়ার পর দোমসার, দাসাত্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘাঁটি করা হয়৷ কিন্তু একটি জায়গায় খুব বেশি দিন ঘাঁটি রাখা যেতো না৷ আমি প্রায়ই নৌকাতে অস্ত্র বোঝাই করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতাম৷ মুক্তিযোদ্ধাদের বলতাম, আপনারা অস্ত্র বহন না করে খালি হাতে চলে যান৷ আমি আপনাদের জায়গামতো অস্ত্র পৌঁছে দেবো৷ তা নাহলে যোদ্ধারা পথে ধরা পড়ে যেতেন৷ কিন্তু আমি যখন নৌকায় করে অস্ত্র নিয়ে যেতাম, তখনও রাজাকার এবং পাক সৈন্যরা আমাকে নৌকা নিয়ে ঘাটে ডাকতো৷ আমি তাদের ফাঁকি দেওয়ার জন্য মাঝেমাঝে আমার চাচাতো বোনকে নতুন বউ সাজিয়ে নৌকায় নিয়ে যেতাম৷ একদিন পাক সেনারা আমাকে ডাক দেয়৷ কিন্তু আমি জানি, ধরা পড়লে নৌকাভর্তি অস্ত্র তাদের হাতে চলে যাবে৷ আবার আমি সব মুক্তিযোদ্ধার নাম-ঠিকানা জানি – সেগুলো ওরা পেয়ে যেতে পারে৷ ফলে একবার অস্ত্র পানিতে ফেলে দেওয়ার কথা ভাবি৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেন অলৌকিকভাবেই বেঁচে যাই৷ আমাদের মাঝি বেশ চালাক ছিল৷ সে পাক সেনাদের একটি বাড়ি দেখিয়ে বলল, ঐ বাড়িতে যাচ্ছি৷ এরপর আমাদের ওরা ছেড়ে দিয়েছিল৷” missed several doses of synthroid
খালেদা খানম এবং তাঁর সহকর্মীরা বিশ্বাস করতেন যে, দেশ স্বাধীন করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে হবে৷ তাই খালেদা গুরুত্বের সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজ করতেন৷ এছাড়া গ্রামে গ্রামে ঘুরে উঠান বৈঠক করার সময় তিনি সঙ্গে কাগজ আর কলম রাখতেন৷ যুদ্ধে অংশগ্রহণে আগ্রহী নারীদের নাম-ঠিকানা লিখে নিতেন৷ পরে তাদের বিভিন্ন ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ দিতেন৷ মুক্তিযুদ্ধে বাংলার নারীদের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে খালেদা খানম বলেন, আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের নারীরা যদি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এতোটা সাহায্য না করতো তাহলে এতো কম সময়ে দেশ স্বাধীন হওয়া সম্ভব ছিল না৷
মুক্তিযোদ্ধা ফৌজিয়া
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আগরতলার নাম বহুবার এসেছে এবং আসবে৷ সেই আগরতলার একটি ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের সময় চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন ডা. ফৌজিয়া মুসলেম৷ মাত্র এক মাস বয়সের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ক্যাম্পে গিয়েছিলেন৷১৯৭১ সালে মে মাসের ৫ তারিখে আগরতলায় পাড়ি জমান ডা. ফৌজিয়া মুসলেম৷ আর তাঁর মেয়ে জন্ম নিয়েছিল এপ্রিলের ২ তারিখে৷ অর্থাৎ কোলে তখন এক মাস তিন দিন বয়সি সন্তান৷ স্বাভাবিকভাবেই একজন মা চাইবেন তার পুরো সময়টা বাচ্চাকে দিতে৷ কিন্তু সবসময় যে হিসেব মতো কাজ হবে তা তো আর নয়৷ ফলে ঐ দুধের বাচ্চাকে ঘরে রেখেই সম্ভাব্য মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতেন ডা. মুসলেম৷
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা৷ নারী অধিকার নিয়ে ছিলেন সোচ্চার৷ তাই ঊনসত্তর সালে ডাক্তারি পড়া শেষে কয়েকজন মিলে তৈরি করেছিলেন মহিলা সংগ্রাম পরিষদ৷ এরপর একাত্তর সালে যুদ্ধ শুরু হলে মহিলাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন যুদ্ধে অংশ নিতে৷ ফৌজিয়া মুসলেম বলেন, ‘‘আমরা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যেসব মহিলাদের যুক্ত করেছিলাম তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাখতে এমনকি যুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম৷”
তিনি বলেন, ছোট্ট বাচ্চা থাকার কারণে হয়তো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়াটা হয়নি৷ তবে চেষ্টা করেছেন পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ নিতে৷ এজন্যই চলে গেছেন আগরতলায়৷ দিয়েছেন সম্ভাব্য মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা৷ এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম জোগাড়ের কাজও করতে হয়েছে তাঁকে৷ আরও যে কাজটি করেছেন সেটা হচ্ছে আগরতলার নারীদের মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সমর্থন গড়ে তোলা৷ ফলে যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে, আগরতলার স্থানীয় মানুষ বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে৷
মুক্তিযোদ্ধা বদরুন নাহার
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম
১৯৬৯ সালে ঢাকা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে পড়ার সময় সমমনা রাজনৈতিক আদর্শের অন্যতম নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র তোফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বদরুন নাহার৷ ফলে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে একাত্ম ছিলেন৷ এছাড়া শ্বশুড় বাড়ির এলাকা হিসেবে চাঁদপুরকে ঘিরেই কেটেছে ডা. বদরুন নাহারের বাকি জীবন ও কর্মকাণ্ড৷স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ১১টি অঞ্চলে নৌকায় করে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তিনি৷
১৯৭১ সালে এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন বদরুন নাহার৷ মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী ডিডাব্লিউ’কে জানান, ‘‘বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি৷ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য আমি এবং আমার স্বামী ২৫শে মার্চ ঢাকা থেকে চলে আসি৷ আমরা চাঁদপুরে এসে সেখানে প্রথম গঠিত স্থানীয় সরকারে যোগ দেই৷ এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১২০৪ সাব-সেক্টরের অধীনে জহিরুল হক পাঠানের নেতৃত্বাধীন মধুমতী কোম্পানিতে আমি মেডিকেল কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করি৷ ঐ অঞ্চলের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এটিএম হায়দার৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ওলিপুর গ্রামের প্রশিক্ষণ শিবিরে আমি অস্ত্র চালনা এবং আত্মরক্ষা কৌশলের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পুরো নয় মাস আমি বাইরে ছিলাম৷ এসময় আমি অধিকাংশ সময় নৌকায় করে সাথী যোদ্ধাদের সেবা শুশ্রূষা করেছি৷”
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধক্ষেত্রে বিচরণ করে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ১১টি অঞ্চলে আহত মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করেছেন বীর সাহসী নারী ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী৷ ফলে এই ভয়াবহ সংকটের দিনে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি৷
সেসব ঘটনার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেদিন ছিল ২৯শে সেপ্টেম্বর৷ আশ্বিন মাসের শেষ দিন৷ হাজীগঞ্জের অফিস চিতোষী এলাকায় একটি বিদ্যালয়ে পাক সেনাদের ঘাঁটি ছিল৷ আমি তো নৌকায় দূরে ছিলাম৷ আমার কাছে কমান্ডার জহিরুল হক পাঠান খবর পাঠালেন যে, ঐ বিদ্যালয়ে পাক সেনারা বেশ কিছু মহিলাকে আটকে রেখেছে এবং তাদের উপরে পাশবিক নির্যাতন করেছে৷ খবর পেয়ে আমি রওয়ানা দিলাম৷ পাঠান বাহিনী ইতিমধ্যে পাক বাহিনীর ঐ ঘাঁটি আক্রমণ করে৷ দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলার পর পাকিস্তানি সেনারা কিছু লাশ এবং কিছু মহিলাকে সেখানে রেখে পালিয়ে যায়৷ আমি মনে করি, নয় মাসের যুদ্ধের অনেক ঘটনার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে হৃদয় বিদারক৷ আমি সেই বিদ্যালয়ের ভেতরে গিয়ে দেখলাম, ১২ থেকে ১৩ টি মহিলা৷ পাক সেনাদের পাশবিক অত্যাচারের প্রতিটি চিহ্ন তাদের গায়ে৷ তারা সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় সেখানে ছিল৷ সেই স্মৃতি এখনও আমার চোখের সামনে ভাসে এবং তাদের কথা স্মরণ করলে এখনও আমি কান্না ধরে রাখতে পারি না৷ এ অবস্থায় আমার কিছু কাপড়-চোপড়, আমাদের সাথীদের কাপড়-চোপড় এবং আশেপাশের মানুষদের সহায়তায় তাদেরকে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ফেলি৷ এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা দিই৷ শুধু তাই নয়, আমি যে নৌকায় থাকতাম এবং বিভিন্ন জায়গায় যেতাম, সেই নৌকায় করে তাদের নিয়ে আসি৷ সেসময় আমার কাছেও খুব বেশি ওষুধ-পত্র ছিল না৷ তবু সেসব দিয়েই তাদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলি৷ পরে তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে তাদের পৌঁছে দেই৷ আমার কাছে এখনও মনে হয়, আমার চিকিৎসা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো যে, আমি সেই নির্যাতিত মহিলাগুলোকে চিকিৎসা সেবা দিতে পেরেছি৷”
মুক্তিযোদ্ধা ডা. লুৎফুন নেসা
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন
১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের সময় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন লুৎফুন নেসা৷ ফলে সেই বিদ্যালয় জীবন থেকেই আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িত হন তিনি৷ পরে ছয় দফা ও এগারো দফা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তিনি৷
১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন লুৎফুন নেসা৷ একইসাথে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদিকা ছিলেন তিনি৷ সেই হিসেবে চলমান স্বাধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি৷ এছাড়া আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে ইন্দিরা রোডের মরিচা হাউসে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন লুৎফুন নেসা৷
কাঠের তৈরি নকল অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সেই অনুভূতি সম্পর্কে তিনি ডয়চে ভেলে’কে বলেন, ‘‘আমরা মরিচা হাউসে সেসময় কাঠের পিস্তল দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতাম৷ সেই নমুনা অস্ত্রের বদলে যে একদিন সত্যি সত্যি আমাদের আসল বন্দুক হাতে নিয়ে লড়তে হবে তা ধারণা করাও কঠিন ছিল৷ তবে পরে যখন কলকাতায় গিয়ে আসল বন্দুক হাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছি, তখন মনে হয়েছে ওরা আমাদের এভাবে মারছে, আমরাও প্রয়োজনে তাদেরকে এই অস্ত্র দিয়ে মারবো৷ চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসা তো করবোই আহত ভাই-বোনদের, কিন্তু নিজের হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধও আমরা করবো৷
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে দুই নম্বর সেক্টরের আওতায় মুন্সীগঞ্জে ক্যাপ্টেন হায়দার এর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ডা. লুৎফুন নেসা৷ কিন্তু বীর সৈনিক পিতার অনুপ্রেরণায় তিনি পরে ভারতের কলকাতায় গিয়ে সম্মুখ যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন৷ এ ব্যাপারে তিনি জানান, ‘‘আমার বাবা বললেন, একজন ডাক্তার হিসেবে তুমি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা তো করবেই৷ কিন্তু শত্রুদের আক্রমণের শিকার হলে নিজেদের রক্ষা করতেও তো পারতে হবে৷ তাই তিনি আমাকে ভারতে নিয়ে গেলেন অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য৷ তাই আমরা চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সম্মুখ যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষিত এবং প্রস্তুত ছিলাম৷ সেজন্যই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন যে, এরাই হলো আমাদের আসল ডাক্তার৷”
ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারও মুন্সীগঞ্জে ফিরে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় যোগ দেন লুৎফুন নেসা৷ ১২ই ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ শত্রুমুক্ত হলেও এর কিছুদিন আগে ডা. লুৎফুন নেসা ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করে কাজ করতে থাকেন৷ দেশ স্বাধীন হলে আবারও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিনি৷
তাঁর ভাষায়, ‘‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধু আমাদের বললেন, তোমরাই তো আসল ডাক্তার কিন্তু তোমাদের পরীক্ষা দিতেই হবে৷ আসলে আমরা যখন পরীক্ষা বর্জন করে যুদ্ধ করছিলাম তখন পরীক্ষা দিয়েছে অনেকে৷ কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন, স্বাধীন দেশে এখন তোমাদের একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স করে পরীক্ষা দিতে হবে৷ যারা আগেও পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের সব পরীক্ষা বাতিল৷ তাদেরকেও পরীক্ষা দিতে হবে৷ ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা প্রথম পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তার হই৷ তবে আমি যেহেতু ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ছিলাম, আবারও দেশ গড়ার কাজ শুরু করি এবং সদ্য স্বাধীন দেশের সবকিছু আবারও গুছিয়ে নিতে আমাদের অনেক খাটতে হয়েছে৷”
পরে বাংলাদেশের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ইন্সটিটিউট এর পরিচালনা পরিষদের সদস্য হন ডা. লুৎফুন নেসা৷ বর্তমানে মহিলা সমিতির উদ্যোগে পরিচালিত নারীদের স্তন ক্যান্সার চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসা ও এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছেন তিনি৷ সেখানে একদিকে যেমন চিকিৎসকরা বিনা বেতনে সেবামূলক কাজ করছেন, তেমনি নারীরাও বিনা পয়সায় এই পরিষেবা গ্রহণ করতে পারছেন৷ এছাড়া স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বীর সাহসী নারী নেত্রী ডা. লুৎফুন নেসা৷ irbesartan hydrochlorothiazide 150 mg
জাতির এই শ্রেষ্ঠ কন্যাদের কি সম্বোধন করলে তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া যাবে তা আমার সত্যিই জানিনা। তবু বলি ‘মা তোমাদের সালাম
দুরন্ত জয় বলছেনঃ
ইতিহাসের এই বীরদের সম্পর্কে জানতে পেরে ভাল লাগলো। আপনাকে ধন্যবাদ জাতির বীর কন্যাদের নিয়ে লিখবার জন্য।
শেয়ার করলাম।
আর সভ্যতার মডারেশন প্যনেলের কাছে আবেদন স্টিকি করুন পোস্টটি ।
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
আপনাকেও ধন্যবাদ
চাতক বলছেনঃ
আপনার পোস্টটি দারুণ তথ্যবহুল এবং স্মৃতি জাগানিয়া। আচ্ছা আপনার তথ্যসমূহের তথ্যসূত্র দেয়া যায় না? আপনাকে অফুরন্ত ধন্যবাদ এই অসাধারণ কাজটি করবার জন্য।
কর্তৃপক্ষকে পোস্টটি স্টিকি করার দাবী জানিয়ে গেলাম
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
লেখার মাঝে তথ্যসুত্র দেওয়া ছিল তো…
আপনাকেও ধন্যবাদ
দুরন্ত জয় বলছেনঃ
প্রত্যেকটি ঘটনার শুরুতেই তো লেখা আছে…… আবার দেখুন
তারিক লিংকন বলছেনঃ
বরাবরই আপনার পোস্টগুলো তথ্যবহুল হয় এইবারও হতাশ হই নি। আচ্ছা আপনার আগের সিরিজ কি শেষ হয়েছিল? সেটার পরবর্তী বা শেষ পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ভাল থাকবেন…
“স্বাধীনতা-উত্তর ভাষ্কর্য” এর দ্বিতীয় পর্বের পর আর পর্ব আসবে না?
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
না ওটা শেষ হয়নি। তবে ওটার বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা বাকি বলে আর লেখা হয়নি। can you tan after accutane
আপনি মনেও রেখেছেন দেখছি। বাহ!
সোমেশ্বরী বলছেনঃ
অসাধারণ কাজ হয়েছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এতো তথ্যবহুল পোস্টটির জন্য মাশিয়াত।
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
আপনাকেও ধন্যবাদ
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
বরাবরের মতোই চমৎকার তথ্যপূর্ণ একটি পোস্ট। অনেক কিছু, অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম লেখাটি পরে। সবশেষে একটা কথাই বলবো…
মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মায়েদের অসংখ্য অবদান থাকলেই “বীরঙ্গনা” সম্বোধনটির আড়ালেই মূলত চাপা পরে যায় তাঁদের সেই বীরত্বের কথা। অনেকক্ষেত্রে দেখা গেছে সেইসব মায়েরা আমাদের অবহেলা আর লাঞ্ছনার ভার বইতে না পেরে অবশেষে “বাঙালি নারী” থেকে দেশান্তরী হয়ে গিয়েছিল “ভিনদেশী নারী”। কেউবা আবার হয়ে গিয়েছে “তারা ব্যানার্জী” থেকে “মিসেস টি. নিয়েলসেন”(আমি বীরঙ্গনা বলছি বইয়ের একটি চরিত্র)। সেই সাথে চাপা পরে গিয়েছে তাঁদের সকল অবদান আর বীরত্বের ইতিহাস। আর যেইসব মায়েরা দেশে থেকে গিয়েছে তাঁদের কথা আমাদের সকলেরই প্রায় জানা। যুদ্ধের পর আমাদের সেইসব বীর মায়েরা পরিবার এবং সমাজ থেকে নির্বাসিত হলেও, নির্বাসিত হয়নি রাজাকাররা; বরং পুর্নবাসিত হয়েছে। অনেককে আবার করা হয়েছে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী।
আর কিছুই বলার নেই শুধু আফসোস।
মা… তোমাদের সালাম…
মাশিয়াত খান বলছেনঃ side effects of quitting prednisone cold turkey
wirkung viagra oder cialisআমার এরকম কথা পড়লে কান্না পায়। আমি কিছুই বলার পাইনা
দুরন্ত জয় বলছেনঃ can your doctor prescribe accutane
@ফাতেমা আপু বিরাঙ্গনা নিয়ে আপনার লেখা সিরিজ ছিল সেটা কি শেষ??
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
হ্যাঁ তিনটা পর্বে শেষ করেছি
আশরাফুল করিম চৌধুরি বলছেনঃ capital coast resort and spa hotel cipro
শ্বাধীনতা, ত্যাগ, বীরাঙ্গনা, মুক্তিযুদ্ধ বাস্তবতায় শব্দ মাত্র।
আফসোস। buy kamagra oral jelly paypal uk
মাশিয়াত খান বলছেনঃ
সত্যিই আফসোস
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
চমৎকার তথ্যবহুল পোস্ট! স্টিকি করার জন্য মডারেশান প্যানেলকে ধন্যবাদ!! কিপিটাপ ম্যান!