চেতনা
305
বার পঠিত zithromax azithromycin 250 mgঅন্ধকারটা চোখে সয়ে গেল একটু পরেই। প্রথমে চোখ দু’টোও ব্যথায় টনটন করছিল। এখন করছে না। মস্তিষ্কের কাছে এখন এটা একটা অপ্রয়োজনীয় তথ্য। যে তথ্যটা মস্তিষ্ক বড় সময় ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পাচ্ছে তার সবটুকুই তার কাছে গুরুত্বহীন তথ্য। মানুষের জন্মের পরপরই তার দেহে মায়ের গর্ভের চাপের সাথে বাইরের বাতাসের চাপের অসমতার সৃষ্টি হয়। জীবনে সেটা প্রথমবার। তাই সেটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাই, সেই চাপে বাচ্চা কেঁদে ওঠে। এরপর যখন সেটা সে ক্রমাগত পেতে থাকে মস্তিষ্ক সেই তথ্য আর তাকে জানান দেয় না। মানুষ বুঝতেও পারে না, বাতাস তাকে প্রতিনিয়ত কত চাপ দিচ্ছে।
শাহেদের চোখটাও বাধা আছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে। সেই সূত্রে, এটাও একটা অপ্রয়োজনীয় তথ্য। তাই সে কিছু দেখতে পাচ্ছে না, এই তথ্যটা যেমন নতুন করে বুঝতে পারছে না, একইভাবে চোখ দু’টোও আর ব্যথা করছে না। কারণ, এগুলো গুরুত্বহীন তথ্য। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, কেউ একজন শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে শাহেদের মুখে একটা লাথি মারল। ওপরের ঠোঁটটা কেটে অর্ধেক অংশ ঝুলতে থাকল কদাকার ভাবে। দাতে আর জিভে কাটাকাটি হল প্রচণ্ড ভাবে এবং মুখে লালার থেকে বেশি জায়গা দখল করে নিলো রক্ত। ঠোঁট কেঁটে যাওয়া অংশটা দিয়ে লালা কিংবা রক্ত পড়ছে। লালা আর রক্তকে আলাদা কিছু মনে হচ্ছে না। দু’টো যেন একই সত্ত্বা। জিভটা মুহূর্তে অসাড় হয়ে গেল। খানিকটা নাড়ার চেষ্টা করতেই দু’টো ভাঙ্গা দাঁত কংক্রিটে পড়ল। সুন্দর একটা ছন্দবদ্ধ শব্দ করে দাঁত দু’টো থেমে গেল।
শাহেদ ভাবল, এই সময় আর্কিমিডিস এখানে থাকলে ছন্দের ওপর নতুন কোন থিওরি বের করে ফেলতে পারত। দাঁত আর কংক্রিটের ভরের তো কোন অনুপাত করা যায় না। অথচ দু’টো মিলে কি সুন্দর একটা ছন্দবদ্ধ শব্দ তৈরি করে ফেলল। অবশ্য, এই চিন্তার পুরোটাই ব্যথা এবং তার চেয়েও বেশি তাকে আচ্ছন্ন করে রাখা ভয়টাকে মনের এক কোণায় লুকিয়ে রাখারই কূটকৌশল। কৌশলটা কাজে দিল না। লাথির অনুভূতিটা মস্তিষ্কে পৌছতেই ‘মা… মাগো…’ বলে শাহেদ চেঁচিয়ে উঠল। ওপাশে একটা আনন্দসূচক শব্দ হল। সম্ভবত, আঘাতের চেয়ে বেশি আনন্দ বন্দীর আর্তনাদে! puedo quedar embarazada despues de un aborto con cytotec
আর্তনাদটা শুনেই বোধ হয় ওপাশ উৎসাহী হয়ে উঠল। একটা আধ খাওয়া সিগারেট ঠেসে ধরল শাহেদের বুকে। সাথে সাথে একটা উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল সারা ঘরে। জ্বলন্ত সিগারেটের ক্রমাগত স্পর্শ তার দেহে টসটসে রসালো আঙ্গুরের মত ফোস্কা তুলতে লাগল।
দ্বিতীয় লাথিটাও পড়ল তার বুকেই। সাথে সাথে রামধনুর মত বাঁকা হয়ে গেল তার দেহ। এক মুহূর্ত মনে হল তার ফুসফুসে বুঝি আর এক ফোঁটাও বাতাস অবশিষ্ট নেই। তারপর মনে হল, তার ফুসফুস বুঝি শূণ্য হয়ে আছে অনন্তকাল ধরে। অনন্তকাল ধরে সে অনুভূতিশূণ্য। যন্ত্রণাগুলো তার নিউরনে দৌড়াদৌড়ি করছে অনন্তকাল ধরে। আর তাই মস্তিষ্কের কাছে সেগুলো অপ্রয়োজনীয় তথ্য। মস্তিষ্ক সেগুলো শাহেদকে জানান দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। তাই শাহেদ এবার চিৎকার করল না।
সম্ভবত, ওপাশের খানিকটা আশাভঙ্গ হল। সে এবারেও একটা গগনবিদারী চিৎকার আশা করেছিল। পেল না। সুতরাং, আশাভঙ্গ হওয়া অযৌক্তিক কিছু না। একটা চিৎকার শোনার আশায় সে এবার তার বুট চেপে ধরল শাহেদের পেটে। সম্ভবত, মুখ দিয়ে নাড়ীভুঁড়ি বের হতে দেখার একটা বীভৎস এবং একই সাথে আকর্ষণীয় প্রত্যাশায় আরও তিনটি বুট চেপে ধরল তার পাকস্থলী। দু’জোড়া বুট; কালো ও কর্কশ। আর কোন উপমা দেয়া যায় কি? হ্যাঁ, ঘৃণ্য পৈশাচিক দু’জোড়া বুট।
কিংবা শাহেদের পেটের ওপর দু’জোড়া ঘৃণ্য পৈশাচিক বুট উঠে আসার কারণটি হতে পারে, শাহেদ বলত পাকস্থলীর কষ্টের কথা। সে বলত, অনাহার আর ক্ষুধার কথা। সে দু’টো প্রদেশের বৈষম্যের কথা বলত। হাজার মাইল দুরের ঐশ্বর্য দেখে সে ঘৃণায় থুথু ফেলত।
শাহেদ বলত, তার এবং তার দেশের মানুষের অভাবের কথা। বলত, বস্ত্রহীনতার কথা। বোধ হয় সে কারণেই ফর ফর করে টেনে ছিঁড়ে নিলো তার শার্ট। তার প্যান্ট খোলা হল। সে এখন বিবস্ত্র। এবং একই সাথে বীভৎস।
অবশ্য এসবের কোন অনুভূতি শাহেদের নেই। অনুভূতিগুলো মরে গেছে অনেকক্ষণ আগেই। শাহেদের পার্থিব চোখ দু’টো বন্ধ। কিন্তু, অপার্থিব চোখটা ঠিকই খোলা। বোধ হয় পঞ্চেন্দ্রিয় তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় ষষ্ঠটি তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। শাহেদ এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, তার দু’টো হাত যেন উড়ছে। ঠিক তার হাতে ধরে রাখা পতাকাটার মত করে। পাখি আর পতাকার মিলটা বোধহয় এখানেই। দু’টোর ওড়াকেই কেউ থামাতে পারে না। পতাকার এক বাহকে ধ্বস নামলে অন্য কেউ তাকে উন্মীলিত করে। ঠিক একটা চেতনার মত। মানুষ মরে। কিন্তু, চেতনা কখনও মরে না। চেতনা অমর। একজন চেতনার বাহকের মৃত্যু হলে হাজার বজ্রমুষ্টি তাকে আঁকড়ে ধরে। চেতনা পতাকার মত করে উড়তে থাকে; সক্রোধে।
চিন্তাগুলোই যেন হঠাৎ করে শাহেদের হাতে খানিকটা সাড়া ফিরিয়ে আনল। নড়ে উঠল তার কয়েকটি আঙ্গুল। এবং… লোহার হাতুড়ি দিয়ে তার সেই হাত ভাঙ্গা হল। সেই জীবন্ত হাত, জীবন্ত মানুষের হাত। এবং সেই অমর চেতনাকে সপ্ততল মাটিতে পুঁতে ফেলার দুর্বিনীত বাসনায় তার হাতকে থেঁতলে দেয়া হল। যে হাতের বজ্রমুষ্টি মিছিলে স্লোগান দিয়েছে, রাতের আধারে শহরের অলিতে গলিতে এবং প্রধান সড়কে পোস্টার সেঁটেছে এবং দিনের আলোয় বিলিয়েছে লিফলেট, তাকে নিস্তব্ধ করে দেয়া হল।
মুমূর্ষু মানুষের শেষ ছটফটানির মত তার আঙ্গুলগুলো তখনও কাঁপছিল। বাটখারা দিয়ে সে আঙ্গুল পেষা হল। সে আঙ্গুলগুলোতে তখনও কতশত অনুভূতি দৌড়ে বেড়াচ্ছিল।
তার অপার্থিব চোখে আবারও কতশত দৃশ্য ভেসে উঠতে থাকে। তার মা তাকে খাইয়ে দিচ্ছে। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সাথে ডালের চচ্চড়ি আর ইলিশ মাছ। শাহেদের বহুবার সন্দেহ হয়েছে অমৃতও এতটা উপাদেয় হবে কি’না। উত্তরের পাল্লাটা ‘না’ এর দিকেই খানিকটা ঝুঁকে পড়েছে। খাওয়া শেষ করেসে দু’হাতে মায়ের মুখ জড়িয়ে ধরেছে। তারপরেই বেরিয়ে গেছে মিছিলে। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করেছে রাজপথ। সে অনুভূতি ছিল তার আঙ্গুলে।
ছেলেরা সাধারণত মায়ের জন্য পাগল হয়। কিন্তু, শাহেদের ছোট ভাইটা ছিল তার জন্য পাগল। বয়সে প্রায় দেড় যুগের পার্থক্য। তবুও, শাহেদ যতক্ষণ বাসায় থাকত, ততক্ষণ কিছুতেই তার কোল থেকে নামত না। তার ভাইয়ের শরীরের সেই স্পর্শগুলো ছিল তার আঙ্গুলে।
এই আঙ্গুলগুলোতেই দৌড়াদৌড়ি করত ফরিদার শত স্পর্শ। পার্কে ফরিদার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকত শাহেদ। কথা যা দিয়েই শুরু হোক না কেন, শাহেদ শেষ পর্যন্ত তাকে রাজনীতিতেই থামাত। আর রাজনীতির কথা উঠলেই ফরিদা রেগে যেত। দু’জন একটা পার্কে আছে। কেবল তারা দু’জন। এ সময় কেউ রাজনীতির কথা বলে? এতটা আনাড়ি মানুষ কীভাবে হয়? শাহেদ হেসে ফরিদার চিবুকে চুমু খেত। তার চিবুকের ছোট্ট তিলটা ছুয়ে দিত। ফরিদা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে শাহেদকে জড়িয়ে ধরত। সেই স্পর্শের স্পন্দনগুলো ছিল তার আঙ্গুলে। clomid over the counter
ফরিদার কাছ থেকে ছুটি নিয়েই, সে আবার ছুটে যেত রাজপথে। বজ্রকন্ঠের স্লোগানে শোষকের সিংহাসনে ফাটল ধরাত। সাম্যমন্ত্রে দীক্ষিত সাথীর হাত ধরে এগিয়ে যেত সুদিনের প্রত্যাশায়। সেই প্রত্যাশাগুলো ছিল তার আঙ্গুলে। cialis new c 100
সেই সবটুকু অনুভূতি ছুটে গেল অন্য হাতের আঙ্গুলে। সেই স্পন্দন দেখে তার বাকি পাঁচটি আঙ্গুলও পেষা হল। অনুভূতিগুলো ছুটে বেড়াতে লাগল দেহের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। লুকিয়ে পড়ল নখের ডগায়। একটুখানি নিরাপদ আশ্রয়ের লোভে।
তারপর…
লোহার সাঁড়াশি দিয়ে, উপড়ে নেয়া হল তার নখগুলো। তার নির্দোষ নখগুলো। টকটকে লাল রং উপচে পড়তে লাগল। কী চমৎকার রক্তের লাল রং! ভোরের সূর্য কিংবা গনগনে কয়লার মত লাল। জ্বলন্ত বিদ্রোহের মত লাল। রক্তের মত লাল।
শাহেদের অনুভূতিগুলো এখন লীন। তার চেতনা এখন বিলুপ্ত। তার জীবন এখন অতীত। একবাক্যে বলতে হলে, সে এখন মৃত। তার শরীর ঘিরে কৃষ্ণচূড়া কিংবা শিমুলের মত লাল; ছড়িয়ে রয়েছে রক্ত। তাজা লাল রক্ত। walgreens pharmacy technician application online
তার চেতনা এখন অন্য কেউ ধারণ করছে। এই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বাইরে হয়তো এখন তা ছড়িয়ে গেছে সহস্র দেহে। সহস্র-ভাগে ভাগ হয়ে তার ঔজ্জ্বল্য এতটুকু কমেনি। বরং বেড়েছে। শাহেদের থ্যাতলানো হাত এখন পড়ে আছে এদেশের মানচিত্রের ওপর। এবং সেই মানচিত্রের বুকে এখন চিৎকার করছে সহস্র বজ্রমুষ্টি। স্লোগানে প্রকম্পিত করছে রাজপথ। শাহেদের থ্যাতলানো হাত থেকে ছড়িয়ে পড়ছে রক্ত। রক্তের দুর্বিনীত লাভা- সমগ্র মানচিত্রের ওপর; সমগ্র দেশের ওপর।
অনুপ্রেরণা: রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প)
কোলাহল
হিমু @ স্নানঘর ও নিষিদ্ধ যৌনতা…
nogorkatha @ জহির রায়হান— হারিয়ে যাওয়া এক সূর্যসন্তান এবং কিছু পাকিস্তানি পারজের ম্যাৎকার…
হাছিব @ বাংলা কবিতায় ছন্দ কত প্রকার ও কি কি?
Shopno Bilap @ গণহত্যা ১৯৭১: ভয়াবহতার চিত্র
Shopno Bilap @ গণহত্যা ১৯৭১: ভয়াবহতার চিত্র
Bengali Story @ গণহত্যা ১৯৭১: ভয়াবহতার চিত্র
কামাল @ স্নানঘর ও নিষিদ্ধ যৌনতা…
REZA @ কাপরূপ কামাখ্যা ও একটি পৌরাণিক কাহিনী।