রামমোহন রায়: ধর্মকে ছিঁড়ে যুক্তিতে বাঁধলেন যিনি
1059
বার পঠিত“আমরা মৃতের বধূ হবার জন্য জীবিত নারীকে নীত হতে দেখেছি।” — অথর্ব-বেদ (১৮/৩/১,৩)
“মানুষের শরীরে সাড়ে তিন কোটি লোম থাকে, যে নারী মৃত্যুতেও তার স্বামীকে অনুগমন করে, সে স্বামীর সঙ্গে ৩৩ বৎসরই স্বর্গবাস করে।” — পরাশর সংহিতা (৪:২৮)
“যে সতী নারী স্বামীর মৃত্যুর পর অগ্নিতে প্রবেশ করে সে স্বর্গে পূজা পায়।” — দক্ষ সংহিতা (৪:১৮-১৯)
“যে নারী স্বামীর চিতায় আত্মোৎসর্গ করে সেতার পিতৃকুল, স্বামীকুল উভয়কেই পবিত্র করে।” — দক্ষ সংহিতা (৫:১৬০) [1] [11]
আমাদের, উপমহাদেশ-বাসীদের শিরায়-উপশিরায় প্রতিনিয়তই প্রবাহিত হয় ধার্মিকতার স্রোত। কখনও হাত কেটে গেলে যদি লাল লাল রক্তের পরিবর্তে নীল নীল ধার্মিকতা বেরিয়ে আসে, তাহলে অবাক হবার খুব বড় কোন উপলক্ষ থাকবে না। সেই সব ধর্মকে আমরা গড়ে নিই নিজেদের মত করে। ধর্মগ্রন্থের সাথে আমাদের পালিত ধর্মের কোন সংযোগই থাকে না। তারপর সেই বিকৃত ধর্মকেই পালন করে যাই পরম যতনে। আর যেখানে খোদ ধর্মগ্রন্থসমূহেই রয়েছে এমন বর্বরতার উপলক্ষ — সেটাকে হাতছাড়া করার কোন প্রশ্নই আসে না। আর তাই সমগ্র ভারতবর্ষের মাটি কত জীবিত সতীর মৃত ভস্মকে আলিঙ্গন করল, তার কোন লেখাজোকা ইতিহাসে নেই। নজরুলের মত করেই বলা যায় —
কোন রণে কত খুন দিল নর লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর লেখা নাই তার পাশে।
সেই সিঁথির সিঁদুরের দাম যিনি প্রথমবার দিলেন, তার নাম রাজা রামমোহন রায় ।
এই বর্বর প্রথা দূরীকরণের চেষ্টা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন, মুহাম্মদ বিন তুঘলক। পারেন নি। সম্রাট হুমায়ুন চেষ্টা করেও স্থানীয় হিন্দুদের প্রতিবাদের মুখে পিছু হটেন। আকবর নির্দেশ জারী করেন — কোতোয়ালের অনুমতি ব্যতীত কোন প্রকার সতীদাহ নিষিদ্ধ। শাহজাহান আরও খানিকটা এগিয়ে নির্দেশ দেন, যে সকল মহিলাদের সন্তান আছে, তাদের দাহ করা যাবে না। আওরঙ্গজেব হবার চেষ্টা করেন আরও কঠোর। একেবারে নিষিদ্ধই করে দেন সতীদাহ প্রথা।[2] [3] কিন্তু, মোটা দাগে কিছু সফলতা দেখা গেলেও শেকড়টা রয়ে গিয়েছিল আগের মতই ঘুণে ধরা আর অন্ধকার। রামমোহন শুরু করলেন সেই শেকড় থেকেই — অন্ধবিশ্বাস। ভারতের হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে যা হয়নি, তা ঘটে গেল। একজন মানুষ দাঁড়িয়ে গেলেন পুরো ভারতবর্ষের সহস্রাব্দ পেরুনো সংস্কারের বিরুদ্ধে। … এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়েই নিবৃত্ত হলেন।

রামমোহন রায়
জন্ম ও বংশপরিচয়:
রাজা রামমোহন রায়ের সঠিক জন্মতারিখের কোন সুনির্দিষ্ট উৎস পাওয়া যায় না। তবে, বিভিন্ন অসমর্থিত উৎস থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে তার তার জন্ম হয় ২২শে মে ১৭৭২ সালে। [4] তবে তার জন্ম তারিখ হিসেবে ১৭৭৪ সালের ১৪ই অগাস্টের কথাও শোনা যায়। [5] বাংলা প্রেসিডেন্সির হুগলী জেলার রাধানগরের সম্ভ্রান্ত রায় পরিবারের তার জন্ম। তাদের আদি নিবাস ছিল মুর্শিদাবাদ জেলায় এবং কৌলিক (জাত/বর্ণ সংক্রান্ত) পদবী ছিল — বন্দ্যোপাধ্যায় । তার প্রপিতামহ পরশুরাম অথবা তার পিতামহ কৃষ্ণচন্দ্র প্রথম বাংলার সুবাদারের অধীনে ‘আমিন’এর চাকুরী গ্রহণ করেন। এর পর থেকেই তারা কৌলিক পদবী বন্দ্যোপাধ্যায় এর পরিবর্তে নিজামত প্রদত্ত রায় উপাধি দ্বারা পরিচিত হন। [6]
রামমোহনের পিতার নাম ছিল রামকান্ত রায় এবং মাতা তারিণী দেবী। রামকান্তের দ্বিতীয়া স্ত্রী তারিণী দেবীর দুই পুত্র এবং এক কন্যার মধ্যে কনিষ্ঠ ছিলেন রামমোহন। রামমোহনের বংশীয় ধারা ছিল অদ্ভুত। তাদের বংশের কোন নির্দিষ্ট জাত ছিল না। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে তাদের বিশেষ তাড়ন দেখা যায় না। অপরদিকে রামমোহনের মাতা তারিণী দেবী ঘোর তান্ত্রিক ঘরের কন্যা। রামমোহনের মাতামহ শ্যাম ভট্টাচার্য ছিলেন শাক্ত সম্প্রদায়ভুক্ত এবং সেই তান্ত্রিক সম্প্রদায়ের পুরোহিত। তাই রামমোহনের রক্তের সাথে একদিকে যেমন প্রবাহিত হত — প্রবল যুক্তিবোধ অপর দিকে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধও তার মধ্যে সমমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।
শিক্ষা ও প্রাথমিক জীবন:
রামমোহনের শিক্ষার ক্ষেত্রে পিতৃ এবং মাতৃ উভয় দিকের প্রভাব বিদ্যমান ছিল। পিতার ইচ্ছায় তিনি ফারসি এবং আরবি ভাষা শেখেন — যেন মুসলিম রাজ্য সরকারের অধীনে কাজ করা সুবিধাজনক হয়। অপরদিকে মাতামহের ইচ্ছানুসারে তিনি সংস্কৃত এবং তদজাতীয় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাঠে নিয়োজিত হন। রাধানগরে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি কোলকাতার বারানসি থেকে প্রথাগত সংস্কৃত শিক্ষা করেন যা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে কাশীতে। এরপর তিনি পাটনা থেকে আরবি ও ফারসি অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ইংরেজি, হিব্রু এবং গ্রীক ভাষাও অধ্যয়ন করেন।[4] [6] এই পরস্পর বিরোধী দর্শনের সম্মিলন তার পরবর্তী জীবনে ধর্মীয় চেতনা সৃজনে বহুলাংশে প্রভাব বিস্তার করেছিল।রামমোহনের মাঝে যুক্তিবোধের সৃষ্টি হয় অত্যন্ত অল্প বয়সেই। মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি হিন্দু মূর্তিপূজার বিরুদ্ধাচরণ করে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। উক্ত গ্রন্থের বিষয়বস্তু এবং সে বিষয়ে রামমোহনের চিন্তাধারার কারণে তার আত্মীয়বর্গের সাথে রামমোহনের মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। ফলে রামমোহন গৃহত্যাগ করে বিভিন্ন স্থান ভ্রমণে প্রবৃত্ত হন। শুরুতে ভারতের বিভিন্ন স্থানেই তিনি ভ্রমণ করেন। ফরে ব্রিটিশ শাসন কবলিত ভারতবাসীর দুরবস্থা তিনি স্বচক্ষে অবলোকন করেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ঘৃণাবশত তিনি ভারতের বাইরে হিমালয়-নেপাল-তিব্বত সংলগ্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। তার নিজের ভাষায় —
ষোড়শ বৎসর বয়সে আমি হিন্দুদিগের পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে একখানি পুস্তক রচনা করিয়াছিলাম। উক্ত বিষয়ে আমার মতামত এবং ঐ পুস্তকের কথা সকলে জ্ঞাত হওয়াতে আমার একান্ত আত্মীয়দিগের সহিত আমার মনান্তর উপস্থিত হইল। মনান্তর উপস্থিত হইলে আমি গৃহ পরি-ত্যাগপূর্বক দেশভ্রমণে প্রবৃত্ত হইলাম। ভারতবর্ষের অন্তর্গত অনেকগুলি প্রদেশ ভ্রমণ করি। পরিশেষে বৃটিসশাসনের প্রতি অত্যন্ত ঘৃণাবশত: আমি ভারতবর্ষের বহির্ভূত কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করিয়াছিলাম।[7]
কর্মজীবন:
চার বছর পরে পিতার আহ্বানে তিনি পুনরায় গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। এসময় তিনি ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং ধ্যান ধারণার সংস্পর্শে আসেন। ইউরোপীয় সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে গভীর অধ্যয়নের ফলে তার মধ্যে থেকে ইংরেজ বিদ্বেষ অনেকাংশে দূরীভূত হয়। তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে, ইংরেজ শাসন বিদেশী শাসন হলেও এর মাধ্যমেই ভারতবাসীর মুক্তিলাভ সম্ভব। এখানেই রামমোহনের সবচেয়ে বড় সফলতা। কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারতে তিনি প্রথম উপলব্ধি করতে সক্ষম হন, ইংরেজদের আজকের এই অবস্থানের পেছনের ক্রীড়নক তাদের জ্ঞান বিজ্ঞানে প্রভূত উন্নতি। নিজস্ব প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার এবং আধুনিক সভ্যতার মিশেলে তারা নিজেদের অপরাজেয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতকে আধুনিক যুগে পদার্পণ করতে হলে, তার সহস্রাব্দ পুরোনো ধ্যান ধারণাগুলোকে আধুনিক সভ্যতার নিরিখে ঘষে মেজে পরীক্ষা-গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে যুগোপযোগী হিসেবে তৈরি করে নিতে হবে। তাই নিজস্ব ব্যবসা থেকে যথেষ্ট আয় থাকা সত্ত্বেও তিনি ইংরেজদের অধীনে চাকরী করেন, কেবলমাত্র তাদের দর্শনের সাথে গভীরভাবে পরিচিত হবার জন্য। ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ইংরেজ সরকারের অধীনে চাকরী করেন রংপুরের দেওয়ান হিসেবে। ১৮১৫ সালে ইংরেজ সরকারের দূত হিসেবে তিনি ভুটান সফর করেন।
আত্মীয় সভা:
১৮১৫ সালে তিনি কোলকাতায় বসবাস করা শুরু করেন। সেখানেই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরি করেন আত্মীয় সভা। সেই সময়ে এই সভাই ছিল কোলকাতায় সব ধরণের সংস্কারধর্মী জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপের পীঠস্থান। তৎকালীন কোলকাতার শীর্ষস্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই সভার সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, ব্রজমোহন মজুমদার, প্রসন্ন কুমার ঠাকুর, রাজ নারায়ণ সেন, হলধর বসু, তারাচাঁদ চক্রবর্তী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। পালা করে সদস্যদের বাড়িতে এই এর সভা অনুষ্ঠিত হত। এর কর্মসূচীতে থাকত — বেদ, উপনিষদ প্রভৃতি শাস্ত্রপাঠ, ব্রহ্ম সংগীত এবং হিন্দু আচার এবং সংস্কার সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনা। মূর্তি পূজার অসারতা, বর্ণভেদের অনিষ্টকারতা, সতীদাহ-বহুবিবাহ প্রভৃতি উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা, বাল্যবিধবাদের পুনর্বিবাহের আবশ্যকতা — ইত্যাদি বিষয়ে আত্মীয় সভায় আলোচনা করা হত। আত্মীয় সভার সভ্যগণ বিশ্বাস করতেন, ধর্মীয় এবং সামাজিক বিশুদ্ধি পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই তারা ধর্ম সংস্কারকেই সমাজ সংস্কারের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
রামমোহন ধর্মে অবিশ্বাসী ছিলেন না। শুরুতেই বলেছি, পিতার দিক থেকে পাওয়া মুক্তচিন্তা আর মাতার দিক থেকে পাওয়া ধর্মীয় আবেশ তার মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান ছিল। তাই তিনি এমন ধর্মমতের খোঁজে ছিলেন, যা মানবিক, যৌক্তিক এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম। কোরআন, বেদ, বাইবেল, ত্রিপিটক, জেন্দা-আবেস্তা সহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ তিনি গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন — প্রতিটি ধর্মের সারবস্তু মোটামুটি একই। এবং প্রতিটি ধর্মই একক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। ইংল্যান্ড থেকে বন্ধুর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে রামমোহন বলেছেন —
আমার সমস্ত তর্ক বিতর্কে আমি কখন হিন্দুধর্ম্মকে আক্রমণ করি নাই। উক্ত নামে যে বিকৃত ধর্ম্ম এক্ষণে প্রচলিত, তাহাই আমার আক্রমণের বিষয় ছিল। আমি ইহাই প্রদর্শন করিতে চেষ্টা করিয়াছিলাম যে, ব্রাহ্মণদিগের পৌত্তলিকতা, তাঁহাদিগের পূর্ব্বপুরুষদিগের আচরণের ও যে সকল শাস্ত্রকে তাঁহারা শ্রদ্ধা করেন ও যদনুসারে তাঁহারা চলেন বলিয়া স্বীকার পান, তাহার মতবিরুদ্ধ। আমার মতের প্রতি অত্যন্ত আক্রমণ ও বিরোধ সত্ত্বেও, আমার জ্ঞাতিবর্গের ও অপরাপর লোকের মধ্যে কয়েকজন অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি আমার মত গ্রহণ করিতে আরম্ভ করিলেন। [7]
ব্রাহ্ম সমাজ:
ধর্ম সংস্কারের তাগিতেই ১৮২৮ সালে রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্ম সমাজ। এমন এক ধর্ম যেখানে মানুষে-মানুষে কোন ভেদাভেদে বিশ্বাস করা হয় না। সবাই আরাধনা করবে ‘এক ঈশ্বরের।’ ঈশ্বরের আরাধনার হাজারো নিয়ম কানুনের বেড়া জাল এখানে নেই। এখানে যখন খুশি, যেভাবে খুশি ঈশ্বরের আরাধনা করা যায়। এই সমাজের লক্ষ্য — কোন মানবসৃষ্ট প্রতিমা বা মূর্তির পরিবর্তে পরমব্রহ্মের আরাধনার মাধ্যমে ঐহিক ও পারত্রিক মুক্তিলাভ। আধুনিক বাংলার রেনেসাঁয় ব্রাহ্ম সমাজের অবদান অনস্বীকার্য। উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বেণী মাধব, আনন্দমোহন বসু, চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখ ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য।
সমাজ সচেতনতা:
বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের বক্তব্য পৌঁছে দিতে রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম বাংলা সংবাদপত্র — বেঙ্গল গেজেট। ১৮১৮ সালের ১৫ই মে প্রথম প্রকাশিত হয় এটি। এ ছাড়া রামমোহন পরিচালিত আরও দুটি সংবাদপত্র হচ্ছে ১৮২১ সাল থেকে প্রকাশিত ‘সংবাদ কৌমুদী’ এবং ১৮২২ সাল থেকে প্রকাশিত ‘মিরাৎ উল আখবার।’ এছাড়া রামমোহন এবং তার কয়েকজন বন্ধু মিলে অতি অল্প সময়ের জন্য ‘বেঙ্গল হেরাল্ড’ নামক একটি চতুর্ভাষী পত্রিকার স্বত্বাধিকারী হয়েছিলেন। এর সকল পত্রিকাই ছিল সাপ্তাহিক।
এই সকল পত্রিকার মাধ্যমেই তিনি সাধারণ মানুষের মাঝে যুক্তিবৃত্তি এবং আধুনিক চিন্তাধারা প্রচারে সচেষ্ট ছিলেন। হিন্দু ধর্মের নানা কুসংস্কার এবং অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি লিখতে শুরু করেন। তবে তার সবচেয়ে বড় সফলতা বলতে হয় — সতীদাহ প্রথা দূরীকরণ।
সতীদাহ নির্মূল:
সতীদাহ প্রথার ওপর ভারতের কোন বিদেশী শাসকই সন্তুষ্ট ছিলেন না। কিন্তু, স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে তারা এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নেন নি। মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও তার সফলতা ছিল খুব কম। ব্রিটিশ সরকারের নজরও এই কুপ্রথার ওপর পড়েছিল। কিন্তু, সরাসরি কোন পদক্ষেপ গ্রহণে তারা সচেষ্ট হয়নি। শুরুতেই তারা এ বিষয়ে শাস্ত্রীয় মত গ্রহণ করা শুরু করে। ১৮০৫ সালে সরকারের কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে পণ্ডিত ঘনশ্যাম শর্মা এবং ১৮১৭ সালে পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার বিধান দেন — সতীদাহ শাস্ত্রমতে আবশ্যকীয় নয়। [6] কিন্তু, সমাজের গভীরে প্রোথিত হয়ে থাকা এই প্রথার বিরুদ্ধে সরাসরি দাঁড়ানোর সাহস যোগাতে পারেন নি কেউই। সেটাই করে দেখালেন রামমোহন রায়। ১৮১২ সাল থেকেই তিনি সতীদাহের বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করেন।
শোনা যায়, রামমোহনের রামমোহনের অনুপস্থিতির সুযোগে তার জনৈক বৌদিকেও সহমরণে বাধ্য করা হয়। সে সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। ফেরার পর যখন তিনি এ সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন দৃঢ়প্রতীজ্ঞ হন যে — এই বর্বর প্রথাকে সমূলে বিনাশ করবেন। [8]

সতীদাহ
রামমোহনের সফলতার কারণ ছিল, তিনি এমন বর্বর প্রথার এত দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকার কারণটা ধরতে পেরেছিলেন — সাধারণ মানুষের অসচেতনতা। তাই তিনি সেদিকেই প্রথমে নজর দেন। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করে এবং সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে বই-পুস্তক রচনার মাধ্যমে তিনি সতীদাহের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিতে তৎপর হন। ১৮১৮ সালে কোলকাতার কিছু উদারপন্থী মানুষের সাথে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের কাছে সতীদাহ নির্মূলের আবেদন করেন। কিন্তু, জনগণের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে হেস্টিংস এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকৃতি জানান। ফলশ্রুতিতে রামমোহন পুনরায় জনমত সৃষ্টিতে তৎপর হন। অবশেষে ১৮২৯ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক ‘সপ্তদশ বিধি’ নামক আইন পাশ করে এই বর্বর সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন। [2] [5] [6] [8] [9] পরবর্তীতে ১৮৩০ সালে তা মাদ্রাজ এবং বোম্বে প্রেসিডেন্সিতে সম্প্রসারণ করা হয়। [8]
কিন্তু, যুদ্ধ তখনও শেষ হয়নি। সপ্তদশ বিধি পাশ করার অনতিবিলম্বেই ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিলে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ এই আইনের বিরুদ্ধে আবেদন করে।
১৮২৯ সালে দিল্লীর সম্রাট দ্বিতীয় আকবর রামমোহন রায়কে ইংল্যান্ডে দিল্লীর দূত হিসেবে নিযুক্ত করেন। এ উপলক্ষে তিনি রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে, সম্রাটের পেনশন বৃদ্ধির বিষয়টি তিনি রামমোহনের ওপর ন্যস্ত করেন। [6] সম্রাট কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব এবং সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আপীলের শুনানি উপলক্ষে ১৮৩০ সালের ১৯শে নভেম্বর তিনি ইংল্যান্ডে যাত্রা করেন। প্রিভি কাউন্সিলে শুনানির প্রতিটি দিন তিনি অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় উপস্থিত থাকতেন। অবশেষে ১৮৩২ সালে প্রিভি কাউন্সিল আপিল নাকচ করে দেয়। জয় হয় মানবতার, জয় হয় সভ্যতার!
মৃত্যু:
১৮৩৩ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিস্টল শহরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্রিস্টলে আর্নস্ট ভ্যাল সমাধিতে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। সভ্যতার প্রবাহ থেকে নিভে যায় এক অত্যুজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। কিন্তু, সভ্যতায় তার অবদান অবিস্মৃত রবে চিরকাল। metformin tablet
ব্রিস্টলে রামমোহন রায়ের প্রতিমূর্তি
তাকে নিয়ে রবিঠাকুরের মতই বলতে হয় —
এখনো আমাদের বঙ্গসমাজে সেই আধ্যাত্মিক ক্ষুৎপিপাসার সঞ্চার হয় নাই, সত্যধর্মের জন্য আমাদের প্রাণের দায় উপস্থিত হয় নাই; যে ধর্ম স্বীকার করি সে ধর্ম বিশ্বাস না করিলেও আমাদের চলে, যে ধর্মে বিশ্বাস করি সে ধর্ম গ্রহণ না করিলেও আমাদের ক্ষতিবোধ হয় না– আমাদের ধর্মজিজ্ঞাসার সেই স্বাভাবিক গভীরতা নাই বলিয়া সে সম্বন্ধে আমাদের এমন অবিনয়, এমন চাপল্য, এমন মুখরতা। কোনো সন্ধান, কোনো সাধনা না করিয়া, অন্তরের মধ্যে কোনো অভাব অনুভব বা কোনো অভিজ্ঞতা লাভ না করিয়া, এমন অনায়াসে কোনো-এক বিশেষ পক্ষ অবলম্বন-পূর্বক উকিলের মতো নিরতিশয় সূক্ষ্ম তর্ক করিয়া যাইতে পারি। এমন করিয়া কেহ আত্মার খাদ্য-পানীয় আহরণ করে না। ইহা জীবনের সর্বোত্তম ব্যাপার লইয়া বাল্যক্রীড়া মাত্র।
দীর্ঘ সুপ্তির পর রামমোহন রায় আমাদিগকে নিদ্রোত্থিত করিয়া দিয়াছেন। এখন কিছুদিন আমাদের চিত্তবৃত্তির পরিপূর্ণ আন্দোলন হইলে পর তবে আমাদের আত্মার স্বাভাবিক সত্যক্ষুধা সঞ্চার হইবে– তখনি সে যথার্থ সত্যকে সত্যরূপে লাভ করিতে সক্ষম হইবে। [10]
তথ্যসূত্র:
[1] www.dharmaleaks.org/488 viagra in india medical stores
[2] http://en.wikipedia.org/wiki/Sati_(practice)
[3] http://www.shodalap.org/smraihan/17559/
[4] http://bn.wikipedia.org/wiki/রামমোহন_রায়
[5] http://bengalstudents.com/books/class-x-history-study/রাজা-রামমোহন-রায়
[6] http://www.milansagar.com/kobi/kobi-rajarammohanroy_porichiti.html about cialis tablets
[7] http://bn.wikisource.org/wiki/রাজা_রামমোহন_রায়ের_স্বলিখিত_জীবনী
[8] http://en.wikipedia.org/wiki/Raja_Rammohan_Roy acquistare viagra in internet
[9] http://bn.wikipedia.org/wiki/সতীদাহ
[11] https://www.facebook.com/permalink.php?id=195844063775610&story_fbid=529815763711770
ইলেকট্রন রিটার্নস বলছেনঃ
buy kamagra oral jelly paypal ukক্লান্ত কালবৈশাখি স্ট্রাইকস এগেইন!! অনেক ভালো হয়েছে। পোস্ট প্রিয়তে নিলাম। আসলে সভ্যতায় এত্তগুলা ভালো ভালো পোস্ট হচ্ছে যে কিছু বলার ভাষা পাচ্ছিনা।
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
কালবৈশাখি ফিল্ডিংই পারে না। দুই হাতের মাঝে দিয়ে বল চলে যায়। আর সে করবে স্ট্রাইক!
অবশ্য হাতের বদলে পা দিয়ে ফিল্ডিং করলে, সেটা পারে। বল ক্লিয়ার করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে। :v
স্পীকার বলছেনঃ
=D> :-h :-h
অনুস্বার বলছেনঃ
মনে হচ্ছে আপনি ফুটবল খেলোয়াড়…
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
ইয়াপ! রাইট ব্যাক।
অংকুর বলছেনঃ capital coast resort and spa hotel cipro
:-bd :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd
স্পীকার বলছেনঃ
=))
:B
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
অসাধারন শব্দটা আস্তে আস্তে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে দেখি… ~x( ~x( =D> =D> %%- %%-
একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম লেখায়… >:D:D< আর মহান রাজা রামমোহনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা… :D< শুভ জন্মদিন রাজা রামমোহন… ^:)^ ^:)^
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
ধন্যবাদ!
স্পীকার বলছেনঃ
:-bd >:/ :-bd :-bd
অংকুর বলছেনঃ zithromax azithromycin 250 mg
জয় হোক মানবতার । জয় হোক সভ্যতার । :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
>:D:D:D<
অংকুর বলছেনঃ
#:-S #:-S #:-S #:-S #:-S #:-S
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ metformin gliclazide sitagliptin
এত ক্লান্ত কেন ভাই? ওটা তো আমার হবার কথা।
স্পীকার বলছেনঃ
জয় হোক মানবতার
তারিক লিংকন বলছেনঃ
এগারোটা ট্যাব খুলে গবেষণা করে এমন একটা পোস্ট দাড় করানো কতটা কষ্টসাধ্য তা ব্লগের সবারই জানা। আপনার এই পোস্ট উইকি’র রামমোহনের আর্টিকেল থেকে তথ্যবহুল।
জয় হোক মানবতার, জয় হোক সভ্যতার!!
স্যালুট রাজা রামমোহন রায়’কে ^:)^ ^:)^ ^:)^ ^:)^ ^:)^
আর আপনাকে এই কস্তসাধ্য কাজটি করবার জন্য %%- %%- %%- %%- ও :-bd :-bd :-bd :-bd
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
renal scan mag3 with lasixআমার সতেরোটা ট্যাব খোলা ছিল। ~x( ~x( ~x( মাঝখানে পিসি তিনবার হ্যাংও মারছে। বাকিগুলোকে খুব বেশি অথেনটিক মনে হয়নি বলে দিই নি।
অবশ্য আপনার মত ব্লগারের কাছে তো এসব ডালভাত!
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
১৭খান!!!!!!!!!!!!!! মাইরালা… @-) @-) ^:)^ ^:)^ ^:)^
তবে লাস্ট লাইনটার সাথে পরিপূর্ণ সহমত জানাই… :-h m/ m/
অংকুর বলছেনঃ can your doctor prescribe accutane
১৭ টা ট্যাব ? (:| (:| (:| (:| (:| (:| (:| (:|
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
হুম! বুঝছি। অংকুরের কাছে ইগুলা কিছুই না। ডাইল-ভাত!
অংকুর বলছেনঃ
হ রে ভাই । সতেরটা ট্যাব খুলে একটা পোষ্ট লেখতে গেলে ডালভাত সব বাইর হইয়া যাইব ~x( ~x( ~x( ~x( X_X X_X X_X X_X (~~) (~~) (~~)
অনুস্বার বলছেনঃ
8-| 8-| 8-| 8-X
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
হুম! অবশ্য সেটা কাকার। অংকুরের কাছে এসব কোনো ব্যপারই না।
অংকুর বলছেনঃ
সহমত :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd :-bd
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ will i gain or lose weight on zoloft
ভাগ্যিস, প্রতি কমেন্টের পাশে একটা কালো দাগ থাকে। নইলে এই কমেন্ট যে কোনটার উত্তরে দেয়া, বের করা আর সম্ভব হত না।
এসজিএস শাহিন বলছেনঃ
অসাধারণ তথ্যবহুল পোষ্ট । ধন্যবাদ ।
কালবৈশাখী ভাই, আপনি এক পর্যায়ে লিখেছেন
এখানে সম্ভবত ১৮৩০ সালের স্থলে টাইপিং মিসের কারণে ১৯৩০ সালটি ভূল করে চলে এসেছে । আমার ধারণা সঠিক হলে সম্পাদনা করে নেবেন ।
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
হ্যাঁ! ওটা ১৮৩০ই হবে। টাইপিং মিসটেক। ধন্যবাদ সতর্ক পঠনের জন্য।
শ্রাবনের রক্তজবা বলছেনঃ
চোখ তো ছানাবড়া হয়ে গেলো রে……………
দুর্দান্ত…………।। thuoc viagra cho nam
ডন মাইকেল কর্লিওনি বলছেনঃ
irbesartan hydrochlorothiazide 150 mgহুম শ্রাবণ, ছানাবড়া হবার মতই… ~x( ~x( ~x(
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
%%- %%- %%-
জন কার্টার বলছেনঃ
চমৎকার পোস্ট কাল বৈশাখি দা….এক কথায় দুর্দান্ত…..
সতী দাহ্ প্রথা উচ্ছেদকারি এই মহান ব্যক্তির প্রতি আকুন্ঠ শ্রদ্ধা….
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
metformin synthesis wikipediaধন্যবাদ আপনাকে।
viagra en uk
শ্রাবণ বলছেনঃ
শব্দটা অকুণ্ঠ হবে। অর্থাৎ, কুণ্ঠাবোধ ছাড়াই। অবশ্য আকণ্ঠও বলতে পারেন। :-@ :-@
ফাতেমা জোহরা বলছেনঃ
দারুণ লিখেছেন… =D> =D> m/ m/
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
অসংখ্য ধন্যবাদ!
কিরন শেখর বলছেনঃ amiloride hydrochlorothiazide effets secondaires
অসাধারণ লিখেছেন। রামমোহন রায় কে নিয়ে এত বিস্তারিত লেখা আগে কোথাও পায়নি। অনেক কঠিন একটা কাজ করেছেন। can levitra and viagra be taken together
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ doctus viagra
ধন্যবাদ আপনাকে।
স্পীকার বলছেনঃ
:-bd :-bd :-bd :-bd :-bd =D> =D> =D> =D>
ক্লান্ত কালবৈশাখি বলছেনঃ
%%- %%- %%-
রুপম বলছেনঃ
অসাধরন লিখেছেন । আরও জীবনি দেন।
Madhyamik & Higher Secondary Exam Suggestion